চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সম্প্রতিক ঘটনাটি সেই বার্তাকে আরো জোরালো করল। সাতক্ষীরা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও সাতকানিয়ার যে বার্তাটি সরকার চাপার জোরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সম্ভবত বাংলাদেশে আর ঘটেনি। ১৩ এপ্রিল কালের কণ্ঠের একটি প্রতিবেদন ফটিকছড়ির ঘটনার বিশেষ দিকটি স্পষ্ট করেছে। সে প্রতিবেদনে যাওয়ার আগে ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সেদিনের শোডাউনের বহরটি তলিয়ে দেখা যাক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম উত্তেজনাপূর্ণ সে বিশাল মহড়াটির আয়োজন করেন। পুড়ে যাওয়া গাড়ির সংখ্যা থেকে তার উগ্র মিছিলটি কতটা দীর্ঘ ছিল তা অনুমান করা যায়। স্থানীয় জনতা পেয়ারুলের ৩০০ মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভস্মীভূত হয়েছে মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান ও প্রাইভেট কারসহ আরো ২৬টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শত শত গাড়ির প্রত্যেকটি পুড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন শতাধিক মহড়াকারী। বিশাল গাড়িবহরকে তছনছ করে শত শত মানুষকে হতাহত করেছেন গুটিকয়েক মানুষ তা অবাস্তব অসম্ভব।
ইত্তেফাক লিখেছে, হাজার হাজার বিুব্ধ মানুষ এতটাই আগ্রাসী ছিল যে, যেখানে যাকে পেয়েছে পিটিয়েছে। ওই ঘটনা থেকে উদ্ধার পাওয়া আওয়ামী লীগের একজন জানান, তিনি তিন ঘণ্টা একটি ডোবার পানিতে আত্মগোপন করেছিলেন। নারীরা পর্যন্ত ঝাঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন এ ঘটনায়। একটি প্রত্যন্ত থানায় কয়েক ডজন প্রাইভেট গাড়ি এবং ৩০০ মোটর শোভাযাত্রার প্রয়োজনীয়তাটা কী? একটি থানায় এই বিশাল মহড়া দেয়ার ক্ষমতা কারা রাখতে পারে তা ভাববার বিষয়। যেখানে এক কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকাতে ১০০ মোটর গাড়ির শোভাযাত্রা মানে বড় একটি ব্যাপার।
কোন পরিস্থিতিতে গেলে মানুষ এতটা অসহিষ্ণু ও সহিংস হয়ে হাজার হাজার সশস্ত্র মানুষের মহড়াকে প্রতিরোধ করতে পারে সে বিষয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে ধারণা পাওয়া যাবে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাজিরহাটে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবিরের বেপরোয়া হামলা থেকে রক্ষা পায়নি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের এক সময়ের বাঘা সন্ত্রাসীরা। হামলায় র্যাব-পুলিশের সাবেক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু তৈয়ব, আবদুল কৈয়ূম, মহিউদ্দিন, চুন্নু, জানে আলম, আবদুল হালিম, ফারুক, আব্বাস উদ্দিনসহ ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি মামলার সাবেক আসামি আবু তৈয়বের মাথায় আটটি সেলাই হয়েছে।’ এ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যাচ্ছে প্রকৃতপক্ষে শোডাউনটি কাদের নেতৃত্বে হয়েছিল। পত্রিকাটি যদিও প্রতিবেদনের শুরুতে তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ‘হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবিরকে’ ঘটনার জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করে বসেছে। ঘটনার ব্যাপকতা এবং মহড়ায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের পরিচিতি এ ধরনের অভিযোগ অযৌক্তিক প্রমাণ করছে। বরং সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসীদের প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়েছে বলে অনুমান করা যায় ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণে।
প্রতিবেদনের পরের অংশে এই প্রমাণ স্পষ্ট হয় যে, দলমত নির্বিশেষে সবাই সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। কালের কণ্ঠ সুনির্দিষ্ট করে লিখেছে, ‘মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই ফটিকছড়ির ২০টি ইউনিয়নের প্রায় ছয় লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আওয়মী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি ছিল।’ পরে আওয়মী লীগের শাসনের চার বছরের বেশি সময়ে দলীয় পরিচয়ধারী এসব সন্ত্রাসী ছিল আরো বেপরোয়া। এতে কোনো ধরনের সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। কারণ বিশ্বজিৎ ও রাব্বিদের মতো অসংখ্য নিরীহ নাগরিককে সারা দেশে প্রকাশ্যে হত্যা সে কথার পক্ষেই যুক্তি দেয়। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘তাদের হাতে ছিল একে-৪৭, এম-১৬, জি-৩সহ ভারী বিভিন্ন অস্ত্র।’ রাম দা, কিরিচ, ককটেল এগুলো তো তাদের কাছে মামুলি অস্ত্র। ফটিকছড়ি বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত বিশাল এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে না। এ সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসীরা রামরাজ্য কায়েম করে সেখানে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে এসব সন্ত্রাসীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বেড়েছে তাও পত্রিকাটি লিখেছে,‘এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, হত্যাসহ নানা অপরাধে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮টি পর্যন্ত মামলা ছিল। গত সোয়া চার বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় এই ক্যাডারদের সব মামলা প্রত্যাহার ও খারিজ হয়ে যায়।’ তাদের অনেকেই সন্ত্রাসী বদনাম ঘুচিয়ে রীতিমতো জনপ্রতিনিধি হয়ে গেছে ক্ষমতার জোরে। পত্রিকাটি লিখে, ‘তৈয়ব এতই ভয়ঙ্কর ছিল যে, ১৯৯৮ সালে নিজ সংগঠনের নেতা রাশেদুল আনোয়ার টিপুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। তার বিরুদ্ধে ২৮টি মামলার বেশির ভাগই হত্যা মামলা। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর তার সব মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ওই ঘটনায় আহত অপর এক সন্ত্রাসী আবদুল কৈয়ূমের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা খারিজ করে দেয় সরকার। তিনি বর্তমান ফটিকছড়ি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।’
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। মানুষ দেখছে সরকার ঠিক তার উল্টো অবস্থানে গিয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। মামলার আসামি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে আটক অভিযান পরিচালনার পরিবর্তে পুলিশ তাদেরকেই তোয়াজতমিজ করছে। আরো সামনে বাড়িয়ে তাদের মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় খারিজ করে দিয়েছে সরকার। এসব মামলার বেশির ভাগ হত্যা-খুনের মামলা। রামরাজ্য কায়েমের জন্য সন্ত্রাসীরা নাগরিকদের হত্যা করেছিল। সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এ সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এনেছে, যা আসলে শিষ্টের দমন দুষ্টের পালন ও সন্ত্রাসীদের প্রণোদনা দান ছাড়া অন্য কিছু নয়। ফলে তারা আরো বেপরোয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণে। অন্য দিকে যার ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল, যার স্বামীকে নিঃশেষ করে দিয়েছিল চিরতরে, যে মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধনকে কেড়ে নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা সেসব সন্ত্রাসী সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে সেজে বসেছে এসব ফরিয়াদিদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সাধারণ মানুষের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল, পিষ্ট হয়েছিল তাদের অন্তর রাত-দিন। ফুঁসে ওঠা ক্ষোভ প্রকাশের জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। পেয়ারুর গাড়িবহরের যে বিশাল সাইজ তা গুটিকয়েক ‘জামায়াত-হেফাজতের’ বিচ্ছিন্ন হামলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এটা ভাবা মূর্খতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাদেরকে আসলে পুড়িয়ে মেরেছিল এলাকাবাসীর দীর্ঘ পুঞ্জীভূত ক্ষোভ।
যে বহরের নেতাদের সাধারণ অস্ত্র একে-৪৭, এম-১৬ ও জি-৩ তাদের অল্প কয়জন মানুষ নাস্তানাবুদ করে দেবে তা কখনো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। মানুষ যখন জানতে পেরেছে সন্ত্রাসীদের পাওয়া গেছে সুযোগ বুঝে সবাই একজোটে নেমেছে। এমনকি নারীরা ঝাঁটা হাতে নেমেছিল দীর্ঘ দিনের সন্ত্রাসের জবাব দিতে। হাজার হাজার মানুষের বিুব্ধ আক্রোশ সন্ত্রাসীদের দিশেহারা করে দিয়েছিল। এরা তো সেই সব মানুষ যাদের এত দিন নির্যাতন-নিপীড়ন করেছি আমরা। স্থানীয় জনতার রুদ্ররোষ দেখে তারা তখন কেবল পালানোর চেষ্টা করেছে। অস্ত্র থাকলেও হাজার হাজার মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ ঐক্যের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার বরং আরো ভয়ানক হবে সেটা তারা ভেবেছে। এ অবস্থাকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ বলা যেতে পারে। সরকার যদি এ ঘটনাটি মিডিয়ার ‘জামায়াতি-হেফাজতি’ তত্ত্বে বিশ্বাস করে সন্তুষ্টি খোঁজে তা হবে ভয়ানক ভুল মূল্যায়ন।
কোনো সংবাদমাধ্যম এটিকে গণপ্রতিরোধ বা গণপিটুনি বলে আখ্যায়িত করেনি। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ সেখানে প্রকৃতপক্ষে যার প্রতিফলন ঘটেছে। যে কারণে নিরীহ জনগণ হয়েছিল তাণ্ডবকারী একই কারণে সন্ত্রাসীদের উৎপাত রুখে দেয়া হয়নি গণপ্রতিরোধ বা গণপিটুনি। উল্টো সাধারণ গ্রামবাসী এখন খেতাব পেয়েছে ‘জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলাম’। হাজার হাজার গাড়ির উত্তেজিত মহড়া রুখে দেয়ার ঘটনাকে গুটিকয়েক জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে হালকাভাবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় মত্ত রয়েছে আমাদের মিডিয়া। শুরু থেকে সরকার কিছু সংবাদমাধ্যমের উসকানিতে অনেক কিছুকে ‘জামায়াত-শিবিরের’ কর্মকাণ্ড বলে উড়িয়ে দিতে গিয়ে এখন সব জায়গায় প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। অচল হয়ে পড়ছে দেশের প্রশাসন। এত দিন যারা রাষ্ট্রীয় আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জনগণের ওপর চড়াও হয়েছে সুযোগ বুঝে জনগণ তাদের রুখে দিয়েছে।
ফটিকছড়ির এ ঘটনাটি নিয়ে ইত্তেফাক ১৩ এপ্রিল তার সম্পাদকীয়তে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘চট্টগ্রামে এই ঘটনার পর গ্রামাঞ্চলে সংঘাত কি মাত্রায় ছড়িয়া পড়িয়াছে তাহা বুঝিতে আর অসুবিধা হয় না। উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল সর্বত্রই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। রাজধানীর আশেপাশের অঞ্চলেও বিরাজ করিতেছে উত্তেজনা।…এই রকম শ্বাসরুদ্ধকর ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করিতে হইলে রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অবিচার বন্ধ করিতে হইবে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করিয়া কেহ যাহাতে নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়ন এবং জুলুমের পথ গ্রহণ ও নাগরিক অধিকারগুলি ুণœ করিতে না পারে, সে নিশ্চয়তা দিতে হইবে। অন্যায়-অবিচার বন্ধে দরকার সাধারণ ঐকমত্যও। অন্যথায় ফটিকছড়ির মতো ঘটনা বারংবার ঘটিতেই থাকিবে।’
পত্রিকাটির সম্পাদকীয় মূলত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে সেগুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কোনো কোনো জেলায় অবিশ্বাস্যভাবে এসব বিক্ষোভে লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছে। এরকমটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি। জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে গুরুত্বের সাথে মোটেও আমলে নেয়নি সরকার। উল্টো পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বিজিবি দিয়ে গুলি করে দমিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। সংবাদমাধ্যমে বিকৃত উপস্থাপনায় লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভকে কোথাও চিহ্নিত করা হয়েছে ‘সহিংসতা’ কোথাও চিহ্নিত করা হয়েছে ‘তাণ্ডব’ বলে। পুলিশের গুলিতে হত্যার শিকার নিরীহ প্রতিবাদী মানুষকে কেবলই চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে জামায়াত-শিবির বলে। সংবাদমাধ্যমের এ নিন্দনীয় প্রচারণা দুঃসময়ে সরকারকে আগ্রাসী হওয়ার উসকানি জোগানো ছাড়া কোনো উপকারে আসেনি, যা সরকারকে নিয়ে চলেছে একটি অনিশ্চয়তার দিকে।
শনিবার ভোরে ঘটা সাতকানিয়ার ঘটনাটি একই ইঙ্গিত দিচ্ছে। হাজার হাজার গ্রামবাসী একটি পুলিশি অভিযান পণ্ড করে দেয় সেখানে। পুলিশ স্থানীয় চরতি ইউপি চেয়ারম্যান ডা: রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করতে যায়। পুলিশ তার বাসায় পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। চার দিক থেকে পুলিশকে ঘেরাও করে ফেলে তারা। প্রথমে পুলিশ মনে করেছিল গুলি করে ভয় দেখিয়ে আটক অভিযান সমাপ্ত করতে পারবেন। গুলি করার পর এর প্রতিক্রিয়া হয় বিপরীত। ভয় পাওয়ার পরিবর্তে মুহূর্তে আরো হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল জনতাকে গুলি করে হত্যা করে সামনে এগোনোর ক্ষমতা পুলিশের ছিল না। ওই জনপ্রতিনিধিকে না ধরেই পুলিশকে অভিযান সমাপ্ত করতে হয়েছিল।
এই জনপ্রতিনিধি একই সাথে স্থানীয় জামায়াতের নেতা। এখন মিডিয়া এটিকে ‘জামায়াতি কর্মকাণ্ড’ বলে উড়িয়ে দিলে বিষয়টি হালকা হয়ে যাবে না। গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, যশোর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে। মিডিয়া সরকারকে মিসগাইড করেছে। সরকারও লাখ লাখ মানুষের ক্ষোভকে বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে হালকা করে নিয়ে সন্তুষ্ট হতে চেয়েছে। প্রত্যেকটি জায়গায় আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা যাচ্ছে এখন।
অন্তত কিছু মানুষ যদি সরকারের কর্মকাণ্ড সমর্থন করত তাহলে পরিস্থিতি এতটা বেগতিক হতো না। জায়গায় জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এতটা অসহায় হতে হতো না। কিছু নাগরিক পুলিশের পক্ষ নিয়ে দাঁড়ালে পুলিশ কথিত আটক অভিযান চালাতে পারত। সরকার বা সরকারের বাহিনী সঠিক কাজ করছে বলে মনে করছে না জনগণ। পরিস্থিতি বলছে মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়ে গেছে। আর ভণ্ডুল করে দিচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। পুলিশি অভিযান রুখে দাঁড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের এ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ প্রকৃতপক্ষে ‘গণপ্রতিরোধ’। আমরা কোনো সংবাদমাধ্যমকে এখনো এ শব্দটি ব্যবহার করতে দেখিনি। দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যম সরকারের সমর্থন দিয়ে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। তারা জনগণের এ ধরনের প্রতিরোধকে ‘বেআইনি কর্মকাণ্ড’ ‘জামায়াতি-হেফাজতের কর্মকাণ্ড’ বলে নির্লজ্জ প্রচার চালাচ্ছে। অন্য দিকে ছিটেফোঁটা যে কয়টি সরকার সমালোচক মাধ্যম রয়েছে সেগুলো ঘটনার স্পষ্ট বর্ণনা পাঠকের কাছে তুলে ধরতে পারছে না। সরকারি চাপ ও ভয়ের পাশাপাশি সক্ষমতারও অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
প্রাণ হারানোর ভয় থাকার পরও মানুষ রাস্তায় নামছে। সরাসরি গুলি করেও বাঁধভাঙা জনতার জোয়ার রুখতে পারছে না পুলিশ-বিজিবি। কখনো ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা এ কাজে সশস্ত্র মাঠে নামছে তাদের পক্ষ হয়ে। গত দেড় মাসে দুই শ’র বেশি মানুষ রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পদক্ষেপ নেই। বিচার বিভাগ অবতীর্ণ হয়েছে সরকারের সহযোগীর ভূমিকায়। রাজনৈতিক শীর্ষ নেতাদের ঢালাওভাবে জামিন নামঞ্জুর তার প্রমাণ। সংবাদমাধ্যম এ সময় মজলুমের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা যদিও তারা দাঁড়িয়ে আছে জনগণের বিপক্ষে। হেফাজতের লাখ লাখ মানুষের খবর প্রচার না করে শাহবাগের কয়েক শ’ অ্যাক্টিভিস্টকে লাখো মানুষের উপস্থিতি বলে উগ্র প্রচার চালাচ্ছে। নাগরিকদের সামনে যখন সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায় অবস্থার পরিবর্তনে তারা জান দিতে দ্বিধাবোধ করে না। এ ধরনের নাগরিক প্রতিরোধকে স্বীকার না করলেও সেটা সফলতার দিকেই যায়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন