বাংলাদেশে শাসকদের রক্তের এত তৃষ্ণা কখনো জেগে উঠতে পারে, নরহত্যার নেশা তাদের এমন পাগল করে তুলতে পারে, তা বোধকরি এ দেশের মানুষ কখনো কল্পনা করেনি। রক্ত তৃষ্ণায় তারা এতটাই উন্মত্ত হয়ে উঠেছে যে, এক দিনেই হত্যা করেছে অর্ধশতাধিক মানুষকে। সত্যি সত্যি এটা কোনো যুদ্ধক্ষেত্রেও বিরল ঘটনা। অথচ বাংলাদেশে তো কোনো যুদ্ধ চলছে না। কিংবা এখানে এখনো কোনো গৃহযুদ্ধও শুরু হয়নি। এ ঘটনার শুরু হয়েছিল সিরাজগঞ্জে দু’জন তরুণকে হত্যার মধ্য দিয়ে। টেলিভিশনে সে খবর দেখার পর মনে হয়েছিল, সরকার বোধকরি সংযত হবে। আর কোথায়ও সম্ভবত আর একটিও লাশ পড়বে না। না, রক্তলোলুপ সরকার সেখানে থেমে থাকেনি। তারা সারা দেশে লাশের স্তূপ গড়ে তুলেছে। এবং কী আশ্চর্য, সরকারের কোনো লোক এ জন্য দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করেনি। গঠিত হয়নি কোনো বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এই ৫৯টি শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি সরকারের কোনো প্রতিনিধি। বরং তারা যেন এ ঘটনাকে ন্যায়সঙ্গত ও তাদের স্বাভাবিক অধিকার বলেই ধরে নিয়েছে।
অর্থাৎ সরকার বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে, তাদের মতের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে, তাদের কোনো কার্যক্রমের বিরোধিতা করলে পরিণতি কী হতে পারে, এই রক্তের হোলি থেকে জনগণ যেন তা বুঝে নেয়। বিগত চার বছরের শাসনকালে সরকার সেটা জনগণকে বারবার বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তা আরো কঠোরভাবে বুঝিয়ে দিলো। কিন্তু সরকার একবারও ভেবে দেখছে না যে, মাত্র এক দিনে তারা কত মায়ের বুক খালি করল, কত সন্তানকে করল পিতৃহারা, কত বোন হারাল তাদের আদরের ভাই, কত নারী হারাল তাদের স্বামী, কত পরিবারে উঠল কান্নার হাহাকার ধ্বনি।
এই নির্মম গণহত্যাযজ্ঞের ভেতরেও উল্লাসে মত্ত হতে দেখলাম এক শ্রেণীর মানুষকে। যেন রক্তপিপাসা নিবৃত্তির পরিতৃপ্তি। যেমন আমরা দেখি ড্রাকুলা জাতীয় চলচ্চিত্রে। রক্তপিপাসায় উন্মত্ত ড্রাকুলা তার ভিকটিমের রক্ত পান করে যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে, তেমনি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল সরকার। এদের বিবেক নেই, বিবেকের দংশন নেই। এত রক্তেও এদের হাত কাঁপে না। ইহকাল-পরকালের ভাবনা হয় না। আল্লাহ তায়ালার বিচারের কথা মনে পড়ে না। আল্লাহ তায়ালার প্রসঙ্গ না আনলেও বোধকরি হতো। কারণ এ সরকার নাস্তিকদের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু শুনেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নাকি ভোরবেলা সুবেহ সাদেকের সময় ঘুম থেকে উঠে অজু করে ফজরের সামাজ আদায় করেন। তারপর কুরআন তেলাওয়াত করে মুনাজাত সেরে দিনের কাজ শুরু করেন। তাকে শেষ বিচারের কথা মনে করিয়ে দেয়া তাই হয়তো অন্যায় কিছু নয়। শুধু ইসলাম বলে কথা নয়, কোনো ধর্মই তো নির্বিচারে এ ধরনের নরহত্যা অনুমোদন করে না। কোনো কোনো ধর্মে জীব হত্যাই মহাপাপ। সরকার কি বিবেচনা করবে, তারা কতটা পাপিষ্ঠের কাজ করেছে?
নাস্তিক, ইসলামদ্রোহী, আল্লাহদ্রোহী, রাসূলদ্রোহী রাজীব খুন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারকে সান্ত¡না দিতে বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন। এবার প্রধানমন্ত্রী কি বৃহস্পতিবার খুন হওয়া ৫৯ পরিবারে ছুটে যাবেন তাদের সান্ত্বনা দিতে? নাকি সে মুখ তাদের আছে? এই হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই সরকার এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, এ দেশে যারা জামায়াত-শিবিরের সমর্থক, তারা মানুষই নয়। তাদের নির্বিচারের হত্যা করার অধিকার সরকারের বা যে কারো আছে। বরং সেটাই হবে সরকারের পরম ধর্ম। এক দিনে এই ৫৯ হত্যাকাণ্ডের আগেও কয়েক দিনে সরকার আরো ২৩ জন নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। তারও প্রতিবিধানের কোনো কথা আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি। বরং ওই সব হত্যাকাণ্ডের পর তখনো সরকারের লোকেরা উল্লাসে মত্ত হয়েছে।
কোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এমন গণহত্যার আর কোনো নজির নেই। কোনো দেশের সরকার তার নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর শুধু ভিন্নমতের কারণে এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন। এই ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রতিক্রিয়ায় যথার্থই বলেছেন। বৃহস্পতিবারই এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই বর্তমান সরকারের পুলিশ, র্যাব ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী বহু সাধারণ মানুষ ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করে সারা দেশে নারকীয় তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে। এটা এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই পৈশাচিক ঘটনায় অতীতের নির্মম ফ্যাসিস্ট শাসকেরাও লজ্জায় মুখ ঢাকবে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক মতপার্থক্য স্বীকৃত। ভিন্নমত সহ্য করা গণতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী সরকারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বিরোধী দলশূন্য রাজনৈতিক পদ্ধতি গড়ে তোলা। এদের হাতে বহু মত ও পথের গণতন্ত্রের সব সময় মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী সরকারের নির্দেশে পুলিশ-র্যাব ও সশস্ত্র যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এটা ’৭১ সালের হানাদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে। দেশের মানুষ আজ চরম অস্থিরতায় দিন যাপন করছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে রক্তারক্তির পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে তাদেরকে সব ফ্যাসিবাদী সরকারের মর্মান্তিক পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি অবিলম্বে সারা দেশে সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যার সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। তিনি নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সরকার সারা দেশে যে নরমেধযজ্ঞ পরিচালনা করেছে, তা গণহত্যাই। এর কারণ কী? এটা দেশকে বিরোধী দলশূন্য করার উদ্যোগ। এ রকম কোনো উদ্যোগ যে শেষ পর্যন্ত সফল হয় না, সেটা উপলব্ধি করার মতো কাণ্ডজ্ঞানও সরকার হারিয়ে ফেলেছে। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারও একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। দমন-পীড়নের মাধ্যমে সে উদ্যোগ সফল করতে না পেরে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে শুধু নিজের একটি দল বৈধ রেখেছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। আজকের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কথায় কথায় নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তিনিও ভালোভাবে জানেন যে, এই দমন-পীড়নের নীতি কখনো সফল হয় না। মানুষ প্রতিবাদ করেই। এ রকম প্রতিবাদ তারা নিজেরাও করেছিলেন। শেখ মুজিবের নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্য তারা গণবাহিনী গঠন করেছিলেন। সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এই গণবাহিনীকে জনগণও খাদ্য-আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছিল। কেন করেছিল, আশা করি ইনু সাহেব তা উপলব্ধি করেন। আজো সরকারের এই দমন-পীড়ন, হত্যা-গণহত্যা প্রতিরোধ করতে যে তেমন আন্দোলন গড়ে উঠবে না, তেমন ঘটনা ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। মানুষের পিঠ ক্রমেই দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ গড়ে ওঠা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু এবার এক ভিন্নমাত্রা দেখছি সমাজের ভেতরে। মনে হচ্ছে, আমরা সবাই যেন কেমন বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছি। শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃশাসনের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সমাজের বিবেকবান মানুষেরা। ১৯৭৪ সালের ৩১ মার্চ জাতীয় প্রেস কাবে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে ড. আহমদ শরীফের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল ‘মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটি’। তার সাথে ছিলেন কবি সিকান্দার আবু জাফর, বদরুদ্দীন উমর, মির্জা গোলাম হাফিজ, এনায়েতউল্লাহ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সৈয়দ জাফর, আলমগীর মহিউদ্দীন, বিনোদ দাশগুপ্তসহ দেশের আইনজীবী, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী, চিত্রশিল্পী প্রমুখ সচেতন মানুষ। বিবেকের তাড়নায় ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন।
আজ কি সমাজের ভেতর থেকে বিবেক-বুদ্ধির বিলোপ ঘটেছে? আমরা কি প্রতিবাদ-প্রতিরোধে রুখে দাঁড়াতে পারব না? সরকার নাগরিকদের ওপর এই যে গণহত্যাযজ্ঞ চালাল, চালিয়ে যাচ্ছে, আমরা কোনোভাবেই তার কোনো প্রতিবাদ করব না? না, প্রতিবাদ ধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি না। তবে কি দেশে বুদ্ধিজীবী সমাজ বলতে কিছু নেই? দেশে এত সব মানবাধিকার সংগঠন কাজ করছে, কিন্তু তাদের মুখেও একটি টুঁ শব্দ নেই। যেন সরকার যা করছে ভালোই করছে। এখানে প্রতিবাদের কিছু নেই। এ-ও কম দুর্ভাগ্যের বিষয় নয়। বিএনপি শাসনের শেষ দিকে সুশীলসমাজ নামে এক দল লোকের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের লক্ষ্যও মহৎ ছিল না। সে লক্ষ্যও ছিল মতলবি। বিএনপি সরকার যেন আর কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে। সে লক্ষ্যে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে হক না-হক কথা বলে গণতন্ত্র তথা রাজনীতিরই বিলোপ সাধন করতে উদ্যোগী হয়েছিল। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশী অর্থে নানা সভা-সমিটি, মিটিং-সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তাতে তারা সফলও হয়েছিল। দেশকে রাজনীতিশূন্য করার লক্ষ্যে তারা সামরিক শাসন ডেকে এনেছিল। আর রাজনীতিকদের চরিত্র হনন করাসহ এমন কোনো কুকর্ম নেই যে তারা করেনি। এই স্বঘোষিত সুশীলসমাজ অবিরাম মিথ্যাচার করে মানুষকেও বেশ বিভ্রান্ত করতে পেরেছিল। এখন আর তাদের টিকিটিরও হদিস পাওয়া যায় না।
আর তরুণ সমাজের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারুণ্য সব সময়ই অন্যায় জোর-জুলুমের প্রতিবাদ করে। তারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে, ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে। তারুণ্য কখনো স্বৈরাচারের পক্ষাবলম্বন করেনি। করে না। বৃহস্পতিবার যে গণহত্যাযজ্ঞ সরকার সারা দেশে পরিচালনা করল, তারুণ্য তার প্রতিবাদ না করে পারে না। আমরা বলতে চাই, তারুণ্য কখনো ব্যবহৃত হতে পারে না। আজ যদি তরুণ কণ্ঠে এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারিত না হয়, তবে তা তারুণ্যের জন্য এক বেদনাদায়ক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এই গণহত্যায় আমরা মিডিয়াও কি অবদান রাখিনি? মিডিয়া রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আইন-বিচার-প্রশাসন তো গেছেই। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারত। ন্যায়, সত্য, গণতন্ত্রের পক্ষাবলম্বন করতে পারত। শক্ত পায়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে রুখে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু এবারে দেখলাম, প্রায় সব সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলো। ফ্যাসিবাদের আগমনের পথ প্রশস্ত করল। সরকারকে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে সহায়তা করল। মিডিয়াতেও কি তবে শিক্ষার বিলোপ ঘটেছে? আমাদের বিবেক-বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে? আমরাও কি বুঝতে পারছি না, ফ্যাসিবাদে মদদ দিলে এক সময় সমাজে কী ভয়াবহ অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে? কী হানাহানি রক্তারক্তির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে? এ পর্যন্ত যা দেখলাম, তাতে সে রকম দেউলিয়াত্বই প্রকট হয়ে উঠেছে।
আমরা শাহবাগের উচ্ছ্বাস-উল্লাস দেখলাম, কিন্তু এই মুদ্রার উল্টো পিঠের দিকে মোটেও নজর দিলাম না। মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর শাহবাগসহ কোথাও কোথাও মিষ্টি বিতরণ দেখলাম আমরা। কিন্তু এই রায়ের পর সারা দেশে যে স্তব্ধতা নেমে এসেছিল, সেটি দেখতে পেলাম না। হরতালের কারণে এমনিতেই রাস্তাঘাটে মানুষ ছিল কম। কিন্তু এই রায় ঘোষণার পর মানুষ দ্রুত বাড়িঘরের দিকে ছুটে গিয়েছিল। রাস্তাঘাট জনশূন্য, যানবাহনশূন্য হয়ে পড়েছিল। এ দৃশ্যটি আমরা আমলে নিলাম না।
সরকার অবিরাম একাধিক মিডিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যরা চুপ করে আছে। আমাদের তো আর কিছু বলেনি। আমরা কেন আগ বাড়িয়ে সরকারের পায়ে পা দিয়ে বিবাদ করতে যাবো। কিন্তু সরকার যে দিন আপনাদের ওপরও চড়াও হবে, সে দিন তার প্রতিবাদ করার জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। ১৯৭২-৭৫ সালে একমাত্র সরকারবিরোধী দৈনিক ছিল গণকণ্ঠ। সরকার নানাভাবে গণকণ্ঠ পত্রিকার ওপর হামলা চালাত। গ্যালি ভেঙে দিত। গুণ্ডা লেলিয়ে দিত। তার সম্পাদক কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার পর্যন্ত করেছিল। তখন সমাজের যে বুদ্ধিজীবীরা গণকণ্ঠের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন, তাদের কেউই গণকণ্ঠের নীতি-আদর্শের অনুসারী ছিলেন না। কিন্তু নৈতিক অবস্থান থেকেই তারা গণকণ্ঠের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। অর্থাৎ সরকারকে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। আজ আমরা সে নৈতিক অবস্থানও হারিয়েছি। কিন্তু আমাদের তেমন নৈতিক অবস্থান এখন অত্যন্ত জরুরি। জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক আদর্শ আমরা না মানতে পারি, কিন্তু তাদের মত প্রকাশ করার অধিকারের প্রতি আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তার জন্য আমাদের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এটাই গণতান্ত্রিক অবস্থান। আমরা যদি সে অবস্থান সম্পর্কে আন্তরিক না হই, তাহলে যে ফ্যাসিবাদ আজ দেশব্যাপী গণহত্যা শুরু করেছে, তা থেকে আমরাও এক দিন নিষ্কৃতি পাবো না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন