রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৩

নিষিদ্ধ পিলেট বুলেট!



বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর জন্য পুলিশের কাছে যেসব অস্ত্র ছিল তার মজুদ প্রায় শেষ বলে জানা গেছে। এতদিন টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার ও ছররা বুলেট প্রভৃতি হালকা অস্ত্র ব্যবহৃত হতো আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে। এসব অস্ত্রের ব্যবহারে মানুষের মারাত্মক ক্ষতি বা জীবনহানি ঘটতো না সাধারণত। কিছুদিন আগে আন্দোলন দমানোর জন্য আমদানি করা হয় বিতর্কিত ‘পিপার স্প্রে’। এ রাসায়নিক অস্ত্রটি আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত ব্যবহার করে পুলিশ। এতে দু’একজন শিক্ষক জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। পিপার স্প্রেতে আক্রান্ত একজন শিক্ষক মারা যাবার অভিযোগও ওঠে। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ফলে পুলিশ পিপার স্প্রের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর জন্য মহানগরী ঢাকাসহ সারাদেশে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার এতো ব্যাপকহারে হয়েছে যে, এসবের মজুদ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ হয়ে যাবার পথে। ফলে সরকার নতুন করে এসব অস্ত্র আমদানির ব্যবস্থা করেছে। সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতি বা দস্যু-ডাকাত দমনের জন্য এমন অস্ত্র সরকার আমদানি করতেই পারে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে যে, এসব অস্ত্রের সিংহভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম ঠেকাবার জন্য। অভিযোগ রয়েছে, রাবার বুলেটের পরিবর্তে আসল বুলেট ছুঁড়ছে আমাদের পুলিশ বাহিনীর অনেকেই। এমনকি থানায় আটককৃতদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বুলেটবিদ্ধ করে মারবার অভিযোগও পাওয়া গেছে সম্প্রতি। এরপর রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড প্রভৃতির সঙ্গে এবার আনা হচ্ছে ইনজুরিয়াস লিথাল ‘পিলেট’। এসব অস্ত্রের মূল্য নাকি ১০ কোটি টাকা। অবশ্য অন্য সূত্রে জানা যায়, এর মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। আর এসব অস্ত্রের পুরোটাই ব্যবহৃত হবে বিরোধী দল তথা বিএনপি-জামায়াত ঠেকাবার জন্য। নতুন আমদানি করা অস্ত্রের মধ্যে পিলেট আনা হচ্ছে ৪ লাখ। এটি হচ্ছে এক ধরনের বুলেট। এটি বিদ্ধ হলে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য বলে জানা গেছে। পিলেট মারাত্মক এবং ইনজুরিয়াস বলে এটি বিশ্বে নিষিদ্ধ। অথচ আমাদের পুলিশ বাহিনী এমন মারাত্মক অস্ত্রের আমদানি করছে শুধু বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্য।
মাত্র দেড়-দু’মাসের ব্যবধানে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের হাতে সারাদেশের দু’শয়ের অধিক সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের প্রায় সকলেই বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ। অবশ্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকজন পুলিশও নিহত হয়েছে দুঃখজনকভাবে। রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাধারণ অস্ত্র ব্যবহার করেই পুলিশ যেখানে এতো বিপুলসংখ্যক মানুষ মাত্র কয়েকদিনে মেরে ফেলেছে এবং আহত করেছে কয়েক হাজার। বিশ্বে নিষিদ্ধ পিলেট বুলেট ব্যবহার করে আরও কত সংখ্যক মানুষ হত্যা করা হবে তার ভয়াবহতা অনুমান করে আমাদের উদ্বেগ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি মানুষের জীবনহানির কথা ভেবে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ছি। আমরা জানি না, বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করতে গিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পিলেটের ব্যবহার করে কত বড় ভয়ঙ্কর ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। আমরা মনে করি, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনের নামে সরকার অমানবিক আচরণ থেকে যেমন বিরত থাকবে, তেমনি পিলেটের মতো বিশ্বে নিষিদ্ধ বুলেটের আমদানি বন্ধ করে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads