আমাদের রাজনৈতিক গগনের ঈশান কোণে মেঘের আনাগোনা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে বলে মনে হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দুঃশাসন, ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং প্রতিদ্বন্দ্বী নির্মূলের বেপরোয়া অভিলাষের পাশাপাশি শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ইসলাম, ইসলামী অনুশাসন ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করার অবিরাম তৎপরতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিস্ফোরক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে দেশের খ্যাতনামা আলেম-ওলামা ও ইসলামী নেতৃত্বকে ফাঁসি দেয়ার চক্রান্ত এই বিস্ফোরক পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের অন্যতম কণ্ঠস্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সকলের বির”দ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেফতার ও রিমান্ড নির্যাতনের সর্বশেষ ঘটনা। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশি ও লুটপাট। জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও এখন সকল স্তরের নেতাকর্মীরা সরকারের র”দ্ররোষে পড়ে হয় জেলখানায় না হয় পলাতক অবস্থায় আছেন। তাদের বাড়িঘর, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারি দলের হামলা, অগ্নিসংযোগ কিংবা পুলিশী তল্লাশি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশের বেসরকারি খাতের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠগুলো ছাত্র-ছাত্রী শূন্য হতে চলেছে। শিক্ষকরা পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা তাদের চারদিকে শুধু শত্র”ই দেখতে পাচ্ছিলেন। ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই তারা সর্বত্র স্বাধীনতা বিরোধীদের পদধ্বনি শুনতে পান। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সর্বপ্রথম আঘাত হানেন জামায়াত-শিবিরের উপর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক সৃষ্ট একটি ঘটনায় একজন ছাত্রের মর্মান্তিক ও রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মহাজোটের মহাপরাক্রমশালী এই সরকার সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের বির”দ্ধে চির”নী অভিযানের নামে হাজার হাজার নিরীহ লোকের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্টীম রোলার চালান। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তখন সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। বলাবাহুল্য যে সময়ে সরকার জামায়াত-শিবির বিরোধী এ অভিযানটি শুর” করেছিলেন তখন জামায়াত অথবা শিবিরের তরফ থেকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ, সমাবেশ, হরতাল, অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর অথবা অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনাই ঘটানো হয়নি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল, এই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটলেও এর জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীর, মহাসচিব, নায়েবে আমীরবৃন্দসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুর” করে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত সারাদেশের শিবির ও জামায়াত নেতৃবৃন্দের বির”দ্ধে মামলা দেয়া হয়। তাদের খুনের আসামী বানানো হয় এবং তারা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। ঐ সময়ে জামায়াতের কোন নেতার বির”দ্ধে যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের কোন মামলাও ছিল না। জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও নির্যাতনের বির”দ্ধে দলটিকে তখন থেকেই কোন মিটিং-মিছিল করতে দেয়া হয়নি। ২০১০ সালের ফেব্র”য়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব শামসুল হক টুকু এক সমাবেশে ঘোষণা করেন যে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করে জামায়াত-শিবিরকে দমন করা যাবে না। তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা কর্মীদের আহ্বান জানান। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন আরো এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি ঘোষণা করেন যে, তার সরকারের অধীনে যদি পুলিশ বাহিনীকে চাকরি করতে হয় তাহলে তার এবং তার দলীয় নেতা কর্মীদের কথা শুনেই কাজ করতে হবে। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পুলিশ বাহিনীকে এই মর্মে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তারা যেন প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের এমপি এবং জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করেন। এটা ছিল পরোক্ষভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় নেতৃত্বের হাতে ন্যস্ত করা। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। যে সময়ে সরকার জামায়াত-শিবিরের উপর হামলা-মামলা নির্যাতন শুর” করেছিলেন সেই সময়টি ছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যাপক কুকীর্তিতে পূর্ণ একটি সময়। এই সময় তারা সারা দেশকে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল।
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি, দখলবাজি প্রভৃতির ফলে তখন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বড় বড় কলেজগুলো একের পর এক বন্ধ হতে থাকে। টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির কারণে সংঘাত, সংঘর্ষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকরের ন্যায় অসংখ্য নিরীহ ছাত্রের জীবন অকালে ঝরে যায়। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ এতই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন যে, তারা ছাত্রলীগের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্যে যৌথভাবে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তর, সমকাল প্রভৃতি পত্রিকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও অপকর্মের উপর একাধিক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কিন্তু এই সংগঠনের দাগী অপরাধী নেতা-কর্মীদের বির”দ্ধে কোন প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। বলাবাহুল্য প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর প্রথমবারের মতো দেশবাসী জানতে পারেন যে, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ছাত্রলীগেরও সাংগঠনিক প্রধান, তাদের খুন-খারাবী এবং অপরাধমূলক তৎপরতার ক্ষেত্রে সরকার ও তার পুলিশ বাহিনীর নীরবতা একটি কারণও ঐ সময় একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তিনি বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের ন্যায় একটি উন্নয়নশীল দেশে একটি সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ধন্য কোন ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীর বির”দ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা পুলিশের জন্য নীতি বির”দ্ধ একটি কাজ। পুলিশ এই অনৈতিক কাজে জড়াতে পারে না। সরকারি দলের অপরাধ জাস্টিফাই করার এটি ছিল একটি চমৎকার ব্যাখ্যা। বিচারপতি হাবিবুর রহমান ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, অস্ত্রবাজি, চাঁপাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, হলের সিট বাণিজ্য, প্রভৃতিসহ তাদের বিভিন্নমুখী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ হয়ে এই সরকারকে বাজিকরের সরকার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। অনেকে আশা করেছিলেন যে, সরকার সরকারি দলের এই অঙ্গসংগঠনগুলোর বহুমাত্রিক অপরাধের গুর”ত্ব উপলব্ধি করবেন এবং তাদের অত্যাচার থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করবেন। কিন্তু তা হতে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা খুন, রাহাজানি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হলেও তাদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। লোক দেখানো যে শাস্তিটি তাদের দেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে হয় বহিষ্কার, না হয় কমিটির বিলুপ্তি অথবা মৃদু ধমক। কিন্তু কার্যত দেখা গেছে যে বহিষ্কৃতরা এবং এমনকি বিলুপ্ত কমিটিও তাদের কর্মকাণ্ড যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার ও সরকারী দল নিছক এক্ষেত্রে মানুষকে ধোকা দিয়েছে। অবশ্য একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ঘোষণা করেছিলেন যে, ছাত্রলীগের সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের এই ঘোষণার পর ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি আরো বৃদ্ধি পায় এবং তাদের লুণ্ঠিত অর্থ ভাগাভাগিতেও তারা অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিকেরও বেশি ছাত্র ও নিরীহ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনের যেসব নেতা-কর্মীকে তারা খুন করেছে তার হিসাব তো আলাদা। এসব খুনের অপরাধে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বির”দ্ধে কোন মামলা হয়নি। আবার মামলা হলেও তারা গ্রেফতার হয়নি। আবার গ্রেফতার হলেও সসম্মানে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীরা পুলিশকে পিটিয়েছে। বিজিবি সদস্যরা তাদের হাতে বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছে। পাবনার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, এবং একজন মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে পিটুনি খেয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন। এরা জেলা প্রশাসক দফতরের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল করে দিয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোন শাস্তি পায়নি। বরং যারা তাদের হাতে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন তারা শাস্তিমূলক বদলির শিকার হয়েছেন। দেশবাসী সরকারকে এজন্যে ধিক্কার জানিয়েছেন। সরকারের প্রাথমিক শিকার জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য সরকার একদিকে তাদের পুলিশের সহযোগী বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে তাদের অবৈধপন্থায় অর্থবিত্ত সংগ্রহ ও সমাজে প্রভাব-প্রতিপত্তি সৃষ্টির কাজে অনুঘটকের ভূমিকাও পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দর্শন অনুযায়ী রাজনীতিতে অর্থবিত্তের কোন বিকল্প নেই। অর্থবিত্ত না থাকলে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় না। আবার প্রতিষ্ঠা লাভ করতে না পারলে মানুষ কথা শুনে না এবং ভোট পাওয়া যায় না। এ প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এবং তার অংগ সংগঠনসমূহ বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবশ্যই অর্থবিত্তের অধিকারী হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হবে। এটা করতে গেলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, দখলবাজি, ঘুষ রিসওয়াত, প্রতারণা সবছিুই তাদের জন্য জায়েজ। দেশ তাদের জন্য লুটপাটের একটি ক্ষেত্র। আবার দলীয় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী হত্যা ও নির্যাতনে পুলিশবাহিনীকে ব্যবহার ও তাদের সহায়তায় যারা বেশি কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন সরকার ছাত্রলীগ, যুবলীগের সে সমস্ত নেতা-কর্মীদের পুরস্কৃতও করেছেন। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করা ২৭০০০ সন্ত্রাসীকে পুলিশ বাহিনীতে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজকে যারা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হায়েনার ন্যায় বিরোধী দলের মিটিং মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা করছে, মসজিদের অবমাননা করছে, দাড়িধারী মুসল্লীদের মুখে লাথি মারছে, বৃষ্টির মত গুলীবর্ষণ করে বিক্ষোভকারী নারী-পুর”ষ ও শিশুদের হত্যা করছে, অনেকের ধারণা এরা আসলে আমাদের দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর আসল সদস্য নয়। এই বাহিনীতে নিয়োগকৃত আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদের কাছে নীতিনৈতিকতা নাই। আবার ছাত্রলীগের নীতিনৈতিকতাতো সেদিনই ফুরিয়ে গেছে যেদিন তারা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জ্ঞান চর্চার পরিবর্তে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ অর্থবিত্ত উপার্জন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত করেছে। আবার ছাত্রলীগের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিসর ও ব্যাপকতা যে কত বিশাল তার নজির তো দেশবাসী সেদিন দেখেছে যেদিন ইডেন কলেজসহ দেশের প্রখ্যাত কয়েকটি মহিলা কলেজের ছাত্রীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের বির”দ্ধে তাদের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধ্য করার অভিযোগ করেছিলেন। সরকার, সরকারি দল, ছাত্রলীগ, অথবা সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শিক্ষা মনুষ্যত্বে ও নৈতিকতা বিকাশে মানুষকে সহায়তা করে। তার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে পথ প্রদর্শন করে। আর ছাত্রলীগের কাজ হচ্ছে মানুষকে অমানুষে রূপান্তরিত করা। তার মধ্যে পশুত্বের বিকাশ ঘটানো। সরকার যে বিষয়টি জানেন না তা নয়। জানেন বলেনই সরকার পাবনায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে রক্ত ও পেশাব-পায়খানা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বরাষ্ট্্র প্রতিমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ও নির্দেশনায় এই প্যাথলজিক্যাল টেস্ট ও পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য শুনে মানুষ ছিঃ ছিঃ করেছিলেন। শিক্ষা ও চরিত্র সংশোধনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং সব ধরনের অপরাধ করার জেনারেল লাইসেন্স দিয়ে, মাদকাসক্তিমুক্ত ছাত্রলীগ নেতৃত্ব গঠনের এই হাস্যাস্পদ দৃষ্টান্ত দুনিয়ার কোন দেশে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু আদতে এই উদ্যোগ কি কোন সুফল বয়ে আনতে পেরেছে? ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ দিয়ে সরকার সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, বিনা দোষে তাদের হত্যা করেছে, বিক্ষোভ মিছিলে তাদের মাথা ফাটিয়েছে। জামায়াত-শিবির নীরবে তা সহ্য করেছে। আমাদের দেশের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক শ্রেণীর রাজনীতিক, সাংবাদিক ও তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এর কোন প্রতিবাদ করেননি। তারা সরকার এবং ছাত্রলীগকে বাহবা দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যেন সরকার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ধন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। কিন্তু মানুষেরওতো সহ্যের একটা সীমা আছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভবত জামায়াত-শিবিরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের ন্যায় তারা ধৈর্যচ্যুতির পরিচয় দেয়। তারা পল্টনে বিক্ষোভ মিছিল শুর”র প্রস্তুতিকালে র্যাব পুলিশ হায়েনার ন্যায় তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের উপর ব্যাপকভাবে লাঠি ও বেয়নেট চার্জ করে। বিক্ষোভকারীরা এ সময়ে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং ইট-পাটকেল দিয়ে তা প্রতিহত করে। শেয়ার মার্কেটের ধস ও কেলেঙ্কারির বির”দ্ধে ঐ দিন মতিঝিলেও ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল এবং পুলিশ তাদেরও বেধড়ক পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। তাদের একটি অংশ পল্টনে এসে বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেয়। ফলে বিক্ষোভ বিস্তৃতি লাভ করে এবং বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর হয়। এর দোষ চাপানো হয় জামায়াত-শিবিরের উপর এবং সহ¯্রাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকে আসামী করে পুলিশ মামলা করে। আমার জানামতে মামলার আসামী বেশ কয়েকজন জামায়াত নেতার যানবাহন, পাজেরো-প্রাইভেট কারও সেদিন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছিল। এই মামলায় জামায়াতের সকল প্রবীণ ও সিনিয়র নেতাকেও আসামী করা হয়েছিল। তখন থেকে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
বলা প্রয়োজন যে, প্রাথমিকভাবে জামায়াত সরকারের প্রধান টার্গেট থাকলেও শুধু জামায়াত-শিবির নয় দেশের ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য সরকার প্রাণান্তকর চেষ্টা শুর” করেন। কওমী মাদরাসাগুলোকে তারা জঙ্গি প্রজননের কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কোথাও সন্ত্রাস বা জঙ্গিপনার কোনও ঘটনা ঘটলে তার জন্য ইসলামপন্থীদের দায়ী করতে শুর” করেন। গাড়ি পোড়ানো ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মিথ্যা মামলায় জামায়াতের আমীর মাওলানা নিজামী ও নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় তাদের জড়ানো হয় এবং বিচারের প্রহসন শুর” হয়। পাশাপাশি বিএনপি’র বির”দ্ধেও সরকার নির্মূল অভিযানের সূচনা করেন। এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পাঠকরা পরিপূর্ণ অবহিত রয়েছেন এবং সরকার তার থলের বিড়ালও বের করে এনেছেন। জামায়াত এবং শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জন্যে তাকে এখনও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে প্রমাণ করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে। নাস্তিক, ইসলামবিরোধী শক্তি এখন বলতে শুর” করেছেন যে, গত দুই মাসে জামায়াত এবং শিবির তাদের জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপক প্রমাণ দিয়েছে এবং অবিলম্বে গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে তাদের নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুর” করে তৃণমূল নেতৃত্ব পর্যন্ত সকলেই জামায়াত-শিবির আতঙ্কে এতই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন যে, তাদের সামনে এখন জামায়াত ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। জামায়াত তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। একশ্রেণীর নাস্তিক-বুদ্ধিজীবী ও ধর্মদ্রোহী তাদের অস্তিত্বের পথে জামায়াতকে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে গণ্য করতে শুর” করেছেন। শাহবাগে মঞ্চ বানিয়ে সরকারি নিরাপত্তা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রতিবেশী দেশের অর্থানুকূল্যে তারা ইসলাম নির্মূলের অভিযানে নেমেছে। জামায়াত-শিবিরের সাথে এখন বিএনপি, দেশের হক্কানী আলেম সমাজ ও ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী কওমী মাদরাসাসমূহের প্রতিনিধি হেফাজতে ইসলামকেও তারা তাদের নির্মূল কর্মসূচি এবং ঐধঃব পধসঢ়ধরমহ-এর অংশ বানিয়ে নিয়েছে। দেশ এখন বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একাংশ ইসলাম ও আল্লাহর দ্বীন নির্দেশিত সুকৃতির প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আরেক অংশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সক্রিয় অংশের নাস্তিক্যবাদ ও দুষ্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে চায়। আমার বিশ্বাস দেশবাসীই ঠিক করবেন তারা কি চান। এবং এ ব্যাপারে ধর্মপ্রাণ সৎ ও যোগ্য লোকদের বসে থাকার সময় ফুরিয়ে গেছে। সন্ত্রাস সৃষ্টি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, ঘুষ রিসওয়াত হরতালে যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, মানুষ হত্যা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের সেঞ্চুরি উত্থাপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্কোর বেশি না অন্য কোনও দলের তাও তাদের ভেবে দেখার ও জাতিকে উদ্ধার করার সময় এসেছে। বিভক্ত দেশ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সহায়ক হতে পারে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন