মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

আমরা কি বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলেছি?


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী : 
সমাজের ভেতরে বিভাজন এখন এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, একটি খালের ওপর এখন পাশাপাশি দু’টি বাঁশের সাঁকো নির্মিত হচ্ছে। ইউপি মেম্বরের সমর্থকরা এক সেতু দিয়ে খাল পারাপার হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থকরা অপর সাঁকো দিয়ে খাল পারাপার হন। কিন্তু এরা এক বাজারে কেনাবেচা করেন, এক নাপিতের দোকানে চুল কাটান, মাঠ থাকলে তারা এক মাঠেই খেলাধুলা করেন। তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে এক স্কুলে। সাঁকো পার হয়ে এক সড়ক দিয়েই তারা চলাচল করেন। সম্ভত তারা একই নদী, খাল, পুকুরে এক সঙ্গে গোসল করেন, কাপড় কাঁচেন, বারোয়ারি হলে মাছ ধরেন। হয়তো একজনের সমর্থকরা অপর জনের সমর্থকদের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করেন। ধারণা করি, বিয়ে-শাদীতেও পরস্পরকে দাওয়াত করেন। কিন্তু খাল পারাপার হন শুধু ভিন্ন সাঁকো ধরে।
সমাজের ভেতরে এ এক অদ্ভূত পরিস্থিতি। রাজনীতিতে মতাদর্শগত পার্থক্য এখন এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে, পরস্পরের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। কিন্তু রাজনীতিতে এই অবস্থা এসেছে বাংলাদেশ স্বাধীন হবারও বেশ পরে। আবার কৌতুকের সঙ্গে লক্ষ্য করি যে, কোনো প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূতের দাওয়াতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সবাই একযোগে যান। তারা হয়তো শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন না। কিন্তু তখন ভেদরোখাগুলো খানিকটা সংকুচিত হয়ে আসে। অথচ রাজনীতির এমন দশা আগে ছিলো না। যে যার আদর্শ, বক্তব্য প্রচার করতেন। জনগণের মধ্যে নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। তারপর জনগণ কোন দলকে বেছে নেবে সেটা নির্ধারণ করতো। এক দল ক্ষমতায় যেতেন আরেক দল বিরুদ্ধ পক্ষে থাকতেন। পার্লামেন্টেও তারা তুমুল তর্ক-বিতর্ক করতেন। কিন্তু পার্লামেন্ট থেকে বের হয়ে লবি বা করিডোরে পরস্পর করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
এটা সমাজের একটা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করতো। যেখানে জাতীয় স্বার্থ সবার উপরে স্থান পেতো। সারা দুনিয়ার রাজনীতিতে তো এমনই ঘটে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে দল জেতে সেদলও প্রায় তৎক্ষণাৎ গণতন্ত্রকে সমুন্নত ও সুসংহত করার জন্য পরাজিত পক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় ও জনকল্যাণে তাদের সমর্থন চাইতেন। একইভাবে পরাজিত দলও জয়ী প্রার্থী ও দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে জনকল্যাণে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। এবং দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি, উন্নতি ও কল্যাণে সত্যি সত্যি তারা একযোগে কাজ করে যান। পরাজিত দল কখনো বলে না যে, সুক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে কিংবা একথাও কোনোদিন কোন পরাজিত দলের মুখে শোনা যায়নি যে, জয়ী প্রার্থী ও দলকে একদিনেও শান্তিতে থাকতে দেবো না।
বাংলাদেশে নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতির এখান থেকেই শুরু। এটি একেবারে যে অনুপস্থিত ছিলো এমন নয়। কিন্তু এই মাত্রায় তা কখনো উন্নীত হয়নি। একদিনও শান্তিতে থাকতে না দেবার পদ্ধতিটা তবে কী? সে পদ্ধতি হলো জনগণের মধ্যে স্পষ্ট ভেদরেখা তৈরী করা। অর্থাৎ বিরোধী দলের সকল সদস্যকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার আয়োজন। গত দু’দশক ধরে সে আয়োজন ক্রমেই ধারালো থেকে ক্ষুরধার হয়ে উঠেছে। এটি সমাজের সর্বস্তরে বিস্তৃত। সর্বশেষ যা দেখলাম, তা হলো জামায়াত বিরোধিতার জামায়াতের নেতাকর্মী সমর্থকদের বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ লুটপাট করা হচ্ছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরও নৃশংস হামলা চালানো হচ্ছে। কোনো বিবেচনায়ও একথা বলা যাবে না যে, আওয়ামী লীগের সমর্থক নয় বলে, ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী বলেই তারা বাংলাদেশের নাগরিক থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। সুতরাং এদেশে শান্তিতে বসবাস করার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে।
সরকার এই বিভাজনকে আরও তীক্ষèতর করে ফেলেছে তার দলীয়কৃত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই মৌলিক অঙ্গীকার সরকারের নির্দেশে তারা রক্ষা করতে পারছে না। এর পরিণতিতে দেশের ভিতরে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। আর পুলিশকে এই মাত্রায় ব্যবহার করার ফলে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে এক ধরনের গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করেছে। এতে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হতে হতে এখন গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশ পোশাকে কিংবা সাদা পোশাকে অস্ত্রহাতে কোনো না কোনো গ্রামে মধ্যরাতে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামী ধরার জন্য হানা দিচ্ছে। আর থানায় নিয়ে এক লাখ, দুই লাখ, পঞ্চাশ হাজার, বিশ হাজার যার কাছ থেকে যা পারছে আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি এখন গ্রামে-গঞ্জেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে পুলিশ আসছে শুনলেই হয়তো মসজিদের মাইকে কিংবা ঢেঁড়া পিটিয়ে গ্রামরক্ষীরা সে খবর জানান দিচ্ছে। আার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত নির্বিশেষে নারী, পুরুষ, শিশু মিলে লাঠিসোটা বল্লম নিয়ে প্রতিরোধে নেমে পড়েছে। এভাবে দেশের অনেক এলাকায় জনতার হাতে হামলাকারী পুলিশ আটক হয়েছে। তারপর থানা নানা দেনদরবার করে তার সদস্যদের ছাড়িয়ে আনছে। কখনও কখন এরা বেধড়ক পিটুনির শিকারও হচ্ছে।
এরকম ক্ষেত্রে আবার পুলিশ আসামী ধরতে স্থানীয় সরকার দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করছে। এরফলে জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সরকার যতোই বলুক পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব হামলা চলাচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা বা জামায়াত-হেফাজত সমর্থকরা। কিন্তু তা ধোপে টিকছে না। কিন্তু একটি গ্রামে শুধু জামায়াত-শিবিরই বসবাস করে না। সেখানে সব দল-মতের মানুষই একত্র হয়ে বসবাস করে। পরস্পর পরস্পরের স্বার্থে এগিয়ে যায়। সাধারণ শান্তিপ্রিয় চাষা-ভুষা, মুটে-মজুর, দোকানদার, ব্যবসায়ী, গ্রামবাসীরা কেনো এই পথ বেছে নিলো কিংবা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে, সেটি বুঝবার ক্ষমতা এই সরকারের  নেই।
সরকার যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক, যেভাবেই নাটক সাজাক সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ঘটনা প্রণিধানযোগ্য। সেখানে ভুজপুর গ্রামে তিনশত মটর সাইকেল, আর পুলিশ নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি’র প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ারুল ইসলাম আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য গিয়ে হাজির হন। পেয়ারুল ইসলামের আশা, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আিভযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারলে পরবর্তী নির্বাচনে তার বিজয় সুনিশ্চিত হবে। কিন্তু গ্রামবাসী তাদের ঘেরাও করে ফেলে এবং পুলিশের গুলীতে পাঁচজন নিহত হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ঐ মটর সাইকেল বহরের সকল মটর সাইকেল ও ২৮টি মোটর গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এ সম্পর্কে দৈনিক ইত্তেফাক এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলেছে যে, হাজার হাজার গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও বর্শা নিয়ে হামলাকারীদের আক্রমণ করে। এতে যোগ দেয় নারী-পুরুষ সবাই। এতে সরকারি দলের লোকদের প্রতি সাধারণ মানুষদের ঘৃণার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তার মাত্রা সরকারের উপলব্ধি করতে হবে। জনগণের এই বিশাল প্রতিরোধের মুখে হামলাকারী আওয়ামী লীগ-পুলিশ ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে থাকে। কেউ কেউ বাঁচার জন্য পুকুর বা অন্য কোনো জলাভূমিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। অন্যরা আশ্রয়ের জন্য অপরিচিতদের বাড়ীতে উঠলে গণপিটুনির শিকার হয়। প্রায় তিন ঘন্টা ধরে এই সংঘর্ষ চলে। জনগণকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে বিজিবি ডাকা হয়। মারের মুখে পড়েছিলেন পেয়ারুল ইসলাম নিজেও। বিজিবি সদস্যরা আর কয়েকজনসহ তাকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে নিয়ে যায়। এসময় একজন যুবলীগ ক্যাডার বিজিবির গাড়ি থেকে পড়ে গেলে জনগণের পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়।
আর আশ্চর্যের ঘটনা এই যে, এই হামলাকারীদের সঙ্গে ছিলো একে-৪৭ ও এম-১৬ রাইফেলসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্র। দৈনিক কালের কন্ঠ জানিয়েছে যে, এই হামলাকারী বহরে আবু তায়েব, আব্দুল কাইয়ুম, মহিউদ্দিন চুন্নু প্রমুখ দুর্ধর্ষ অপরাধীরাও ছিলো। তায়েবের বিরুদ্ধে খুনের মামলাসহ ২৮টি মামলা ছিলো। সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় সেসব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়। কাইয়ুমের বিরুদ্ধে খুনের মামলাসহ এক ডজনেরও বেশি মামলা ছিলো। তাকেও রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার মুক্তি দিয়েছে। তারা একে-৪৭ ও এম-১৬ রাইফেল বহন করছিলো। কিন্তু জনতার প্রতিরোধ এতোটাই ভয়ঙ্কর ছিলো যে, তারা গুলী চালাতে সাহস করেনি। কারণ গ্রামবাসীরা চতুর্দিক থেকে পুরো দলটিকে সম্পূর্ণরূপে ঘিরে ফেলেছিলো। তাদের পালাবার কোনো পথ ছিলো না।
অথচ, বেশির ভাগ সরকারসমর্থক দৈনিক পত্রিকা লিখেছে যে, ঐ ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের লোকেরা। কিন্তু তারা কেউ এটা উল্লেখ করেনি যে, এই নির্বাচনী এলাকা থেকেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানে একথা তো স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, প্রশাসনের তরফ থেকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু জনতার প্রতিরোধের সামনে এর কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত কাজে দেয়নি। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সারাদেশেই ক্ষমতাসীন দল ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গত ১৭ই এপ্রিল একইভাবে পুলিশ মধ্যরাতে নওগাঁর মারমা গ্রামে হানা দিয়েছিলো। যার বাড়িতে হানা দিয়েছিলো তার ডাকাডাকিতে একইভাবে গোটা গ্রামবাসী হামলাকারী পুলিশদের জিম্মি করে আটকে রাখে। পরদিন সকালে ওসি আরো ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের মুক্ত করে আনেন। ১৬ এপ্রিল পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়, মৌলভীবাজার জেলার খারপাড়া গ্রামে ‘কথিত আসামী’ ধরতে গিয়ে গ্রামবাসীর হামলার শিকার হয়। তারা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে  আটক করে রাখে এবং ওসি ও আরো তিন পুলিশকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। ওসিকে পরে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এসব ঘটনা এমন রূপ নিয়েছে যে, পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের হামলা থেকে রক্ষা পেতে যশোরের ১৬ গ্রামের মানুষ গ্রাম পাহারা কমিটি গঠন করেছে। তারা রাতভর গ্রাম পাহারা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় জনতার প্রতিরোধে কমপক্ষে ১৬জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তারো প্রায় দ্বিগুণ। এখন পরিস্তিতি দাঁড়িয়েছে যে, গ্রামাঞ্চলে যেখানেই পুলিশ সেখানেই প্রতিরোধ।
এসব সংবাদ বেশিরভাগ মিডিয়া চেপে গেলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই অজানা থাকেনি। কিন্তু সত্য প্রকাশে আমরা কেনো এতোটা কুন্ঠিত থাকলাম? সংবাদপত্র বা মিডিয়া তো জাতির বিবেকের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু এখানেও ভেদরেখা বড় বেশি প্রকট ও নগ্নরূপে প্রকাশ পাচ্ছে। মত প্রকাশ এক কথা আর সত্য প্রকাশ ভিন্ন কথা। আমরা সত্য প্রকাশ না করে সরকারের মতোই দেশে বিভাজন ও পরমত অসহিষ্ণুতা বাড়িয়ে তুলছি। কিন্তু মিডিয়ার দায়িত্ব ছিলো সত্য প্রকাশে পক্ষে দাঁড়ানো। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অথচ আমরা তা দেখতে পাই না। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ঠুনকো অজুহাতে আটক করে রিমান্ডে নিয়েছে সরকার। মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত আমার দেশের প্রেসে অযৌক্তিকভাবে তালা লাগিয়েছে। আমরা সম্পাদকরা একযোগে তার প্রতিবাদ করতে পারেনি। আইন না থাকলেও সরকার শুধুমাত্র গায়ের জোরে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা একযোগে দাঁড়াইনি। এরকম ভয়াবহ বিভাজন জাতির বিবেকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আমরা তা ভাবিনি। শুধু তাই নয়, আইন মেনে দৈনিক সংগ্রামের প্রেস থেকে পত্রিকাটি দু’দিন ছাপা হয়েছিলো। তারপর ঐ পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আপাতত তিনি জামিনে আছেন। আমরাও বোধহয় বুঝতে পারছি না যে, কী ভয়াবহ বিপদ আমরা নিজেদের জন্য ডেকে আনছি। এই বিভাজন জাতির সর্বনাশ তো ঘটাবেই মিডিয়াও সে উত্তাপ থেকে বাঁচবে না।
একইভাবে শাহবাগ নিয়ে এক উন্মাদনা আমরা লক্ষ্য করলাম। সরকারি মদতে শাহবাগীদের দিয়ে দাবি তোলা হলো বিচারাধীন সকল ‘যুদ্ধাপরাধী’কে ফাঁসি দিতে হবে। এ দাবি অদ্ভূত। আমরা বিচার চাইতে পারি, অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে আদালত তাদের সাজার মাত্রা নির্ধারণ করবেন। কিংবা নির্দোষ প্রমাণিত হলে বেকসুর খালাস দিবেন। কিন্তু আদালতের রায় আগাম ঘোষণা করে দিচ্ছে শাহবাগের মতলবি লোকেরা। আর আমরা মিডিয়াও কান্ডজ্ঞানহীনভাবে তা নিয়ে দারুণ মাতামাতি করলাম। এখনো করছি। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম এদেশের প্রবীণ ও বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই-এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক গল্প নিয়ে। গল্পটি প্রকাশের পর শাহবাগীরা বললো এটা তাদের আন্দোলনের নেত্রীদের চরিত্রহরণ। গল্পটির প্রকাশক, প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান একথা বলার পরপরই একেবারে করজোরে ক্ষমা চাইলেন। এবং আশ্চর্য এই যে, গল্পটির লেখকও ক্ষমা চাইলেন। এবং ঘোষণা করলেন যে, ভবিষ্যতে প্রকাশিতব্য তার কোনো গল্পগ্রন্থে তিনি গল্পটি ছাপবেন না। আহ্, মানুষের বিবেক সৃষ্টিশীলতা এভাবেই কি পদদলিত হতে থাকবে? আর আমরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখবো? এই ভয়াবহ অন্তর্জলি যাত্রা থেকে আমাদের উদ্ধার পেতেই হবে। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads