ক’দিন আগে দেখলাম আল কুরআনের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য ইটিভিতে হাজির হয়েছিলেন কলকাতা ও ঢাকা মাদরাসা-ই-আলিয়ার সাবেক অধ্যাপক মরহুম মাওলানা হাবিবুল্লাহ সাহেবের ভাতিজা শাহরিয়ার কবীর। শাহরিয়ার সমাজে পরিচিত একজন সেকুলার বুদ্ধিজীবী হিসেবে। এখন তিনি কুরআনেরও ‘ব্যাখ্যা’ দিচ্ছেন। সেদিন টিভিতে দেখলাম ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, মানে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সুযোগ্যা কন্যা মদিনা সনদের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, তিনি মদিনা সনদ মোতাবেক চলবেন। ফেসবুকেও দেখলাম, এক সৈয়দ সাহেব মদিনা সনদের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। দেখে ও শুনে খুব ভালো লাগছে যে, ১৪৫০ বছর আগের মদিনা সনদ নিয়ে সেকুলার (ধর্মহীন) মহল ও আওয়ামী লীগ মহল কথা বলতে শুরু করেছে। কিতাবি ইহুদিরা নিজেদের কিতাব তাওরাতকে খেয়ালখুশি মতো ব্যাখ্যা করত। কখনো কখনো মূল আয়াতও বাদ দিয়ে দিতো। তারা ঈসা নবী আ: ও তার মায়ের নামে কুৎসা রটনা করত। এ জন্য আল্লাহ পাক তাদের লানত বা অভিশাপ দিয়েছেন। ঈসা নবী আ:-এর অনুসারীরাও তাকে ‘খোদার পুত্র’ বলে অপপ্রচার করত। কিন্তু আল কুরআন হজরত মুসা আ: ও হজরত ঈসা আ:কে আল্লাহ পাকের সম্মানিত নবী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সব নবী ও রাসূলকে মান্য করা, সম্মান করা মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক।
আলেম-ওলামাদের জোট, হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি পেশ করার পর সরকারি দল ও বুদ্ধিজীবীরা সবাই হৈ হৈ করে তেড়ে এলেন। বললেন ১৩ দফা ‘মধ্যযুগীয়’। কেউ বললেন, সরকার এগুলো পরীা করে দেখছে। সরকার কিছু ‘হুজুর’কে দিয়েও ১৩ দফা নিয়ে কথা বলিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, ১৩ দফা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী। হেফাজত সংবাদ সম্মেলন ডেকে ১৩ দফা ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’। সরকারি দলের প্রোপাগান্ডা এখনো চলছে। ১৩ দফাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলে উঠলেন, ‘দেশ চলবে মদিনা সনদ মোতাবেক।’ প্রধানমন্ত্রী নিজে মদিনা সনদ পড়েছেন কি না সন্দেহ হয়। অথবা মতলবাজ কোনো লোক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে মদিনা সনদের কথা বলিয়েছেন হয়তো। সরকারি দলের সেকুলার নেতারা বগল বাজাচ্ছেন মদিনা সনদ নিয়ে। তাদের সবার ধারণা, মদিনা সনদের মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল সা: ধর্মনিরপে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, আওয়ামী লীগ দোটানায় পড়েছে কোন দিকে যাবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। শেখ হাসিনা নিজেকে ধর্মনিরপে, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত মনে করেন। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কখনোই সেকুলার বা ধর্মহীন ছিল না, এ কথা প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন। ইতোমধ্যেই কেউ কেউ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দুই নৌকায় পা রেখেছেন। এই তো ক’দিন আগে বলেছেন, শাহবাগ বন্ধ করে দিতে হবে। হেফাজতকে লংমার্চ ও সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। পরে কেউ হয়তো তাকে বুঝিয়েছেন, অনুমতি দেয়া ঠিক হয়নি। হোম মিনিস্টারকে বলে দিলেন বাধা দিতে। শাহবাগ ও সাংস্কৃতিক জোটকে বলে দিলেন হরতাল দিতে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। শত বাধা উপো করেই হেফাজত লংমার্চ ও সমাবেশ করল কয়েক লাখ লোক নিয়ে। চার দিকে হইচই পড়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীও একটু নড়ে চড়ে বসলেন। তাই কিছুণ শাহবাগের প,ে আবার কিছুণ ধর্মীয় চেতনার পে আসা যাওয়া করছেন। নির্বাচনের জন্য সব ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান করে হঠাৎ করে বলে দিলেন, তিনি মদিনা সনদ মোতাবেক দেশ চালাবেন। তিনি হয়তো এর মাধ্যমে তার সেকুলারিজম (ধর্মহীনতা) ও ধর্মমনস্কতা দু-ই রা করতে পারবেন বলে মনে করেন। তিনি জানেন না যে, এ ধরনের মতিগতি ভালো না।
যারা সব সময় ইসলাম বা ইসলামি রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন তারাও রাজনীতির ব্যবসায় করেন। আমার কাছে ভোটের রাজনীতিও এক ধরনের ব্যবসায়। এক সময় দেখতাম যারা রাজনীতি করেন তাদের পেশা থাকত। মানে, সংসার চালানোর মতো আয় রোজগার থাকত। এখন রাজনীতিবিদদের আয় রোজগারের কোনো কিছু জানা যায় না। আয়কর দেন কি না তাও জানা যায় না। অনেকেই বলেন, পেশা রাজনীতি। রাজনীতি থেকে কিভাবে আয় হয় তা বোধগম্য নয়। তবে লোকমুখে শুনি রাজনীতিকেরা বা এমপি সাহেবেরা তদবির করে আয় রোজগার ভালোই করেন। একবার এমপি হতে পারলে নাকি সারা জীবন বসে বসে খাওয়া যায়। যাক, প্রসঙ্গ এসে গেল বলে কথাগুলো বললাম। কথা শুরু করেছি মদিনা সনদের রাজনীতি নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ মদিনা সনদের কথা বললেন কেন? তার সমর্থকেরাও বিভ্রান্ত। সেকুলার ও হিন্দু সমর্থকেরা তো মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন। সবাই ভাবছেন, হেফাজতের ১৩ দফার প্রভাবেই কি প্রধানমন্ত্রী সাহেবা মদিনা সনদের কথা বলছেন? দলের অনেকেই বলছেন, আমাদের নেত্রী কত কথা বলেন। এমনিতেই তিনি একটু বেশি কথা বলেন। হয়তো তিনি কারো কাছে শুনেছেন, মদিনা সনদের ভেতর সেকুলারিজম (ধর্মহীনতা) আছে বা তথাকথিত ধর্মনিরপেতা আছে। তাই চট জলদি করে বলে ফেলেছেন, তিনি মদিনা সনদের ভিত্তিতে দেশ চালাবেন। কেউ আবার প্রধানমন্ত্রীর কথা এক শব্দও বিশ্বাস করেননি। শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বলার পর আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা পবিত্র কুরআনের বাংলা তরজমা পড়তে শুরু করেছেন। কিতাব নিয়ে টকশোতে হাজিরা দিচ্ছেন।
মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যত তাড়াতাড়ি পারেন মদিনা সনদটি পড়ে নিন। এই সনদটি সব ভাষাতেই পাওয়া যায়। এতে আপনার উপকার হবে। ইহুদিরা সব সময় নিজেদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের ভুল ব্যাখ্যা করত। কোনো কোনো েেত্র আয়াত বদলে দিতো। এর ফলে মূল তাওরাত এখন আর পাওয়া যায় না। ঈসা নবী আ:-এর অনুসারীরাও মিথ্যা প্রচার করত। বলত, ঈসা নবী আ: আল্লাহর পুত্র। তারা ত্রিত্ববাদ প্রচার করত। আর জগতের সর্বশেষ আল্লাহর কিতাব আল কুরআন বলেছে, ইহুদি ও নাসারাদের দাবি মিথ্যা। উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক জগতে চারটি কিতাব ও একশ’টি সহিফা বা ুদ্র্র কিতাব পাঠিয়েছেন মানব জাতির জীবননীতি হিসেবে। প্রধান চারটি কিতাব হচ্ছে, দাউদ আ:-এর জবুর, মুসা নবী আ:-এর তাওরাত, ঈসা নবী আ:-এর ইঞ্জিল এবং ইমামুল মোরসালিন হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আল কুরআন। আল্লাহ পাক বলেছেন, মুহাম্মদ সা: হচ্ছেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে আর কোনো নবী রাসূল আসবেন না। আল কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ধর্মগ্রন্থ। আর কোনো ধর্মগ্রন্থের প্রয়োজন হবে না। ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। ইসলামের আগমনের সাথে সাথে অতীতের সব ধর্ম ও মতবাদ বাতিল হয়ে গেছে। এর মানে, নতুন কিতাবের আগমনের সাথে সাথে পুরনো কিতাবের কার্যকারিতা আল্লাহ পাক আর বহাল রাখেন না। জগতের শেষ দিন পর্যন্ত শুধু ইসলাম ও আল কুরআন জারি থাকবে। আর রাসূল থাকবেন মুহাম্মদ সা:। এর কোনো ব্যতিক্রম আল্লাহ পাকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, আল কুরআনের হেফাজত তিনি নিজেই করবেন। ১৪৫০ বছর ধরে একই আল কুরআন মানুষের হৃদয়ে জারি রয়েছে। এর বিকৃতির জন্য মোনাফেক ও কাফেররা বারবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ ধর্মীয়ভাবে এক বিরাট ফেতনার সম্মুখীন। আল্লাহ পাক বলেন, ফেতনা সবচেয়ে খারাপ জিনিস। ফেতনাই অতীতে বহু জাতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনৈতিকভাবেও বাংলাদেশ আজ ভালো নেই। জাতির এমন একটি কঠিন সময়ে আপনি হঠাৎ করে ঘোষণা দিলেন, ‘দেশ চলবে মদিনা সনদ অনুযায়ী।’ এ ঘোষণা সবাইকে অবাক করেছে। যেখানে আপনি বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম, বিসমিল্লাহ মুছে দিচ্ছেন সেখানে কিভাবে মদিনা সনদ বাস্তবায়িত হবে? মদিনা সনদের শুরুতেই তো লেখা রয়েছে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। যেকোনো মুসলমানের জন্য এই আয়াত পাঠ করা অপরিহার্য। বিসমিল্লাহ নিয়ে এর আগেও আপনি বিতর্ক তৈরি করেছেন। আপনি এবং আপনারা আল্লাহু আকবার বলতে চান না। আপনারা বলেন, আল্লাহ সর্বশক্তিমান। অথচ সারা বিশ্বের মসজিদ থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি বার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিত হচ্ছে। পবিত্র আল কুরআনে বারবার বহুবার বলা হয়েছে, সমস্ত সৃষ্টির ওপর আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্ব কায়েম রয়েছে। তিনি এই জগতের সৃষ্টিকর্তা, তিনিই এর লালনপালন করেন। তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাদের রব ও প্রতিপালক। অবাক ও বিস্ময়ের সীমা নেই যে, আমাদের সংবিধানে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে মানুষের সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তা হলে ধরে নিত হয়, আমাদের কোনো ঈমান নেই। আমাদের এই বাংলাদেশে আল্লাহর অস্তিত্ব শুধু আমাদের হৃদয়ে এবং মসজিদের চৌহদ্দিতে। এমতাবস্থায় আপনি হঠাৎ ঘোষণা দিলেন, বাংলাদেশ চলবে মদিনা সনদের ভিত্তিতে। আপনি কি জানেন, মদিনা সনদ জারি হয়েছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর প থেকে। এই চুক্তি বা সনদ ছিল মদিনার মুসলমান ও অমুসলমানদের মাঝে। যখন এই চুক্তি স্বারিত হয় তখন মদিনার জনসংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। মুসলমান ছিল মাত্র পাঁচ শ’। আর মুসলমানেরাই ছিলেন চুক্তির কেন্দ্রীয় উপাদান। চুক্তির শুরুতেই বলা হয়েছে,
‘কুরাইশ এবং ইয়াসরেব মুমিন ও মুসলমান এবং যারা তাদের অনুসরণ করে এবং যারা তাদের অনুগামী হয় আর যারা তাদের সাথে জিহাদে অংশ নেয় (তাদের সবার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য)।’
মদিনা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মক্কা থেকে আগত ও মদিনার মুমিনগণ। বাদ বাকিরা তাদের অনুসারী হিসেবে নাগরিকত্ব লাভ করবে। ইহুদি গোত্রগুলোকে চুক্তির অংশীদার করে ‘মুমিনদের সাথে’ শব্দ প্রয়োগ করে রাজনৈতিকভাবে একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (ধারা ২৫ থেকে ৩৫ পর্যন্ত)। মদিনা সনদে মোট ৪৭টি ধারা রয়েছে। ধারা ২৩-এ উল্লেখ করা হয়েছে, যখন কোনো বিষয়ে মতভেদ দেখা দেবে তখন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা:-এর কাছ থেকে ফয়সালা নিতে হবে। বিচারে মজলুমের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জানি না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কারণে বাংলাদেশের চলমান সমস্যা সমাধানে মদিনা সনদকে সামনে নিয়ে এলেন। বাংলাদেশের ১৫ কোটি আজ মাইনরিটি বা সংখ্যালঘু হিসেবে জীবন যাপন করছে। সর্বদিক থেকে তাদের অধিকার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ঠিক এমনি একটি সময়ে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ১৩ দফা দাবি নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে। আলেম ওলামা মাশায়েখদের ১৩ দফা দাবি নিয়ে আপনার দলের দায়িত্ব্শীল লোকেরা ইতোমধ্যে অনেক কথা বলেছেন। অনেকেই বলেছেন একটি দাবিও গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ বলেছেন দাবিগুলো মধ্যযুগীয় এবং এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে বাংলাদেশ কয়েক শ’ বছর পিছিয়ে যাবে। পিছিয়ে যাওয়া আর এগিয়ে যাওয়ার মাপকাঠি কী, তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট নয়। যারা মনে করেন ইসলামের রীতিনীতি, আইনকানুন, বিধিবিধান পুরনো হয়ে গেছে, তথাকথিত আধুনিক জমানায় ১৪৫০ বছরের পুরনো ইসলাম আর চলবে না, তাদের উচিত প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ইসলাম ত্যাগ করা। মনে এক অবস্থা আর বাইরে আরেক অবস্থার নাম মোনাফেকি আর মোনাফেক ও মুরতাদদের অবস্থা মুশরেক ও কাফেরদের চেয়েও খারাপ। এরাই আল্লাহ, ইসলাম, রাসূল সা: ও মুসলমানদের বড় শত্রু। কাফের ও মুশরেকরা প্রকাশ্য, কিন্তু মোনাফেক ও মুরতাদরা অপ্রকাশ্য। এরা বাইরে মুসলমান, ভেতরে মুসলমান ও ইসলামের শত্রু।
বাংলাদেশের আলেম-ওলামারাই ইসলামকে এখনো জিন্দা রেখেছেন। তাদের কারণেই মসজিদ, মক্তব ও মাদরাসায় ধর্মচর্চা অব্যাহত আছে। আল্লাহ পাক নিজেই সাধারণ মুসলমানের ওপরে আলেমদের মর্যাদা দিয়েছেন। আলেমদের বলা হয় নায়েবে রাসূল সা:। আল্লামা শফী একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম। তিনি এখন বার্ধক্যে অতিশয় কাতর। তিনি হয়তো মনে করেছেন ইসলামের দুর্দিন। তাই তিনি তার ঈমানি দায়িত্ব নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই তো বলেছেন, গণজাগরণ মঞ্চ না হলে আল্লামা শফী মাঠে আসতেন না। গণজাগরণের সাথে যে ক’জন নাস্তিক আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে সরকার তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা এখনো গ্রহণ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। আনা হয়েছে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিগত আইন ভঙের অভিযোগ। সরকারের দৃষ্টিতে নাস্তিক ব্লগারেরা ধর্মসংক্রান্ত কোনো অপরাধ করেনি। আবার ধর্মদ্রোহীদের মুক্তির জন্য সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা আন্দোলন করছেন। এ পর্যন্ত হেফাজত ও হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে যত বাজে কথা বলেছেন, তার এক ভাগও বলেননি নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে। বরং গণজাগরণ মঞ্চকে সাহায্য দিয়ে টিকিয়ে রেখে তাদেরকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
হেফাজতের ১৩ দফার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতিকে দিন দিন অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হেফাজতের নারী অধিকার ও স্বাধীনতাবিষয়ক দফার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারী সমাজকে িেপয়ে তোলার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক ও তাদের মালিকদের ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হেফাজতকে মোকাবেলা করার জন্য সরকার দেখতে ‘আলেমের মতো’Ñ এসব একশ্রেণীর লোককে মাঠে নামিয়েছে। হয়তো ডিক্রির দিক থেকে তারা সত্যিকারের আলেম। কিন্তু ঈমানের দিক থেকে নয়। সব যুগেই এ ধরনের আলেম ছিলেন এবং থাকবেন। এরা সম্রাট আকবরের আমলে ছিলেন এবং এদের কেউ কেউ সম্রাটকে বিভ্রান্ত করে নতুন ধর্ম দ্বীনে ইলাহি চালু করিয়েছিলেন। জালেম বাদশাহ ফেরাউন, নমরুদ ও শাদ্দাদের সময়ও এ ধরনের আলেম, জ্ঞানী ও গুণীরা ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আলেমদের বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান দেওবন্দের মাদরাসার বিরুদ্ধে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আলিয়া মাদরাসা চালু করেছিল। দেওবন্দ চলত ভারতের বিপ্লবী মুসলমানদের চাঁদায়, আর আলিয়া চলত সরকারি টাকায়। উল্লেখ্য, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৮ পর্যন্ত এক শ’ বছর যুদ্ধ করেছেন এ দেশের আলেমসমাজ। এ ইতিহাস দেশের মানুষ ভুলে যায়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আপনি জান্তে বা অজান্তেই হোক, ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন। আপনার সাথে যারা আছেন তারা স্বার্থের জন্যই আছেন। এক সময় তারা আপনাকে ছেড়ে চলে যাবেন। আপনাকে অস্বীকার করবেন। আপনার মরহুম শ্রদ্ধেয় পিতাকে কারা ফেরাউন আখ্যা দিয়েছিল, আপনার কি মনে নেই? আপনার সাথে আজ যারা আছেন, তারাই তো একদিন বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেছেন। মোশতাক সরকারকে সর্বাগ্রে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইন্দিরা সরকার। আপনি নিশ্চয়ই ভুলে যাননি বঙ্গবন্ধুর ওফাতের পর আপনাদের দলের লোকদের ভূমিকা। এরাই তো তাকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজো তারাই আপনার চার পাশে, আপনাকে ঘিরে রেখেছে। আপনাদের দলের সাধারণ সম্পাদক একজন সৈয়দ হয়েও বলছেনÑ তিনি হিন্দুও নন, মুসলমানও নন। এর মানে তিনি একজন ধর্মহীন ব্যক্তি। আপনি কেমন করে এমন একজন লোককে দলের সাধারণ সম্পাদক করলেন? বাপ দাদা ও নিজের ধর্ম বিশ্বাসের কথা চিন্তা করে আপনার অন্তর ও বিবেকের কাছে জানতে চান আপনি কোন দিকে যাবেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনাকে পথ দেখাবেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন