আগরতলা থেকে শাহবাগ
‘সত্য মামলা আগরতলা’। এটি একটি বইয়ের নাম। লেখক কর্নেল শওকত আলী (ঢাকা : প্রথমা প্রকাশনা, দ্বিতীয় মুদ্রণ ২০১২)। বাংলাদেশের চলতি নবম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার। ‘আর্মড কোয়েস্ট ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ (ঢাকা : আগামী প্রকাশনী, ২০০১) নামে কর্নেল শওকত যে ইংরেজি বইটি লিখেছিলেন, ‘সত্য মামলা আগরতলা’ তারই বাংলা অনুবাদ। কর্নেল শওকতের ভাষায় : ‘ঐতিহাসিক আগরতলা মামলাকে এখনো মিথ্যা মামলা বলে যারা উল্লেখ করেন, তারা নিজেদের অজান্তে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য অভিযুক্তকে অসম্মান করেন। বঙ্গবন্ধুসহ গোটা বাঙালি জাতিকে সম্মান প্রদর্শন করার তাগিদ থেকে সত্য মামলা আগরতলা নামে বইটির বাংলা সংস্করণ বের করা হলো।’ … আজো মামলাটির প্রসঙ্গ এলে প্রায় সবাই ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বলে থাকেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমরা যারা মামলাটিতে অভিযুক্ত ছিলাম, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি তাদের জন্য পীড়াদায়ক।… এ কথা ঠিক, তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলগত কারণে বঙ্গবন্ধুসহ আমরা সবাই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছিলাম। বাঙালি জাতিও মামলাটিকে মিথ্যা মামলা হিসেবে অভিহিত করে তা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিল। তা ছিল ১৯৬৮-৬৯ সালের কথা। কিন্তু এখন তো ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।… কিন্তু এ কথা মোটেই ঠিক নয়, যা প্রায়ই বলা এবং লেখা হয়ে থাকে যে ছয় দফা আন্দোলনের কারণে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়েছিল’ (ভূমিকা)।
কর্নেল শওকতের লেখা থেকে ‘আগরতলা মামলা’ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা যাক, যিনি, এ মামলায় ৩৫ অভিযুক্তের ২৬তম (এবং শেখ মুজিবুর রহমান, তখনো বঙ্গবন্ধু হননি; প্রথম অভিযুক্ত ছিলেন) : ‘সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান (অভিযুক্ত-৩) ও মোহাম্মদ আলী রেজা (অভিযুক্ত-৩৩) ১২ থেকে ১৫ জুলাই ১৯৬৭ তারিখের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সম্ভাব্য ভারতীয় সাহায্যের বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য আগরতলায় যান। সরকারি এ ভাষ্য সত্যি হলেও আমাদের প্রতিনিধিদ্বয়ের আগরতলা সফরের ফলে কোনো ভারতীয় সাহায্য আমাদের কাছে বা অন্য কারো কাছে আসার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।… সরকারপক্ষের অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের উদ্ভব ঘটে করাচিতে ১৯৬৪ সালের প্রথম দিকে এবং সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী করাচিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৪ সালের ১৫ থেকে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঁচজনসহ অভিযুক্তের সাথে প্রথম বৈঠক করেন। … আলমের কাছে আমি জানতে পারি, নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার অফিসার, পরে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার, যা সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদাসম্পন্ন) মোয়াজ্জেম হোসেনের (২ নম্বর অভিযুক্ত) নেতৃত্বে নৌবাহিনীর বিভিন্ন পদের কয়েকজন বাঙালি মিলে একটি বিপ্লবী সংস্থা গড়ে তুলেছেন এবং তারা সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছেন।… কর্নেল আলমের সাথে প্রথম বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যে তার বাসায় আমার সাথে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সাক্ষাৎ হয়। তার সাথে ছিল নৌবাহিনীর স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান (৩ নম্বর অভিযুক্ত)। … লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সাথে প্রথম বৈঠকটি খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। বিপ্লবী সংস্থার সাথে আমার আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক তখন থেকেই শুরু। সম্ভবত সেটা ছিল ১৯৬৬ সালের জুন মাস। আনুষ্ঠানিক এবং বিশদ আলোচনা ছাড়াই আমরা একমত হয়েছিলাম যে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গঠিত ‘বিপ্লবী সংস্থা’র সদস্য।… কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ করলাম। মোয়াজ্জেম হোসেন সিনিয়র বাঙালি অফিসারদের আমাদের পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত করতে চাইছেন না। যেমন তিনি কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যেতেন।… আমার মাঝে মধ্যে মনে হতো, রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কেও মোয়াজ্জেম হয়তো একই মনোভাব পোষণ করেন। আমি ভাবতাম, যদি এ রকমই হয়, তাহলে আমি তা মেনে নিতে পারব না।… বিশেষত গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতা দেখে আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। ডায়েরিতে ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করা এবং দীর্ঘ চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। অপ্রয়োজনীয় এসব ডায়েরি ও চিঠিপত্র ট্রাইব্যুনাল বিচারের সময় দালিলিক প্রমাণ হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, মোয়াজ্জেম নিজেও এসবের ব্যতিক্রম ছিলেন না।… বিচারকার্য চলার সময় আমরা জানতে পেরেছিলাম, আইএসআই ১৯৬৬ সালের শুরুতে বিপ্লবী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল। আইএসআই সাথে সাথে মোয়াজ্জেমের গ্রুপের মধ্যে একজন চর ঢুকিয়ে দিয়েছিল এবং সেই চর বিপ্লবীদের একজন হিসেবে ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত মোয়াজ্জেমের সাথে কাজ করেছিল।… আলিম আমাকে আরো জানাল যে, কর্নেল ওসমানীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। তিনি ছয় দফার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে মত দিয়েছেন।… একটা সত্য অনেক সময় মিথ্যা হয়ে যায়, বিশেষ করে যখন তাকে অসৎ অভিপ্রায় চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বাঙালিরা আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিশ্বাস করেনি। আজো সেই অবিশ্বাস প্রায় অুণœ রয়েছে, যদিও এর প্রায় সবটাই সত্য ছিল। সন্দেহভাজনদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল এবং অভিযুক্ত আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মোতাবেক আদালতে নির্যাতনের যে বিবরণ দিয়েছিল, তার প্রায় সবটাই সত্য ছিল।… কৌশলগত কারণে জনগণ স্লোগান তুলল, ‘মিথ্যা মামলা আগরতলা, মানি না মানব না’, মিথ্যা মামলা আগরতলা তুলে নাও, নিতে হবে’। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন শিক্ষক, আইনজীবী, যুবক, ছাত্র, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি।… ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ তারিখে সব শ্রেণীর মানুষ রাজপথে বেরিয়ে আসে।… বিুব্ধ জনতা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান জাস্টিস এস এ রহমানের বাংলা একাডেমী ক্যাম্পাসে অবস্থিত বর্ধমান হাউজের বাসভবনে হামলা চালায়। এস এ রহমান স্বভাবতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং নাইট ড্রেস পরা অবস্থাতেই দৌড়ে বাসা থেকে বের হন। সেখান থেকে সোজা ঢাকা বিমানবন্দরে (পুরাতন তেজগাঁও বিমানবন্দর) চলে যান এবং লাহোরগামী পরবর্তী বিমানে চড়ে বসেন। মি. রহমান এরপর আর কখনো ঢাকায় ফেরার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি।… ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বন্দিশালার প্রতিটি কক্ষে এসে আমাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে জানান যে, মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে … এভাবে ট্রাইব্যুনালের রায়বিহীন অবস্থায় ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে।’ (পৃ-১৫, ১৬, ৯৬, ৯৭, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৮, ১১৬, ১১৭, ১৩৩, ১৪৮)।
এই দীর্ঘ উদ্ধৃতি বিরক্তিকর বিবেচিত হতে পারে। তবু দেয়া হলো মামলাটির একজন অভিযুক্তের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বিবরণ থেকে সেটি সম্পর্কে তাদের অবস্থান জানার প্রয়োজন। এ বিবরণ বা স্বীকৃতি থেকে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় জানা যাচ্ছে : ১. ‘আগরতলা ষড়যন্ত্রের’ বিষয়টি একটি ফ্যাক্ট বা সত্য তথ্য, যা তৎকালীন সরকার দাবি করেছিল। ২. অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে ‘মামলাটিকে’ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছিলেন। ৩. তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠী এ দাবিকে ‘সত্য’ মনে করেছিলেন, বিশ্বাস করেছিলেন। ৪. অভিযুক্তদের এ দাবিকৃত ‘মিথ্যা’কে জনগণ এতটা বিশ্বাস করেছিলেন যে, সমাজ-রাষ্ট্রের প্রায় সব মানুষ দাবিকৃত এ ‘মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারি ‘ডাকসু নেতৃত্ব’ ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন মিলে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ১১ দফা দাবি তুলেছিল। ১১ দফার দাবিতে ছিল আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও অভিযুক্তদের মুক্তি। ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি ৮টি দল মিলে ৮ দফা দাবি নিয়ে গঠন করে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদÑ ডাক। দলগুলো হলো দুই আওয়ামী লীগ (৬ দফা ও পিডিএম পন্থী), কাউন্সিল মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়তে উলামা, এনডিএফ ও মোজাফফর ন্যাপ। এ জোটও আগরতলাসহ সব মামলা প্রত্যাহার ও অভিযুক্তদের মুক্তি দাবি করে। ৫. প্রায় সর্বপ্লাবী এ আন্দোলনের মুখেই ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ প্রত্যাহার করা হয়, আটক অভিযুক্তদের ছাড়া হয় ও শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পান। ৬. ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে মামলাটি এমনভাবেই ‘মিথ্যা’ হয়ে যায় যে, যেটি ২০০১ সালে কর্নেল শওকত আলীর বই ‘আমর্ড কোয়েস্ট ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত সেটিকে ‘মিথ্যা’ বলেই মান্য হতে থাকে। এ পর্যায়ে তোফায়েল আহমেদসহ কিছু রাজনীতিক সগৌরবে দাবি করতে শুরু করেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ সত্য ছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুমোদনেই তা এগিয়ে ছিল। ৭. কিন্তু অনেক শিক্ষাবিদ-গবেষক-লেখক ২০০৭ সালেও ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে’ ‘বাঙালির বিরুদ্ধে আইয়ুব খানের’ ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন (দেখুন, তা আবুল ফজল হক, বাংলাদেশের রাজনীতি; সংস্কৃতির স্বরূপ, ঢাকা : অনন্যা, ২০০৭, পৃ-২৬-২৭। একই লেখকের গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা ও রাজনীতি, রংপুর : টাউন স্টোর্স, ১৯৯৫, পঞ্চম সংস্করণ, পৃ-৮৮-৮৯। ড. ফজল হক বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিবরণ সংবলিত প্রায় সব গ্রন্থেই এ রকম জ্ঞান দেয়া হয়েছে)। ৮. আওয়ামী লীগ ও এর অনুরাগী-অনুগামীরা একটি যথার্থ সত্যকে সক্ষমতার সাথে ‘জীবন্ত মিথ্যা’ পরিণত করতে পেরেছিল। সময়ের ব্যবধানে এখন তারা সেটিকে তাদের যোগ্যতা ও কৃতিত্ব হিসেবে প্রকাশ করছে। ৯. আগরতলা কেন্দ্রিক অথবা আগরতলা সংবলিত ষড়যন্ত্রের ঘটনার কারণেই সেই মামলাটি হলেও আওয়ামী লীগ ও এ ঘরানার পণ্ডিতেরা এটিকে ‘ছয় দফা আন্দোলনের প্রতিশোধ’ হিসেবে প্রচার করত। এটিও তাদের একটি ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার। কর্নেল শওকত এর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এবার শাহবাগ : মিথ্যাকে সত্য বানানোর মিশন
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে ঢাকা শাহবাগ চত্বরে চলছে কথিত গণজাগরণ মঞ্চ। এক রাজাকারের নাতি ডা. ইমরান এইচ সরকার এ মঞ্চের প্রকাশ্য প্রধান মুখপাত্র। তিনি আওয়ামী ঘরানার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা। তাই বিশ্বাস করা হচ্ছে এই শাহবাগ মঞ্চের পেছনেও আওয়ামী লীগ আছে এবং তারা এবার কিছু মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে এগোচ্ছে। আবদুল কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মওলানা সাঈদীর মতো কিছু মানুষকে তারা খুনি-ধর্ষণকারী হিসেবে প্রমাণ করবে এবং হত্যা করবে। দেখাবে, বাংলাদেশের মানুষ তা-ও বিশ্বাস করে এবং তাদের দাবির সাথে একমত।
৩০ লাখ মানুষ খুন করা এবং চার লাখ ৬০ হাজার নারী ধর্ষণের সেøাগানটিকে তারা প্রায় সার্বজনীন করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক (অথবা প্রায় অর্ধেক) মানুষ এখনো বিশ্বাস করে, ইচ্ছা করে অথবা ভুল করেÑ ‘লক্ষ’কে ‘মিলিয়ন’ ভেবেÑশেখ মুজিব তিন মিলিয়ন মানুষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু এই তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ মানুষ খুনের দাবি যাদের জন্য অভিশাপ বয়ে এনেছে এবং অভিশাপ হিসেবে কাজ করছে অন্যান্যভাবে, তারা এ তিন মিলিয়নের মিথ্যা বা মিথকে কার্যকরভাবে মানুষের মধ্যে প্রমাণ ও প্রচার করার কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানি না। ৩০ লাখ মানুষ হত্যা ও চার লাখ ৬০ হাজার নারী ধর্ষণের স্লোগানটি তরুণ প্রজন্ম ও সত্য না জানা মানুষদের মধ্যে কী সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া, ক্ষোভ ও ক্রোধ জন্ম দেয়, তা কি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত পক্ষ ও ব্যক্তিরা বোঝেন? লন্ডনে বসে আমরা অনেকে এ বিষয়ে সন্দিহান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের মতো ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ আরেকটি প্রপাগাণ্ডা মিশনে নেমেছে। সে সময়ে জেনারেল আইযুব খান ও পাঞ্জাবি শাসকেরা ছিল বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছে শত্রুপক্ষ। সেই শত্রুতাকে আওয়ামী লীগ সক্ষমতার সাথে ব্যবহার করেছিল। ২০১৩ সালে ৩০ লাখ বাঙালির খুন এবং চার লাখ ৬০ হাজার বাঙালি নারীর সম্ভ্রমকে তাদের প্রপাগাণ্ডায় তরুপের তাস বানিয়েছে। এ এমনই এক স্লোগান, যেটিকে কার্যকরভাবে মিথ্যা প্রমাণ না করে এর প্রতিপক্ষে দাঁড়ানো এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অপরাধবোধের সাথে লড়ার বিষয়। তিন মিলিয়নের এই মিথ্যাকে গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ না করে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব। এ সত্য অনুধাবন না করলে এবং এ জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ না নিলে নিশ্চিতভাবে চলমান শাহবাগ মঞ্চকে ঠেকানোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে। শাহবাগ মঞ্চও এভাবেই হয়তো সফল হবে। কিছু নিরপরাধ মানুষ ন্যক্কারজনক অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রাণ হারাবে এবং আগামী কোনো এক সময়ে আরেকজন কর্নেল শওকত আলী লিখবেন ‘মিথ্যা দাবি তিন মিলিয়ন’ নামের বই। বলবেন, বাঙালিরা বিশ্বাস করেছিল তাদের প্রপাগাণ্ডা। ঢাকায় বাংলাদেশে (এবং প্রবাসে) কারা আছেন মিথ্যা দাবি তিন মিলিয়নকে মিথ্যা প্রমাণের সুকঠিন যুদ্ধের সহযোদ্ধা হতে আগ্রহী?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন