যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বাড়াবাড়ি করা হলে প্রয়োজনে শরিয়া আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে—১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে একথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতারা শুধু যুদ্ধাপরাধ নয়, সব ক্ষেত্রে শরিয়া আইন চালুর দাবি তুলেছেন। তারা বলেছেন, এজন্য কোরআন ও সুন্নাহকে সব আইনের উত্স হিসেবে উল্লেখ করে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। শরিয়া আইন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে শরিয়া আইন প্রয়োগের ঘোষণা কেবল হাস্যকরই নয়, আইন নিয়ে উপহাস করার শামিল। এদিকে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। কেননা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং শরিয়া আইন পরস্পর সাংঘর্ষিক। একসঙ্গে এই উভয় নীতির প্রয়োগ অসম্ভব জেনেও প্রধানমন্ত্রী কেন এ ধরনের বক্তব্য দিলেন এবং কোন অধিকারে তিনি এই অসাংবিধানিক উচ্চারণ করলেন তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, ইসলাম ধর্মমতে, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক অনুশাসনের নাম শরিয়া আইন। এ আইনটি মুসলমানদের জীবনবিধান হিসেবে গৃহীত। এতে স্বভাবতই বিভিন্ন শাস্তির কথাও বলা আছে। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান বিশেষ শাস্তির বিধান করতে পারেন। একে শরিয়তের ভাষায় বলা হয়, ‘তাজির’। অন্যদিকে ‘কিসাস’ হচ্ছে হত্যার বদলে হত্যা। অর্থাত্ কেউ কাউকে হত্যা করলে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তাকেও হত্যা করা। শরিয়া আইন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি কেউ অন্যায়ভাবে কারও চোখ, হাত, দাঁত নষ্ট করে তাকেও অনুরূপ শাস্তি দেয়া যায়। তবে এই আইনের প্রয়োগ সেখানেই কার্যকর সম্ভব যেখানে শাসনতান্ত্রিকভাবে শরিয়া আইন চালু রয়েছে। কাজেই রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ফায়দা হাসিল করার জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে শরিয়া আইন বা কিসাস প্রয়োগের কথা বলা অনেকের কাছে উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের মতো মনে হতেই পারে। কেননা, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজেই কেবল শরিয়া আইন মোতাবেক কিসাস চলতে পারে। এক্ষেত্রে ‘ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি’—এ ধরনের খণ্ডিতকরণের কোনো অবকাশ নেই। সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ কোনো রাষ্ট্রে শরিয়া আইনের আশ্রয় নিয়ে কিসাসকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলারও কোনো ফুরসত নেই। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শরিয়া আইনে বিচারের কথা বলার অধিকার রাখেন কিনা, সেটিও একটি বড় ধরনের প্রশ্ন। ইসলামী দল ছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে একে অহেতুক উচ্চারণ বলে অভিহিত করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কোন অধিকারে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের শরিয়া আইনে বিচারের কথা বলেন! এ আইনে বিচারের কথা বলার আগে সংসদে বিল আনতে হবে। সংসদে আলোচনা করে সে আইন পাস করতে হবে। তারপরই বলা যেতে পারে এ আইনে বিচার হবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী কেবল শরিয়া আইন ও কিসাসের কথাই বলেননি, রীতিমতো হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে যত বাড়াবাড়ি হবে, বিচার ততই তাড়াতাড়ি করা হবে। তার একথা থেকে বোঝা যায়, আলোচ্য বিচার কখন কীভাবে শেষ হবে তা প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। তাহলে কি বিচারব্যবস্থা তার নিজের গতিতে অগ্রসর হচ্ছে না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য কি প্রচলিত আইন তথা চলতি বিচার প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয়? এজন্যই কি ‘কিসাস’ প্রয়োজন? দেশবাসীর সামনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের আমলে গত এক বছরে ২১ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। পদাধিকারবলে তিনি এই অধিকার সংরক্ষণ করেন। তারপরেও বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড মওকুফ হলে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে সুযোগ ও সাহস পায়। অথচ যে বিচার এখনও প্রক্রিয়াধীন সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ‘কিসাস’ প্রয়োগের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। একথা তো সর্বজনবিদিত যে, আওয়ামী লীগ নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে দাবি করে। এদিক থেকে সহসা শরিয়া আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই চমকের সৃষ্টি করেছেন, অথচ যার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তিই নেই। এ অবস্থায় সমালোচকরা প্রশ্ন রাখতেই পারেন—এটা কি জনগণের সঙ্গে তামাশা নয়?
দেশবাসীর প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী যে কোনো বিচার তথা সুনির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে যা বলবেন তা কোনোক্রমেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর তার কোনোই প্রভাব পড়বে না।
উল্লেখ্য, ইসলাম ধর্মমতে, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক অনুশাসনের নাম শরিয়া আইন। এ আইনটি মুসলমানদের জীবনবিধান হিসেবে গৃহীত। এতে স্বভাবতই বিভিন্ন শাস্তির কথাও বলা আছে। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান বিশেষ শাস্তির বিধান করতে পারেন। একে শরিয়তের ভাষায় বলা হয়, ‘তাজির’। অন্যদিকে ‘কিসাস’ হচ্ছে হত্যার বদলে হত্যা। অর্থাত্ কেউ কাউকে হত্যা করলে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তাকেও হত্যা করা। শরিয়া আইন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি কেউ অন্যায়ভাবে কারও চোখ, হাত, দাঁত নষ্ট করে তাকেও অনুরূপ শাস্তি দেয়া যায়। তবে এই আইনের প্রয়োগ সেখানেই কার্যকর সম্ভব যেখানে শাসনতান্ত্রিকভাবে শরিয়া আইন চালু রয়েছে। কাজেই রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ফায়দা হাসিল করার জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে শরিয়া আইন বা কিসাস প্রয়োগের কথা বলা অনেকের কাছে উপহাস ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের মতো মনে হতেই পারে। কেননা, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজেই কেবল শরিয়া আইন মোতাবেক কিসাস চলতে পারে। এক্ষেত্রে ‘ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি’—এ ধরনের খণ্ডিতকরণের কোনো অবকাশ নেই। সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ কোনো রাষ্ট্রে শরিয়া আইনের আশ্রয় নিয়ে কিসাসকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলারও কোনো ফুরসত নেই। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শরিয়া আইনে বিচারের কথা বলার অধিকার রাখেন কিনা, সেটিও একটি বড় ধরনের প্রশ্ন। ইসলামী দল ছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে একে অহেতুক উচ্চারণ বলে অভিহিত করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কোন অধিকারে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের শরিয়া আইনে বিচারের কথা বলেন! এ আইনে বিচারের কথা বলার আগে সংসদে বিল আনতে হবে। সংসদে আলোচনা করে সে আইন পাস করতে হবে। তারপরই বলা যেতে পারে এ আইনে বিচার হবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী কেবল শরিয়া আইন ও কিসাসের কথাই বলেননি, রীতিমতো হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে যত বাড়াবাড়ি হবে, বিচার ততই তাড়াতাড়ি করা হবে। তার একথা থেকে বোঝা যায়, আলোচ্য বিচার কখন কীভাবে শেষ হবে তা প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। তাহলে কি বিচারব্যবস্থা তার নিজের গতিতে অগ্রসর হচ্ছে না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য কি প্রচলিত আইন তথা চলতি বিচার প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয়? এজন্যই কি ‘কিসাস’ প্রয়োজন? দেশবাসীর সামনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের আমলে গত এক বছরে ২১ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। পদাধিকারবলে তিনি এই অধিকার সংরক্ষণ করেন। তারপরেও বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড মওকুফ হলে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে সুযোগ ও সাহস পায়। অথচ যে বিচার এখনও প্রক্রিয়াধীন সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ‘কিসাস’ প্রয়োগের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। একথা তো সর্বজনবিদিত যে, আওয়ামী লীগ নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে দাবি করে। এদিক থেকে সহসা শরিয়া আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই চমকের সৃষ্টি করেছেন, অথচ যার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তিই নেই। এ অবস্থায় সমালোচকরা প্রশ্ন রাখতেই পারেন—এটা কি জনগণের সঙ্গে তামাশা নয়?
দেশবাসীর প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী যে কোনো বিচার তথা সুনির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে যা বলবেন তা কোনোক্রমেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর তার কোনোই প্রভাব পড়বে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন