বাংলাদেশ ইতিহাসের ভয়াবহ সংকটকাল অতিক্রম করছে। মাত্র ১ সপ্তাহে পুলিশের গুলীতে নিহত হয়েছে ১৫০ জন, ১০ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়েছে, ৩ হাজারের মত গুলীবিদ্ধ আহত মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কয়েক হাজার পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু, কিশোর, তরচণ, মহিলা ও বৃদ্ধরাও রয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোন সময় সংঘটিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, ভিডিও ফুটেজ ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত চিত্র থেকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলী চালাচ্ছে। কয়েকটি চ্যানেলে দেখা গেছে গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে, আবার কাউকে একদম কাছে থেকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ এলাকায় সাধারণ মানুষ আশ্রয়ের জন্য ধানক্ষেতে নেমে গেলে পুলিশ সেখানে গিয়েও গুলী চালায়। কোন কোন দৃশ্যে দেখা গেছে আম বাগানে ঢুকে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েও পুলিশের গুলীর হাত থেকে রেহাই পায়নি।
যেসব লোক নিহত হয়েছে তাদের অধিকাংশই গ্রামেগঞ্জে বসবাসকারী অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের মানুষ। কোন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা রাস্তায় নেমেছে বিষয়টা এমন নয়। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যারা হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন, তার কণ্ঠে কোরআনের তাফসীর শুনে যারা আলোর সন্ধান পেয়েছেন মূলত তারাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার ফাঁসির আদেশের বিরচদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা কোন রাজনীতি বুঝে না, তারা কোন দলও বুঝে না। তাদের মনের আগুন প্রজ্জ্বলিত হয়েছে একজন মুফাস্সিরে কোরআনের জন্য। কোন দলের ঘোষণায় তারা প্রতিবাদে নামেনি, নেমেছে কোরআনের মহববতে। কোরআনের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার চক্রান্ত তারা মেনে নিতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ নারী-পুরচষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। কোন কোন স্থানে যুবকরা কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে। কোথাও কোথাও শিশু, কিশোর, তরচণেরা ‘আমাকে ফাঁসি দাও, সাঈদীকে মুক্তি দাও’ শেvগান লিখে রাজপথে নেমে এসেছে। এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে যারা গুলী করে দমন করতে চান তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। মানুষের অঢেল রক্ত ঝরেছে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ের হাহাকার বন্ধ হয়নি। বরং তা অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
কেন এই হত্যাকান্ড?
মাত্র ৭ দিনে কেন এতগুলো লোককে হত্যা করা হলো? গ্রামেগঞ্জে বসবাসরত এসব মানুষের প্রতিবাদের কণ্ঠ কেন স্তব্ধ করে দেয়া হলো? সরকার জনতার এ আন্দোলনকে জামায়াতের তান্ডব বলে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এজন্য বিরোধী দলীয় নেত্রীকে দায়ী করেছেন। কোন কোন মিডিয়া এটাকে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাস বলে প্রচার করেছে। আসলে কি তাই? প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করে তার প্রতিকারে সচেষ্ট না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। কোন রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন তার সঠিক রোগ যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা। রোগ যথাযথভাবে সনাক্ত করতে ব্যর্থ হলে রোগের বিস্তৃতি ঘটতে পারে এবং রচগীর মৃত্যু হতে পারে। রাজনৈতিক সংকটের কঠিন মুহূর্তে সংকটের মূল কারণ অনুধাবন করে তার নিরসনের ব্যবস্থা না নিলে দেশ এক ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হতে পারে। ঘটনাপ্রবাহ বিশেষণ করে মনে হয়, সরকার পুলিশ দিয়ে গুলী চালিয়ে অগণিত মানুষ হত্যা করে এই ইস্যুটি হত্যা করতে চায়। এটা সরকারের একটি ভুল পদক্ষেপ। দেশের বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক, গবেষক, বিশিষ্ট নাগরিকগণ উদ্বেগ প্রকাশ করে সংকটের সমাধানের জন্য সরকারকে রাজনৈতিক সমঝোতার পরামর্শ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি মূল্যায়ন করে সংকীর্ণ দলীয় নীতিতেই সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটাতে চাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠিকে বুঝতে হবে দল এবং রাষ্ট্র এক নয়। রাষ্ট্র সকল নাগরিকের। অতএব প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রের অপরিহার্য কর্তব্য। রাষ্ট্র যদি দলীয় দৃষ্টিভংগীতে পদক্ষেপ নেয় তাহলে বিপর্যয় এবং সংঘাত অনিবার্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রীসহ সরকার দলীয় এমপি ও ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে পুলিশ দিয়ে গুলী চালিয়েই তারা সংকটের সমাধান করবে। তাদের এই মনোভাব সংকটকে আরো তীব্র করে তুলবে এবং রাষ্ট্র বনাম জনগণ ইস্যু তৈরী করবে। আর ইতিহাস সাক্ষী জনগণের আন্দোলন যখন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয় তখন স্বৈরশাসককে করচণ পরিণতি বরণ করতে হয়।
সংকটের সূত্রপাত
৫ ফেব্রচয়ারী ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোলvর যাবজ্জীবন কারাদন্ড রায় ঘোষিত হওয়ার পর শাহবাগে কিছু তরচণ ফাঁসির দাবীতে সমাবেশ করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও পুলিশ প্রহরায় এ সমাবেশ একটি বড় সমাবেশে পরিণত হয়। সমাবেশে ফাঁসির দাবী, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, ইসলামী আদর্শভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও তার উপর হামলার উস্কানী দেয়া হয়। ফলে ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকের কয়েকটি শাখা, ইসলামী আদর্শভিত্তিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। শাহবাগ সমাবেশের কয়েকজন সংগঠক বগার তাদের বগে মহান রাববুল আলামিন, নবী করিম (সাঃ), নামাজ, হজ্জ ও যাকাত সম্পর্কে কটূক্তি করে।
দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক আমারদেশে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রচারিত হয়। পত্রিকায় এ তথ্য প্রকাশের কারণে আমারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে শাহবাগের সমাবেশ থেকে খতম করার ঘোষণা দেয়া হয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নব্য রাজাকার ঘোষণা দেয়া হয় ও তার উপাধি কেড়ে নেয়ার হুমকী দেয়া হয়। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. পিয়াস করিম ও ড. আসিফ নজরচলকে হুমকী দেয়া হয়। প্রকাশ্য জনসভায় এ ধরণের হুমকি ফৌজদারী অপরাধের শামিল। এ ধরণের বেআইনী ঘোষণার কারণে শাহবাগের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং তাদেরকে পাহারা দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সমাবেশের আয়োজন করে তরচণ প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ বলে চিত্রিত করা হয়েছে। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদে সভা, সমাবেশ আহবান করলে তা পন্ড করে দেয়া হয়। যদি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে বিশ্ববাসী দেখতে পেতো এ সমাবেশ কেমন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে! কিন্তু সরকার তার সুবিধামত এক পক্ষকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা দিয়ে সভা-সমাবেশের সুযোগ দিয়েছে, অপর পক্ষকে পুলিশ দিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে।
বগারদের কটূক্তির প্রতিবাদে দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও সাধারণ মুসলxরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২২ ফেব্রচয়ারী শুক্রবার সারাদেশের সাড়ে ৪ লাখ মসজিদ থেকে সাধারণ মুসলxরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশ বেপরোয়াভাবে চড়াও হয়। তারা মানিকগঞ্জে অত্যন্ত নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে গুলী করে ৫ জনকে হত্যা করে। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা এক বিরান ভূমিতে পরিণত হয়।
সাধারণ মুসলxদের উপর এ হামলায় তৌহিদী জনতা জেগে ওঠে। এ আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও সাধারণ মুসলxদের নামে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় লক্ষাধিক লোককে আসামী করা হয়। এর মাঝেই ২৮ ফেব্রচয়ারী বিশ্ববরেন্য মুফাস্সিরে কোরআন আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষিত হয়। সরকার নির্দেশিত ছকে এ রায়ে আলvমা সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। আলvমা সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার আগে শাহবাগ সমাবেশ থেকে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ বলে শেvগান দেয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সমাবেশের দাবী বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার জন্য বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিচারপতিদের প্রতি এক ধরণের নির্দেশ ও চাপ।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা চলা অবস্থায় স্কাইপ কেলেঙ্কারী প্রকাশিত হয়। তদানীন্তন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও বেলজিয়াম প্রবাসী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথনে ট্রাইব্যুনালের মামলা নিয়ে বিচার বিভাগীয় জালিয়াতির এক নজিরবিহীন ঘটনা সারা দুনিয়ার মানুষের নিকট প্রকাশিত হয়ে পড়ে। স্কাইপ কথোপকথনে কেলেঙ্কারীর হোতাগণ আলvমা সাঈদীর মামলাকে ‘দেশীয় শালিশ’ দরবারের মত বলে উলেখ করেন।
আইনজীবীদের মতামত থেকে জানা যায়, সাঈদীর মামলায় সাজা দেয়ার মত ন্যূনতম কোন প্রমাণও সরকার পক্ষ আদালতে পেশ করতে পারেনি। কোরআনের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য সাঈদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ রায় ঘোষিত হয় বলে জনগণের ধারণা। এ রায়ের প্রতিবাদে ধর্মপ্রাণ, সাঈদীভক্ত সাধারণ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এসব প্রতিবাদী জনতার বুকে পুলিশ গুলী চালিয়ে ৭০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ।
১ মার্চ শুক্রবার সরকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট তালা লাগিয়ে দেয়। পুলিশ র্যাব, বিজিবি বায়তুল মোকাররমের প্রবেশের পথে মুসলxদের তলvসীর নামে হয়রানি করে। এক ভূতুড়ে পরিবেশে বায়তুল মোকাররমে মুসলxদের সংখ্যা কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে জুমুআর জামায়াতে ৭ তলা মসজিদ কানায় কানায় ভর্তি হয়ে রাস্তায় মুসলxদের ঢল নামে। পুলিশী তলvসী ও হয়রানির কারণে এবং উত্তরগেটে তালা লাগানোর ফলে মসজিদে মুসলxর সংখ্যা মাত্র ৩/৪ কাতারে নেমে আসে। জাতীয় পত্র-পত্রিকায় এ সংবাদ ও চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদে তালা লাগানোর কারণে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
মসজিদে তালা লাগানো, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও দাঁড়ি, টুপিওয়ালা লোকদের সাথে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণ, হয়রানি ও আওয়ামী দলীয় ক্যডারদের মারমুখো আচরণ দেশে এক বীভৎস পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশকে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার চক্রান্ত!
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান থেকে আলvহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়। মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ধারা বিলুপ্ত করে। কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী নারী নীতিমালা প্রণয়ন করে। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামী নীতিমালা উঠিয়ে দেয়। নবম শ্রেণীর পাঠ্যবই-এ দেবদেবীর নামে জবাই করা পশুর গোশত হালাল বলে উলেখ করা হয়। দেশের আলেমদের সাথে সরকার দুর্ব্যবহার করে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে জঙ্গিবাদের প্রজননকেন্দ্র বলে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীগণ ঘোষণা দেন।
শাহবাগে কতিপয় তরচণ মহান আলvহ ও রাসূল (সাঃ) কে কটাক্ষ করলেও তাদের বিরচদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পক্ষান্তরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আন্দোলনে নির্বিচারে গুলী চালানো হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ৩ শতাধিক মসজিদে সরকারি নজরদারী বসিয়ে মুসলxদের মনে ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে নারী, শিশু ও পুরচষদের। সরকারের এ ভূমিকা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আ্শঙ্কা দেয়া দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হয়েছে
সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আজ ভূলুণ্ঠিত। ১ সপ্তাহে ১৫০ জন মানুষকে নির্বিচারে গুলী চালিয়ে হত্যা করায় বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনা হয়েছে। পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউজ অব লর্ডসের কয়েকজন সদস্য রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হত্যাকান্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃটিশ আইন প্রণেতারা আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জরচরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, মিসরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের এ হত্যাযজ্ঞ ও মানবাধিকার লংঘনের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এ হত্যাকান্ড ও পুলিশের গুলী চালানো বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
পুলিশের ভূমিকায় উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়
বাংলাদেশের ৪২ বছরের ইতিহাসে পুলিশকে এভাবে আর কখনো গুলী চালাতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে অনেক সংঘাত, সংঘর্ষ হয়েছে। বহু রাজনৈতিক কর্মসূচী, মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, অবরোধ, ঘেরাও, হরতাল পালিত হয়েছে। ১৯৮২-৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও পুলিশকে এমন খড়গহস্ত হতে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ ১৯৯১-৯৬ সালে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছে। দোতলা বাসে আগুন লাগিয়ে ১০ জন যাত্রী পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে ৬ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অতীতের কোন আন্দোলনে পুলিশকে জনগণের বুক লক্ষ্য করে গুলী চালাতে দেখা যায়নি। ২০০৮ সালে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। পুলিশ পেশাদারিত্বের পরিবর্তে রাজনৈতিক কর্মীর মত আচরণ করছে। পুলিশের কোন কোন অফিসার শিবির দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর পুলিশকে বিরোধী দলের কর্মসূচী প্রতিহত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। সংবিধান অনুযায়ী এ ঘোষণা দেয়ার কোন সুযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেই। পুলিশেরও নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের সভা-সমাবেশ, প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক দল করার অধিকার দেয়া হয়েছে। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মসূচী বানচালের, বাধা দেয়ার কিংবা কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এখতিয়ার পুলিশ প্রশাসনের নেই। কিন্তু পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে সেই কাজটিই সম্পন্ন করেছে। রাজনৈতিক দলের অফিস পুলিশ দিয়ে অবরচদ্ধ করে রাখার কোন নজীর পৃথিবীর কোন দেশে নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সেই নজীরও স্থাপিত হয়েছে।
২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে পুলিশ তান্ডবতা সৃষ্টি করে। অফিসের কম্পিউটার, গুরচত্বপূর্ণ নথিপত্র, ফাইলপত্র নিয়ে যায়। পুলিশ আইন অনুযায়ী, কোন অফিস বা ঘর থেকে কোন জিনিষ জব্দ করতে হলে তার তালিকা তৈরী করতে হয় ও সাক্ষী নিতে হয়। জামায়াত অফিস থেকে মূল্যবান জিনিষপত্র, নগদ টাকা পয়সা নেয়ার সময় পুলিশ কোন জব্দ তালিকা তৈরী করেনি। এক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই আইন ভঙ্গ করেছে। ঐদিন জামায়াত অফিস থেকে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারী যথাক্রমে এ টি এম আজহারচল ইসলাম ও অধ্যাপক তাসনীম আলমকে পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ৩শ’ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোন জাতীয় নেতাকে এভাবে ডান্ডাবেড়ি পরানোর নজীর নেই। সেদিন থেকে জামায়তের কেন্দ্রীয় ও মহানগরী কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শাখা কার্যালয় অবরচদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হওয়া সত্বেও জামায়াতের দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। ৭ বার জামায়াত অফিসে তলvসীর নামে ভাংচুর করা হয়েছে।
একই কায়দায় ১১ মার্চ দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র অফিসে পুলিশ তান্ডবতা চালিয়েছে। পুলিশের কর্তব্যরত অফিসার জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, তাদের গালমন্দ করে গ্রেফতার করে। বিএনপি অফিসের মূল্যবান আসবাবপত্র তছনছ করে। টাকা পয়সা লুটপাট করে। এমনকি অফিস থেকে আলমারী নামিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশী তান্ডবতার এ দৃশ্য বিভিন্ন চ্যানেলসমূহে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পুলিশের এই ভূমিকায় প্রতীয়মান হয়েছে, তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী নয়। তারা আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডার। কোন রাজনৈতিক দলের অফিস তছনছ করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। যে পুলিশ সাগর-রচনি হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি, নিখোঁজ হওয়া ইলিয়াছ আলী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভাবান ছাত্র ওলিউলvহ ও আল-মুকাদ্দাসকে আজও উদ্ধার করতে পারেনি সে পুলিশ মিডিয়ার সামনে রাজনৈতিক দলের অফিসে তান্ডবতা চালিয়ে প্রমাণ করেছে পেশাদারিত্ব নয়, দলীয় ক্যাডার হিসেবেই তাদের পরিচয় মানানসই।
জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরচদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন পুলিশের ভাবমর্যাদাকে দারচনভাবে ক্ষুন্ন করেছে। পুলিশ যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে তা উপনিবেশিক শাসনামলেও দেখা যায়নি। চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদিপ কুমার শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে দু’চোখ তুলে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা একজন শিবির নেতার গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যা করে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় শিবির নেতাদের ধরে নিয়ে পায়ে গুলী চালিয়ে দু’জনকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। শেরেবাংলা থানায় পুলিশ কর্মকর্তা দু’শিবির নেতার পায়ে গুলী করে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়। তাদের পা কেটে ফেলতে হয়। কোন শক্তির বলে পুলিশ এ বে-আইনী কাজ করছে? দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কোন নাগরিক অপরাধ করলে তাকে আদালতে সোপর্দ করে বিচারের মুখোমুখি করার বিধান আছে। পুলিশ এ আইনী প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করছে কেন?
পুলিশ নারীদের সাথে যে আচরণ করেছে তা বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কজনক হয়ে থাকবে। ১৭ ডিসেম্বর মগবাজার গ্রীনভ্যালী ইসলামী ছাত্রীসংস্থার কেন্দ্রীয় অফিস থেকে ২০ জন নারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ১ জন অন্ত:সত্ত্বা নারীও ছিল। কিন্তু তার প্রতি ন্যূনতম মানবিক আচরণও করেনি পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নারীদের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ মানবাধিকার লংঘন করেছে। বহুতল আদালত ভবনে লিফ্ট থাকা সত্ত্বেও ওই অন্ত:সত্ত্বা নারীকে লিফ্টে না উঠিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ৮ম তলায় উঠানো হয়। একটি স্বাধীন দেশের পুলিশ প্রশাসন অন্ত:সত্ত্বা নারীর প্রতি যে আচরণ করেছে তার কোন প্রতিকার করা হয়নি। পুলিশের এ নিষ্ঠুর আচরণ গোটা জাতিকে হতবাক করেছে, বিশ্ববাসীকে করেছে স্তম্ভিত।
নারীদের প্রতি পুলিশের এই নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদে ৫ জানুয়ারী জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নারী অধিকার আন্দোলন’ নামক জাতীয় সংগঠনের আহবানে প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। ঐ অনুষ্ঠানে প্রবেশের পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের ফটক থেকে, সংগঠনের সভানেত্রী প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক অধ্যাপিকা চেমন আরা, সংগঠনের সহ সভানেত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মমতাজ মান্নান, যুগ্ম সম্পাদিকা নূর জাহান বেগম, ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যাপিকা জোসনা ইদ্রিসসহ কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষাবিদকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। প্রেসক্লাবে প্রবেশের সময় গ্রেফতার করা হয় আরো ৬ জনকে। তাদের বিরচদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না। বিনা অভিযোগে নারীদেরকে গ্রেফতার করা মানবাধিকারের চরম লংঘন বলে দেশবাসী মনে করে।
পুলিশ জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সনদের স্পষ্ট লংঘন করে চলেছে। এ সনদে বলা হয়েছে, ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষা, নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিনা অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার না করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে বাধা না দেয়া, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নির্যাতন না করা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান চোখে দেখাসহ নাগরিকের মৌলিক অধিকারসমূহকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত। পুলিশ এর সবকটি বিধানই প্রতিনিয়ত লংঘন করছে। মানবাধিকার আইনের ৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে বা হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ এখন নির্বিচারে গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। বিরোধী দলের যেকোন বৈঠককে ‘নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক’ আখ্যা দিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ আইনের ২৯/৭ ধারায় স্পষ্টভাবে উলেখ আছে, অভিযুক্তকে শারীরিক আঘাত করা যাবে না। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) এর ৩১৭ ধারায় উলেখ আছে, হয়রানিমূলক গ্রেফতার করা যাবে না। কার্যবিধির ৫৬/৮০, সংবিধানের ৩৩(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে। এগুলো একজন অভিযুক্তর অধিকার। অথচ: পুলিশ এর একটিও মানছে না।
পুলিশের এসব কর্মকান্ডের কারণে পুলিশ এখন জনগণের বন্ধুর পরিবর্তে শত্রচতে পরিণত হয়েছে। বহির্বিশ্বে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশের পুলিশকে বাদ দেয়ার আলোচনা চলছে বলে নিউইয়র্ক এর এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে আড়াল করা যায় না
মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে সত্য ঢাকার যতই চেষ্টা করা হোক তা কখনো সফল হতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য কিছু ঘটনার সৃষ্টি করে তার দায়ভার বিরোধীদলের উপর বিশেষ করে জামায়াতের উপর চাপানোর চেষ্টা করে। আর সরকার সমর্থিত কিছু সুবিধাভোগী পত্রিকা ও চ্যানেল এ মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। প্রচারণার প্রবল্যে কিছু সময়ের জন্য সত্য ঢাকা পড়ে গেলেও তা স্ব-মহিমায় আত্মপ্রকাশ করে। অতিসম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যার জন্য শাসকগোষ্ঠী জামায়াত শিবিরকে দায়ী করে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। অল্প সময়ের মধ্যেই সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও ত্বকীর বাবা রফিউর রাবিব ত্বকী হত্যার জন্য আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানকে দায়ী করেছে।
সংখ্যালঘুদের বাড়ীঘরে হামলা, ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাংচুর, জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলা ও শহীদ মিনার ভাংগার জন্য কোন তদন্ত ছাড়াই জামায়াত শিবিরকে দায়ী করা হয়। অথচ: এসব অপকর্ম করতে গিয়ে দেশের ৭/৮টি জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা হাতে নাতে ধরা পড়ে। পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
সাগর-রচনি হত্যাকান্ডের পর গোটা দেশে যখন প্রতিবাদ হচ্ছিল। সাংবাদিক সমাজসহ দেশের আপামর জনতা এ হত্যাকান্ডের বিরচদ্ধে সোচ্চার হচ্ছিল তখন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বললেন সাগর-রচনির হত্যাকান্ডের সাথে জামায়াত শিবির জড়িত। দেশের কোথাও কিছু ঘটলেই তা জামায়াত শিবিরের কাজ বলে মিথ্যাচার চালানো এক শ্রেণীর মিডিয়া ও আওয়ামী সরকারের দূরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত কথা হচ্ছে, সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অত্যন্ত সুকৌশলে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্য এ অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
গণবিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী নন। আপনি ১৬ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ, দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষায় আপনাকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আপনি শপথ নিয়েছেন। যে শিশু তার পিতাকে হারালো, যে স্ত্রী তার স্বামীকে হারালো, যে পিতা তার পুত্রকে হারালো, যে পরিবার সর্বস্বান্ত হলো, তাদের বেদনা আপনাকে বুঝতে হবে। মানুষের হৃদয়ের মিনতি বন্দুকের গুলী দিয়ে স্তব্ধ করা যায় না। কিন্তু দেশবাসী লক্ষ্য করছে প্রধানমন্ত্রী দেশের সাধারণ মানুষের আর্তনাদকে উপেক্ষা করে দলীয় নেত্রীর মতোই কথা বলে যাচ্ছেন।
মহান রাববুল আলামীন, বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সাঃ) ও কোরআনের মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং আলvমা সাঈদীর মুক্তির দাবীতে দেশের তৌহিদী জনতা আজ রাজপথে নেমে এসেছে। সারা বাংলাদেশ এক আগ্নেয়গিরি। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে উচ্চারিত হচ্ছে সাঈদীর মুক্তির শেvগান। একজন নিরপরাধ আলেমে দ্বীনকে হত্যা করা হবে, কোরআনের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হবে তা দেশের মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না। ফাঁসির আদেশের পর দেড়শত মানুষ জীবন দিয়েছে। হয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষ বুলেটের সামনে বুক পেতে দিবে, তবুও কোরআনের মুফাস্সিরের বিরচদ্ধে কোন চক্রান্ত দেশের মানুষ মেনে নেবে না। আজকের গণআন্দোলনকে আমলে নিয়ে সরকার তার প্রতিহিংসার পথ থেকে ফিরে না আসলে গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন