হারুন ইবনে শাহাদাত
বেশ ক’দিন ধরেই চায়ের কাপে ঝড় তুলছে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর। এসব সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই রক্ত ঝরেছে। দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। জনগণের মধ্যে শুধু আতঙ্কই সৃষ্টি হয়নি, অনেকে হয়রানিরও শিকার হয়েছেন। অথচ কোনো গণতান্ত্রিক দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ কারও কাম্য নয়। এমন ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো ক্ষত আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও আমরা গণতন্ত্রের সে ক্ষত দূর করতে পারিনি আর পারিনি বলেই, ওই ক্ষতের ধারা বেয়ে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যখন থাকে তখন তারা মনে করে আন্দোলন-বিক্ষোভ, সংগ্রামের অর্থ হলো সংঘর্ষ, গাড়ি পোড়ানো, হরতাল-অবরোধ। বিগত ২০০৬ সালের অক্টোবরেও দলটি চারদলীয় জোট সরকারের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর বাধাগ্রস্ত করে ১/১১-এর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তাদের সহিংস আন্দোলনের ফসলই ছিল সেনাসমর্থিত মইন উ ও ফখরুদ্দীনের সরকার। এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়। তারপরও থেমে নেই তাদের সহিংস ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড।
গত ৬ ও ৭ নভেম্বর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রক্তাক্ত পুলিশ সদস্যের ছবি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর ওপর পুলিশের অ্যাকশন এবং পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সেই অস্ত্র নিয়ে পুলিশকে মারার দৃশ্য দেখে কষ্ট পেয়েছি। যাদের মারা হচ্ছে তারা কারা এবং যারা মারছে তারাই বা কারা? সবাই তো এদেশের নাগরিক, তারপরও কেন একজন অপরজনকে এভাবে পশুর মতো পেটাচ্ছে? কেন সভ্য দুনিয়ায় বাস করেও আমরা এত অসভ্য? কারণ আসলে ক্ষমতা। ক্ষমতার জন্যই এ অসভ্যতা। অথচ এমন অসভ্যতা বন্ধ করতেই তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল। ক্ষমতা দখলের জন্য কোনো হানাহানি নয়, জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। জোর যার মুলুক তার—এ জঙ্গি দর্শনের মৃত্যু হলেই শুধু তা সম্ভব। না হলে এর ভয়াবহ বিস্তার গোটা জাতিকে ধ্বংস করবে। প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ এর অবসান চায়। কিন্তু সেই অবসান কাউকে নির্মূল করে নয়, কারও গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণ করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মন্ত্র্রীরা জামায়াত-শিবিরের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় জামায়াত-শিবির কোনো মিছিল-মিটিং নয় পুলিশকে পেটানোর জন্যই রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু সচেতন দেশবাসী জানেন, গত ৪ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবেই তারা মিছিল বের করেছিল। পুলিশকে পেটানোর জন্য নয়। এ সরকারের আমলে এর আগে তারা যতবার মাঠে নেমেছে, দু’একবার ছাড়া পুলিশের ব্যারিকেড না ভেঙে বরং রণে ভঙ্গ দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাদের ছাড়েনি। কোনো মামলা ছাড়াও ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে, জেলের ভাত খাইয়েছে। ৪ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্যাতনে পরিসংখ্যান তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, সরকারের ৪৬ মাসে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রায় ১৮ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। আসামি করা হয়েছে দুই লাখ নেতাকর্মীকে। মহিলা কর্মীরাও রেহাই পাননি। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন তো করা হচ্ছেই। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শতাধিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়েছে। খুন হয়েছেন জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ১০ জন নেতা-কর্মী। জামায়াত নেতা আরও বলেছেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করছে। পুলিশকে রাষ্ট্রীয় লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণত গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের পথে বাধা এলে বিক্ষোভ কর্মসূচি সহিংস রূপ নেয়। পুলিশ অসহিষ্ণু হলেই তাদের সঙ্গে ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের সঙ্গে দলীয ক্যাডাররাও যোগ দেয়। তখন পুলিশ দলীয় কর্মীর ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়ে। কথায় আছে লেবু বেশি চিপলে তেঁতো হয়ে যায়। পুলিশকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করলেও বেশি চেপা লেবুর মতো অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা আছে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘোষণা করেছেন, জামায়াত-শিবিরকে আর কোনো কর্মসূচি তিনি পালন করতে দেবেন না। তিনি জামায়াত শিবিরকে ঠেঙ্গাবার জন্য ছাত্রলীগ যুবলীগকেও হুকুম দিয়েছেন। ‘উজিরে খামাখা’ হিসেবে পরিচিত দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, জামায়াত কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, অতএব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রীরা হয়তো ভুলে গেছেন, তাদের বহু আগেই এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তারপরও জামায়াত-শিবির তাদের কর্মসূচি পালন করছে। শীর্ষ নয়জন নেতা জেলে, ভারপ্রাপ্ত, দায়িত্বপ্রাপ্তদের ঘাড়ে ঝুলছে হুলিয়া, কেন্দ্রীয় ও মহানগরী অফিসে বসতে পারছেন না নেতারা, চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে দেশজুড়ে কিন্তু তারপরও জামায়াত-শিবির রাজপথে আছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক আচরণ সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বাড়ায়। কারণ রাজনৈতিক দল মানুষের প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো একজনের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ করলে অন্যদের বিবেক জেগে ওঠে। এমন জেগে ওঠাদের সংখ্যা যখন বেড়ে যায়, তখনই সরকারের ব্যারোমিটারের পারদ নিচে নামতে থাকে। সরকারের উচিত, সময় থাকতে এই সত্য উপলব্ধি করা। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা, দলের মিছিল-মিটিং ভাঙা, অফিসে তালা লাগানো গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পোষা পুলিশ বাহিনীর কাজ নয়। অথচ চার বছরের বেশি সময় আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের আদেশে দেশের পুলিশ বাহিনী এ কাজেই ব্যস্ত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, জনগণের দাবি, চাওয়া-পাওয়ার কথা তাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তুলে ধরে। সরকারের গণবিরোধী, স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ করে গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায়। এজন্য তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। শুরু করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। পৃথিবীতে যত অপরাধ আছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ। এত বড় অপরাধের প্রতিবাদ করা বিরোধী দল, মানবাধিকার সংস্থা, সংবাদ মাধ্যম, বুদ্ধিজীবী সমাজের দায়িত্ব। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলা না গেলেও সফল হয়েছি বলারও সুযোগ কি আছে?
hiharun@hotmail.com
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যখন থাকে তখন তারা মনে করে আন্দোলন-বিক্ষোভ, সংগ্রামের অর্থ হলো সংঘর্ষ, গাড়ি পোড়ানো, হরতাল-অবরোধ। বিগত ২০০৬ সালের অক্টোবরেও দলটি চারদলীয় জোট সরকারের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর বাধাগ্রস্ত করে ১/১১-এর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তাদের সহিংস আন্দোলনের ফসলই ছিল সেনাসমর্থিত মইন উ ও ফখরুদ্দীনের সরকার। এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়। তারপরও থেমে নেই তাদের সহিংস ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড।
গত ৬ ও ৭ নভেম্বর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রক্তাক্ত পুলিশ সদস্যের ছবি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর ওপর পুলিশের অ্যাকশন এবং পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সেই অস্ত্র নিয়ে পুলিশকে মারার দৃশ্য দেখে কষ্ট পেয়েছি। যাদের মারা হচ্ছে তারা কারা এবং যারা মারছে তারাই বা কারা? সবাই তো এদেশের নাগরিক, তারপরও কেন একজন অপরজনকে এভাবে পশুর মতো পেটাচ্ছে? কেন সভ্য দুনিয়ায় বাস করেও আমরা এত অসভ্য? কারণ আসলে ক্ষমতা। ক্ষমতার জন্যই এ অসভ্যতা। অথচ এমন অসভ্যতা বন্ধ করতেই তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল। ক্ষমতা দখলের জন্য কোনো হানাহানি নয়, জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। জোর যার মুলুক তার—এ জঙ্গি দর্শনের মৃত্যু হলেই শুধু তা সম্ভব। না হলে এর ভয়াবহ বিস্তার গোটা জাতিকে ধ্বংস করবে। প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ এর অবসান চায়। কিন্তু সেই অবসান কাউকে নির্মূল করে নয়, কারও গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণ করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মন্ত্র্রীরা জামায়াত-শিবিরের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় জামায়াত-শিবির কোনো মিছিল-মিটিং নয় পুলিশকে পেটানোর জন্যই রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু সচেতন দেশবাসী জানেন, গত ৪ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবেই তারা মিছিল বের করেছিল। পুলিশকে পেটানোর জন্য নয়। এ সরকারের আমলে এর আগে তারা যতবার মাঠে নেমেছে, দু’একবার ছাড়া পুলিশের ব্যারিকেড না ভেঙে বরং রণে ভঙ্গ দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাদের ছাড়েনি। কোনো মামলা ছাড়াও ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে, জেলের ভাত খাইয়েছে। ৪ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্যাতনে পরিসংখ্যান তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, সরকারের ৪৬ মাসে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রায় ১৮ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। আসামি করা হয়েছে দুই লাখ নেতাকর্মীকে। মহিলা কর্মীরাও রেহাই পাননি। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন তো করা হচ্ছেই। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শতাধিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়েছে। খুন হয়েছেন জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ১০ জন নেতা-কর্মী। জামায়াত নেতা আরও বলেছেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করছে। পুলিশকে রাষ্ট্রীয় লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণত গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের পথে বাধা এলে বিক্ষোভ কর্মসূচি সহিংস রূপ নেয়। পুলিশ অসহিষ্ণু হলেই তাদের সঙ্গে ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের সঙ্গে দলীয ক্যাডাররাও যোগ দেয়। তখন পুলিশ দলীয় কর্মীর ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়ে। কথায় আছে লেবু বেশি চিপলে তেঁতো হয়ে যায়। পুলিশকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করলেও বেশি চেপা লেবুর মতো অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা আছে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘোষণা করেছেন, জামায়াত-শিবিরকে আর কোনো কর্মসূচি তিনি পালন করতে দেবেন না। তিনি জামায়াত শিবিরকে ঠেঙ্গাবার জন্য ছাত্রলীগ যুবলীগকেও হুকুম দিয়েছেন। ‘উজিরে খামাখা’ হিসেবে পরিচিত দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, জামায়াত কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, অতএব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রীরা হয়তো ভুলে গেছেন, তাদের বহু আগেই এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তারপরও জামায়াত-শিবির তাদের কর্মসূচি পালন করছে। শীর্ষ নয়জন নেতা জেলে, ভারপ্রাপ্ত, দায়িত্বপ্রাপ্তদের ঘাড়ে ঝুলছে হুলিয়া, কেন্দ্রীয় ও মহানগরী অফিসে বসতে পারছেন না নেতারা, চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে দেশজুড়ে কিন্তু তারপরও জামায়াত-শিবির রাজপথে আছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক আচরণ সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বাড়ায়। কারণ রাজনৈতিক দল মানুষের প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো একজনের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ করলে অন্যদের বিবেক জেগে ওঠে। এমন জেগে ওঠাদের সংখ্যা যখন বেড়ে যায়, তখনই সরকারের ব্যারোমিটারের পারদ নিচে নামতে থাকে। সরকারের উচিত, সময় থাকতে এই সত্য উপলব্ধি করা। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা, দলের মিছিল-মিটিং ভাঙা, অফিসে তালা লাগানো গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পোষা পুলিশ বাহিনীর কাজ নয়। অথচ চার বছরের বেশি সময় আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের আদেশে দেশের পুলিশ বাহিনী এ কাজেই ব্যস্ত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, জনগণের দাবি, চাওয়া-পাওয়ার কথা তাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তুলে ধরে। সরকারের গণবিরোধী, স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ করে গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায়। এজন্য তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার করে। শুরু করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। পৃথিবীতে যত অপরাধ আছে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ। এত বড় অপরাধের প্রতিবাদ করা বিরোধী দল, মানবাধিকার সংস্থা, সংবাদ মাধ্যম, বুদ্ধিজীবী সমাজের দায়িত্ব। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলা না গেলেও সফল হয়েছি বলারও সুযোগ কি আছে?
hiharun@hotmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন