যুবলীগ নেতার শহীদ মিনার ভাঙার অপচেষ্টা
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসে। মানুষের বিক্ষোভ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। সরকার যখন নারকীয় কায়দায় মানুষ হত্যা করে বিক্ষোভ দমন করতে চাইছে, ঠিক সেই সময় সরকারের নানা তাঁবেদার গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিুব্ধ মানুষের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার ইত্যাদির ওপর হামলার গুজব রটানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিছু মিডিয়া অতি উৎসাহের সাথে এসব প্রচার করে চলেছে। সবশেষে আমরা দেখলাম খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা এ কাজ করতে গিয়ে হাতেনাতে জনগণের হাতে ধরা পড়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়, মানুষের বিক্ষোভকে দমনের উছিলা হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য ক্ষমতাসীনেরা কৌশলে এ অন্যায় কাজটি করে তা বিুব্ধ মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরে যুবলীগ নেতা তবিবর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি মাদরাসায় স্থাপিত শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে শহর যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক তবিবর রহমান টিপুসহ তিন যুবক ঐতিহ্যবাহী শেরপুর শহীদিয়া কামিল স্নাতকোত্তর মাদরাসা প্রাঙ্গণে ঘটনাটি ঘটায়। উপস্থিত মাদরাসার ছাত্র ও প্রত্যদর্শীরা জানান, বেলা ৩টার দিকে তিন যুবক একটি মোটরসাইকেল নিয়ে মাদরাসার প্রধান ফটকের পকেট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে শহীদ মিনারের কাছে এসে দাঁড়ায়। এরপর এক যুবক শহীদ মিনারের বেদিতে স্থাপিত চারটি ছোট আকারের স্টিলের খুঁটিতে একটি লাল কাপড় লাগিয়ে জোরে টানাটানি করে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালায়। টানাটানির একপর্যায়ে স্টিলের খুঁটির মাথায় লাগানো একটি ক্যাপ খুলে যায়। এরপর তারা মাদরাসায় লাগানো প্রধান ফটকটিও ভাঙার চেষ্টা চালায়। এতে করে ফটকের ওপর দিকের কিছু অংশ তিগ্রস্ত হয়। উপস্থিত জনতা ঘটনাস্থল থেকে ওই যুবলীগ নেতাকে আটক করতে পারলেও তার দুই সহযোগী পালিয়ে যায়। আটক যুবলীগ নেতা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও শেরপুর পৌরসভা কাউন্সিলর বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববির ভাই। বর্তমান সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনেরা সব ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনাও সেভাবে সাজানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানতে পেরেছেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আটক যুবলীগ নেতাকে ‘পাগল’ সাজাতে প্রভাবশালী একটি মহল নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতে যখন উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ইন্ধনে বারবার রক্ত ঝরেছে তখন বাংলাদেশের সচেতন মানুষ এ ধরনের উগ্রতাকে প্রতিহত করেছে। গুজরাটে যখন উগ্র গোষ্ঠী ভিন্নধর্মাবলম্বীকে নির্মূল করছিল কিংবা অযোধ্যায় যখন মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছে। চলমান বিক্ষোভকে সরকার একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে পরিচিতি দেয়ার চেষ্টা করছে। মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভকে দেখানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী তৎপরতা হিসেবে। বিক্ষোভের যে চরিত্র তাতে কোনো যুক্তিই বলে না, এটি ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ওপর ক্ষোভ। মানুষের এ ক্ষোভ স¤পূর্ণরূপে সরকারের বিরুদ্ধে। আমরা দেখেছি, সরকার এবং অতি উৎসাহী কিছু গোষ্ঠী বাংলাদেশের চরম দুর্দিনে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বিক্ষোভকারীদের কাজ বলে জোর করে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। অন্য দিকে প্রমাণ পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের উগ্র কাজকে প্রকাশ করছে না। যেমনটি আমরা বগুড়ায় শহীদ মিনারে হামলার ঘটনাটি দেখলাম। অতি উৎসাহী ওই সব মিডিয়া এ ঘটনােিক খবর হিসেবেই ট্রিট করেনি। এতে করে তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে মানুষের কষ্ট হয় না।
সরকার এবং ওই অতি উৎসাহী মহলকে এ ন্যক্কারজনক অপকর্ম থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই আমরা। জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনারÑ এগুলো আমাদের গৌরব অর্জনের প্রতীক। একই সাথে সংখ্যালঘুরা এ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব প্রতীক ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমরা আশা করব, এগুলো নিয়ে সরকার এবং অতি উৎসাহী চক্র অপরিণামদর্শী অপপ্রচার চালানো থেকে দূরে থাকবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন