বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১২

বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে ওবামার বিজয়



বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে ওবামার বিজয়
সব সন্দেহ-সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে বড় ব্যবধানে আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন বারাক হোসেন ওবামা। নির্বাচনী জরিপে যেভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেয়া হয়েছিল, বাস্তবে সে রকম হয়নি। গতবারের চেয়ে কিছুটা কম ব্যবধানে তিনি এবার জয় পেয়েছেন। বিজয়ের ফারাকটা বলতে হবে মোটাদাগেই। কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। সবশেষে ওহাইয়ো রাজ্যে জয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে সব শঙ্কার অবসান ঘটালেন ওবামা। লেখাটি তৈরির সময় ফোরিডা ছাড়া সব রাজ্যের ফলাফল চূড়ান্ত হয়েছে। আর ওবামা ৩০৩ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ফোরিডায় জয়ী হলে রমনির সাথে ওবামার ভোটের ব্যবধানটা আরো বাড়বে।
নির্বাচনে ১১টি রাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আভাস ছিল। নির্বাচনে জয়-পরাজয় এ রাজ্যগুলোর ওপর নির্ভর করছে বলে বিশ্লেষকেরা অভিমত দেন। ফলাফলে দেখা গেল ১১টি রাজ্যের ৯টিতেই জিতেছেন ওবামা। একটিতে রয়েছেন অগ্রগামী। এর মধ্যে কেবল নর্থ ক্যারোলিনাতে জয় পেয়েছেন মিট রমনি। ফোরিডা ওহাইয়ো ও ভার্জিনিয়ায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। বাকি রাজ্যগুলোতে মোটামুটি বড় ব্যবধানে জিতেছে ওবামা। মিশিগান ও নেভাদাতে ৭ শতাংশের বেশি ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ওবামা।
নির্বাচনের আগের দিন পরিচালিত বিভিন্ন জরিপ তীব্র প্রতিযোগিতার আভাস দিয়েছিল। ১০টি জাতীয় জরিপের গড় করে দেখা যায়, ওবামা প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান মিট রমনির চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে শুধু গ্যালাপ ও রাসমুসেন রিপোর্টসের জরিপেই ১ শতাংশ এগিয়ে ছিলেন রমনি। বাকি ছয়টির মধ্যে এগিয়ে ছিলেন ওবামা। পপুলার ভোটে দু’জনের মধ্যে বাস্তব ভোটপ্রাপ্তিও এ রকম। ওবামার জয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে হিসপ্যানিক, কালো, এশিয়ানসহ অন্য সংখ্যালঘুরা। আমেরিকান জনসংখ্যার ৭২ ভাগ শ্বেতাঙ্গ, ১৮ ভাগ হিসপ্যানিক/ল্যাটিনো (এদের মধ্যে সাদা-কালো দুই-ই রয়েছে), ১৩ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ আর ৫ ভাগ এশিয়ান বংশোদ্ভূত। জনমত জরিপে দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গদের প্রায় ৬০ শতাংশ রমনিকে সমর্থন করে। এ ধরনের মেরুকরণের ফল রমনির বিপক্ষে গেছে। শ্বেতাঙ্গদের অধিক হারে রমনি-শিবিরের প্রতি ঝোঁক দেখে বাকিরা ওবামার প্রতি সমর্থন দিয়েছে আরো জোরেশোরে।
বেশির ভাগ রাজ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে। হিসপ্যানিক, শ্বেতাঙ্গ, নারী ও সংখ্যালঘুরা ওবামার জন্য এই ব্যবধান এনে দিয়েছে। এর সাথে বিগত কয়েকজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের উগ্র শাসন রমনির জন্য নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে। বিশেষ করে বুশ সিনিয়র ও বুশ জুনিয়রের শাসনব্যবস্থায় গোটা পৃথিবী যেন হয়ে উঠেছিল নানা যুদ্ধবিগ্রহে উত্তপ্ত। পরবর্তীকালে এসব যুদ্ধের যুক্তিহীনতা আমেরিকাবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি মোটাদাগে পরিবর্তিত হয়নি। তবে বিল কিনটন ও ওবামা যুদ্ধের দামামা থামিয়েছেন অনেকটা। নতুন করে কোনো দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে দেননি। তাই মন্দের ভালো হিসেবে তারা ওবামাকে বেছে নিয়েছেন আবার।
ওবামার জয়ে প্রকৃতপক্ষে রমনির সম্ভাব্য উগ্রনীতির বিরুদ্ধে বিশ্বজনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। নির্বাচনে কোন কোন সময়ের বর্ণবাদী আচরণ শেষ পর্যন্ত ওবামার পক্ষে গেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় রমনি গরিব ভোটারদের প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মানজনক মন্তব্য করেন। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার অর্ধেক জনগণ কর দেয় না। তারা চায় সরকারের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে। নির্বাচনের জন্য তহবিল গঠন করতে ধনীদের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেন। মাদার জোনস পত্রিকা এ বৈঠকের ভিডিওচিত্র প্রকাশ করে।
তার বক্তব্য জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়লে তিনি এ ধরনের বক্তব্যকে অসৌজন্যমূলক বলে স্বীকার করে নেন; কিন্তু অবস্থান থেকে সরে আসেননি। করের বিষয়টি একটু ঘুরিয়ে বলেনÑ ‘যারা ওবামাকে ভোট দেয় তারা দেশের প্রায় অর্ধেক জনগণ। এরাই মূলত কর দেয় না। এরা মনে করে, সরকার স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য ও আবাসনের ব্যবস্থা করবে।’ এ ধরনের মন্তব্য করায় নিম্নবিত্তের মানুষকে তা আঘাত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে করকাঠামো তা তার বক্তব্য সমর্থন করে না। এ বক্তব্য থেকে মনে হয়েছে, রমনি গরিবদের ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ধনীদের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে দরিদ্রদের ওপর কর চাপানোর ইঙ্গিত দেন। এতে করে ধনীরা খুশি হতে পারে। তারা স্বেচ্ছায় রমনির জন্য আরো বেশি তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসে। নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে রমনি এর সুফল পেয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে নেতিবাচক।
আলজাজিরা-র প্রতিনিধিরা বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের পরিবেশ সরেজমিন প্রত্যক্ষ করেছেন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ওহাইয়ো রাজ্যের একটি কারখানা মালিকের কাছে ভোটের ব্যাপারে মতামত জানতে চান পর্যবেক্ষরা। মালিক মন্তব্য করেন, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওবামা ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সক্ষম নন। আমি রমনিকে ভোট দেবো।’ তারা এরপর ওই কারখানার শ্রমিকদের কাছে যান। তারা পরপর চারজন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেন। তারা সবাই ওবামাকে তাদের পছন্দের প্রার্থী বলে জানান। মন্দার কারণে কারখানাটি সরকারি সাহায্য পেয়েছে। এসব শ্রমিকের মনোভাব গঠনে রমনির বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। তার গরিববিদ্বেষী মন্তব্য নিম্নবিত্ত ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, এর সুফল পেয়েছেন ওবামা।
ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে রমনি বিরূপ মন্তব্য করেন। ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি মন্তব্য করেন, ‘ফিলিস্তিনিরা মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের অবসান চান না। তারা ইসরাইলকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।’ মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার কোনো সমাধান হবে না বলেও তিনি নৈরাশ্যজনক বক্তব্য দেন। এ ধরনের বক্তব্যের মধ্যে রমনির সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ হয়ে পড়ে।
ইরানের ব্যাপারে তার মনোভাব আরো কট্টর। দেশটিতে আক্রমণের ব্যাপারে তিনি প্রকাশ্য কোনো ঘোষণা দেননি। তবে তার হাবভাব থেকে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিকÑ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছেÑ এই অজুহাতে তিনি ইরানের ওপর আক্রমণ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ লাখ মুসলমান রয়েছে। তারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। যেসব রাজ্যে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয় নির্ধারণ হয়েছে, সেখানে ১ শতাংশ ভোট কাজে এসেছে।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয় ছিল অর্থনীতি। ১৯২৯ সালের মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এত খারাপ কখনো হয়নি। ওবামা ক্ষমতা নেয়ার পর বেকার জনশক্তির হার ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। হোয়াইট হাউজে বসে তাকে মন্দা মোকাবেলায় কঠোর মনোসংযোগ করতে হয়েছে। এর ফল হিসেবে অর্থনীতির আরো পতন রোধ তিনি করতে পেরেছেন কিন্তু অর্থনীতিতে আশানুরূপ গতিসঞ্চার করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ বিষয়। আরো গুরুত্বপূর্ণ হোয়াইট হাউজে চার বছরের জন্য বসবাস করতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে ধর্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিজীবন। এবার সব কিছুকে ছাপিয়ে অর্থনীতি হয়ে ওঠে এক নম্বর ইস্যু।
মিট রমনি খ্রিষ্টানদের সংখ্যালঘু শাখা মরমন সম্প্রদায়ের। খ্রিষ্টানদের মূল ধারা এদেরকে সহজভাবে নেয় না। এ পর্যন্ত কোনো মরমন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন চিন্তা করা যায়নি। বারাক ওবামার জন্মপরিচয় নিয়ে একটি প্রচারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সেখানে দেখানো হয়েছে, কেনিয়ান বাবা নন তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন কৃষ্ণাঙ্গ কবির সন্তান। এ বিষয়টিও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব ফেলতে পারেনি। শেষ টেলিভিশন বিতর্ক ছিল পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে। সে দিনও দেখা গেল আলোচনার মোড় ঘুরে গেল অভ্যন্তরীণ বিষয়ের দিকে। বেকারত্ব, কর ব্যবস্থাপনা নির্বাচনী প্রচারণাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, অন্য বিষয় সামনে আসারই সুযোগ পায়নি।
মার্চ মাসে রিপাবলিকান রমনির প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়। প্রথম জরিপে দেখা গেল, তিনি ওবামার চেয়ে সাড়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কমবেশি প্রায় একই ধরনের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। ১১ আগস্ট লিবিয়ার বেনগাজিতে আমেরিকান দূতাবাস আক্রান্ত হয়। সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ চার আমেরিকানকে হত্যা করে। এ সময় জনমত জরিপে দেখা যায় ওবামার প্রতি আমেরিকানদের আস্থা কমেছে। পাশাপাশি রমনির প্রতি জনপ্রিয়তা বেড়েছে। উভয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ জনমতের সমর্থন পান। এরপরই আবার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ওবামার। তার প্রতি জনসমর্থন ৪৯ শতাংশের ওপরে ওঠে। ৪ অক্টোবর কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভার ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক।
বর্ণনার অতিশায়ন, হাবভাবের ক্যারিশমা ও নায়োকোচিত অভিব্যক্তি দিয়ে ভোটারদের মন গলিয়ে নেন রমনি। ৯০ মিনিটের বক্তৃতায় দর্শকদের প্রবলভাবে আলোড়িত করেন তিনি। প্রথমবারের মতো ওবামা জনমত জরিপে পেছনে পড়েন। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দৃশ্যপটে আবির্ভূত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি কারো পেছনে পড়লেন। বিতর্কের পরপরই দর্শকদের ওপর সিএনএন পরিচালিত জরিপে ৬৭ শতাংশ ভোটার রায় দেয় রমনির জয় হয়েছে। ওবামা জয়ী হয়েছেন বলে রায় দেয় ২৬ শতাংশ ভোটার। সিবিএস পরিচালিত জরিপে ৪৬ শতাংশ ভোটার রমনির জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করে। ২২ শতাংশ ভোটার মত দেয় ওবামার প্রতি। অন্যান্য জরিপ ফলাফলও কাছাকাছি। প্রায় ছয় কোটি ভোটার বিতর্কটি টিভিতে সরাসরি দেখে। এ সময় প্রথমবারের মতো জনমত জরিপে ওবামাকে ছাড়িয়ে যান রমনি।
এ বিতর্ক নিয়ে একটি কথা না বললেই নয়Ñ উভয় প্রার্থীই বিজয়ী হওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছেন। তারা পাল্টাযুক্তি দিতে গিয়ে বাড়িয়ে বলেছেন এবং সংখ্যা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এদিক-সেদিক করেছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বাস্তবতার সাথে তাদের বক্তব্যের গরমিল তুলে ধরে। বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে মানুষের হতাশাকে কাজে লাগানোর জন্য রমনি একটি কাহিনী তুলে ধরেন প্রথম বিতর্কে। ছোট্ট সন্তান নিয়ে এক মায়ের গল্প শোনান। তিনি সাহায্যের জন্য রমনির স্ত্রী অ্যান রমনির কাছে এসেছিলেন। মহিলা কোলে সন্তান নিয়ে করুণ চাহনি দিয়ে অ্যানের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘মে মাস থেকে আমার চাকরি নেই। এমনকি আমার স্বামীরও কোনো চাকরি নেই।’ তিনি হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছেন। এই করুণ কাহিনী বর্ণনার পর রমনি সবাইকে লক্ষ করে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সাহায্য করতে পারি তবে পথ ভিন্ন’। এর মাধ্যমে তিনি ওবামার অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেন। গল্পটি অধিক বেকারত্বের যুগে দর্শক-শ্রোতাকে টেনেছে। তবে এ গল্পের সত্যতা যাচাই করার সুযোগ নেই।
ওবামার জন্য স্বস্তির খবর এনেছিল আমেরিকান ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস। প্রথম বিতর্কের পরদিনই বেকারদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমবারের মতো ওবামা প্রশাসনের সময়ে বেকারত্বের হার ৮ শতাংশের নিচে নেমে ৭ দশমিক আট হয়েছে। একইভাবে পরের মাসেও ওবামার জন্য সুখবর ছিল। ২ নভেম্বর অক্টোবর মাসে বেকারত্বের হার প্রকাশ করে ওই প্রতিষ্ঠান। দেখা যায় ওই মাসে এক লাখ ৭১ হাজার বেকার চাকরির সুযোগ পায়। আর বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ৭ দশমিক নয় শতাংশে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইকোনমিক করস্পনডেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াকার বিশ্লেষণ করে দেখান যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বমন্দার দুর্দিনে ভালো করেছে। যদিও বিগত ৮০ বছরের মধ্যে আমেরিকার জন্য এটি সবচেয়ে খারাপ সময়। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন ছিল কঠিন। যেখানে জাপান ও ইউরো জোন এখনো মন্দায় হাবুডুবু খাচ্ছে। বেশির ভাগ দেশ প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। আমেরিকার অর্থনৈতিক সঙ্কটমুক্তি এসব দেশের তুলনায় ভালো।
প্রবল হারিকেন স্যান্ডি ঠিক নির্বাচনের অল্প ক’দিন আগে আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। ৯৬ জন এতে প্রাণ হারায়। শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় যুক্তরাষ্ট্র। লক্ষাধিক গৃহ গ্যাস-বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সবার ধারণা ছিল, অভূতপূর্ব এই বিপদ সামাল দিতে এবার ওবামা প্রশাসন নিশ্চিত ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। দেখা গেল, ভালোভাবেই সামলে উঠলেন ওবামা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কেউ মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করতে পারেনি। দুর্যোগ মোকাবেলায় ওবামা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এই স্বীকারোক্তি দুর্যোগকবলিত মানুষের। এই বিপদ ওবামার জন্য আশীর্বাদ হলো।
নির্বাচনে সমকামী বিয়ে ও গর্ভপাত নিয়ে ওবামার ইতিবাচক মনোভাব ছিল। রমনি পরোক্ষভাবে এর বিরোধিতা করেছেন। এসব বিষয়ের সিদ্ধান্ত তিনি রাজ্যগুলোর ওপর ছেড়ে দিতে চান। এ দুটো স্পর্শকাতর প্রশ্নে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি নমনীয়রা রমনির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। তবে আমেরিকান সমাজে এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ চায় না।
বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ওবামা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শিকাগোয় তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐক্যকে সুসংহত করার কাজ আরো সামনে এগিয়ে গেল। যারা দুই শ’ বছরের বেশি সময় আগে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার আদায় করেছিল, তারা আজ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সাধারণ আমেরিকানরা প্রভাবশালী গোষ্ঠিস্বার্থের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে।’ এর মাধ্যমে রমনির সাথে ধনিক শ্রেণীর আঁতাতের বিষয়টির জবাব দিলেন বলেই মনে হলো। রমনি পরাজয় মেনে নিয়ে ইতোমধ্যে ওবামাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এর আগে টুইটারে বিনয়ী বার্তা পাঠিয়েছেন ওবামা। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। আপনারাই এই জয়ের নায়ক। ইটের পর ইট গেঁথে এ বিজয় সাজিয়েছেন। পাঁচ ও দশ ডলারের এই প্রচারণায় সত্যিকারের বিজয়ী আপনারা। এই কাজ যখন কঠিন হয়েছে তখন আরো পরিশ্রম করেছেন।’ নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমিকদের অবদানের কথা এ বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে স্বীকার করে নিলেন ওবামা।
jjshim146@yahoo.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads