এ হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাবার ভাষা নেই
গত বৃহস্পতিবার কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির দন্ডাদেশ ঘোষিত হবার পর সারা দেশের ইসলামপ্রিয় মানুষের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাংলাদেশীসহ বহু মানুষ এ দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত মাওলানা সাঈদী মুফাসসিরে কুরআন হিসেবে দেশে যেমন বিখ্যাত, তেমনি ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। তার তাফসির মাহফিলে লাখ লাখ মানুষ সমবেত এবং কুরআনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা শুনে মুগ্ধ হন। সাঈদী সাহেবের হৃদয়গ্রাহী আলোচনায় বিমুগ্ধ হয়ে দেশে-বিদেশের অসংখ্য অমুসলিম ইসলামগ্রহণ করে নিজেদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবার দৃপ্ত শপথ নিয়েছেন। কিন্তু নাস্তিক্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষীদের অন্তরে মাওলানা সাঈদীর ইসলামের দাওয়াতী কর্ম যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। তাই তারা মাওলানার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয় এবং তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে এ দেশের দেউলে নাস্তিক্যবাদের ধ্বজাধারী রাজনীতিক মহলটি শংকিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাই তারা এ দেশের ইসলামের বলিষ্ঠ কণ্ঠ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে নানাবিধ মিথ্যে অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান এবং পিরোজপুর থেকে দু'-দু'বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর সাঈদী সাহেবের ওপর আওয়ামী ও নাস্তিক্যবাদী রাজনীতিকরা ভীষণ রুষ্ট হয়ে পড়েন। তাই তাকে কিভাবে ঘায়েল করা যায় তার ফন্দি-ফিকির অব্যাহত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে দীর্ঘ চল্লিশ বছর আগের মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধের মামলায় জড়ানো হয়। অথচ এলাকাবাসী এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যমতে যুদ্ধাপরাধ কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে মাওলানার দূরতম সম্পর্কও নেই বলে জানা যায়। মাওলানাকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেবার দিন একটি টিভি চ্যানেলে পিরোজপুর-পারেরহাট এলাকার একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারও একই সাক্ষ্য দেন।
মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির দন্ডাদেশ দেবার দিন সারা দেশে জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু সরকারের পুলিশ নির্বিচারে বুলেট চালিয়ে ৭০ জনেরও বেশি বিক্ষুব্ধ মানুষকে হত্যা করে। শুধু পুলিশ নয়, সরকারের ক্যাডার বাহিনীও ক্ষুব্ধ মানুষের ওপর চড়াও হয় এবং হামলা চালায়। এমনকি অনেকের বাড়ি-ঘর এবং দোকানপাট ভাংচুর ও লুট করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, সাতক্ষীরা, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওসহ সারা দেশে অসংখ্য মানুষকে বুলেটবিদ্ধ করে মারাত্মকভাবে আহত করেছে পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনী। অনেক লাশ ফেরত দেয়নি পুলিশ। এমনকি মারাত্মকভাবে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা।
সরকারদলীয় নাস্তিক ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও বিরোধীদলীয় জামায়াত-শিবিরের মিছিলে গুলী চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘৃণ্য নজির স্থাপন করলো বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। এমনকি গ্রেফতারকৃতদের থানায় নিয়ে গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে বুলেটবিদ্ধ করবার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া হ্যান্ডকাপ পরানো মানুষকেও পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে এমন দৃশ্য প্রায়শ দেখা যায়। প্রকৃত অর্থে ক্ষমতা হারাবার ভয়ে ভীত সরকার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার জোর দেখিয়ে বুলেটবিদ্ধ করে মানুষ মেরে তারা টিকে থাকতে চায়। বিক্ষুব্ধ জনতার ইট-পাটকেলের জবাবে পুলিশ বুলেট ছুঁড়ে পাখির মতো মানুষ হত্যা করতে আর দ্বিধা বোধ করছে না। জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের স্থলে ব্যবহৃত হচ্ছে বুলেট। ক্ষুব্ধ মানুষকে তারা ‘মানুষ' মনে করতে পারছে না। এমনটি না হলে মাত্র এক বেলা তথা দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭০-এর অধিকসংখ্যক মানুষকে কিভাবে নির্বিচারে হত্যা করতে পারলো? আমরা কি কোনও গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দা? নাকি কোনও অবরুদ্ধ দেশে আমরা বসবাস করছি? এ প্রশ্ন এখন সকল সচেতন মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের কানে তা ঢুকছে বলে মনে হয় না। বিক্ষোভে বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিহত হবে, তা কারুর কাম্য নয়। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদেরও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচিয়ে যেমন দায়িত্ব পালন করবে, তেমনি মানুষের জীবনও যেন না যায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আমরা মনে করি, গত বৃহস্পতিবার পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাতে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেল তা সন্দেহাতীতভাবে গণহত্যা। এর দায়ভার ক্ষমতাসীনরা কিভাবে এড়াবেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা এ হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাবার ভাষা জানি না। তবে যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার দাবি করি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন