মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্র


এ অপচেষ্টা রুখতে হবে

রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘিœত করার মতো কিছু খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এ ধরনের অপচেষ্টার সাথে যুক্ত সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ থেকে আসেনি। দেশে চলমান আন্দোলনে দু’পক্ষ এ ব্যাপারে একে অন্যের প্রতি দোষারোপের আঙুল তুলছে। আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য বাংলাদেশে রয়েছে, সেটি রক্ষারও আহ্বান জানিয়েছেন সবাই। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো আঘাত বরদাশত করা হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন সময় গণবিচ্ছিন্ন শাসকেরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে জনগণের আন্দোলনকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। ব্যর্থ ও গণবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার পেশি ও অস্ত্রশক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় তারা ফ্যাসিবাদী নির্যাতন-নিপীড়ন এবং নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ যখন ফুঁসে উঠছে, সেই মুহূর্তে বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেছেন, ধর্ম-গোত্র-সম্প্রদায় নির্বিশেষে এ দেশে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের জান-মাল-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অধিকারের সুরায় বিএনপি বদ্ধপরিকর। এর ওপর কোনো আঘাত বরদাশত করা হবে না। কুচক্রী মহলের উসকানিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও সম্মান যেন কোনোভাবে তিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি। বিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান দল জামায়াতে ইসলামীও অমুসলিমদের জান-মাল, ইজ্জত-আবরু এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এটি রাষ্ট্র এবং সব মুসলমানের ঈমানি দায়িত্বের অংশ। বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে এর দায়দায়িত্ব জামায়াতের ওপর চাপাতে চাচ্ছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
গণতান্ত্রিক সমাজের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থান। এই বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সমাজে যুগ যুগ ধরে বিরাজ করার ঐতিহ্য রয়েছে। একই গ্রামে এবং পাশাপাশি গ্রামে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের বসবাস রয়েছে বাংলাদেশের বহু স্থানে। বহু বছর ধরে এই সহাবস্থানের কোনো ব্যত্যয় দেখা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক কালে এর ব্যতিক্রম কিছু কিছু ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলা এবং এর জের ধরে সৃষ্ট উত্তেজনা এখনো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে ঘটনাটিকেও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায় শুরুতেই। রাজনৈতিকভাবে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করতে করতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধের বিতর্কিত রায়ে দেশবরেণ্য আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যখন সরকারবিরোধী তুমুল আন্দোলন চলছে তখন সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার বিষয়টি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নানা রহস্যেরও সৃষ্টি করেছে।
আমরা মনে করি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো বিষয় নিয়ে রাজনীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা চালানোর কোনো অবকাশ নেই। এমনিতেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ঘৃণা ছড়ানোর একটি প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই রাজনৈতিক ঘৃণাকে অন্য দিকে বিস্তারের চেষ্টা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মাত্র কয়েক দিনে শতাধিক মানুষের প্রাণহানিতে রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ধরনের ব্যর্থতা ঢাকতে যেন কোনোভাবেই সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা না ঘটানো হয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে না পড়ে তা নিশ্চিত  করতে হবে। তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিককেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে একে অন্যের সঙ্কটে, এ ক্ষেত্রে মানুষের পরিচয়টাই হবে বড়, ধর্মের বিশ্বাস নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads