সাভার ট্র্যাজেডির কারণে রানা প্লাজার মালিক ও সাভার পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সোহেল রানার আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে। সামান্য একজন কলু কী করে এতটা ক্ষমতাবান ও বেপরোয়া হয়ে উঠলো সেই রহস্য জানতে এখন মানুষ উদগ্রীব। অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে সেই কাহিনী। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, রানার ক্ষমতাবান ও কোটিপতি হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে জমি দখল, খুন, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-। রানা প্লাজার আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল তার টর্চারসেল। এখানে বসেই সে সাভার-আশুলিয়ার সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করতো। জমি কেনাবেচার নামে নিরীহ লোকদের ধরে এনে জোর করে জমির দলিল হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রানা প্লাজার বেসমেন্টে টর্চার সেলের পাশাপাশি ছিল রানাবাহিনীর মনোরঞ্জনের আয়োজন। গার্মেন্টের কর্মীসহ ওই এলাকার অনেক মেয়ে সতীত্ব হারিয়েছেন সেখানে। নিজের ভগ্নীপতি জাকির এবং রাজিবÑসমর বাহিনীর ক্যাডার আব্দুল্লাহ হত্যা, জমি দখল, অস্ত্র-মাদকসহ আট মামলার আসামি এই সোহেল রানা। সাধারণ মানুষ যেখানে এক মামলার চাপেই অস্থির থাকে, সেখানে আট মামলা মাথায় নিয়ে কী নির্বিকারভাবে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল রানা! এর রহস্য কী?
রানার বেপরোয়া কর্মকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও প্রশাসনের আশীর্বাদের বিষয়। সাভারের আওয়ামী লীগ এমপি তৌহিদ জং মুরাদ নিজে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে রানাকে ‘রাজনৈতিক ছোটভাই’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। এ কারণে সাভারের মানুষ রানাকে চেনেন এমপির ডান হাত হিসেবে। এমপির আশ্্কারা পেয়েই সামান্য কলু থেকে সে হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসী। কখনো নিজের নামে, কখনো এমপির নামে অবলীলায় অপরাধ করে যায় সে নির্বিকারভাবে। তার বেপরোয়া আচরণ দেখে মনে হয়েছে দেশে পুলিশ বা প্রশাসন বলে কিছু নেই্ কিন্তু আসলেই কি দেশে পুলিশ বা প্রশাসন নেই? আমরা তো জানি দেশে পুলিশ আছে, প্রশাসনও আছে। তাদের কলেবরও বৃদ্ধি হচ্ছে। সরকারও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে এখানে বলার বিষয় হলো, এ পুলিশ প্রশাসন যেন জনগণের পুলিশ-প্রশাসন নয়, শুধুই সরকার ও সরকারিদলের লোকজনের পুলিশ-প্রশাসন। এমন পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে তো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন সম্ভব নয়। বরং এদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এখন বেড়ে উঠছে সোহেল রানার মত সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। জাতির জন্য যাদের অবদান সাভার ট্র্যাজেডির মত মর্মান্তিক ঘটনা।
আমরা জানি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের। জনগণ তাদের ট্যাক্সের পয়সায় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রচুর ক্ষমতা ও সক্ষমতা দিয়ে যাচ্ছে সরকারকে। সরকারও কারো প্রতি অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী না হয়ে বরং ইনসাফের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার কি ওয়াদা পালনে আন্তরিক? আন্তরিক হলে দেশের এমন চিত্র কেন? দলীয়করণের কারণে আজ ভরে গেছে দেশের মানচিত্র। একটু অক্সিজেনের জন্য নাগরিকরা আজ কাতরাচ্ছে, যেমনটি কাতরাচ্ছে রানা প্লাজার মৃত্যুপুরীতে। আসলে ওয়াদা পালন তথা সুশাসনের বদলে এখন দেশে চলছে শঠতা ও ধূর্ততার শাসন। এমন শাসনে জনগণ ভাল থাকে না। শোষণ ও জুলুমের মাত্রা বেড়ে গেলে জনগণ রাজপথে নেমে আসে। তখন শাসক ও তল্পীবাহকরাও ভাল থাকতে পারেন না। শ্রমিক-জনতা এখন রাজপথে নেমে এসে সোহেল রানা ও এমপি তৌহিদ জং মুরাদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে সরকার কি কোনো বার্তা পেলো? সোহেল রানা ও তৌহিদ জং ভুল কাজ করেছেন, সরকারও ভুল পথের যাত্রা অব্যাহত রাখে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন