শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা



ক্ষমতাসীন সরকার, আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া, সংস্কৃতিসেবী সবাই একবাক্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে দেশের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং মানুষ হত্যার জন্য। এমনকি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাংচুর ও তাদের বাড়িঘরে হামলার জন্যও জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদেরও দোষ দেয়া হচ্ছে। এ জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নিরপরাধ নেতা-কর্মীসহ ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে হাজতখানায় নেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রিমান্ডের নামে বন্দী নেতা-কর্মীদের ওপর অমানবিক জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার নেতা-কর্মীসহ বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ রাত-বিরাতে মানুষের বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মসজিদ-মাদরাসা, ছাত্রাবাস এমনকি দোকানপাটও পুলিশী অভিযান থেকে বাদ থাকছে না। জামায়াত-শিবির ও বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। তাদের ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ কিংবা চাকরিস্থলে পর্যন্ত তারা যেতে পারছে না। শুধু মিথ্যে মামলায় অভিযুক্তরাই নন, তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও পুলিশী হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। সারা দেশে পুলিশ গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে অভিযুক্তদের পরিবারসমূহ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে দু’একটি গণমাধ্যমে খবর ছাপা বা সম্প্রচার হচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে সরকারদলীয় লোকেরা হামলা চালিয়ে যেমন লুটতরাজ করেছে, তেমনি অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে তারা অগ্নিংযোগও করছে। এমন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাও গ্রহণ করছে না থানা-পুলিশ।
সরকারের মন্ত্রী এবং দলীয় নেতারা দিনরাত জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও হত্যার অভিযোগ করছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখাতে পারছেন না। সরকারের পুলিশ মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে রাতের অন্ধকারে আসামী ধরতে গিয়ে জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। নিরপরাধ জনতা পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে সরকারদলীয় ক্যাডাররা হামলা চালাচ্ছে পুলিশের সহায়তায়। জনপ্রতিরোধের মুখে পড়ে সম্প্রতি কয়েকজন পুলিশও প্রাণ হারিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা বা দায়িত্বরত পুলিশকে মেরে ফেলার মতো অন্যায় কর্মকা- কখনও বিবেকবান মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু পুলিশ যদি রাজনৈতিক কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পাবলিকের ওপর চড়াও হয় কিংবা অন্যায়ভাবে কারুর ওপর বুলেট ছুঁড়ে সাধারণ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, তাহলে আইনের শাসন থাকে কোথায়? পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে বেদম পেটানো হয়। মাথায় বা গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে বুলেটবিদ্ধ করা হয়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে নেবার দৃশ্যতো দেশবাসীকে প্রায়শ প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। পুলিশের এ অমানবিক কর্মকা- দেশের মানুষকে শুধু না, বিশ্ববিবেককেও নাড়া দিয়েছে। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতি এ অমানবিক আচরণ যেমন বন্ধ হওয়া দরকার, তেমনি দেশের সাধারণ নাগরিকরা যেন বুঝতে সক্ষম হয় যে, পুলিশ তাদের দুশমন নয়, বরং বন্ধু।
সরকার ও আওয়ামী ঘরানার গণমাধ্যমসহ একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকা- ও মানুষ হত্যার জন্য জামায়াত-শিবির ও বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের দোষ দিচ্ছে। অথচ বেশির ভাগ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য দায়ী সরকার দলীয় ক্যাডারবাহিনী। এমনকি সংখ্যালঘুদের মন্দির বা বাড়িঘরে হামলার জন্য প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সরকারদলীয় ক্যাডার ও তাদের সহযোগীরা। বেশ কয়েক জায়গায় তারা ধরাও পড়েছে। কিন্তু সরকারদলীয় হওয়ায় তাদের অনেককেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অথচ ঢালাওভাবে এসব অপকর্মের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের। বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরকে। আমাদের প্রশ্ন, যখন গাড়িতে আগুন দেয়া হয়, মন্দিরে হামলা বা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে লুটতরাজ চালানো হয়, তখন পুলিশ কী করে? তখন বুলেট চালায় না কেন? রেলের ফিসপ্লেট তুলে ফেলার জন্যও দায়ী করা হচ্ছে জামায়াত-শিবিরকে। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়নি সরকারি তরফ। শুধু ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্যই জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হচ্ছে না। আগামীতে যদি সন্ত্রাসী কা- ঘটে তার জন্যও তাদের দায়ী করে মন্ত্রীরা বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান করছেন। ঐ যে কথায় বলে না, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ।’ ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের সমর্থকরা ‘হুক্কা হুয়া’ স্বরে বিচার-বিবেচনা ছাড়াই জামায়াত-শিবির বা বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর সব অপকর্মের দায়ভার চাপিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads