এ অপচেষ্টা রুখতে হবে
গণতান্ত্রিক সমাজের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থান। এই বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সমাজে যুগ যুগ ধরে বিরাজ করার ঐতিহ্য রয়েছে। একই গ্রামে এবং পাশাপাশি গ্রামে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের বসবাস রয়েছে বাংলাদেশের বহু স্থানে। বহু বছর ধরে এই সহাবস্থানের কোনো ব্যত্যয় দেখা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক কালে এর ব্যতিক্রম কিছু কিছু ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলা এবং এর জের ধরে সৃষ্ট উত্তেজনা এখনো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে ঘটনাটিকেও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায় শুরুতেই। রাজনৈতিকভাবে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করতে করতে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। যুদ্ধাপরাধের বিতর্কিত রায়ে দেশবরেণ্য আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যখন সরকারবিরোধী তুমুল আন্দোলন চলছে তখন সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার বিষয়টি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নানা রহস্যেরও সৃষ্টি করেছে।
আমরা মনে করি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো বিষয় নিয়ে রাজনীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা চালানোর কোনো অবকাশ নেই। এমনিতেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ঘৃণা ছড়ানোর একটি প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই রাজনৈতিক ঘৃণাকে অন্য দিকে বিস্তারের চেষ্টা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মাত্র কয়েক দিনে শতাধিক মানুষের প্রাণহানিতে রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ধরনের ব্যর্থতা ঢাকতে যেন কোনোভাবেই সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা না ঘটানো হয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিককেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে একে অন্যের সঙ্কটে, এ ক্ষেত্রে মানুষের পরিচয়টাই হবে বড়, ধর্মের বিশ্বাস নয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন