এ দায়িত্বহীনতার অবসান প্রয়োজন
কয়েক দিন ধরে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কথাবার্তায় অসংলগ্ন ও দায়িত্বহীন মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ড. ইউনূসের কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে না। ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংককে নিজের ব্যাংক মনে করেন। তার প্রোপাগান্ডা মেশিনারি বড় শক্তিশালী। সরকারের ২ নম্বর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উসকানিতে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব করছে। উসকানিদাতাদেরও উৎখাত করতে হবে। অন্য দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের গ্রেফতারের অধিকার রয়েছে বলে উল্লেখ করে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর এক দিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, দেখামাত্র জামায়াত-শিবিরের লোকদের প্রতিহত করা যুবলীগের কাজ নয়। আপনার কাজ আপনি করেন। জামায়াত-শিবির আপনি খোঁজেন। যদি না পারেন তাহলে ওই আইজি ডিআইজি এসপিকে ধরব। লাঠিপেটা করব।
সরকারের দায়িত্ববান তিন মন্ত্রী ও যুবলীগপ্রধানের বক্তব্য দেশের মানুষকে আতঙ্কিত করতে পারে। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রীকে এ ভাষায় কথা বলতে আগে শোনা যায়নি। তিনি নিজেও একসময় গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। ড. ইউনূস বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশীদের নিষেধ করেছেনÑ এমন মন্তব্য পৃথিবীর কোথাও প্রকাশিত হয়নি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ রকম কোনো ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যাংকটির ব্যাপারে তার বক্তব্য হলোÑ গ্রামীণ ব্যাংক এত দিন যেভাবে চলছে সেভাবে চলুক। এর ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ দরিদ্র মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিকে ধ্বংস করবে। ড. ইউনূস ভিয়েনায় যখন চতুর্থ বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনে ব্যাপক কর্মসংস্থানের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনা করছিলেন, তখন তার ইমেজকে মাটিতে মিশিয়ে দিতেই যেন কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি দেশে যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানা কথা বলছেন। এ ধরনের কথা বলে তারা ড. ইউনূসের যত না ক্ষতি করছেন, তার চেয়ে বেশি দেশকে ছোট করছেন।
এলজিআরডি মন্ত্রী জামায়াত-শিবিরের কথিত তাণ্ডবের উসকানিদাতা বিরোধীদলীয় নেতা বলে মন্তব্য করেছেন। আরেক মন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সাথে উসকানিদাতাদেরও উৎখাত করা হবে। দায়িত্ববান মন্ত্রীদের এ ধরনের মন্তব্যে বিরোধী দলবিহীন একদলীয় সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশঙ্কা চার দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে আরেক ধাপ যেন এগিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সরকার-সমর্থকদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা কোন আইনবলে দেয়ার কথা বলেছেন তা বোধগম্য নয়। তার এ ধরনের বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত ও শিবিরের কার্যালয়ে সরকারি দলের মাস্তানদের লুটপাটের হিড়িক পড়ে গেছে। দেশের মানুষকে আইন হাতে তুলে নেয়ার এই উসকানি দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যুবলীগ সভাপতির আইজি ডিআইজি এসপিকে লাঠিপেটা করার ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহায়ত্ত কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা অনুমান করা যায়।
আমরা মনে করি, সঙ্কীর্ণ রাজনীতির স্বার্থের চেয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থ যে অনেক ব্যাপক সে বিষয়টি সরকারের দায়িত্ববান লোকদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আইনকে নিজের হাতে তুলে নেয়ার উসকানি যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই দেন আর উসকানিদাতা বলে উল্লেখ করে বিরোধী উৎখাতের ঘোষণা সরকারের দুই নম্বর ব্যক্তি দেন, তাহলে দেশের মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? বিষয়টি উপলব্ধি করে সঙ্ঘাত সহিংসতার বিস্তৃতি ঘটে এবং বিশ্বে দেশের একঘরে হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়Ñ এমন মন্তব্য ও কাজ থেকে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরত থাকা উচিত ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন