বাংলাদেশ অপার এক সম্ভাবানার দেশ। ১৯৭১ সালে পৃথিবীর বুক চিরে স্বপ্নিল প্রত্যাশার বুক বেঁধে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর অর্জিত হয় এক নতুন স্বপ্ননীড়। ভেদাভেদ ভুলে একই পতাকা তলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গর্বের বাংলাদেশ, শান্তির এক নীড় বাঁধার অপ্রতিরোধ্য সংগ্রামে সবাই অংশগ্রহণ করে। সবাই মনে করতে শুরু করে এদেশ আমার, মাটি আমার, আমি আমার দেশেরই। কপটতা, শঠতা আর ষড়যন্ত্রের ভয়াবহ জাল মাড়িয়ে জন্ম নেয়া নতুন এ ভূখ- কালে কালে আঘাতের পর আঘাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছে; তারপরও চূড়ান্ত স্বাধিকার অর্জনের পর নতুন করে মাথা উঁচু করে জীবনের স্বাদ গ্রহণ করার প্রত্যাশার সঞ্চার হয় সকল বাংলাদেশীর। হিং¯্র জানোয়ার আর শকুনের থাবায় কয়েকবার ব্যাহত হয়েছে এর যাত্রাপথ। গোগ্রাসে গিলে হজম করতে জোর জুলুম হয়েছে নানা কায়দা-কানুনে। তারপরও মুক্তি পাগল মানুষের সম্মিলিত ঐক্যের তীব্র কশাঘাতে শত্রু শিবির পরাস্ত হয়েছে। থেমে নেই হায়েনাদের ভয়াবহ স্বার্থপর কূটপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মিশন। স্বাধীনতার পর চলমান ক্রান্তিকাল দেশের জন্য এক ভয়াবহ অমানিশার অন্ধকার। দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার আজ ল-ভ-। জান মাল শান্তি নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে ক্ষমতার দাপটে মুখের ফুৎকারে; অঙ্গুলির ইশারায়। ভরসার আশ্রয়স্থল স্বাধীন বিচার বিভাগ পরাধীনতার শৃঙ্খলে ডুকরে কাঁদছে। সমাজদর্পণ সংবাদ মাধ্যমগুলোর সর্বাঙ্গে পচন ধরেছে। ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আঘাত করে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ছিন্ন করতে সদা জাগ্রত বিশেষ মহল। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ফেইল স্টেট প্রমাণিত করে কর্তামহলের কৃপা অর্জনের অনভিপ্রেত চেষ্টা চলছে হরদম। বিশেষ ভালোবাসার অবদানস্বরূপ সা¤্রাজ্যবাদীদের ধারালো নখের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার আশঙ্কায় গুমরে কাঁদছে প্রিয় স্বদেশ। কোথায় এই অমানিশার অভিযাত্রীর শেষ গন্তব্য? কাটবে তো কালো মেঘ? অন্ধকারের ভয়াল রজনী?
রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান শাহবাগ স্কয়ারে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদ- ঘোষণার দিন (০৪/০১/১৩) থেকে ফাঁসির দাবিতে ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নামে একটি সংগঠন মোমবাতি প্রজ্বলন করে মূল সড়কে অবস্থান নেয়। অভিযোগ উঠছে কুড়িগ্রামের খয়ের রাজাকারের নাতি ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। ক-তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার! তুই রাজাকার! অ-আমার দেশ তুই রাজাকার! তুই রাজাকার! ই-তে ইসলামী ব্যাংক তুই রাজাকার, তুই রাজাকার! অগ্নিকন্যা! লাকির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ল চৌদিকে মিডিয়ার কল্যাণে। সবদিকে রব উঠেছে শাহবাগে নতুন প্রজন্ম চেতনার পুনরুদ্ধার করেছে। নতুন প্রজন্মের রাজীব দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। নামাযে জানাযা চেতনার তীব্রতায় নারী পুরুষ একাকার হয়ে তিন তাকবীর ধ্বনিতে আদায় হলো। নতুন ধর্মমত স¤্রাট আকবরের দ্বীন-ই-এলাহীর নতুন সংস্করণ! যাক সেসব কথা। তরুণদের দেশ ও দশের জন্য জেগে উঠা কল্যাণ ও মহত্ত্বের লক্ষণ। তরুণরা সন্ত্রাস, মাদকতা ও প্রেম মিতালিতে মত্ততার এ সময়ে দেশের জন্য জেগে উঠার সুখবর কার না ভালো লাগে। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি; যে কোনো জাতির ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তরুণদের সত্যাশ্রয়ী উত্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর রাজাকারের ফাঁসির কথা শুনে কিছু সাধারণ মানুষ সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলেও সময়ের ব্যবধানে সর্ষে ক্ষেতের ভূত দানব আকারে দেখা দিল, থলের বিড়াল বেরিয়ে এলো। এরপর আরো ভয়ঙ্কর শকুনীয় রূপ সময়ের পরিক্রমায় বাংলার মানুষ মিডিয়ার কল্যাণে প্রত্যক্ষ করল। রাজাকারের ফাঁসির কথা বলে দাড়ি-টুপিওয়ালা কিছু মানুষকে পাদুকা দিয়ে সজোরে টুপিতে, দাড়িতে আঘাত করতে থাকল, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালালো দিনের পর দিন। যুবক-যুবতীর নর্দন কুর্দনে প্রকম্পিত হলো শাহবাগ। কালক্রমে আন্দোলনের প্রকৃতি বিবেকবান মানুষের কাছে আরো স্পষ্ট হতে থাকল। বলা হলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে! কেউ কেউ স্বাধীনতার চেতনার দোহাই দিয়ে দরাজ গলায় চিৎকার করে বলেই চলছেনÑ ব্লগাররা ইসলাম, নবী-রাসূল, নামায-রোজা এসব নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করেনি। জামায়াত-শিবির চক্র ষড়যন্ত্র করে রাজীব হত্যাকা-ের পর তার ব্লগে দিয়ে রাজীবের ব্লগে আমার দেশ, নয়া দিগন্ত ও সংগ্রামে ছাপাচ্ছে। তাদের আরো হুঙ্কারÑ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কেন আগে কেউ টু শব্দ করেনি? এসব ষড়যন্ত্র, যুদ্ধাপরাধকে বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। চেতনা সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গের কি জানা নেই- আন্দোলন সৃষ্টিকারী কয়েকজন ব্লগারের ব্যাপারে আদালত কর্তৃক নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তির বিধান করার জন্য। কিন্তু কেন সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করল না? শাস্তির আওতায় নিয়ে আসল না। তাই স্বভাবতই ভাবতে অসুবিধা হবার নয় যে, তারা সরকারের অনেক বড় মিশন বাস্তবায়ন করতে নেমেছেন। তারা তৌহিদী জনতার হৃদয়ে অগ্নিপাত করে দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চান, এ সুযোগে মন্দির, মঠ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর উপাসনালয় ল-ভ- করে দিয়ে সা¤্রাজ্যবাদীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে ভালোবাসার নজরানা পেশ করতে চান। নচেৎ আল্লাহ ও রাসূল (সা.) কে বিশ্রীভাবে গালিগালাজ করে দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মুসলমানদের সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ করে দিয়ে শতাধিক জীবন সাঙ্গ হওয়ার পর তদন্ত কমিটি করেছেন! আগে কেন করেননি? তার মানে সরকারের পরিকল্পনায় এসব হয়েছে। সেটি আরো স্পষ্ট হয়েছে তখন যখন বাংলাদেশের মানুষের সম্মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ বা হুমকি দেয়ার অভিযোগে অর্ধশত ফেইসবুক ব্যবহারকারীকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। সবার প্রশ্ন ও ক্ষোভ জাগ্রত হওয়াই একেবারে অবাস্তব নয় যেÑ ‘আল্লাহ ও তার রাসূল বড় না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়! প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করলেন আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে এত মানুষ প্রাণ হারালো এরপরও অভিযুক্ত আসামীদের কার ইশারায় বা কার স্বার্থে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি? বাস্তবে ক্ষমতার রক্ষক যদি অপব্যবহারকারী হয় তাহলে কি বা করার থাকে? যারা ইতিহাসের এহেন জঘন্যতম অপরাধ করে দেশে অরাজকতাকে উস্কিয়ে দিচ্ছেন তাদেরকে জামাই আদরে বিশেষ নিরাপত্তায় দিনের পর দিন শাহবাগী কর্মকা- পরিচালনা করতে দিচ্ছেন, আজব কা- কীর্তি!
খবর মারফত সব দিকে নীরব গুঞ্জন, তাদের জন্য অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পিজি হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল, পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে রাত্রিবাস হচ্ছে। গোপন সূত্র বার্তা, মিডিয়ার এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে জানা গেছে, আন্দোলনকারী ব্লগাররা এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার আবদার করছে। অতিসংগোপনে তা অনুমোদনের কার্যক্রমও বেশ এগিয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে। সরকার বাহাদুরের এমন প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকা-ে সরকারকে রং হেডেড বললেও মোটেও ভুল হবে না। কারণ যাদের উস্কানিমূলক কর্মকা-ের কারণে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা হলো, তাদের খোশ আদর আপ্যায়নে সরকার নির্লজ্জের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধর্ম ও স্বাধীনতাকে আজ মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
প্রজন্ম চত্বর, গণজাগরণ মঞ্চ বা শাহবাগের চত্বর স্কয়ার খেতাবীয় আন্দোলনের আয়োজনের মূল কারণ এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সরকার যখন দুর্নীতি, দুঃশাসন ও মানবাধিকার লংঘনের দায়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রেমী মানুষদের বোকা বানিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ-পরবর্তী মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের সাজা কার্যকর করার জন্যই পার্শ্ববর্তী দেশের কল্যাণে স্পেশাল এসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের জন্যই কথিত শাহবাগ চত্বরের উত্থান। আর দেশে আন্দোলন সৃষ্টির জন্য হাজার কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আন্দোলনের আয়োজকরা হলেন ১৪ দল ও তার মিত্র বাম ঘরানার সকল সংগঠন, কথিত বুদ্ধিজীবী এবং পেইডেড স্বনামধন্য গণমাধ্যমসমূহ। সরকার বাম উচ্চমহলসহ বিশেষ মহল শাহবাগ চত্বরের বিশেষ পরিকল্পনা করে। সরকার যখন বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে বেসামাল অবস্থায় আছে এমতাবস্থায় ফ্রন্ট ফাইটার হিসেবেই শাহবাগের চেতনাকে সূচালো করার জন্য সকল মাল মসলা নিয়ে আদা জল খেয়ে লেগেছে। যারাই অসম বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছেন, সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি, নজিরবিহীন দলীয়করণ রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ঠিক তখনই শাহবাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের হুংকার আসছে। অ-তে আমার দেশ, তুই রাজাকার তুই রাজাকার! ম-তে মাহমুদুর রহমান, তুই রাজাকার তুই রাজাকার! প-তে পিয়াস করিম, তুই রাজাকার তুই রাজাকার, ক-তে কাদের সিদ্দিকী, তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!
কিছু গণমাধ্যম সকল নিয়মকানুন ভঙ্গ করে নতুন প্রজন্মের জাগরণকে (!) ফলাও করে প্রচার করছে। সারাদেশের মানুষ শাহবাগের চেতনার মোহনায় একাত্ম হয়েছেন বলে দেদারছে লাইভ প্রচার করছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী ও বুদ্ধির মাইর প্যাচ দিয়ে শাহবাগ চেতনাকে বিকশিত করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। তারা বলছে তরুণ প্রজন্মের চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে জাগ্রত হয়েছে। সকল মহল এ সুরেলা বক্তব্য শুনে আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু সরকারি খোরপোষ, তিন স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে চাপাবাজি করে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমাবেশে যোগদানের জন্য বাধ্য করে; আর অংশগ্রহণ না করলে স্কুল-কলেজের নিবন্ধন বাতিলের সরকারি হুমকি দিয়ে কোন জাগরণ সৃষ্টি করার হীন চেষ্টা মনে হয় বিশ্বের ইতিহাসে অতি বিরল ঘটনা। গ্রিনিচবুকে লিপিবদ্ধ করে রাখার মতো! মূলত চেতনা হলো অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে প্রচ- দ্রোহ। যেখানে থাকে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না লেজুড় বৃত্তি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা শাহাবাগের গণ জাগরণ মঞ্চের প্রকৃত কৃতিকর্ম নিয়ে রিপোর্ট করায় রিপোর্টারকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। এছাড়া ইকোনোমিস্টসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে সরকারের ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে, শাহাবাগীরা এসব গণমাধ্যমকেও রাজাকার বলতে ভুল করেনি! মিডিয়া সন্ত্রাসের করালগ্রাসে নিমজ্জিত জাতি, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর নাম করে সরকারের অমার্জনীয় ইস্যুগুলোকে ধামাচাপা দেয়ায় ‘মিডিয়া সন্ত্রাস’ চক্রান্ত বুঝতে একটু দেরি হয়েছে। তারা যে পেইডেড তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তখন, যখন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও রাজাকার বলা হয়,অন্যদিকে সরকারের রাজাকার মন্ত্রী ও এমপিদের ব্যাপারে কোনো কথাই বলতে মানা।
আন্দোলনকে জোরালো করার জন্য রাজীব হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে চেতনা নাটকের স্ক্রিপটা আরেকটু বর্ধিত কলবরে করতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আচার বিচারের তোয়াক্কা না করে রাজীবের বাসায় গিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ১ম শহীদ ঘোষণা দিয়ে এ হত্যাকা-ের দায় জামায়াত শিবিরের গায়ে লেপন করলেন। রাজীবের কথিত বিদেহী আত্মা নিয়ে চেতনাকে আরো সূচালো করার জন্য নর-নারী নির্বিশেষে একাট্টা হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিন তাকবীরের সাথে সালাতুল জানাজা পড়লেন। পরে সরল বিশ্বাসে আগত মুসল্লিরা রাজীবের আল্লাহ ও রাসূলের কটূক্তির কথা প্রকাশ হলে এবং শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নামায আদায় না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ব্লগার ও শাহবাগী চক্রের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মুসলমানদের হৃদয়ে দারুণভাবে রক্তক্ষরণ করছিল। তাই সরকারের প্রতি দেশের বিশিষ্ট আলেমরা অনুরোধ করেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দানকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়ার এবং সারাদেশে বাদ জুম্মা শান্তিপূর্ণ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শুক্রবারের মিছিলে নির্বিচারে পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের গুলীতে নিহত ও আহতের নজির দেখে বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ স্তম্ভিত হয়ে গেল।
রাজীব হত্যার দায়ে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ৫ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা মিডিয়া উইং জানিয়েছে ধৃতরা আনসারুল্লাহ নামে একটি সংগঠনের সদস্য। রাজীবের আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর ব্যাপারে তার ব্লগে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণেই ঈমানের দাবি থেকে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে জানিয়েছে গ্রেফতারকারীরা। গোয়েন্দাসংস্থা যদিও কতিপয় শিবিরের বড় ভাইয়ের প্ররোচণায় তারা এ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করেছে বলে দাবি করলেও তারা তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি। রাজীব হত্যাকা-ের পর নারায়ণগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক রাফিউর রাব্বির ছেলে তানভির মাহমুদ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর একযোগে সকল চেতনাশালী ব্যক্তি কর্তারা এ হত্যার নেপথ্যে জামায়াত শিবিরের জড়িত থাকার সন্দেহকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন। কয়েকদিন পর স্বয়ং ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বি নিজেই নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পরিবারকে তার সন্তান খুনের জন্য দায়ী করেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাফিউর রাব্বি সেলিনা আইভির পক্ষে কাজ করায় তার সন্তানকে শামীম ওসমান খুন করেছেন বলে তার দাবি। আওয়ামী গডফাদার শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আদৌ তিনি বা তার পরিবারের অভিযুক্ত কারো ব্যাপারে কোন আইনী বাধ্যবাধকতার আঁচড় আওয়ামী লীগ সহ্য করবে কি না সেটাই এখন দেখার পালা। এরপর গীতিকার ও সুরকার আহমদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই মিজান আহম্মেদ কে হত্যা করে লাশ রেল লাইনের পাশে ফেলে দেয়া হয়। বুলবুল অধ্যাপক গোলাম আযমের বিপক্ষে ট্রাইবুন্যালে সাক্ষী দিয়েছেন। তার অভিযোগ ভাইকে জামায়াত শিবির হত্যা করেছে। প্রশাসন এ হত্যাকা-ের পিছনে প্রেমঘটিত কারণ হিসেবে দেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তদন্ত কোথায় শেষ হয় তাই দেখার পালা।
আলেমদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, ওলামা মাশায়েখ পরিষদ ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি নামে দলগুলোর যৌক্তিক আন্দোলনে আলেম ওলামাদের পাশাপাশি ইসলাম প্রিয় জনগণ তাদের সাথে একাট্টা হয়ে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে। শাহাবাগীরা চট্টগ্রামে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও সরকারের সকল নিরাপত্তা আয়োজন থাকা সত্ত্বেও চট্টলাবাসীর ক্ষোভ আর ভয়াবহ প্রতিরোধের তীব্র অনুভূতিতে সরকারের অঙ্গুলি নির্দেশে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়। এখন এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ও জেলায়। ইতোমধ্যে তাদেরকে প্রতিরোধের ধ্বনি উচ্চকিত হচ্ছে দিকে দিকে। এ আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে দেশে থেকে দেশান্তরে। এ আন্দোলনের তীব্রতায় ভীত সন্ত্রস্ত সরকারের গতি কম্পমান। তাই মরণ কামড় হিসেবে নয়া খেলায় মত্ত হয়েছে। আলেমদের বিরুদ্ধে আলেম লেলিয়ে দিয়ে খেলা জমানোর স্বপ্নে বিভোর ছিল সরকার। কিন্তু কে জানত শাহবাগীদের ব্যাপারে ১৮ দল ও সভ্যসমাজ প্রতিবাদ করে তাদের একঘরে করে দিবে, তেমনি শেষ ভরসা আলেমদের বিপক্ষে সুবিদাবাদী কথিত ওলামা মাশায়েখ সম্মিলিত ঐক্যপরিষদের ৩ কিলোমিটার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ৩০০ লোকের বায়বীয় মহাসমাবেশ সরকারকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে। শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে জামায়াত-শিবির ও আলেম সমাজের কপালে কালিমা লেপন করতে গিয়ে নিজের মুখে সেই কালিমার প্রলেপ লেগে গেছে। তিনি শাহবাগে ইসলাম বিরোধী কর্মকা-কে বৈধ বলে ফতোয়া দিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করে জামায়াত নিষিদ্ধের ফতোয়া দিয়ে আসলেন। আওয়ামী সরকারের মনোনীত শোলাকিয়া ঈদগাহের এই ইমাম শাহবাগে অংশগ্রহণ করায় আলেম সমাজের কাছে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তাই এই পেইডেড আলেম আওয়ামী নয়া ফ্রন্ট গঠনের প্রত্যয়ে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে মহাসমাবেশের হুমকি দেন। আওয়ামী লীগ ফরিদ সাহেবের এ তর্জন-গর্জনে সন্তুষ্ট হয়ে অন্তত কিছু আলেম তার ডাকে সাড়া দেবেন এ বাসনায় শাহবাগীদের সরকার সকল সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেন কিন্তু তিনি চরমভাবে ব্যর্থ হলেন সমাবেশ সফল করতে। মহাসমাবেশে শাহবাগীদের কায়দায় ইশতেহার মঞ্চস্থ করা হলো। কি আজব! নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবির কথা ও ব্যানারে লেখা ছিল কিন্তু এজেন্ডার যথাযথ অনুসৃত করতে গিয়ে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির কথা বেমালুম ভুলে গেলেন। প্রজন্ম চত্বরের একই দাবি একই সুর- জামায়াত শিবির ইসলামী দল নয়, তাদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট রাখা হারাম যারা একাউন্টে টাকা রাখবেন তারা জাহান্নামী ইত্যাদি, ইত্যাদি। অথচ তার একাউন্ট আছে ইসলামী ব্যাংক হাজী ক্যাম্প শাখায়। প্রশ্ন উঠেছে তিনি কি স্ব-ঘোষিত জাহান্নামী? তিনি ১৯৯৬ সালে সারা দেশের একযোগে বোমা হামলার সন্দেহভাজনে আসামী ছিলেন। এর আগের আওয়ামী আমলে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ছিলেন, দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার একাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তাহলে আওয়ামী লীগই কি জঙ্গিদের মূল পৃষ্ঠপোষক?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন