মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

বলি হলো আমার দেশ


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের খড়গ শেষ পর্যন্ত বলি হলোই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা। এর আগে আরেকবার শক্তিশালী ভিন্নমতের পত্রিকা আমার দেশ সরকার বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছিল। এর ছাপাখানায় তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রা মাহমুদুর রহমানকে প্রায় এক বছর কারাগারে রেখে নির্যাতনের পরও পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত ছিল। এবার প্রথম দিন থেকেই ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। নিজের পত্রিকা অফিসে চার মাস ধরে অন্তরীণ মাহমুদুর রহমানকে ১০ এপ্রিল বুধবার সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়, সেসব অভিযোগ পানি ঘোলা করার মতো হাস্যকর। তিনি যখন নিজ পত্রিকা অফিসে অন্তরীণ, তখন তার বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। একটি প্রথম সারির পত্রিকার ষাট বছর বয়স্ক সম্পাদক হরতালের দিনে রাস্তায় গাড়ি পুড়িয়েছে, এমন কথা পৃথিবীর কোনো সুস্থ মানুষ বিশ্বাস করবে না। আর এক অভিযোগ তিনি বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে প্রবাসী ঘাদানিক নেতা জিয়াউদ্দিনের স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করে দেন। তাতে দেখা যায় যে, বিচারপতি নিজামুল হক জিয়াউদ্দিনের কাছে বার বার অনুরোধ করেন যে, তিনি যেন মামলার রায়টি তাড়াতাড়ি লিখে পাঠান। অর্থাৎ বিচারক নিজামুল হক। আর রায় লিখে পাঠাবেন জিয়াউদ্দিন আহমদ। তিনি  রায় পড়ে শোনাবেন মাত্র।
আমার দেশ পত্রিকা স্কাইপি সংলাপের বিষয়বস্তু কয়েকদিন ধরে ছাপিয়েছে। কিন্তু পত্রিকার তথ্য সূত্র বিশ্বখ্যাত সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট প্রথম স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করে। এই সংলাপ প্রকাশের সময় সম্পাদকের একটি নোট ছেপেছিল তারা। তাতে বলা হয়েছিল, নীতিগতভাবে ইকোনমিস্ট সাধারণত কারো ব্যক্তিগত কথপোকথন প্রকাশ করে না। কিন্তু নিজামুল হক ও জিয়াউদ্দিন আহমদের কথপোকথনের সংলাপটি তারা এই কারণে প্রকাশ করছে যে, এর সঙ্গে ন্যায় বিচার ও একজন মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত আছে। সেই কারণে তারা ঐ দুইজনের স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করলো। এই সংলাপের যথার্থতা মেনে নিয়ে সম্ভবত আত্মগ্লানিতে বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার বিচারপতির দায়িত্ব থেকে একেবারেই সরে যাওয়া উচিত ছিল কিনা সে প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই তিনি যদি আর বিচারক না থাকতেন তাহলেই ন্যায় বিচারের পথ সুগম হতো। স্কাইপি সংলাপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিচারপতি হক স্বাধীন বা নিরপেক্ষ নন। সুতরাং ট্রাইব্যুনাল থেকে সরে এলেই তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন বা হয়ে যাবেন, এটা কি জনগণ বিশ্বাস করবে? তবুও এখনকার এই বিচিত্র বাংলাদেশে তিনি বিচার কার্যে নিয়োজিত আছেন।
সরকার দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে খাপ্পা হয়েছিল এই কারণে যে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র এক অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত হলে মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির খবর প্রকাশ করেছিল। সেটিও আমার দেশ কোনো শোনা কথা হিসেবে লেখেনি। সরকারেরই একজন কর্মকর্তা এ দুর্নীতি বিষয়ে সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। কী বিরাট অপরাধ! সরকারের চাকরি করবে, আর সরকারের দুর্নীতির খোঁজখবর নিবে, এত বড় অপরাধ মেনে নেয়া যায় না। তবু তারা সরকারের সেবক। না হয় চিঠি লিখেছেই। কিন্তু মাহমুদুর রহমানকে কোন পাগলা কুত্তায় কামড়ে দিল যে, তিনি সে সংবাদ ছেপে দিলেন। ফলে যা হবার তাই হলো। সরকারের রুদ্ররোষ মাহমুদুর রহমানের উপর বর্ষিত হলো। তিনি দশমাস রিমান্ড ও জেল-জুলুম খেটে কারাগার থেকে বের হয়ে এলেন। শুধু তিনি নন, আদালতের নির্দেশে ঐ পত্রিকার একজন রিপোর্টারও একমাস জেল খেটে বেরিয়ে এলেন। বাংলাদেশের কোনো আদালত কোনোদিন কোনো রিপোর্টারকে এভাবে জেল খাটিয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে আমি তা কখনও দেখিনি।
মাহমুদুর রহমানকে আটকের পর অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। ঐ ১০ এপ্রিলই সরকার দৈনিক আমার দেশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত প্রেসটি সীল-গালা করে দিয়েছে। এই প্রেস সীল-গালা করে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার কোনোরকম সুযুক্তি দেখাতে পারেনি। ফলে বাধ্য হয়েই আমার দেশ ভিন্ন ব্যবস্থায় পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সে উদ্যোগ হলো, যদি জরুরিভাবে একটি পত্রিকা ভিন্ন কোনো প্রেস থেকে ছাপতে হয়, তাহলে কোন প্রেস থেকে ছাপা হচ্ছে, সেটি জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে হবে। আমার দেশ কর্তৃপক্ষ যথারীতি জেলা প্রশাসনকে তা অবহিত করে। সম্পাদক গ্রেফতার হবার পরও পরদিন যথারীতি কাগজটি সেরকম একটি বিকল্প ব্যবস্থায় প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে আমার দেশ কর্তৃপক্ষ কোনো ফাঁক রাখেনি। তারা যথারীতি আপদকালীন ছাপার ব্যবস্থা হিসেবে প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী জেলা প্রশাসককে অবহিতকরণের চিঠি সেখানে জমা দিয়ে চিঠিটি যে গ্রহণ করা হয়েছে তেমন সনদ নিয়ে আসেন। সে অনুযায়ী আল ফালাহও পত্রিকাটি ছেপে দিয়েছে।
কিন্তু দুইদিন ছাপার পর হঠাৎ করেই মধ্যরাতে সরকারের এক ম্যাজিস্ট্রেট আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেসে হাজির। তার বক্তব্য আমার দেশ কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে আল ফালাহ থেকে পত্রিকাটি ছাপছে। আল ফালাহ ঐ ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রিন্টিং প্রেসেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সের সংশ্লিষ্ট ধারা এবং জেলা প্রশাসককে অবহিতকরণের ন্যায়সঙ্গত চিঠি দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়া সেদিকে ভ্রƒক্ষেপও করেননি। দৈনিক আমার দেশের ছাপা কপিগুলি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে চলে গেছেন। কোন আইনে বা কোন বিধানে তিনি তা করেছেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব নয়। আর আল ফালাহ’র স্বত্বাধিকারী দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদকের বিরুদ্ধেও মামলা ঠুকে দেয়া হয়েছে। এ থেকেও প্রমাণিত হলো যে, দেশে আইন, বিচারÑএসব অর্থহীন হয়ে গেছে। মানুষ এসব দাবি করে যাবে, আর সরকার আইন, বিচার ও প্রশাসন দিয়ে সেসব দাবির টুঁটি চিপে ধরে বধ করবে।
এই সরকার ইতিহাস অনভিজ্ঞ, ঐতিহ্য-বিমুখ এবং এদেশের মানুষের কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের চেতনা পরিপন্থী। এমনকি এরা শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকারের দাবিদার। আর তা সত্যও বটে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান যে আদর্শের অনুসারী ছিলেন, তার ধারে কাছেও এরা নেই। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিতে স্খলন ছিল। সে সময়ে নষ্ট বামদের প্রভাব ছিল। কিন্তু তারপরেও তিনি এদেশের মানুষের ধর্ম চেতনাকে অস্বীকার করেননি। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য তিনি যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তার কোনোটাই ধনতন্ত্র-বান্ধব ছিল না।
এর একটি হলো, সংবাদপত্র। তখন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে শুধুমাত্র বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার ছিল। আর ছিল পত্রিকা। এখন এক একটি পত্রিকা যে বিরাট পুঁজি নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছে, তেমন পুঁজি তখন কারও ছিল না। আমরা যারা ১৯৭২-এর শুরুর দিকে সাংবাদিক হিসেবে সংবাদপত্রে যোগদান করেছিলাম, তারা প্রতিদিন সংবাদপত্রে সরকারী বিজ্ঞাপন প্রদান নীতির কঠোর সমালোচনা করেছি। মুজিব ফিরেও তাকাননি। আমরা বলেছি, সরকারের নিজের স্বার্থেই দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া উচিত। দেশে যদি সংবাদপত্র বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে তাহলে সরকার অতিদ্রুত জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ জনগণের চাহিদা বা ক্ষোভ, দুঃখ বা বেদনাÑএর কোনো কিছু সম্পর্কেই সরকার অবহিত হতে পারে না। ফলে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা এমন হাস্যকর কথা বলেন যে, মনে হয় তারা এই মাত্র ভিন্ন কোনো গ্রহ থেকে আবির্ভূত হলেন। জনগণও সেটা বোঝে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কখনও শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান-পতনের কাহিনী পড়তে বা উপলব্ধি করতে চেয়েছেন, এমন মোটেও মনে হয় না। এমনকি কখনও কখনও মনে হয় হঠাৎ আবিষ্কৃত ‘শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ও তিনি পড়েননি। তাতে আছে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান-পতনের অনেক কাহিনী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানে গণতন্ত্রায়ন এবং পাকিস্তানে মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান কী করেছিল, ঐ বইতে তা লেখা আছে। ভাগ্যিস, শেখ হাসিনা শেখ মুজিবুর রহমানের এই অসমাপ্ত ডায়রী প্রকাশ করেছেন। কতখানি তা ফ্যাক্ট আর কতখানি তা ফিকশন, সেটি অনুমান করতে পারি না।
শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান থেকে এসে আবির্ভূত হলেন, তখন তিনি জানতেনও না যে, বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা অস্ত্র হাতে কাছা দিয়ে খালি পায়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং বিজয় অর্জন করেছেন। তিনি এই পুরোটা সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থেকে ফেরা মাত্রই রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর তা হয়েই ভিন্নমতের প্রতি চরম ও নিষ্ঠুর পদক্ষেপ নিয়েছেন। আজকে শুধু সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন সে বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করতে চাই। ক্ষমতায় আসীন হয়ে ভিন্নমত দলনে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার একেবারে খড়গ হস্ত হয়ে পড়েন। ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই তার সরকার সংবাদপত্র দলনের চ-নীতি গ্রহণ করেন। সত্য প্রকাশকে শেখ মুজিব সরকার বিপজ্জনক মনে করেছিলেন। একদিকে তিনি নিজে বলেছেন, নতুন দেশ গড়ার জন্য তিনি সারা পৃথিবী থেকে ভিক্ষা করে টাকা আনছেন। আর তার চাটার দল তা খেয়ে ফেলছে। এও তিনি বলেছেন যে, মানুষে পায় সোনার খনি। তিনি পেয়েছেন চোরের খনি। সংবাদপত্রগুলো তার সামনে সে চিত্রই উন্মোচন করতে চেয়েছিল। এদেশে তখন বিরোধী দলের একমাত্র দৈনিক পত্রিকা ছিল দৈনিক গণকণ্ঠ।
ছাত্রলীগ যখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন আসম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজরা মিলে মেজর জলিলকে সামনে নিয়ে গঠন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। এরা এক ঝাঁক উদ্যোমী তরুণ নিয়ে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকা প্রকাশিত  হতে শুরু করে। আর কিছু ভিন্নমতের সাপ্তাহিক ছিল। প্রথমেই সরকার একে একে এই সাপ্তাহিকগুলো বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। প্রাচ্য বার্তা, মুখপত্র, স্পোকসম্যান ইস্টার্ন এক্সামিনার প্রভৃতি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে এর সম্পাদকদের গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। শেষে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার সম্পাদক এনায়েতউল্লাহ খানকেও। যে কোনো কারণেই হোক দৈনিক গণকণ্ঠ বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করে। সরকার নিয়ন্ত্রিত এক পরিত্যক্ত প্রিন্টিং প্রেস থেকে পত্রিকাটি ছাপা হলো। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার দুটো কাজ করেছে। একটি হলো পত্রিকার গ্যালি ভেঙে দেয়া। অপরটি হলো সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রেস থেকে পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া।
গ্যালি ভেঙে দেয়া বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হওয়ার কথা নয়। এই কম্পিউটার যুগে সেটা বোধ করি কল্পনাও করা যায় না। সে সময় অফসেট প্রিন্টিং প্রেস চালু হলেও হ্যান্ড-কাস্টিং কম্পোজ ব্যবস্থা চালু ছিল। যারা এই কম্পোজ করতেন তাদের কম্পোজিটর বলা হতো। তার সামনে, ওপরে, ডানে, বাঁয়ে চারটি কেস থাকতো। একেকটি কেসে সাজানো থাকতো সমস্ত অক্ষর। যেমন ‘অ’ থাকতো এক জায়গায়। আ-কার থাকতো আর এক জায়গায়। ‘ঙ্ক’, ‘ক্ষ’ থাকতো আলাদা আলাদা খোপে।  একজন কম্পোজিটর সেসব খোপ থেকে এসব অক্ষর জোগাড় করে শব্দ সাজাতেন। এবং কলাম অনুযায়ী সেগুলোকে বিন্যাস্ত করতেন। তারপর একজন মেকাপ ম্যান ওভাবে সীসার অক্ষরগুলোকে সাজিয়ে মেকআপ করতেন। এই পর্যায়ে এসে মুজিব সরকারের লোকেরা বার বার সেইসব অক্ষর অবিন্যাস্ত করে দিতো। গণকণ্ঠ এবং হককথা পত্রিকার এরকম চাহিদা ছিল যে, হককথা যে ছাপা হতো শুরু করতো প্রকাশের দিন থেকে, সেটি সারা সপ্তাহ ধরে অবিরাম ছাপা হতেই থাকতো। আর গণকণ্ঠ পত্রিকা সারাদিন ধরে ছাপা হতো। সরকার গ্যালি ভেঙে দিতো। ছাপাখানা বন্ধ করে দিতো। যেন বাংলাদেশ নামক এ ভূমি আমার। এখানে তোমার কথা চলবে না।
শেখ মুজিবের দেখানো পথেই হাঁটছেন শেখ হাসিনা সরকার। আমার দেশ প্রেসে কেন তালা লাগিয়ে দেয়া হল, তার পক্ষে সরকার কোনো যুক্তি দাঁড় করাতে পারেনি। সরকারের লোকেরা আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেসে হানা দিয়ে ঐ পত্রিকা অফিস থেকে ১৯ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আল ফালাহ প্রিন্টিং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, তারা কোনো আইনের ব্যত্যয় করেনি। এই যে আইন। এই যে চিঠি। কিন্তু গ্রেফতারকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও তার সহকর্মীরা সেগুলো দেখারও প্রয়োজন মনে করেনি। অর্থাৎ আইন বা বিচার কোনো স্বাভাবিক গতিতে চলছে না। স্বৈরশাসকদের প্রধান যা চান সেভাবেই সব কিছু চলছে। এর পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads