ধর্মে বিভাজন কোনো দিনই ইসলামের নীতি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও অনেকে এটি করেছেন আজ নতুন নয়, তাই যা করা হয়েছে তা ইসলামি নীতিসম্মত নয়, এটি অন্তত জোর গলাতে বলা যায়। একইভাবে বিধর্মীকে বিনা কারণে আঘাত করা ইসলামের নীতি বিরুদ্ধ কাজ। এটি যুগে যুগে ইসলামপন্থীরা মেনে এসেছেন বলেই জানি। যার কারণেই ইসলাম আজ এতদূর এগোতে পেরেছে। নয়তো এত যাতনা এ ধর্মটিকে পোহাতে হয়েছে যে সেই আঁতুড় ঘরেই ইসলামের মরে যাবার কথা। আপন গৃহ থেকেই যেখানে বিদ্রোহীরা দলে দলে বের হয়েছে এরকম একটি সত্যকে ধ্বংস করে দিতে কিন্তু বিশাল ঐশী সাহায্য ছিল বলেই পৃথিবীর কোনো শক্তিই এদের ধ্বংস করে দিতে পারেনি। আজ ব্লগার রাজীবরা যা করছেন, তা ইসলামের নবীর স্বজনদের, নিকটজনদের ধর্ম শুরুর দিন থেকেই এ বিদ্রোহ লেগে আছে। এই তো সেদিন তসলিমা নাসরিন নামে একজন মহিলা বাংলাদেশ কাঁপিয়ে হুঙ্কার ছাড়েন, সে তো বেশি দিন আগের কথা নয়। সত্য মিথ্যা মিশিয়ে তিনি যা সাজালেন, তা এ দেশের বাজারে বেশি দিন বিকাতে পারেনি। তাই ছুটতে হয় তাকে অন্য ধান্ধায়, অন্য সমাজে আশ্রয় খুঁজে নিতে হয়। মূর্তিপূজা আমাদের সীমানার বাইরের বিষয় হলেও সরস্বতী পূজার সময় আমরা একে দেখতাম স্কুলে কলেজে খুব কাছ থেকে, তাই আমরা ওসবে একদম অপরিচিতও নই। তবে ইদানীং সংখ্যালঘু নিপীড়নের যে ইতিহাস রচিত হচ্ছে তা দুঃখজনক। কম হলেও কিছু হিন্দুও প্রকৃত আসামির দিকে ইঙ্গিতের তীর নিপে করছেন, তার পরও কেন সরকারের টনক নড়ছে না, জানি না। প্রতিটি েেত্রই সরকারের ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। যদিও সরকার মনে করে এরা তাদের ভোট ব্যাংক। যার কারণে তিগ্রস্ত পকেও বেশি উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা যায় না। নয়তো এর স্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রতিবাদ হিন্দুদের প থেকেই আসার কথা সর্বাগ্রে। সেটি শুধু আজই নয়, এসব হচ্ছে বহুযুগ অবধি, এরকম মিছে আসফালন ভিন্ন গোষ্ঠীর জনতারা করেছে বারবারই ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব হচ্ছে রাজনীতির মরণ খেলা আর এর অন্যায় দায় চাপাতে চেয়েছে মুসলমানের ঘাড়ে। ধর্মের কারণে ধ্বংসের উত্তম প্রমাণ্য প্রতিবেদন বাবরি মসজিদ ইতিহাসের এক জ্বলজ্যান্ত কলঙ্ক। এটি যুগ যুগ অবধি ইতিহাসের গভীর ত হিসেবে খোদাই করা থাকবে। এর দায় থেকে কোনো কালেও কর্মকর্তারা পরিত্রাণ পাবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এটি এক পরে অপকর্ম হয়েই জ্বলজ্বল করবে।
এবার বাংলাদেশে যে বাবরি নিধন প্রক্রিয়া সাম্প্রতিক চলছে, এরকম খবর একটি নয় বহুবিধ সংবাদ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। যার কারণে তা লেখার বিষয়বস্তু হতে পেরেছে। ‘টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের সংখ্যালঘু নির্যাতন : জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ হাইকোর্টের’। দেখা যায় টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর পৌরসভার চন্দবাড়ি গ্রামে এটি ঘটে আর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সবাই সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মী। চাঁদা না পেয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর তারাই অর্থাৎ তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত দলটি নির্যাতন শুরু করলে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার থানায় গিয়ে এর প্রতিকার চায়। এর আগের খবর ছিল এরা ‘বউ ঝিকে উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে’, তাদের গ্রামছাড়া করার পাঁয়তারা করছে। এরা আওয়ামী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি। এর থেকে উদ্ধার পেতে তারা দলবেঁধে থানায় নালিশ করতে যায়। বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ রিট আবেদনটি দায়ের করেন। পরবর্তী খবরটিতেই একসাথে দুটি খবর লুকিয়ে আছে। ‘রামগতিতে মন্দিরের পাহারাদারকে জখম করলেন যুবলীগ নেতা : এবারো পাগল সাজানোর চেষ্টা!’ দু’জন পাহারাদারের মাঝে প্রথম পাহারাদার লিটন দেবনাথের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যুবলীগ ওরফে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্ত্রাসী ছেলেটি অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত। এবারো পাগল সাজানোর চেষ্টা, মানে এটি তারা করে আসছে এবং আগেও করেছে। তার আগে বগুড়ার শেরপুরে শহীদ মিনার ভাঙার সময় যুবলীগের এক নেতাকে জনতা হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়। পরে স্থানীয় সরকারদলীয় মহল তাকে ‘পাগল’ বলে থানা থেকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যায়। অনেকে কোরাস সুরে গান গাইছে দেখো শিবির কী করছে? এর ভিন্ন অর্থ হতে পারে দেখো ইসলাম কী করছে? খুলনাতে ব্যক্তিগত বিরোধকে ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বলে প্রচারের চেষ্টা- ইন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা’। এলাকার বাসিন্দারা জানান, বণিকপাড়ার দীপ্ত ওরফে দীপুর সঙ্গে দফাদারপাড়ার জাফরের ছেলে সজলের কবুতর বিক্রি নিয়ে দুই-তিন দিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে বিস্তর ধড়পাকড় হয় এবং পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতার ইন্ধনে বণিকপাড়ায় হামলা করা হয়। সূত্র জানায়, বণিকপাড়া হিন্দুপাড়া আর দফাদারপাড়া চানাচুর পট্টি নামে খ্যাত। দুই পাড়াই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এলাকাতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই পাড়াতেই দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্ধ চলছে। নিজ দলের মাঝে বিবাদেও অপরাধী ওই কেষ্ট বেটা।
আর একটি খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন : আওয়ামী লীগ হামলা করছে, বিএনপি রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে’। ‘ইস্যু সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগই মন্দিরে হামলা করেছে : মুন্সীগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়ে খালেদা জিয়া।’ ওই বক্তৃতার শেষে খালেদা জিয়া আর একটি ঘটনার দিকে তির্যক দৃষ্টি ফেলেনÑ সেটি হচ্ছে কিছু দিন আগে কক্সবাজারের রামুর উখিয়া বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনার ঘটনা ও ভাঙচুরের সাথে যারা জড়িত, তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদেশ সফরের সুযোগও পেয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গোয়ালিমান্দ্রা কালীমন্দিরসংলগ্ন মাঠে এক সমাবেশে তিনি এটি বলেন। সম্প্রতি তারা মন্দির ভেঙেছে, আগামীতে হয়তো মসজিদেও হামলা করতে পারে। বস্তুত কে বা কারা গভীর রাতে মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয় ও প্রতিমা ভাঙচুর করে। আরেকটি খবরÑ ‘জনপ্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মতাসীনরা : নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় বাসিন্দারা পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে’। অন্য খবরে প্রকাশ ‘বেগম জিয়ার বগুড়া সফরের খবরের পর প্রতিমা ভাঙার হিড়িক পড়েছে, দায় জামায়াতের ওপর চাপাতে মরিয়া পুলিশ!’ খবরে জানা যায়, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় মন্দির কমিটি বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিমা ভাঙচুরের জন্য কাউকে সন্দেহ না করলেও আওয়ামী লীগের নির্দেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। অপর দিকে গাবতলী মডেল থানার ওসি হাশমী জানান, কে বা কারা প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। যেহেতু একটা প মনে করে জামায়াত এ ধরনের কাজ করতে পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ওই একটি পরে জন্যই এ দেশ আত্মাহুতি দেবে আর বাকি পরো কি ভিন দেশের বাসিন্দা? এ প্রশ্নটি সচেতন জনতার কাছে জমা রইল।
‘গাজীপুর মন্দিরে আগুন, লালমনিরহাটে হিন্দুপল্লীতে হামলায় আহত ২০’। সেখানেও গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। আগুনে মন্দিরে থাকা নারায়ণ ও লক্ষ্মীমূর্তির পোশাক ও চুল পুড়ে গেছে। আর একটি খবর ‘মঠ মন্দির ভাঙচুরে ঢালাওভাবে একটি দলকে অভিযুক্ত না করতে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট’। বস্তুত, তারা অনেক সাহসের সাথে কথাটি বলেছে। সাধারণত তারা এসব এড়িয়েই যায়, ঝামেলায় জড়ায় না। তাদের বক্তব্য ছিল সরকারের আইনশৃঙ্খলা রায় নিয়োজিতরা সময়মতো কার্যকর পদপে নেয়নি। তারা বলে তথাকথিত কিছু স্বঘোষিত নেতা তদন্ত না করেই বিশেষ মহলকে খুশি করতে এ কাজটি করছে। মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দিনবন্ধু রায়, যুগ্ম মহাসচিব অরুণ মজুমদার, রামকৃষ্ণ সাহা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি মনোজ কুমার মণ্ডল, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি রিপন দে, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাবেক সভাপতি প্রভাষক বিপুল বিশ্বাস, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফণিভূষণ হালদার প্রমুখ। এখানে বলা হয় সরকার অপকর্মকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে হাজার হাজার মানুষকে ধরে সরকার মামলা দিচ্ছে সেখানে কেন এ গুটিকয়েক সন্ত্রাসী ধরতে পারছে না সেটি বুঝার মতো বিবেক-বুদ্ধি নিশ্চয় বাংলাদেশের জনতার থাকার কথা। ছাত্র শিবির বলছে, সরকারি লোকজন এসব করে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। দলটির প থেকে তারা বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানায়। এ দিকে প্রায়ই হাত পা ভাঙা অসহায় মূর্তিগুলোর দুরবস্থা দেখতে হচ্ছে। সেদিন দেখলাম, ভারতের দুটি দল হুমকি দিচ্ছে বর্ডার অভিমুখে যাত্রা করার। এরকম সবক’টি আলামতই দুর্যোগের লণ। যেখানে দেশটি বারবার নানা বিপদের মোকাবেলা করছে, আর প্রতিবেশীরা যদি এভাবে তালে তালে তালি দিয়ে বেড়ান, তবে মনে করতে হবে সৎ প্রতিবেশীর মর্যাদা জিরো ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছেছে, মনে হচ্ছে এটি লুকিয়ে রাখার বা অস্বীকার করার উপায় নেই।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন