দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক সহিংসতা রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনও কখনও নির্বিচারে বুলেট ছুঁড়ছে। ফলে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সারাদেশে পুলিশের বুলেট কিংবা প্রতিপক্ষের আক্রমণে প্রায় দু’শয়ের মতো মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশও মারা গেছে। বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য যেই হোক, কারুর মৃত্যুই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষের আক্রমণে, পুলিশের ছোঁড়া বুলেটে কিংবা বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমরা জানি, প্রত্যেক মৃত্যুই দুঃখজনক এবং বেদনাময়। কিন্তু মৃত্যু যদি অনাকাক্সিক্ষত ও অস্বাভাবিক হয় তাহলে সেটা হয়ে ওঠে আরও অসহনীয়। আমাদের দেশে সম্প্রতি যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার সবক’টিই অস্বাভাবিক, অনাকাক্সিক্ষত এবং অসহনীয় বটে। এসব মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ ও সমবেদনা জ্ঞাপনের ভাষা প্রকৃত অর্থেই আমাদের জানা নেই। যারা এসব মৃত্যুর ঘটনায় প্রিয় সন্তান হারিয়েছে, পিতা হারিয়েছে, ভাই হারিয়েছে কিংবা বিধবা হয়েছে, তাদের সান্ত¦না দেবার মতো ভাষাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা আরও বিস্ময়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি যে, দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিরোধীদলের ওপর জুলুম-নির্যাতনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও মেয়াদপূর্ণ করতে তাদের আরও কয়েক মাস সময় রয়েছে। এর মধ্যে দেশে যা ঘটছে এবং আগামী কয়েক মাসে আরও যা ঘটবে তার দায়-দায়িত্ব বর্তাবে ক্ষমতাসীনদের ওপরই। দেড়-দু’মাসের ব্যবধানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ও পুলিশের বুলেটে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনহানি এবং আহত হবার ঘটনা ঘটেছে, তা স্বাধীনতা অর্জনের চারদশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু এতো সব ঘটনার পরও সরকারে থাকা দায়িত্বশীলরা দুঃখ প্রকাশ করেননি। বরং এ জন্য দায়ী করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে অসত্য ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে শত শত নেতা-কর্মীকে জেলখানায় পুরে রাখা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের ওপর আমানবিক জুলুম-নির্যাতন চালাবার অভিযোগও উঠেছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে নানা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে দেশের মানুষসহ বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য লাগাতার অসত্য বলেই চলেছেন।
ক্ষমতাসীনরা হয়তো মনে করছেন যে, তারা যেটা বলছেন এবং আওয়ামী-ঘরানার মিডিয়াতে যা প্রচার-সম্প্রচার হচ্ছে তা দেশবাসী চোখ বুজে মেনে নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, দেশের মানুষ ততটা বোকা নয়। তারা চোখ-কান খোলা রেখে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। শুধু পর্যবেক্ষণই করছে না, আগামীতে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাও স্থির করছে। সত্যি বলতে কি, মন্ত্রীদের অনেকেই নিজের নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না জনরোষের ভয়ে। কেউ কেউ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে-পায়ে ধরেও নিজের পক্ষে আনতে পারছেন না। কোথাও কোথাও তো ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত হতে শুরু করেছেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা। কাজেই সময় থাকতে ক্ষমতাসীনদের ঘোর যদি না কাটে তাহলে আগামী নির্বাচনে এর খেসারত অবশ্যই দিতে হবে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি আঁচ করেই কেয়ারটেকার পদ্ধতি বাতিলের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা আবারও ক্ষমতার স্বপ্নজাল বুনে চলেছেন। কিন্তু মাঠের আওয়াজ অন্য রকম। মানুষের মনোবীণার ঝংকারে অন্য সুর ধ্বনিত হচ্ছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন