শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৩

মাহমুদুর রহমান : মৃত্যুর দুয়ারে এক দেশপ্রেমিক সম্পাদক



কোনো লাভ নেই জানি, কিন্তু তা সত্ত্বেও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। আজ, ১৯ এপ্রিল খবরে দেখলাম, দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জীবন নিয়ে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিল থেকে বন্দী, রিমান্ডে নির্যাতিত এবং ১৫ এপ্রিল থেকে অনশনরত মাহমুদুর রহমানের হৃদস্পন্দন মাত্র ৪৮-এ নেমে এসেছে, ব্লাড প্রেসার ওঠানামা করছে ৪৯ থেকে ৯০-এর মধ্যে, শরীরের পটাশিয়াম কমে গেছে, রক্তে ইউরিয়া ও সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেছে, একটি কিডনি যথাযথভাবে কাজ করছে না, প্রস্রাব হচ্ছে না। তার অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতাও দ্রুত কমে যাচ্ছে। তীব্র ব্যাক পেইনের যন্ত্রণাও তাকে কাহিল করে ফেলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি এমন ছয়টি মারাত্মক রোগেই আক্রান্ত হয়েছেন, যেগুলোর যে কোনো একটির কারণে তার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই যাত্রায় বেঁচে গেলেও তিনি আর কখনও সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন না। তার শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ চিরদিনের জন্য বিকলও হয়ে যেতে পারে। এজন্যই উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা বলেছেন, অনতিবিলম্বে তার অনশন ভেঙে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া শুরু করা দরকার। দ্রুত দরকার তাকে প্রতিটি বিষয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়াও।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাহমুদুর রহমান প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গেছেন। এমন অবস্থার কারণ সম্পর্কে নিশ্চয়ই কথা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। গত ১১ এপ্রিল সকালে কমান্ডো স্টাইলে অপারেশন চালিয়ে সরকার প্রথমে আমার দেশ অফিস থেকে গ্রেফতার করেছে মাহমুদুর রহমানকে। সেদিনই তিনটি মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাকে। এটুকুতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি অন্তরালের হুকুমদাতারা। ১১ এপ্রিল রাতেই পুলিশকে দিয়ে আমার দেশ-এর ছাপাখানায় তল্লাশির নামে ‘গণতান্ত্রিক’ ডাকাতি করিয়েছেন তারা। তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আমার দেশ-এর ছাপাখানায়। এরপর পত্রিকাটি ছাপানো হচ্ছিল দৈনিক সংগ্রাম-এর প্রেসে। কিন্তু আইনসম্মতভাবে হলেও সরকার একদিকে ছাপানো বন্ধ ও পত্রিকা জব্দ করেছে, অন্যদিকে সংগ্রাম সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদ এবং মাহমুদুর রহমানের মায়ের বিরুদ্ধে মামলা তো ঠুকেছেই, একই সঙ্গে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ১৯ জন গরীব বাইন্ডারকেওÑ যাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই এবং যারা নেহায়েত পেটের দায়ে চাকরি করে। সরকারের বদৌলতে তারাই এখনো জেলের ভাত খাচ্ছে। এর ফলে আক্রান্ত আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার অবশ্য আমার দেশকে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করেনি। এই না করার আসল কারণ হলো, এ ব্যাপারে সংবিধানে নিষেধ রয়েছে। এজন্যই বাঁকা পথে হাঁটতে শুরু করেছেন ক্ষমতাসীনরা। ওদিকে সরকারের পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল থেকে অনশন শুরু করেছেন মাহমুদুর রহমান।
মাহমুদুর রহমানকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহে আপত্তি ও প্রতিবাদ উঠেছে অনেক কারণেই। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অসাধারণ ‘যোগ্যতা’ ও কর্মকা- লক্ষ্য করে দেখুন। তেজগাঁও থানায় বর্ণিত মামলাটি হয়েছিল ২০১২ সালের  ১২ ডিসেম্বর আর মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল। মাঝখানে দীর্ঘ চারটি মাস কেটে গেছে। অভিযোগ সত্য হলে অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য এত বেশিদিন নিশ্চয়ই সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বলে কথা! অন্য একটি কারণেও প্রশ্ন না তুলে পারা যায়নি। প্রশ্নটি হলো, অভিযোগ যদি সত্যই হয়ে থাকে তাহলে মাহমুদুর রহমানকে আবার ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়ার দরকার হলো কেন? সব তথ্য-প্রমাণই তো পুলিশের কাছে থাকার কথা! বাস্তবে এ থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, উদ্দেশ্য আসলে অন্যরকমই ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারের রিমান্ড মানেই যে অভিযুক্ত’র ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো সেকথা এখন শিশু-কিশোরদেরও বুঝিয়ে বলতে হয় না। সে নির্যাতনেরই শিকার হয়েছেন সত্যবাদী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। রিমান্ডে নিয়ে আসলেও রাতদিন তার ওপর প্রচ- শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতন ও অনশনের পরিণতিতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে রিমান্ডের মেয়াদ বাকি থাকতেই পুলিশ ১৭ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে তখন রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাঁটা দূরে থাকুক, তিনি এমনকি দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছিলেন না। একজন সম্মানিত সম্পাদকের অবস্থা কেন এতটা শোচনীয় হয়ে পড়েছে এবং মেয়াদ বাকি থাকতেই কেন তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছেÑ এসব বিষয়ে জানতে চাওয়ার ধারেকাছে না গিয়ে আদালত সোজা তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ পুলিশের পাশাপাশি আদালতও মাহমুদুর রহমানের সম্ভাব্য মৃত্যুর দায়দায়িত্ব এড়ানোকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। ওদিকে তিন দফা দাবিতে অনশনরত মাহমুদুর রহমানের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটছিল বলে কারা কর্তৃপক্ষও ১৮ এপ্রিল তাকে বিএসএমএমইউ তথা সাবেক পিজি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে দায় সেরেছে। হাসপাতালে তিনি মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গেছেন বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। মনটা খারাপও হয়েছে সে কারণেই।
এখানে কিছু বিষয় লক্ষ্য ও স্মরণ করা দরকার। প্রথমেই বলা দরকার, মাহমুদুর রহমানকে যে মামলাগুলোতে ফাঁসানো হয়েছে সেগুলোর প্রতিটিই মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজানো। কারণ, আদালতে মাহমুদুর রহমান বলেছেন এবং সিনিয়র আইনজীবীসহ বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, স্কাইপ কেলেংকারির প্রধান নায়ক এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম দায়িত্ব স্বীকার করে পদত্যাগ করায় অভিযোগের সত্যতাই শুধু প্রমাণিত হয়নি, মামলার মেরিটও নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করার কারণে কোনো অপরাধ করেনি আমার দেশ। তাছাড়া উইকিলিক্স থেকে ভারতের তেহেলকা ডট কম পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অসংখ্য সংস্থা এ ধরনের সংলাপ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে চলেছে। বড়কথা, আমার দেশ-এরও আগে স্কাইপ সংলাপ বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। সুতরাং এ নিয়ে কোনো মামলাই চলতে পারে না। মামলা চালাতে হলে ওই বিচারপতিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার, যিনি সংবিধান ও চাকরির শপথ ভঙ্গ করে এর-ওর কাছে মামলার গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন এবং একে-ওকে রায় পর্যন্ত লিখে দিতে বলেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনরা দায়ী ওই বিচারপতিকে উল্টো প্রমোশন দিয়েছেন এবং গায়ের জোরে অভিযোগ এনে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে ছেড়েছেন। মামলাও দিয়েছেন রাষ্ট্রদ্রোহের! অথচ স্কাইপ সংলাপ বা কোনো তথ্য প্রকাশ করার কারণে আর যাই হোক, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনরা এই সহজ কথাটুকু না বোঝার ভান করে চলেছেন। ফলে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, তারা আসলে যে কোনোভাবে মাহমুদুর রহমানের ওপর পুরনো কোনো রাগের ঝাল মেটাতে চাচ্ছেন। আমার দেশকেও চাচ্ছেন ‘একহাত’ দেখিয়ে দিতে। পারলে একেবারে বন্ধই করে দিতেন তারা। কিন্তু সংবিধানে নিষেধ রয়েছে বলে বাঁকা পথে হাঁটতে হচ্ছে তাদের। ক্ষমতাসীনরা ভাবছেন, প্রেসে তালা লাগানো গেলেই বুঝি আমার দেশ বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গক্রমে বিচার বিভাগ ও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সরকারের উপেক্ষার দিকটিকেও আলোচনায় আনা দরকার। কারণ, বিশেষ করে দৈনিক আমার দেশ-এর ব্যাপারে সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় অমান্য করেছে। রিমান্ডের ব্যাপারেও সরকার উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি চরমভাবেই অসম্মান দেখিয়েছে। কারণ, ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল দেয়া এক রায়ে হাই কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সুনির্দিষ্ট দশটি বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিল। একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেয়া যাবে না। রিমান্ডে নিতে হলেও সর্বোচ্চ তিনদিনের বেশি কাউকে রিমান্ডে রাখা যাবে না। তাছাড়া রিমান্ডে নেয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীর উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। রিমান্ডে নেয়ার আগে ও পরে অভিযুক্তকে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে, প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আইনজীবী ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার ও আলোচনা করার সুযোগও দিতে হবে। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে সরকার সবদিক থেকেই সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি উপেক্ষা দেখিয়ে চলেছে। সরকারের ইচ্ছায় একদিকে নি¤œ আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে মাহমুদুর রহমানের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনই শুধু চালানো হয়নি, আইনজীবীসহ স্বজনদেরকেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসবই সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতি ও মনোভাবের কারণে। এই সরকার বিচার বিভাগকেই শুধু সেবাদাস বানায়নি, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকেও একেবারে  তছনছ করে ফেলেছে। এজন্যই দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জীবনও পৌঁছে গেছে মৃত্যুর কাছাকাছি।
আসলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিচার বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব এক প্রতিষ্ঠিত সত্য। রাষ্ট্রের এ দুটি স্তম্ভের স্বাধীন ভূমিকার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ন্যক্কারজনক নীতি ও মনোভাবের প্রমাণ অতীতেও বহুবার পাওয়া গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার ‘এক নেতার এক দেশ’-এর মাহাত্ম্য দেখিয়ে ছেড়েছিল। সে একই নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও বিচার বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণতন্ত্রসম্মত অবস্থান নিতে পারেনি। বিস্তারিত স্মরণ করার পরিবর্তে এখানে মাহমুদুর রহমানের উদাহরণ উলে¬খ করলে দেখা যাবে, সরকারের চাপে বিচারকরাও কতটা অসহায় হয়ে পড়েছেন। যেমন ২০১০ সালে প্রথম দফা রিমান্ডে নির্যাতিত হওয়ার পর আদালতে দাঁড়িয়ে মাহমুদুর রহমান তাকে ‘বাঁচানোর’ জন্য বিচারকের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমাকে বাঁচান! কিন্তু যে সম্পাদকের নেতৃত্বে দৈনিক আমার দেশ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য কলম যুদ্ধ করেছে সে সম্পাদককেই সেবার রীতিমতো একজন ‘বেচারা’ বানিয়ে ফেলেছিল বিচার বিভাগ! বিচারকের আসনে সেদিন একজন নারী ছিলেন। তার প্রতি সম্মান দেখানোর চিন্তা থেকে মাহমুদুর রহমান ‘দিগম্বর’ বা ‘উলঙ্গ’ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেননি। নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানানোর জন্য বলেছিলেন, ‘আই ওয়াজ আনড্রেস্ড’। কিন্তু বিচারকের মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। শরীরের নানা জায়গায় প্রচ- ব্যথার কথা জানালেও এবং দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় না থাকা সত্ত্বেও বিচারক মাহমুদুর রহমানকে আবারও রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এ ছিল এক বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত। একই ধরনের সিদ্ধান্ত এসেছে পরবর্তী দিনগুলোতেও। এবার তো বিশেষভাবে। নির্যাতন চালানোর পর গত ১৭ এপ্রিল তাকে যখন নি¤œ আদালতে হাজির করা হয়েছে তখন তার অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালত তার পক্ষে কোনো কথাই শোনেনি। সোজা কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে সম্ভাব্য মৃত্যুর দায়দায়িত্ব পাশ কাটিয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে বিশেষ করে আলোচিত হচ্ছে এখন রিমান্ডের বিষয়টি। কারণ, মাহমুদুর রহমানই একমাত্র ব্যক্তি নন, সরকারের ইচ্ছায় নিম্ন আদালত প্রায় প্রতিদিনই ঢালাওভাবে রিমান্ড মঞ্জুর করে চলেছে। অথচ সাধারণত রিমান্ডে নেয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য জানার জন্য। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় প্রত্যেককেই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানছে নাÑ যে কথাট আগেই জানানো হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার, বাস্তবেও বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই বিশেষ করে রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে তছনছ করে ফেলা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, রিমান্ড মঞ্জুর করা না করা সম্পূর্ণরূপে বিচারকের এখতিয়ার হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারকরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। রাজনৈতিক মামলায় বিচারকদের ওপর নাকি ‘চাপ’ থাকে। এই ‘চাপ’ ক্ষমতাসীনরাই দিয়ে থাকেন। এবারও মাহমুদুর রহমানকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহে পরিষ্কার হয়েছে, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার চরমভাবেই অবজ্ঞা দেখাচ্ছে। সরকার এগিয়ে চলেছে ফ্যাসিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এর ফলে বেশি ক্ষতি হচ্ছে স্বাধীন বিচার বিভাগের। মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে। মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ-এর ক্ষেত্রেও সরকারের একই মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। একই কারণে আইনের আড়াল নিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে মাহমুদুর রহমানের ওপর। দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই এ অবস্থার আশু অবসান দরকার। সরকারের উচিত অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানের জীবন বাঁচানোর সব ব্যবস্থা নেয়া, তিন দফা দাবি পূরণ করা, তাকে মুক্তি দেয়া এবং আমার দেশ-এর প্রকাশনার সব বাধা দূর করা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads