ভিটামিন খেয়ে শিশুরা অসুস্থ
বিতর্কের পরও গত মঙ্গলবার সারা দেশে দুই কোটির বেশি শিশুকে ভিটামিন এ, পোলিও ও কৃমির ওষুধ খাওয়ানোয় অভিযান চালানো হয়েছে। ওষুধ খাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসে। তারা নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ভিড় জমান। আগেই খবর ছড়িয়ে পড়ে, এতে নাকি ক্ষতিকর জীবাণু রয়েছে এবং ভিটামিন খাওয়ানো হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সন্তান ধারণে অক্ষম হবে। তবে তাৎক্ষণিক যেসব সমস্যা ভিটামিন খাওয়ানোর পরপরই দেখা যাচ্ছে, সে ব্যাপারে অগ্রিম কোনো ধারণা ছিল না। ফলে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও উদ্বেগ আরো বেড়ে গেছে। তারা ভাবছেন, সন্তানের ভালো করতে গিয়ে বড় কোনো ক্ষতি করে ফেললেন কি না।
শিশুদের ভিটামিন খাওয়ানোর অভিযান নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে প্রধানত এর মধ্যে জীবাণু থাকার। বিষয়টি এখনই নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু খাওয়ার পরপরই যে প্রতিক্রিয়া হলো তা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। সারা দেশের নানা অঞ্চল থেকে খবর এসেছে শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার। আমরা উদ্বিগ্ন এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে। এ দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অভিযানের আগে বিতর্কের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, আগে যে কোম্পানিটি টেন্ডার পেয়েছিল এ বছর তারা পায়নি। তারাই হয়তো বিতর্ক সৃষ্টি করছে। মন্ত্রী বলেছেন, অভিযোগ ওঠার পর ওষুধ সিঙ্গাপুর থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের জীবাণু পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক ওই পরীক্ষা কতটা নির্ভরযোগ্য তা নিয়ে।
শিশুদের ওপর কোনো ওষুধ প্রয়োগের আগে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার পরই সেটা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশের দুই কোটি শিশুকে এ ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সত্যিই যদি এ ওষুধের ফলে তারা ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে পড়ে তাহলে এ বিরাট ভুলের দায় কে নেবে? মন্ত্রী বলছেন, আগের কোম্পানি টেন্ডার পায়নি, তাই এ ধরনের বিতর্ক ছড়াচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান কতটা দায়িত্বহীন হলে এ ধরনের খবর ছড়াতে পারে। এ বিষয় নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। তারা যদি প্রচারণা চালায় তাহলে তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারে না। যে ওষুধের ব্যাপারে বিতর্ক তাতে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত হতে হবে। উত্থাপিত অভিযোগের যদি কোনো ধরনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে এর দায় কে নেবে। এ ধরনের বিষয়ে ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। কাজ করে ভেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সবচেয়ে উত্তম ছিল, যে ওষুধ নিয়ে বিতর্ক সেটিকে এড়িয়ে যাওয়া। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বে ওষুধের স্বীকৃত মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পরীক্ষা করিয়ে তা শিশুদের উপযোগী কি না, তা যাচাই করা উচিত ছিল। এখন একটা সন্দেহ সবাইকে গ্রাস করছে, তা থেকে উদ্ধারে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন