বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

অবিলম্বে সরকারি মিথ্যাচার বন্ধ হওয়া দরকার



সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে গুম ও হত্যার শিকার মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাববী নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে তার ছেলেকে হত্যার জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা একেএম শামীম ওসমান ও তার ছেলেসহ ৭ জনকে দায়ী করে একটি লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী অভিযোগপত্রে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক, শহরের চানমারী মাউরা পট্টি এলাকার মোজাম্মেল হক মন্টুর ছেলে মিজানুর রহমান সুজন, শহরের উত্তর চাষাঢ়ার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে জহিরচল ইসলাম ভূঁইয়া পারভেজ ওরফে কাঙ্গারচ পারভেজ, একই এলাকার মৃত দীলিপ দাসের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজীব দাশ, শহরের জামতলা এলাকার হাজী বজলুর রহমান রিপনের ছেলে সালেহ রহমান সীমান্ত এবং শহরের আমলাপাড়া এলাকার রিফাত।
উলে­খ্য যে, গত ৬ মার্চ বিকেলে তানভীর রহমান ত্বকী বাসা থেকে বের হয়ে যাবার পর আর বাসায় ফিরে আসেনি। তাকে গুম করে দেয়া হয় এবং নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে ৮ মার্চ সকাল পৌনে ১০টায় শহরের চারার গোঁফ সংলগ্ন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পার্শে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার হয়। তার লাশ উদ্ধারের পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে জামায়াত-শিবিরের বিরচদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার শুরচ হয় এবং বলা হয় যে, ত্বকীর পিতা জনাব রাববী নারায়ণগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চের উপদেষ্টা হওয়ার কারণে জামায়াত-শিবির তার পুত্রকে হত্যা করেছে। এই অপপ্রচার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতেও স্থান পায় এবং সরকার সমর্থক পত্র-পত্রিকাগুলো অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে এই খবরটি লুফে নেয়। এতে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মোহাম্মদ ত্বকীর পিতা জনাব রাববীর অভিযোগ এবং নারায়ণগঞ্জ পৌর কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী পারিবারিক ও রাজনৈতিক শত্রচতার জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব শামীম ওসমান এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। অথচ সরকার ও সরকারিদল দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতির সুযোগে এর দায় জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা এই নির্মম হত্যাকান্ড এবং তার দায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর চাপানোর আওয়ামী প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। হাল আমলে যখন যেখানে যে কোন অপরাধমূলক ঘটনাই ঘটুক না কেন, সেটা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হোক অথবা সংখ্যালঘু নির্যাতন কিংবা পুলিশের ওপর হামলা, ক্ষমতাসীন দল এমনকি সরকারের তরফ থেকে কোন প্রকার নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই এর দায় জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হয়। ব­গার রাজীব হত্যার জন্যও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাড়িতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য রেখেছিলেন এবং তারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর অনুসরণে একই অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে যে, যারা এই হত্যাকান্ডের দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন এবং পুলিশের তথ্যানুযায়ী স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন তাদের কেউই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আগেই জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে ঘোষণা দিয়েছেন সেহেতু তার মান রক্ষার জন্য পুলিশ তার পরিকল্পনাকারী হিসেবে রানা নামক এক ব্যক্তিকে আবিষ্কার করেছেন যে নাকি কোন এককালে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সরকারি এই অপচেষ্টা সরকারের জন্য কোন কৃতিত্ব নয় বরং বদনামই বয়ে আনছে বলে আমরা মনে করি। সত্য কখনও গোপন থাকে না  এবং আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতা-কর্মীর ন্যায় এদেশের মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে, বিবেক শূন্য হয়ে যাননি। তারা মিথ্যাচারকেও চিহ্নিত করতে জানেন। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের জনৈক ব্যক্তির পকেটে ১০ জন আলেমের নাম পাওয়া যাওয়ার একটা গল্প পুলিশের তরফ থেকে প্রচার করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, লোকটি জামায়াত-শিবিরের এবং জামায়াত-শিবির ১০ জন শীর্ষ আলেমকে হত্যা করার লক্ষ্যে এই তালিকা তৈরি করেছে এবং এই অপরাধের সাথে সংশি­ষ্ট কয়েক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। দেখা গেছে যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের সাথে জামায়াত-শিবিরের কোন সম্পর্কই নেই। আবার এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। হত্যার তালিকা তৈরি করে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তাকি পকেটে নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়ায়? দ্বিতীয়ত: পুলিশ সেটা কিভাবে টের পায়? এই তালিকা তৈরির সাথে কি পুলিশের সম্পর্ক ছিল? যদি না থেকে থাকে তাহলে অন্য কারোর পকেট তালাশ না করে একেবারে নিখুঁতভাবে সংশি­ষ্ট ব্যক্তির পকেটে তাদের হাত যায় কিভাবে? আমরা মনে করি এটি একটি নোংরা নাটক এবং এ নাটকটির প্রযোজক স্বয়ং সরকার। সরকারকে আমরা এ নোংরামি থেকে সরে এসে দেশের রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করব এবং তাদের অনেকেই কুরআন মানেন না জেনেও সূরা আল-বাকারায় এ সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াতের প্রতি আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে, ‘‘আমার গজব থেকে আত্মরক্ষা করো। মিথ্যার আবরণে সত্যকে সন্দেহযুক্ত করে তুলো না এবং জেনে শুনে তোমরা সত্যকে লুকানোর চেষ্টা করো না। নামায কায়েম করো যাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তোমরাও নতি স্বীকার করো।’’ (আয়াত ৪১-৪৩)। সরকার ব্লে­ম গেম না খেলে পবিত্র কুরআনের এই নির্দেশনা মেনে চললেই সবচেয়ে ভাল করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads