বাংলাদেশে, দেশী হোক কিংবা বিদেশী, কারুরই মান ইজ্জতের আর কোনো নিরাপত্তা থাকছে বলে মনে হচ্ছে না। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূছকে আমরা অপমানের চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে গিয়েছিলাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ খেতাবে তাকে ভূষিত করা হলো। বাংলাদেশী একজন নাগরিক দুর্লভ এই সম্মান পেলেন আমাদের সরকার কিংবা সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের তরফ থেকে তাকে অভিনন্দন পর্যন্ত জানানো হলো না। আমরা বিশ্বব্যাংককে বেইজ্জত করেছি, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হককে ‘মুই কার খালুরে’ বলে উপহাস করেছি। টকশো’তে অংশগ্রহণকারী সরকারী দুঃশাসনের সমালোচনাকারী সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের ‘মধ্যরাতের সিঁধেল চোর’ হিসেবে আমরা আখ্যায়িত করলাম। সিনিয়র সাংবাদিক এ বি এম মূসা দায়ী হলেন ‘ভিক্ষা আর চৌর্যবৃত্তির’ জন্যে। খ্যাতনামা আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদকে বলা হলো ‘দ-প্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ ও পরের বাড়ি অবৈধ দখলকারী।’ ড. কামাল হোসেন ও সাবেক শীর্ষ আমলা এবং কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান আমাদের সরকার প্রধানের কাছ থেকে ‘মোটকু’ উপাধি পেলেন। টিআইবি সম্প্রতি নির্বাচনকালীন সরকারের একটি ফর্মুলা দিয়ে বিপাকে পড়ে গেছে। বলা হচ্ছে যে, আমাদের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে মাইনাস করার জন্যই নাকি তারা এ ফর্র্মূলাটি দিয়েছেন। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে দেশে যদি থাকতে হয়, কথা বলতে হয়, লেখালেখি করতে হয়, মিটিং-মিছিল করতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষেই করতে হবে। যারা এর ব্যত্যয় ঘটাবেন তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু। তারা জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির লোক, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে বদ্ধপরিকর। এদের দেশে থাকার কোন অধিকার নেই। তাদের পেয়ারে পাকিস্তানে চলে যাওয়াই শ্রেয়। এই অপমান থেকে আমাদের বিরোধী রাজনীতিকরা যেমন রেহাই পাচ্ছেন না, তেমনি শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামা, সমাজসেবী, বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিক, বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোও রেহাই পাচ্ছেন না। কিছুদিন আগে একটি প্রভাবশালী মুসলিম দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও ঢাকাস্থ জাঁদরেল একজন রাষ্ট্রদূতকে আমাদের এমপি সাহেবরা তুলোধুনো করতে দেখেও আমরা হতবাক হইনি। তাদের অপরাধ তারা বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। এই অপমানের ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং দেশের খ্যাতনামা আলেম, শীর্ষস্থানীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও হক্কানী ওলামাদের বৃহত্তর অংশের ওস্তাদ হেফাজতে ইসলামের আমীর মুফতি আল্লামা আহমদ শফীও এই অপমান থেকে রক্ষা পাননি। অপদস্থ ব্যক্তিদের তালিকায় এখন যোগ হয়েছেন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কথা-সাহিত্যিক শীর্ষস্থানীয় সাবেক আমলা জনাব হাসনাত আব্দুল হাই। হাসনাত আব্দুল হাই সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা আমি প্রয়োজন মনে করি। তিনি আপাদমস্তক সেক্যুলার ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি। স্বল্পভাষী স্বাধীনচেতা যোগ্য ও দক্ষ আমলা হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুখ্যাতির অধিকারী ছিলেন। চাকরি জীবনে সর্বত্র তিনি মেধার স্বাক্ষরও রেখেছেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয় অংশের ফলাফলে সর্বোচ্চ স্থান দখল করেছিলেন। তার সাথে আমার চাকরি জীবনেই পরিচয় এবং একজন জুনিয়র সহকর্মী হিসেবে আমি তার সাথে প্রায় ৮ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। লোভ-লালসা অথবা অসৎ প্রবণতা কিংবা রাজনৈতিক কোন পক্ষপাতিত্ব তার মধ্যে আমি দেখিনি। পেশাজীবী সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যথাসম্ভব নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করতেন। পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও সাহিত্য রচনায় তিনি অসাধারণ মেধারও স্বাক্ষর রেখেছেন। পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সিভিল প্রশাসনের উপর তার বহু গ্রন্থ দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। আমি তাকে কখনো কোন চাপ বা প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করতে দেখিনি। তিনি নিজের অবস্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক থাকতেন এবং প্রটোকলের ক্ষেত্রে কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে ক্ষেপে যেতেন। আমরা যারা লেখালেখি করি তাদের অনেকেই গাড়িতে বা বিমানে বসে লিখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারিনি। কিন্তু তিনি তা পারতেন। একবার একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে আমরা সুইডেন গিয়েছিলাম। তিনি টীম লীডার ছিলেন। সুইডেন থেকে লন্ডন এবং লন্ডন থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট পৌঁছা পর্যন্ত আসতে আসতেই তিনি তার ৩২ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি লেখার কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। তাকে অনেকেই আত্মভোলা বলতেন। কিন্তু কাজকর্মে এর কোন পরিচয় আমি পাইনি। লেখালেখির কারণে তার রিডিং রুম এবং লিভিং রুম অধিকাংশ সময় আগোছালো থাকতো এবং সংসারের খবরও তিনি খুবই কম নিতে পারতেন। এ জন্য তার স্ত্রীর সাথে অনেক সময় সম্পর্কের টানাপোড়েন চলতো। বেশ কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে-শাদী হয়ে গেছে, কেউই তার সাথে থাকেন না, সবাই বাইরে থাকেন। তিনি এখন নিঃসঙ্গ, একা। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। লেখালেখিতেই সময় কাটান। গত ১৪ই এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার নববর্ষের ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত একটি ছোট গল্প তার জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি’ শীর্ষক এই গল্পে কথাসাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই শাহবাগকেন্দ্রিক ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ একটি নিটোল চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দেশের রাজনীতিকরা নিজেদের ভাগ্য গড়ার জন্য কিভাবে তরুণ তরুণীদের ব্যবহার করছে, অনৈতিক কাজে তাদের বাধ্য করছে এবং লেখাপড়া ছেড়ে বিশেষ করে তরুণীরা প্রতারিত হয়ে নষ্ট চরিত্রের অধিকারী হচ্ছে তার একটা বর্ণনা যেমন এতে পাওয়া যায় তেমনি এর মধ্যে জমিরের ন্যায় রাজনৈতিক চাচাদের লোভ-লালসা ও ভ্রষ্ট চরিত্রের একটা বিবরণীও বিধৃত হয়েছে। ঘটনাচক্রে হাসনাত আবদুল হাই-এর এই গল্পটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী বিবেচিত হয়েছে। এই গণজাগরণ মঞ্চ সরকার ও সরকারি দল জামায়াতের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছিলেন এবং ভারতীয় পত্রপত্রিকা সমূহের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় অর্থ ও বুদ্ধি পরামর্শেই তা করা হয়েছিল। জামায়াতবিরোধী এই মঞ্চ কালক্রমে ইসলামবিরোধী মঞ্চে পরিণত হয় এবং এরই প্রতিষ্ঠাতা কয়েকজন ব্লগারের আল্লাহ, নবী-রাসূল (সাঃ), কুরআন-হাদীস, সাহাবী, নবীর সহধর্মিনীগণ, নামায-রোযা ও ইসলামের বিভিন্ন ইবাদত আহকাম সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে তারা এদেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করার জন্যেই মাঠে নেমেছে। সরকার তাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে রক্ষা করছে। এই ধরনেরই একটা মঞ্চের বিরুদ্ধে যখন হাসনাত আবদুল হাই এর গল্পটি চলে গেলো তখন তার ওপর খড়গ নেমে এলো। সরকারের তরফ থেকে প্রথম আলো পত্রিকা এবং হাসনাত আবদুল হাই এর ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি হলো এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে এই গল্পটি ছাপার জন্য প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ দুঃখপ্রকাশ করলেন এবং হাসনাত আব্দুল হাই এর ন্যায় দৃঢ়চেতা লেখকও দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তার গল্পগ্রন্থে তিনি এই গল্পটিকে অন্তর্ভুক্ত করবেন না কিন্তু তারপরও সমস্যা কাটেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে ‘অপমানকর কথাবার্তা’ সংযোজন করে গল্প লেখার অপরাধে হাসনাত আবদুল হাই-এর গ্রেফতার ও শাস্তি চেয়ে হাইকোর্টে একটি রীট করেছেন। আমি গতকাল সোমবার যখন এই নিবন্ধটি লিখছিলাম তখনো পর্যন্ত রীটটির শুনানি হয়নি এবং শুনানির পর মহামান্য হাইকোর্ট কি রায় দেন তা শুনার জন্যে আমরা অপেক্ষা করছি।
তবে এখানে আমি বিস্মিত হচ্ছি এই দেখে যে, ষাটের দশকের প্রথম দিকে হাসনাত আব্দুল হাই এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। তার প্রায় অর্ধশতাব্দী পর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পথভ্রষ্ট তারুণ্য ও স্বার্থপর রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন করে গল্প লেখার দায়ে হাসনাতের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার টেলিফোন সবসময় বন্ধ পেয়েছি। তার ধ্যান-ধারণার অনেক শিক্ষক এবং আমারই জানাশোনা আওয়ামীপন্থী কিছু সংখ্যক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তাদের প্রায় সকলেই আমাকে বলেছেন যে, এসব কোথা থেকে কিভাবে হচ্ছে তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের প্রায় সকলেই এজন্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একজন লেখক তার গল্পে সমসাময়িক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরে সমাজপতিদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাদের ভুলভ্রান্তি ও করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে দুষ্কৃতকারীরা আঘাত পেয়েছে, আহত হয়েছে। এখানে অশ্লীলতা ছড়ানো হয়নি। কিংবা সমাজের ভালো মানুষদের মূল্যবোধেও আঘাত করা হয়নি। সরকার এবং তার আশ্রিতরা এখানে ক্ষেপে গেলেন কেন? তারা মুক্তচিন্তার কথা বলেন। বাকস্বাধীনতা, মতামতের স্বাধীনতা, লেখনীর স্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকারের কথা বলেন। হাসনাত আবদুল হাই কোনটি লঙ্ঘন করেছেন? তিনি তো গল্পকার ও সমাজবিদ হিসেবে সমাজের মৌলিক চেতনাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। এ অবস্থায় তিনি শাস্তি পাবেন কেন? আমরা আমাদের দেশে যাদের বুদ্ধিজীবী বলি তারা এক্ষেত্রে নীরব কেন? তারা কি সবাই প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন? নাকি অর্থবিত্তের মায়া তাদের বিবেককে ধ্বংস করে দিয়েছে? এই সরকারের যত ক্রোধ, যত হিংসা-বিদ্বেষ, যত নির্মূল পরিকল্পনা সবই হচ্ছে প্রথমত জামায়াত-শিবির এবং পরে সামগ্রিকভাবে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। তারা ইসলাম এবং ইসলামী মূল্যবোধকে স্বাধীনতার প্রতিপক্ষে পরিণত করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে সেকুলাররাও তাদের হাতে নিরাপদ নয়।
গণজাগরণ মঞ্চ বাংলাদেশে এখন একটি সমান্তরাল সরকারই শুধু নয় ঐ মঞ্চের সংগঠক ইমরান এইচ সরকারের ভাষায় সরকার থেকেও ক্ষমতাধর একটি সরকার। তার নির্দেশনায় (দাবি বলব না) দেশের সংবিধান সংশোধন হয়। মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হন এবং তাকে রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। নির্যাতনে তার শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়। আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯ জন দরিদ্র বাইন্ডার গ্রেফতার হন এবং আইনের শর্ত মেনে বিকল্প প্রেসে পত্রিকা প্রকাশের দায়ে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকের ন্যায় একজন প্রবীণ ব্যক্তি এবং মাহমুদুর রহমানের মা ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা ভদ্র মহিলার বিরুদ্ধেও মামলা হয়। মাহমুদুর রহমানের অপরাধ কি? তিনি সত্যের পক্ষে এবং মিথ্যা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। ধর্ম ও খোদদ্রোহীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন যারা আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাÑ ধন্য। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এদেশে যারা সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠÑ ইসলামের পাবন্দ, দুর্নীতি-দুঃশাসন ও অনৈতিক কার্যকলাপের বিরোধী তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাহলে কি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইসলাম নির্মূল, নাস্তিক-ধর্মদ্রোহীদের রাজত্ব কায়েম, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি দখল ও তার অপচয় অপব্যবহার তথা সুকৃতির উচ্ছেদ ও দুষ্কৃতির প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিবেশী একটি দেশের তাঁবেদার হয়ে থাকার জন্যেই এই দেশটি স্বাধীন হয়েছে?
সরকার তার দুঃশাসনকে টিকিয়ে রাখার জন্যে ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে, উপরে-নিচে এখন অনেকগুলো ফ্রন্ট খুলেছেন। এই ফ্রন্টগুলো খুলে তার সকল দুর্নীতি ও দেশের স্বার্থবিরোধী তৎপরতাগুলোকে ঢাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের মন থেকে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে আমাদের সেনাবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদের হত্যার স্মৃতি, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি, আইটিসিএল, হলমার্ক, পদ্মা সেতু ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি, টেলিযোগাযোগ খাতের ও বিমানের চার লক্ষাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ, রেলওয়ে গেট কেলেঙ্কারি প্রভৃতি মুছে ফেলা যায়নি। আমাদের সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা সরকারের সাথে মিলে দেশকে বিভক্ত করে ফেলেছেন। কেউ কেউ এখন নির্বাচনমুখী হবার চেষ্টা করছেন। তারা মনে করছেন যে, বাতিলকৃত কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে এই সরকার যে শত-সহ¯্র সমস্যা সৃষ্টি করেছেন, কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে তার অংশবিশেষের মাত্র সমাধান হতে পারে। দেশকে সংঘাত সংঘর্ষ থেকে মুক্ত করতে হলে যা করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে বাস্তবসম্মত আবেগবর্জিত এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি রেখে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার সম্মানজনক সুরাহা, নাগরিক অধিকার হরণের সকল প্রক্রিয়া বন্ধ করা, সকল রাজবন্দির মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার, সিভিল, পুলিশ ও জুডিশিয়াল সার্ভিসকে এখনই দলীয় প্রভাবমুক্তকরণ এবং প্রতিহিংসা ও জেদাজেদি পরিহার করে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিটি দল এবং হেফাজতে ইসলামকে আস্থায় এনে সকলের সহযোগিতায় কিভাবে হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গঠন করা যায়, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত হয় সে ব্যাপারে সংলাপ শুরু করা। জামায়াত বা হেফাজতকে ঠেকানোর জন্যে নারী সম্মেলন কিংবা কবরপূজারী শিরকবাদীদের মহাসম্মেলন করে সরকার লাভবান হতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না। আবার ডোনারদের নামিয়ে কিংবা টাকা-পয়সা দিয়ে যেন-তেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার চেষ্টাও দেশের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের নাগরিক সমাজ সেদিন ঘটা করে একটি সম্মেলন করলেন এবং তারা ৫ দফা দাবির একটা চার্টার তৈরি করেছেন। দুর্ভাগ্যবশত এর মধ্যে জামায়াত, হেফাজত ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া নাগরিক অধিকার সম্পর্কে কোন কথাই ছিল না। আবার হেফাজতের বিরুদ্ধে নারী সমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য শোনা যাচ্ছে একটি নারী মঞ্চও তৈরির চেষ্টা চলছে। যতদূর জানা গেছে এই মঞ্চের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বানানো হচ্ছে এমন এক নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীকে যার চরিত্র নিয়ে নানা কথা রয়েছে। এই ভ্রষ্টাচারী মহিলা ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটে ছিলেন এবং খাদিমনগরের একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অবিবাহিত অবস্থায় এক হিন্দু যুবকের সাথে লিভ টুগেদার করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে নিগৃহীত হয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ ব্যভিচার, অনাচার, বেহায়াপনায় বিশ্বাস করে না। হেফাজতের দাবির মধ্যে অশ্লীলতা নাই। জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করে এর মধ্যে তারা প্রমাণ করেছেন যে তাদের এই যুদ্ধ ঘোষণা শুধু জামায়াত নয় সমগ্র ইসলামী জনতার বিরুদ্ধে। আমরা বলব সময় এখনো আছে বাস্তবতায় ফিরে আসুন এতেই কল্যাণ রয়েছে। মানুষকে অপমান করা বন্ধ করুন। অন্যদের অপমান করে নিজেদের অপমান রোধ করা যাবে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন