শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

নৈরাজ্য অস্থিরতা ছড়াচ্ছে সরকার


সরকারের কাজ নিয়ে উঠেছে চরম বিতর্ক। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ কি চলছে কোনো নৈরাজ্যের উপত্যকায়? স্বাধীনতা কি অর্থহীন হতে চলেছে? রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগের পরিবর্তে কি সরকার গোঁড়ামি ও নিষ্ঠুরতাকে পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে? শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মনে আজ এসব প্রশ্ন জাগছে। একসাথে এত বিরূপ ও এত সহিংস ঘটনা দেশটির স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে কখনো সম্ভবত দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ক্ষমতাসীন দলের সাথে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। অর্ধশত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেখানে। ১০টি গাড়ি ও দুই শতাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একই দিন হরতালে গুলি করে পুলিশ হত্যা করেছে এক জামায়াত কর্মীকে। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করার প্রতিবাদে ডাকা ওই হরতালে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের হামলায় আরো দুই শতাধিক আহত হয়েছে। পুলিশ এ দিন গ্রেফতার করেছে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে। বগুড়ায় ‘গণজাগরণ’ মঞ্চের সাথে একত্র হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা ও মারধর করেছে সাংবাদিকদের। একই দিন আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পত্রিকাটির প্রেসও সিলগালা করে দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া খুন-হত্যা, গুম ও ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে প্রতিদিনের মতো। হিসাব করলে দেখা যাবে, এগুলোর সাথে ক্ষমতাসীন দল এবং পুলিশ জড়িত। মনে হচ্ছে সরকারই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন শ্রেণী গোত্রের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের মৈত্রী জোট ছাড়া দেশের সব জনগণকে কি সরকার শত্রু মনে করছে? এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে কি দেশ শাসন করা সম্ভব? ফটিকছড়ির ওই ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার বিশাল শোডাউন নিয়ে ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রতিপক্ষ বানাতে গিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। এরপর যা হয়েছে তা এককথায় দুর্ভাগ্যজনক। কেন নজিরবিহীন সহিংস ঘটনা একের পর এক ঘটছে, তার মূল অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। সরকার নিজেই বলছে, হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। অন্য দিকে হরতালকে কেন্দ্র করে মিছিল করলেই পুলিশ সরাসরি গুলি করছে। এ কারণে হরতালে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সরকার হরতাল প্রতিরোধও করতে পারছে না। ফলে দেশের সম্পদ ও অর্থনীতির প্রভূত ক্ষতিসাধন অব্যাহতভাবে চলছে। সাংবাদিকেরা যে গণমাধ্যমেরই হোক না কেন, তাদের ওপর হামলা করতে হবে কেন? সংবাদপত্রের প্রেসে কেন তালা ঝোলানো হবে? মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার নিয়ে দেশ-বিদেশে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বগুড়ায় যখন মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকেরা বিক্ষোভ করছেন তাদেরকে তখন ‘গণজাগরণ’ মঞ্চ দিয়ে মারধর করানো হলো।

পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সরকার সব ভিন্নমতকে দলিত মথিত করে সামনের দিকে এগোতে চায়। ক্ষমতাকে কণ্টকমুক্ত করার একটি কৌশল হিসেবে এটাকে দেখছেন তারা। বর্তমান মহাজোট সরকার সংসদে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এত বিপুল সমর্থনের পরও কেন সরকারকে দমন পীড়নের পথে যেতে হচ্ছে, ক্ষমতাসীনেরা ভাবতে পারেন এ বিষয়টি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দুই শ’ মানুষের লাশ পড়ার পরও যদি মন্ত্রিসভা এ ধরনের পরামর্শ দেয় তাহলে আগামীতে দেশের কী হবে, তা নিয়ে সবাই শঙ্কিত। সরকারের এ পথকে কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ গণতন্ত্র বলবেন কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে। এভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে অস্তিত্¡ সঙ্কটের মুখে ঠেলে দেয়া জনভিত্তিসম্পন্ন দল আওয়ামী লীগের নীতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমরা মনে করি, যারা সরকারকে উগ্রপথ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, তাদের বলয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর বেরিয়ে আসা উচিত; অন্যথায় দেশের পরিস্থিতি যে আরো অবনতির দিকে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে দ্রুত অগ্রসরমান স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ অস্তিত্ব সঙ্কটের মতো অবস্থার মুখোমুখি হবে, যা কারো কাম্য হতে পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads