মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের নগ্নপ্রচেষ্টা


নানা প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমের এখন কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর সংবাদপত্রটি যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ হতে না পারে সে জন্য রাষ্ট্রীয়পর্যায় থেকে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দেয়া, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা সৃষ্টি এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর মামলায়। অথচ তাকে গ্রেফতারের পরপরই আমার দেশের প্রেস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কী কারণে প্রেস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। পরে আমার দেশ  বিকল্প ব্যবস্থায় আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই প্রেস থেকে দৈনিক সংগ্রাম ছাপানো হয়। আমার দেশ কর্তৃপক্ষ বিকল্প প্রেস থেকে পত্রিকা প্রকাশের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। পত্রিকাটি প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্য অনুমতি দেয়া তো দূরে থাক, পুলিশ আল ফালাহ প্রেস থেকেও আমার দেশ ছাপানো বন্ধ করে দেয়। সাথে সাথে ১৯ জন প্রেস কর্মচারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমার দেশ  ছাপার কারণে মামলা করা হয়েছে দৈনিক সংগ্রামের  সম্পাদক আবুল আসাদ ও মাহমুদুর রহমানের বৃদ্ধা মা মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে।

মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়ার এই চেষ্টা সরকারের ভিন্ন মত দলনের প্রচেষ্টার অংশমাত্র। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ দেশের গণমাধ্যম স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নয়। আমরা জানি, দেশের বেশির ভাগ সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল সরকারের প্রচারযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাত্র দু-একটি সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারের সমালোচনামূলক বা বিরোধী দলের খবর গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হয়ে থাকে। সরকার এই সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। আমার দেশের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শুধু সংবাদ প্রকাশের কারণেই। ভিন্ন মত দলনের এই প্রচেষ্টাকেই বলা হয় ফ্যাসিবাদ। এভাবেই দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হচ্ছে।
দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে অতীতেও এভাবে সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন কায়েম করার পর চারটি ছাড়া দেশের সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সে সময় যেসব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয় সেগুলোতে সরকারবিরোধী খবর ও মতামত প্রকাশিত হতো। দেশে এখন আবার সে ধরনের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বলতেই হবে ১৯৭৫ সালের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক ক্ষেত্রে আরো খারাপ হয়েছে। পত্রিকার সম্পাদককে শুধু গ্রেফতার করা হয়নি, তার বৃদ্ধা মাকে এবং অপর একটি পত্রিকার সম্পাদকের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সংবাদপত্র বন্ধ করে সম্পাদকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা পরাধীন আমলেও গ্রহণ করা হয়নি।
আমরা মনে করি, স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে দৈনিক আমার দেশের অব্যাহত প্রকাশনার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা দূর করতে হবে। পত্রিকার সম্পাদককে মুক্তি দিয়ে সব মামলা তুলে নিতে হবে। সরকার যদি তা করতে ব্যর্থ হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা আরো নিশ্চিত হবে যে, ভবিষ্যতে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা পুরোপুরি খর্ব করে ফেলতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads