বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৩

পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন



বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোটের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদী দমন-নির্যাতন এবং নির্বিচার গ্রেফতারের অভিযান দিন দিন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। বাড়ছে সন্ত্রাসী-ঘটনাও। এরকম সর্বশেষ এক ঘটনায় ৩১ মার্চ গভীর রাতে বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান অফিস লক্ষ্য করে গুলী বর্ষণ করেছে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা। বেগম জিয়া সে সময় অফিসেই ছিলেন। অর্থাৎ দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলী করেছে। তারও আগে সেদিনই গ্রেফতার করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে ছাত্রশিবির ২ এপ্রিল হরতালের ডাক দিয়েছিল। এর পরপর বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১৮ দলীয় জোটের এক জরুরি সভায় একইদিন হরতাল ডাকা হয়। কারণ জানাতে গিয়ে নেতারা বলেছেন, হত্যা, গ্রেফতার ও দমন-নির্যাতনসহ সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্শকা-ের প্রতিবাদ এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানানোর জন্যই হরতালের ডাক দিতে হয়েছে। সে অনুযায়ী সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। খুবই আশ্চর্যের বিষয় হলো, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এমনভাবেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যা শুনে মনে হতে পারে যেন এইচএসসি পরীক্ষা ভ-ুল করাই বিরোধী দলগুলোর উদ্দেশ্য! অন্যদিকে সত্য হলো, সরকার সব মিলিয়ে সারা দেশে এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যখন হরতাল ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বিরোধী দলের। একটি উদাহরণ হিসেবে গত ২৮ মার্চের হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করা যায়। সেদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও তেরখাদায় বিএনপির ছয়জন এবং জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গুলীবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হয়েছেন আরো শতাধিক, যাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটতে পারে। হামলা ও হত্যার এ কর্মকা-ে পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব ও বিজিবি তো বটেই, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররাও অংশ নিয়েছে। কারণও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। খবরে বলা হয়েছে, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষিত হওয়ার পর পুলিশ ওইসব এলাকার হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের নামে মামলা ঠুকেছে। মামলার অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্যই পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী সেদিন অভিযানে নেমেছিল। যাকে পেয়েছে তাকেই গ্রেফতার করেছে তারা। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় যৌথবাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অন্যদিকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার বন্ধের দাবিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এলাকাবাসী। এরই জবাবে আওয়ামী ক্যাডারদের সঙ্গে নিয়ে নির্বিচারে গুলী চালিয়েছে যৌথবাহিনী। তারা গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়িয়েছে। ফলে প্রতিটি এলাকাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এর কারণ, তিন বাহিনীর মারমুখী দৌরাত্ম্যের এবং বিশেষ করে বিজিবি’র প্রস্তুতি ও তৎপরতা দেখে মনে হয়েছে যেন তারা কোনো শত্রুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে! এ ধরনের অনেক ছবি বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত ও দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে। এভাবেই হত্যার পরও চালানো হচ্ছে অকথ্য নির্যাতন। রাজনৈতিক নেতাকর্মী হলেও তাদের দেখানো হচ্ছে জঙ্গি- সন্ত্রাসী হিসেবে। সব মিলিয়েই কিছুদিন ধরে পুলিশকে যে ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তা দেখার পর কারো পক্ষেই কল্পনা করা সম্ভব নয় যে, এরা বাংলাদেশেরই পুলিশ! কারণ, পুলিশ এমনকি মুসল্লীদের পর্যন্ত রাস্তায় ফেলে তাদের বুকে লাথি মারছে। মুসল্লীদের মাথায় পুলিশ এমনভাবেই রাইফেল ঠেকাচ্ছে যে, ট্রিগার টিপলেই মৃত্যু ঘটবে মুসল্লীর। মুসলল্লীদের পায়ের তলায় ফেলে রাইফেলের বাট দিয়ে পেটাচ্ছে পুলিশ। অনেক ঘটনায় মুসল্লিদের প্রায় উদোম করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতরে টার্গেট করেও গুলী করেছে পুলিশ। শুধু গুলী করেই ক্ষান্ত দেয়নি পুলিশ, মুসল্লীদের দাড়ি ধরেও টানাটানি করেছে। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলীতে বাড়ির ভেতরে থাকা নারীরা পর্যন্ত আহত হচ্ছেনÑ যেমনটি দেখা গেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সেখানে প্রথমে গুলীবিদ্ধ হয়েছিলেন মাওলানা নাসিরের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। খবর পেয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মাওলানা নাসির। পথে পাকড়াও করার পর চুল ও দাড়ি ধরে এবং পায়ে পাড়া দিয়ে এমনভাবেই পুলিশ তাকে রাস্তায় ফেলেছিল যে, তিনি নড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারেননি। পুলিশ তার মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে গুলী করেছে। ইন্তেকাল করেছেন মাওলানা নাসির। সেদিন আরো তিনজনকেও হত্যা করেছে পুলিশ, যাদের কোনো আন্দোলন বা রাজনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ততা ছিল না। তা সত্ত্বেও পুলিশ ওই চারজনকে এবং তারও আগে-পরে অন্তত শ’ দেড়েক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতন চালাচ্ছে বলেই প্রশ্ন উঠেছে, এরা কি বাংলাদেশের পুলিশ? প্রশ্নটি অবশ্যই গুরুতর। কারণ, শাহবাগের কথিত গণজাগরণের আড়ালে বেশ কিছুদিন ধরেই দেশজুড়ে হামলা শুরু হয়েছে ধর্মপরায়ণ মুসলমানদের ওপর। মুখে দাড়ি আর মাথায় টুপি থাকলেই তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। পুলিশ একা নয়, পুলিশের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ভয়ঙ্কর এ কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ‘সোনার ছেলেরা’ওÑ যারা আসলে সমাজের ঘৃণিত গু-া-সন্ত্রাসী। খোদ রাজধানীতেও পুলিশ অফিসারের সামনে বয়স্ক মুসলমানের দাড়ি ধরে টানাটানি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে তারা। এ ধরনের আরো অনেক ঘটনাই ঘটছে দেশের বিভিন্নস্থানে। এজন্য প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিরোধী দলগুলো। তারা হত্যা, দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতার বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। সে দাবিতেই হরতাল পালন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই ইসলামপ্রিয় নাগরিকদের ওপর আঘাত হানা হয়। এবারও নানা পন্থায় আওয়ামী লীগ সরকারের ইসলামবিদ্বেষী চরিত্রের প্রকাশ ঘটে চলেছে। ঘটনাগুলোকে ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন পর্যায়ে নগ্ন আওয়ামী হামলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। আমরা মনে করি এবং একথা আগেও বহুবার বলা হয়েছে যে, ৯০ শতাংশ মুসলমানের বাংলাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের এই ভূমিকা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পুলিশের উপর কোনো নাগরিক চড়াও হোক, তা যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি পুলিশ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কারও উপর চড়াও হোক তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ কথা স্বীকার করতেই হবে গত চার বছর ধরে পুলিশের মাত্রাহীন রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের হিংসাত্মক হস্তক্ষেপ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এ পরিস্থিতিতে পুলিশ জনগণের প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads