রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

লংমার্চের আলোয় জাগ্রত জাতি



শুধু গান আর নাটক করলেই কেউ সংস্কৃতিমান হয়ে যায় না। প্রগতিশীলতাও বুলি আওড়ানোর মতো কোনো বিষয় নয়। আচরণের মাধ্যমেই প্রগতি ও প্রাগ্রসরতার স্বাক্ষর রাখতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঘাদানিকসহ তথাকথিত কিছু প্রগতিবাদী সংগঠন। আর তাদের সাথে সংহতি ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বাম সংগঠনগুলো কায়েমী স্বার্থরক্ষার চাতুর্যই প্রদর্শন করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বাংলাদেশের গণমানুষের চিন্তা-চেতনার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের লংমার্চকে প্রতিহত করতে পারেনি তারা। ঘাদানিক ও সাংস্কৃতিক জোট তো সবসময় প্রগতির বুলি আওড়ায়। কিন্তু একটি সংগঠনের লংমার্চ কর্মসূচিকে প্রতিহত করার ঘোষণা যে একটি প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ তা কি তাদের তাত্ত্বিকরা উপলব্ধি করতে পারেননি? প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ দিয়ে যে সমাজকে আলোকিত করা যায় না, বরং ব্যর্থতার কালিমায় বিপর্যস্ত হতে হয় ইতিহাসের সে সত্য তারা ভুলে গেলেন কেমন করে? হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ বানচাল করতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে তারা হরতাল কর্মসূচি পালন করে। সরকারি ছুটির দিনে এবং রাতের বেলা এ ধরনের হরতাল পালনের ঘটনা নিকট-অতীতে কখনো ঘটেনি। নাস্তিক ব্লগার হিসেবে পরিচিত তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের শাহবাগিরাও হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ প্রতিহত করতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। সরকারি মদদে তথাকথিত প্রগতিশীলরা হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি পালন করলেও দেশের ঈমানদীপ্ত গণমানুষের লংমার্চ-কর্মসূচিকে প্রতিহত করা যায়নি।
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও সমাবেশ বানচাল করার জন্য হামলা এবং বাধা প্রদানের কৌশল অবলম্বন করে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা। সরকারের মদদে ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক, রেল ও নৌপথ বন্ধ করে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। বাধার এসব পাহাড় ডিঙ্গিয়েই হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও মহাসমাবেশে যোগ দেয় প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। আর যারা সরকারি দলের সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের বাধা এবং যানবাহনের অভাবে ঢাকায় আসতে পারেননি, তারা নিজ নিজ এলাকার সড়কে বসেই অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে রাজধানীর শাপলা চত্বরের লংমার্চ ও মহাসমাবেশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ শনিবারের ঐতিহাসিক লংমার্চের ঘটনায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করেছে। গ্রাম-গঞ্জ-শহর থেকে শত বাধা ডিঙ্গিয়ে পায়ে হেঁটে আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে চারদিকের প্রকৃতি ও পরিবেশ মুখরিত করে লাখ লাখ তৌহিদী জনতা পৌঁছে গেছেন শাপলা চত্বরের অভীষ্ট লক্ষ্যে। দীপ্ত ও পবিত্র এমন লংমার্চের দৃশ্য সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশের মানুষ আর লক্ষ্য করেনি। শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠে যখন ইসলাম ও মহানবী (সা.) এর মর্যাদা রক্ষার দীপ্ত শপথ উচ্চারিত হচ্ছিলো, তখন পুলিশ বেষ্টনীতে ৬-৭শ’ লোকের কথিত মহাসমাবেশে শাহবাগি ব্লগারদের নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকার ঘোষণা করেন, ‘শাহবাগ শান্ত হবে হেফাজতে ইসলামের রক্ত দিয়ে’। ইমরান ইসলামপন্থীদের প্রতিহত করতে গজারি লাঠি হাতে প্রস্তুত থাকতেও নির্দেশ দেন। এই হলো তথাকথিত প্রগতিবাদীদের অহিংস আন্দোলনের নমুনা। হেফাজতে ইসলামের রক্ত না পেলে তাদের শান্তি নেই।
হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ মঞ্চের নাস্তিক ব্লগাররা এতটা ক্ষিপ্ত হলো কেন? হেফাজতে ইসলাম তো শাহবাগিদের রক্ত চায়নি, সুবিচার চেয়েছে। রক্ত চাইলে তো তারা শনিবার লাখ লাখ মানুষের মিছিল নিয়ে শাহবাগ মঞ্চকে গুঁড়িয়ে দিতে পারতো। হেফাজতে ইসলাম চাইলে তো রাজধানীতে লাখ লাখ মানুষের অবস্থান-কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাগিদের প্রশ্রয়দাতা আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপর্যস্ত করতে পারতো। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ তেমন কোনো হিংসাত্মক বা প্রতিশোধপরায়ণ কর্মসূচি না নিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই সমাবেশ সমাপ্ত করে শান্তিপূর্ণভাবে সবাইকে যার যার গন্তব্যে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। হেফাজতে ইসলামের এমন দায়িত্বপূর্ণ আচরণ থেকে সরকার, শাহবাগি ও প্রতিশীলতার অভিনয়কারীদের শেখার অনেক কিছু আছে। হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ক্ষমতালিপ্সা কিংবা কোনো ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়নি। হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য সংগঠনটির আমীর বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর লিখিত বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে তিনি বলেন, ঈমান ও দেশ রক্ষার লড়াই শুরু হয়ে গেছে। মানজিলে-মাকসুদে পৌঁছা ছাড়া আমাদের ঘরে ফেরার সুযোগ নেই। আল্লামা শফী আরও বলেন, মুসলমানদের ঈমান, মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.), পবিত্র ইসলাম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো মানুষের পক্ষে ঘরে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। আল্লামা শফীর বক্তব্যে যে দেশের গণমানুষের চিন্তা-চেতনার প্রতিধ্বনি ঘটেছে, তা উপলব্ধি করা যায় লাখ লাখ মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষাম-িত লংমার্চের দৃশ্যে। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার, বামপন্থী ও ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। লাখো কণ্ঠে তারা তাদের প্রিয় ধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় দৃপ্ত শপথ উচ্চারণ করেছে। সমাবেশ শেষে রাজধানী থেকে শপথের এই বার্তা তারা বয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহরে। আমরা জানি যে, ইসলামের শাশ্বত ও সুমহান বার্তা এবং স্বাধীনতার চেতনায় যেদিন আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব পরিশুদ্ধ হবে সেদিনই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রিয় স্বদেশের সব মানুষ পাবে তাদের কাক্সিক্ষত উন্নত মানবিক জীবন। তেমন দিনের অপেক্ষাতেই প্রহর গুণছে সমগ্র জাতি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads