কথিত নাস্তিক ব্লগারদের আল্লাহ ও রাসূল সা: উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা: কুরআন ও ইবাদত প্রসঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় লেখনী ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। এর ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে ব্যথিত, ুব্ধ ও মর্মাহত করে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। সরকার গত ২২ ফেব্রুয়ারি জুমার নামাজের পর সারা দেশে প্রতিবাদমুখর জনতাকে বিক্ষোভ প্রদর্শনে শুধু বাধা দিয়েছে তা নয়, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে পাখি শিকার করার মতো। মানুষ খুন জখম করে বিুব্ধ জনতার আগুনে ঘি ঢেলে তা আরো উসকে দিয়ে পরিস্থিতি বেসামাল করে দিয়েছিল। এর ফলে ইসলামি দলগুলো ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করল। সারা দেশে হাঙ্গামার মাধ্যমে হরতাল পালিত হলেও মানিকগঞ্জে চারজনের মৃত্যুতে শাহাদতের মিছিলে সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। তা ছাড়া সরকার দায়িত্ব জ্ঞানহীনভাবে ধর্মবিদ্বেষীদের পক্ষাবলম্বন করেই চলেছে। প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটির জনসভায় আল্লাহ ও রাসূলের সা: অবমাননা বরদাশত করবেন না বলার পরও! সরকার এক দিকে বরদাশত করবে না বলছে, আবার তাদের গানম্যান দিচ্ছে। শহীদ আখ্যা দিয়ে সংসদে শোক প্রস্তাব করছে। নাস্তিকের বাসায় ছুটে গেলেন, পাহারা দিয়ে হেফাজতে রেখেছেন। অন্য দিকে ধর্মপ্রাণ মানুষ আল্লাহ ও রাসূলের সা: অবমাননার প্রতিবাদের ভাষা প্রকাশের জন্য রাস্তায় নামলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে তা স্মরণকালের ভয়াবহ রেকর্ড করেছেন। যেখানে সালমান রুশদির মতো খোদাদ্রোহীও এ রকম অবমাননাকর মন্তব্য করেনি, সে রকম নাস্তিকদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ৯০ শতাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অকাতরে জীবন দিচ্ছে, জখম হচ্ছে, মৃত্যুর সাথে লড়ছে, কারাবরণ করে চলেছে এবং কোথাও শান্তিতে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে না মামলা-হামলার আতঙ্কে, সেখানে খোদাদ্রোহী নাস্তিক ব্লগারেরা সরকারের নিরাপত্তায় শান্তিতে বসবাস করছে, যেভাবে খুশি সেভাবে হালুম হুলুম করছে।
কী বিচিত্র ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই বাংলাদেশ! ক্ষোভে দুঃখে উত্তেজিত ভারাক্রান্ত সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়!! সরকার সমর্থিত আওয়ামী ওলামা লীগও আল্লাহ ও রাসূলের সা: অবমাননার ব্যথা হজম করতে পারল না!!! আর তাই ডা: ইমরান এইচ সরকার ও আহমেদ রাজীব হায়দারসহ শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ব্লগারদের শয়তানরূপী নাস্তিক উল্লেখ করে তাদের ব্লগ নিষিদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে আওয়ামী ওলামা লীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী স্বাক্ষরিত এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, শয়তানরূপী এই নাস্তিকরা রাসূল সা: ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর কুরুচিপূর্ণ এবং জঘন্য লেখা নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছে। এ ধরনের জঘন্য কাজ এ দেশের মুসলমান কখনো বরদাশত করেনি এবং করতে পারে না। সব মিলিয়ে কী পরিমাণ ধর্মপ্রাণ বিুব্ধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ও দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাঙ্গামাটির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন ‘আমাদের মহানবী সা:-কে কেউ যদি অসম্মান করে, কটূক্তি করে তা বরদাশত করব না’ বলার পরও কথা আর কাজের মিল তো দূরের কথা; ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। নাস্তিক ব্লগারদের নিরাপদ হেফাজতে রেখে পাহারা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন। আর তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেকেরই জিজ্ঞাসা, এসবই কি মহানবীর সা: প্রতি অসম্মান ও কটূক্তি বরদাশত না করার নমুনা!
সর্বোপরি সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর বামপন্থী ও খোদাদ্রোহীদের আছর ও প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়েছে। আর তাই অবস্থা যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সরকার নাস্তিকদের বরদাশত না করারই অংশ হিসেবে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে, প্রতিবাদ করার ঈমানি দায়িত্বও পালন করতে দিচ্ছে না সহজে।
ওলামা লীগের ভাষায় গুটিকয়েক নাস্তিক আওয়ামী লীগকে ইসলামবিদ্বেষী প্রমাণের প্রচেষ্টায় সফলতা লাভ করবে। আর তাতে শুধু দেশের মুসলমানদের মধ্যে নয় সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে বিতর্কিত হয়ে দলের সর্বনাশের আয়োজনই করা হবে। মুসলমান ও নাস্তিকদের দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ভয়াবহ রূপ নেবে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি হবে, সারা বিশ্বের মুসলমান ও দেশের মুসলমানের মতো ক্ষোভে উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদমুখর হয়ে নিন্দার ঝড় তুলতে পারে। কারণ কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর অবমাননা সহ্য করতে পারে না, পারবে না। এখন আওয়ামী ওলামা লীগের সত্যের মন্ত্রণার অনুসরণ করে তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত ব্যবস্থা নিলে দেশ ও জাতি সঙ্ঘাতময় অবস্থা থেকে রক্ষা পাবে এবং আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। মোটকথা, তখন দেশ ও জাতিসহ আওয়ামী লীগেরই কল্যাণ হবে। আওয়ামী ওলামা লীগ সংবাদ সম্মেলনে ও মানববন্ধনে স্বঘোষিত নাস্তিক বলে যেসব ব্লগারের নাম বা ছদ্মনাম উল্লেখ করেছে, তারা হচ্ছে আসিফ মহিউদ্দিন, আরিফুর রহমান ওরফে নিতাই ভট্টাচার্য, সুব্রত শুভ, আশীষ চ্যাটার্জি, অরুণ মজুমদার, তন্ময় তালুকদার, অরুণাভ মিত্র, অভিজিৎ রায়, সুমিত চৌধুরী, বিপ্লব কান্তি দে, শুভজিৎ ভৌমিক, ডাক্তার আইজুদ্দিন, চিন্তিত সৈকত, শর্মি আমিন, আল্লামা শয়তান, অমিত হাসান, ডা: ইমরান এইচ সরকার, আরিফ জেবতিক রতন, অমি রহমান পিয়াল, কামাল পাশা চৌধুরী, রাকিবুল বাশার রাকিব, আল তামাস, ইব্রাহিম খলিল, পারভেজ আলম, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, তানজিমা, আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ও আরজ আলী মাতব্বর।
আওয়ামী ওলামা লীগ উপরিউল্লিখিত স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। আওয়ামী লীগ খোদাদ্রোহীদের দিয়ে খারাপ কাজের প্রতি উৎসাহিত করলেও আওয়ামী ওলামা লীগের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করিয়ে ভালোর নির্দেশ দিচ্ছে এবং ভালোর প্রতি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করছে। এই স্ববিরোধী অবস্থানই আওয়ামী লীগের পতন অনিবার্য করে তুলছে। ভালো ও মন্দ, সত্য ও মিথ্যা একসাথে চলে না। এখন আওয়ামী লীগকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবেÑ তারা কোন পথে হাঁটবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন