শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৩

ভয় দেখিয়ে জয় করা যায় না



মানুষ তো স্বাধীন দেশ চায় মুক্ত থাকার জন্য, উন্নত জীবনের জন্য। উন্নত জীবনের জন্য প্রয়োজন সুশাসন ও নাগরিক অধিকার। এসব আকাক্সক্ষা পূরণ না হলে স্বাধীনতার বুলি মানুষের কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে।  বর্তমান সময়ে সুশাসন ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। প্রতিনিয়ত দমন-অবদমন ও সহিংস ঘটনার যেসব চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে দেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার আছে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এ কারণেই হয়তো বলা হয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলেই সরকার গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না।
বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে গ্রেফতারের যে দৌরাত্ম্য চলছে তা অতীতের কোনো সামরিক কিংবা স্বৈরাচারী সরকারের আমলেও লক্ষ্য করা যায়নি। এখন রাজনৈতিক মামলায় হাজার হাজার ‘অজ্ঞাত’ আসামী নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে হয়রানি ও গ্রেফতার বাণিজ্য। মামলার মূল আসামীদের গ্রেফতার না করে পুলিশ ছুটছে ‘অজ্ঞাত’ আসামীর পেছনে। এতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলে পত্রিকান্তরে  ‘প্রকাশিত খবরে বলা হয়’। এ অবস্থায় ওইসব অঞ্চলের মানুষ পুলিশের প্রতিপক্ষ হয়ে  উঠছে। সম্প্রতি দেশের  বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর গ্রামবাসীর হামলা ও প্রতিরোধের ঘটনা এর প্রমাণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কোনো ঘটনা ঘটলেই এখন হাজার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়। বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি হলেও ‘অজ্ঞাত’ আসামীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত দেড় মাসে রাজনৈতিক সহিংস ঘটনায় শুধু চার জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ৯০টি মামলায় আসামী করা হয় দেড় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে। এর মধ্যে নাম উল্লেখ আছে মাত্র সাড়ে চার হাজার ব্যক্তির। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সাথে হামলার ঘটনায় ১০০ জ্ঞাতসহ ‘অজ্ঞাত’ ছয় হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অথচ কাগজে-কলমে পুলিশ এ মামলায় মাত্র ৪২ জনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, অজ্ঞাতনামা আসামীদের নিয়ে এখন চলছে নানা ফন্দিফিকির। হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামীদের নিয়ে চলছে পুলিশের গ্রেফতার ও মুক্তিবাণিজ্য। এতে চাঁদাবাজির সুযোগ যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি নেয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার বদলাও। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নাম অজ্ঞাতনামা আসামীদের স্থানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এতসব ঘটনা ঘটে চলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আামাদের মানবাধিকার কমিশনের চোখে এসব ঘটনা যেন ধরা পড়ে না। কমিশন রয়েছে নিশ্চুপ।
দেশে এখন যেভাবে গ্রেফতার সুনামি ও গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে, তাতে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে সমাজে। নাগরিকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন  করতে গিয়ে সরকার কি পুরো দেশটাকেই কারাগারে পরিণত করতে চাইছেন? সুশাসন ও ন্যায়বিচারের বদলে সরকার যদি দমন অবদমন ও জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজকে ভয় দেখিয়ে দেশ শাসন করতে চান, তাতে কি আসলেই দেশ শাসন করা যাবে? নাকি তাতে দেশে গণবিক্ষোভ ও সহিংস ঘটনার মাত্রা বাড়বে? এ কারণেই বলা হয়, ভয় দেখিয়ে জয় করা যায় না। কিন্তু ইতিহাসের এ বার্তা বর্তমান সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের মনে আছে বলে তো মনে হয় না। মনে থাকলে সরকার ও প্রশাসনের লোকজন এত বেপরোয়া হন কেমন করে? আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার বদলে সরকার জুলুম-নির্যাতন ও গ্রেফতারের এমন হার্ডলাইনে যান কেমন করে? সরকার তো এখন আলাপ-আলোচনার বদলে পুলিশকে অস্ত্রশস্ত্র ও নিপীড়নযন্ত্রে সুসজ্জিত করার চেষ্টাতেই ব্যস্ত রয়েছেন। এমন আচরণ ব্রিটিশ-বেনিয়া ও পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের মানালেও স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো সরকারকে মানায় না। তাই আমরা মনে করি, দেশ ও জনগণের প্রতি ন্যূনতম মমতা ও দায়িত্ববোধ থাকলে ক্ষমতা পাগল না হয়ে এখন সরকারের উচিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় দেয়া। পুলিশকে দমন-পীড়ন ও গ্রেফতারের মন্ত্রে আর উজ্জীবিত না করে সরকার যদি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে কাজে লাগানোর উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। এতে শুধু যে দেশের কল্যাণ হবে তা নয়, সরকারেরও ক্ষতিগ্রস্ত ইমেজ পুনরুদ্ধার হতে পারে। সরকার গণআকাক্সক্ষার অনুকূলে চলে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads