শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

এখন ঘুরে দাঁড়াবার সময়


‘নাগরিক’ বা ‘নাগরিকতা’ আমাদের রাষ্ট্র কিম্বা সমাজচিন্তার গুরুত্বপূর্ণ কোন ধারণা নয়। মানবাধিকার নিয়েও আমরা কথা বলি এবং কাজও করি, কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সম্পর্ক ঠিক কোথায় এবং কিভাবে তারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গাঠনিক ভিত্তি হিশাবে কাজ করে সেই সব বিষয়ে আমাদের সমাজে ভাবনা চিন্তার অভাব আছে। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি, ফলে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কল্পনা ও আবেগের প্রায় পুরোটাই দখল করে আছে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির সাড়ে পনেরো আনা অংশ খরচ হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণে। কিন্তু পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তির জন্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধ করা আর নিজেদের একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে ফারাক দুস্তর। দ্বিতীয়টা কঠিন কাজ। সেটা বাইরে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, অভ্যন্তরীণ ভাবে নিজেদের এক অখণ্ড রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে গঠন করা। সামাজিক বিভেদ, পার্থক্য, প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বে উঠে এমন একটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গঠন করা যেখানে সকলেই একটি মাত্র পরিচয়ে পরিচিত। সেটা হচ্ছে নাগরিক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই নাগরিক পরিমণ্ডলের আবির্ভাব, স্ফূর্তি ও বিকাশ ছাড়া গড়ে উঠতে পারে না। সমাজে আমরা কেউ বাঙালি থাকতে চাই, কেউ হতে চাই জুম্ম জাতীয়তাবাদী, কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান। এমনকি নাস্তিক। তাতে কোনই অসুবিধা নাই। সামাজিক স্তরে নানান পরিচয় নিয়ে মানুষ বাস করে। কখনও তা নিছকই ভিন্নতা, কখনও তা বিভেদও বটে। কিন্তু যদি আমরা একক ও অখণ্ড একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির সদস্য হতে চাই তাহলে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক সাধনা হবে ‘নাগরিক’ হয়ে ওঠা।

রাষ্ট্র আর সমাজ সমার্থক নয়। রাষ্ট্রের চোখে আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা নাগরিক। কিন্তু নাগরিক হওয়ার অর্থ রাষ্ট্র কন্সটিটিউট বা গঠন করাও বটে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পর ঐ রাষ্ট্রের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে নাগরিকদের নাগরিক অধিকার রা করা। যে অধিকার রা করতে নাগরিকরা রাষ্ট্রকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই যদি গঠিত না হয়, তাহলে নাগরিক হবো কী করে! নাগরিকতার সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এই সম্পর্ক আমাদের কাছে স্পষ্ট করে তোলাই এখনকার বড় একটি কাজ। অর্থাৎ নাগরিকতাকে আমাদের আরিক ভাবে বুঝলে চলবে না। নগরে বাস করলেই কেউ নাগরিক হন না।
এটাও আমরা জানি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে। সমাজে শ্রেণি আছে বলেই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। ফলে রাষ্ট্র চিরকালীন কোন সত্তা নয়। শ্রেণি না থাকলে তার বিলয় ঘটবে বলে দার্শনিকরা বলে থাকেন। কিন্তু সে আলোচনা আজ নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে আমরা একক ও অখণ্ড রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে এই রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে পারি এবং কিভাবেই বা তা রা করতে পারি? সে বিষয়ে আমাদের সমাজে আলোচনা নাই বললেই চলে। ফলে নিজেকে নাগরিক ভাবা ও অন্যকে নাগরিক হিশাবে মর্যাদা দেওয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা গড়ে তুলতে পারি নি। নাগরিকতার সংস্কৃতি ও রাজনীতি আমাদের মধ্যে কেন বিকশিত হয়নি তার নানান আর্থ-সামাজিক কারণ আছে। আছে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণও।
তবে একটি দিকে খানিক ইঙ্গিত দিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারি। যেমন, বাংলাদেশে ঐতিহাসিক ভাবে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছে তার সাংস্কৃতিক চরিত্র এখনও সামন্তীয় রয়ে গিয়েছে। যদিও আর্থ-সামাজিক ভাবে আমরা সামন্ত ব্যবস্থার মধ্যে বাস করি না। আমরা বাস করছি এমন এক প্রান্তিক পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন হচ্ছে লুট, বেনিয়াবৃত্তি, সুদখোরি মহাজনি ব্যবস্থা কিম্বা শেয়ার ব্যবসা নামক জুয়াখেলা। পুঁজিকে বিনিয়োগে নিয়ে যাবার জন্য পুঁজির সঞ্চয় ও একত্রীকরণ ঘটানো নয়। সারমর্মে বলা যায় উৎপাদন সম্পর্কের েেত্র ইতিবাচক পুঁজিতান্ত্রিক রূপান্তর আমরা ঘটাতে পারি নি। ধুঁকে ধুঁকে চলছি। যে বুর্জোয়া শ্রেণি সমাজে গতিশীলতা আনে বলে কার্ল মার্কস কমিউনিস্ট ইশতেহারে তার তরুণ বয়সেই আমাদের জানিয়েছিলেন, পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্কের সেই গতিশীলতার স্বাদ আমরা পাই নি। কিম্বা লেনিনের সেই বিখ্যাত ভাষ্যও আমরা বুঝি নি যখন তিনি দাবি করেছিলেন পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের ‘দ্রুত এবং ত্বরান্বিত বিকাশ’ না হলে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পায় শ্রমিক, কৃষকসহ মেহনতি মানুষ। সেই কারণেই গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম খেটে খাওয়া মানুষের জন্য জরুরী। সেটা সম্ভব হলেই সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের বৈষয়িক শর্ত তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। এই সব কথা নিছক তত্ত্ব ছিল না, বাংলাদেশের এখনকার সমাজ ও রাজনীতি বুঝতে আমাদের খুবই কাজে লাগে।
এই দুঃসহ কষ্টের প্রমাণ যদি চাই তাহলে আমরা গার্মেণ্ট শ্রমিকদের মজুরি ও দুর্বিষহ জীবনের দিকে তাকাতে পারি, তাকাতে পারি মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ দেশে দেশে শ্রমিক বা আরও সরল ভাবে বাংলাদেশ থেকে ‘দাস’ রপ্তানির অর্থনীতির দিকে তাকালে। যাদের আমরা আদর করে ‘শ্রমিক’ বলি। অথচ এদের ওপরই বাংলাদেশের পুরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টিকে আছে। এই যখন বাস্তব অবস্থা সেখানে ‘নাগরিক’ বা ‘নাগরিকতার’ ধারণা বিকশিত হবার কোন বৈষয়িক শর্ত নাই, সেটা সহজেই বোঝা যায়।
একই অনুষঙ্গে ঢাকা শহরে দ্রুত গড়ে উঠেছে এমন একটি ভোগী শ্রেণি, যাদের ভোগের যোগান দিতে গিয়ে সারা দেশের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এরা শহরেই থাকে। কিন্তু ইতোমধ্যেই পরিবেশ ও নগরায়নের বিচারে একদিকে তারা গ্রাম ধ্বংস করছে, অন্যদিকে শহরকে আবাসযোগ্য করে তুলেছে। এমন শহর তারা গড়ে তুলেছে, যার সঙ্গে গ্রামের সম্পর্ক নিষ্ঠুর ও নির্মম শোষণের। গ্রাম তাদের ‘দাস’ সরবরাহ করে, তাদের খাদ্য যোগায়। আর জমির নিচে গ্যাস, তেল আর খনিজ সম্পদ তারা শহরে বসে শেভ্রন, কনকোফিলিপস কিম্বা অন্য কোন বহুজাতিক কম্পানির হাতে তুলে দেয়।
বাংলাদেশের এখনকার রাজনীতি ভয়াবহ। কী ঘটছে এখন সে কারণে নয়। বরং এ কারণে যে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া শ্রমিক বা মেহনতি মানুষ তাদের নিজেদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে রাজনীতির কেন্দ্রীয় ময়দানে হাজির নাই। অথচ এই শ্রেণির সক্রিয় ও সপ্রাণ উপস্থিতি ছাড়া রাজনৈতিক চিন্তাচেতনায় কোন গতিশীল রূপান্তর অসম্ভব, যার নমুনা আমরা দেখি ‘প্রগতিশীলতার’ নামে ‘প্রতিক্রিয়াশীলতা’-র চর্চার মধ্যে। বিদ্যমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের রূপান্তর ঘটানো ও তাকে গতিশীল করবার নীতি ও কৌশলের তর্কবিতর্ক বাদ দিয়ে রাজনীতির নির্ধারক তর্ক হয়ে উঠেছে কে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পে আর কারা তার বিপ।ে এই রাজনীতিকেই হাজির করা হয় মুক্তিযুদ্ধের প/বিপরে তর্ক হিশাবে। পে কিম্বা বিপে যারাই থাকে শ্রেণীগত দিক থেকে উভয়েই বড় বা ছোট শহরের পেটিবুর্জোয়া শ্রেণি। এরই প্রতিক্রিয়ায় গড়ে ওঠে ইসলামের প/েবিপরে তর্ক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কর্তব্যের দিক থেকে এই সকল তর্ক ও বিভাজন আমাদের এক কদমও এগিয়ে যেতে সহায়তা করে না।
রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিক থেকে গ্রামের সঙ্গে শহরের সম্পর্ককে আমরা দুটো দিক থেকে সহজে বুঝতে পারি। এক. একটি গণবিরোধী সাংবিধানিক একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা একটি কেন্দ্রীয় ‘রাজতন্ত্র’ (কিম্বা ‘রাণীতন্ত্র’), যাকে অনেক সময় পরিবারতন্ত্র বলা হয়; মাঝে মধ্যে সেনা অভ্যুত্থান ও সমরতন্ত্র, আর দুই. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রকট অনুপস্থিতি। একটি রাষ্ট্র চলছে কোন গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ছাড়া। এটা অবিশ্বাস্যই বলতে হবে। অর্থাৎ উন্নয়ন বলি, কি স্থানীয় প্রশাসন বলি, কিম্বা বলি প্রাণ, পরিবেশ, খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করবার কথাÑ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের েেত্র জনগণের ভূমিকা রাখবার কোন সুযোগই নাই। সব কিছু নির্ধারিত হচ্ছে ঢাকা থেকে। উচ্চ আদালত এখানেই। আমলাদের মতার কেন্দ্রীভবনও এই ঢাকা শহরেই। জগদ্দল পাথরের মতো এই শহর ১৬ কোটি মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে। স্রেফ বেঁচে থাকবার তাড়নায় গ্রাম থেকে সর্বহারা মানুষ ছুটে আসছে ঢাকায়। বস্তিতে বস্তিতে অলিগলিতে জন্তু জানোয়ারের মতো তারা ধুঁকে ধুঁকে বাঁচে। জনগণের একটিই মাত্র অধিকার, সেটা হচ্ছে কে তাদের লুণ্ঠন করবে, তাদের যা বাকি আছে তা আরও লুট করে কে তাদের ল্যাংটা করে ছেড়ে দেবেÑ সেই সিদ্ধান্তটাই প্রতি পাঁচ বছর পর পর তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া। এটাই জনগণের একমাত্র রাজনৈতিক অধিকার।
প্রতিটি নগর বা শহর সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিস্তৃত জালের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। এই ধরণের নগর বা শহরের সংস্কৃতির মধ্যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিম্বা নাগরিকতার কোন ধারণার আবির্ভাব বা বিকাশ ঘটানো ভয়ংকর একটি কঠিন কাজ। এই ধরনের শহরে রাজনীতির যে বয়ান মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরী করে তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সামন্তীয় চিন্তাচেতনার সঙ্গে আধাখেঁচড়া পুঁজিতান্ত্রিক সমাজের তুরীয় ব্যক্তিতন্ত্রের মিশাল। ভয়াবহ জিনিস। ধর্মীয় হোক কিম্বা হোক সেকুলার‘প্রগতি’-মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিজের বদ্ধমূল চিন্তার ময়লা কাদার মধ্যে লুটোপুটি খেয়ে দারুন আমোদিত থাকে। নিজের বদ্ধমূল চিন্তার পর্যালোচনা নয়, ঐতিহাসিক ভাবে ধর্ম কিম্বা আধুনিকতাকে বিচার বিশ্লেষণ নয়Ñ নিজের বদ্ধমূল চিন্তাকে ধার্মিকতা বা প্রগতিবাদিতার মোড়কে আচ্ছাদন করে ফেরি করাই তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। কোন বুদ্ধি বা বিচারের শক্তিতে আস্থা নাই। অন্যের মত অপছন্দ হলে তাকে গালিগালাজ করা বা কুৎসা রটনাই রেওয়াজ। এই সমাজে নাগরিক হওয়া কঠিন এক সাধনার ব্যাপারই বটে।
কথাগুলো বলবার কারণ আছে। সম্প্রতি ‘নাগরিক অধিকার রা কমিটি’ হিশাবে আমরা অনেকে একটি জায়গায় দাঁড়াতে চাইছি। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যাঁরা এর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা অধিকাংশই কোন না কোন পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিম্বা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। সকলেই নাগরিক ও মানবিক অধিকার রার অঙ্গীকার নিয়েই একত্র হয়েছেন। তাঁরা তাঁদের সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করবেন, নাকি ব্যক্তিগত ভাবে এই উদ্যোগে শরিক হয়েছে সেটা তাঁদের নিজ নিজ সংগঠনের বিষয়। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে তাঁরা স্রেফ একজন ব্যক্তি মাত্র নন। বরং তাঁরা নিজ নিজ পেশার বিশাল একদল সমর্থকদেরও প্রতিনিধিত্ব করেন। যতদূর আমরা জানি বাংলাদেশে এই বৈশিষ্ট্য ধারন করে নাগরিক অধিকার রার জন্য কোন সংগঠন গড়ে ওঠে নি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সকলের প্রতি ইনসাফ নিশ্চিত করতে সম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করবার জন্য সদা সংগ্রামী জনগণের পাশে নিরন্তর লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।
অনেক বড় ল্য নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। অভীষ্ট ল্েয পৌঁছানো যাবে কিনা সেটা এখনি দাবি করার সময় আসে নি। সংগঠিত হবার উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করে কাজে ও তৎপরতায় তাকে বাস্তবায়িত করবার চেষ্টার ওপর সেটা নির্ভর করবে। যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন আশা করি সেই েেত্র তাদের অঙ্গীকারের কমতি হবে না।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ কায়েমের কথাটি আমরা গ্রহণ করেছি ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র থেকে। এই আদর্শ ঘোষণার ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই তিন আদর্শের ঐতিহাসিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে পরবর্তীতে যে রাষ্ট্র গঠিত হবে তার গাঠনিক ভিত্তি হবে এই তিন আদর্শ। অর্থাৎ রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে এই তিন আদর্শের বাস্তবায়ন। তা করতে হলে এই তিন আদর্শকে জনগণ কিভাবে উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা করে সেটা জানার দরকার ছিল, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের গোড়ার কাজগুলোর দিকে আমরা মনোযোগ দিতে পারি নি। নাগরিক অধিকার রা কমিটি সে কারণে তাদের ঘোষণাপত্রে জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ইনসাফ বা সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করলেও আমাদের সে আশা পূর্ণ হয় নি। একদলীয় শাসন, বেসামরিক ও সামরিক একনায়কতন্ত্র কায়েম এবং মৌলিক নাগরিক ও মানবিক অধিকার বারবার লংঘন ও অস্বীকার করার কারণে আমরা ভয়ংকর একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। গোড়ার কাজ হাতে নিতে হবে। বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে একটি দেশের সংবিধানকে দলীয় ম্যানিফেস্টোতে পরিণত করা হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। অতএব আমাদের অবশ্যই নতুন ভাবে ভাবতে ও সংগঠিত হতে হবে।
এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার সময়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads