দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে সরকার আরো গভীর থেকে গভীরতর করে ফেলছে। বিরোধী দলের সাথে আলোচনা বা সমঝোতার প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর যে দমনপীড়ন চলছে, তা ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে। এখন বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও তা থেকে বাদ যাচ্ছেন না। পুলিশের দস্যুপনার মাধ্যমে বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় অফিস ভাঙার পর পুলিশের ওপর হামলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগ এনে ১৪৮ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এদের সবাই দলের কেন্দ্রীয় নেতা। সর্বশেষ দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, দলের একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর কমিটির ১০ শীর্ষ নেতাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের সব নেতাকেই কারারুদ্ধ করা হলো। প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এভাবে কারারুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে, সরকার বিরোধী দলের অস্তিত্ব এখন অস্বীকার করতে চাইছে। এর আগে অপর বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতাদের একইভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন বিএনপির বিরুদ্ধেও একই পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অনেকে একাধিকবার মন্ত্রী ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিরোধী দল নিষ্পেষণে সরকারের এ ধরনের মারমুখী ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, এরপর বিরোধীদলীয় নেতাকে গ্রেফতার করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ ধরনের দমনপীড়ন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষ থেকে সরকার যে কতটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম নামে নতুন একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের আহ্বানে লাখো মানুষের সমাবেশ তার বড় প্রমাণ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার সম্ভবত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের সাজানো মামলায় বিরোধী দলের নেতাদের শাস্তি দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। এই ভয়াবহ রাজনৈতিক কৌশল বাংলাদেশকে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটের মধ্যে ফেলবে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলো এ ধরনের দমনপীড়ন ও মামলার প্রতিবাদে হরতাল ও অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে। সরকারের সে দিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই।
সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল পুরনো রাজনৈতিক ধারায় ফিরে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন কায়েমের মাধ্যমে। এর পরিণতি হিসেবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ভয়াবহ খেসারত দিতে হয়েছিল। অবসান হয়েছিল রক্তাক্ত পরিণতির মধ্য দিয়ে। ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা হচ্ছে, মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। আওয়ামী লীগ আবারো বিরোধী দলবিহীন একদলীয় বাকশালী কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জনমতের প্রতি ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম কোনো খেয়াল নেই। গণমানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হয়তো কিছু দিন ক্ষমতা স্থায়ী করতে পারবে, কিন্তু এর শেষ পরিণতি হবে ভয়াবহ। আমরা আশা করব, সরকার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে। বিরোধী দলের নেতাদের ছেড়ে দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ নেবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন