বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১২

প্রধানমন্ত্রী ও তার সোনার সন্তানেরা



গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকের শুরুতে দেয়া বক্তব্যে আমাদের এই সোনার প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিচার বন্ধে বেশী বাড়াবাড়ি করলে বিকল্প পথ জানা আছে তার। কী করতে হবে তা তিনি ভালো করেই জানেন এবং দরকার হলে শরিয়া আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন তিনি আর ‘কিসাস’ (হত্যার বিনিময়ে হত্যা) তো আছেই।
সত্যিই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রশংসা করতেই হয়, না হলে যে আমরা জাতি হিসেবে ছোট হয়ে যাবো। আপনার বিকল্প পথ যে সত্যিই বিকল্প আপনার মুখের উচ্চারণেই বোঝা যাচ্ছে। আর আপনার সোনার ছেলেরা তো বিকল্পভাবেই সবকিছু দেখাচ্ছে। কিভাবে শিশু অপহরণ করে কোটিপতি হওয়া যায়, কিভাবে শিক্ষকদের মারধর করেও বুক ফুলিয়ে হাটা যায়। অবশ্য আপনার সন্তানরা তা করবেই বা না কেন? কারণ মা যা করে সন্তানরা তো তাই করবে।
মায়ের সেই সুযোগ্য (!) সন্তানেরা তাদের মায়ের সম্মান রেখেছেন। তারা ১৯ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষককে পিটিয়ে মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এমন জায়গায় তারা শিক্ষককে পিটিয়ে যে নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন সে জন্য সন্তানদেরকে মায়ের পুরস্কৃত করা উচিত। আর আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত (!) এমন মায়ের এমন সন্তান দেখে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কিভাবে হত্যার বিনিময়ে হত্যা করতে হয় তা তো আপনার পেটোয়া বাহিনী ও আপনার সন্তানরা দেখিয়ে দিচ্ছে জাতিকে। মানুষকে গরুর মত পেটাচ্ছে আপনার সোনার ছেলেরা। শিক্ষক থেকে শুরু করে শিশুরা পর্যন্ত তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অথচ আপনি বসে বসে তার তামাশা দেখছেন আর উষ্কানি দিচ্ছেন হত্যার বিনিময়ে হত্যা করার জন্য।
একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কেউ এমন কথা বলতে পারে, তা আমাদের মত হতভাগ্য জনগণের দেশ বলেই সম্ভব। একটা রাষ্ট্রের দিকপালের অবস্থা যদি এই হয় তাহলে ওই রাষ্ট্রের অবস্থা তো সহজেই অনুমান করা যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, আপনার সোনার ছেলেরা শিক্ষক সমাজকে ঘায়েল করছে কী উদ্দেশ্যে?
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঘায়েল করে জাতির মেরুদন্ড ভেঙে দিতে? যাতে জাতি সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে আর তারা অনায়াসে মূর্খ জাতির সামনে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারে। আপনার সোনার ছেলেরা সত্যিই সোনা! এমন সোনার (!) ছেলেরাই পারে শিক্ষকদের মেরে রক্তাক্ত করতে এবং তা এই সোনার দেশেই সম্ভব।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে মঙ্গা নেই এ বিষয়টা পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রোনিক মিডিয়া এবং মধ্যরাতের টক শোতে দেখলে খুশি হতেন বলে ওই বৈঠকে বললেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিটিভিতে আপনার এত প্রশংসা শুনেও আপনার মন ভরছে না? অন্যান্য মিডিয়াতে আপনি আপনার প্রশংসা শোনার জন্য উদগ্রিব হয়ে আছেন। আপনার সেই প্রশংসার বাক্স বিটিভি সম্পর্কে আমাদের এক শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি বললেন, কাউকে যদি চরমভাবে শাস্তি দিতে চাও তাহলে ৫ ঘণ্টা বিটিভি’র সামনে বসিয়ে রাখো তাহলেই হবে। এবার বুঝেন অন্যান্যগুলোতে আপনার বাণী ও প্রশংসা শুনিয়ে আমাদের আর কত শাস্তি দিতে চান আপনি। এমনিতে আমরা সাধারণ জনগণ দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে সবকিছুর ঊর্ধ্বগতিতে এত শাস্তি পাচ্ছি পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। দয়া করে আর শাস্তি দিবেন না। আপনার সোনার ছেলেদের সামলান এবং আপনি নিজে সংযত হোন। সামনে নির্বাচন। জনগণের চেয়ে বড় কোন শক্তি আছে কিনা আমার জানা নেই।
অবশ্য আপনার জানা থাকতেও পারে। কারণ আপনার কথায় বিকল্প পথ ভালোই জানা আছে আপনার

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads