ড. ফজলুল হক সৈকত
বাংলাদেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের ধারায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর একটি অনিবার্য তারিখ। অবশ্য-স্মরণীয় দিন। আর ওই একই ইতিহাসের সোনালি পাতায় জিয়াউর রহমান একটি অমিত সাহস ও অসীম সম্ভাবনার নাম। তিনি সেদিন দেশবাসীকে দুঃস্বপ্নের জাল থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য মহানায়কের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ যখন একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনেতা খুঁজছিল, ঠিক তখনই এগিয়ে যাওয়ার মহামন্ত্র সঙ্গে নিয়ে সামনে এসে হাজির হলেন তত্কালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি চলমান অস্থির রাজনীতিকে সুস্থিত সংহতি প্রদান করতে চেয়েছিলেন। এই দিনটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে বিএনপি; জাসদসহ অন্য কিছু দল ও সংগঠন পালন করে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবসরূপে। প্রকৃতঅর্থে তখনকার সময়টি ছিল বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক সঙ্কটের সবচেয়ে ভয়াবহ কাল। কাজেই পরিবর্তনটাও ছিল যুগান্তকারী। সে বছর ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে একদলীয় বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ নিহত হন। অতঃপর তার সহকর্মী ও নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রীদের নিয়েই নতুন সরকার গঠন করেছিলেন। নভেম্বরের ৩ তারিখে জাতীয় ৪ নেতাকে জেলে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়। ওইদিনই ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তার কয়েকজন সাথী সেনা অফিসারকে নিয়ে অভ্যুত্থান ঘটান এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দী করেন। অতঃপর খালেদ নিজেই সেনাপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু ওই অভ্যুত্থান, অল্প সময়ের মধ্যেই দেশকে ফের বাকশালী শাসনে ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্ররূপে পরিচিতি লাভ করে। ফলে সেনাবাহিনী এবং জনগণ মোশাররফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ গড়ে তোলে। ৬ নভেম্বর রাত থেকে ঐক্যবদ্ধ সিপাহী-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয়। এই বিপ্লবে কয়েকজন সহযোগীসহ ক্ষমতালোভী মোশাররফ নিহত হন। তখন চলমান পরিস্থিতিতে সিপাহী-জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে বীরত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে সামরিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন জেনারেল জিয়া। তার প্রতি সেনা সদস্যদের অসীম আস্থা এবং জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। সেনাসদস্য এবং জনগণের প্রতিও জিয়াউর রহমান ছিলেন প্রবল আন্তরিক। তাই বেদনার মহাকালপর্ব থেকে আত্মিক মহত্ত্বের ওপর ভর করে জাতিকে সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্য জিয়া আজও স্মরণীয় নাম।
১৯৭১ সালের মার্চে শ্রুত তত্কালীন মেজর জিয়ার কণ্ঠ যেমন এদেশবাসী আজও ভোলেনি, তেমনি ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের উত্তাল প্রহরে জাতির সঙ্কটকালের নেতা জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব স্মরণ করা হয় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। তার অবস্থান ও ভূমিকা সেদিন বাংলাদেশের মানুষের মনে ও জীবনে আস্থা, স্বস্তি এবং সাহস জুগিয়েছে। তখন দেশে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল, অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক ছিল এবং সর্বোপরি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা ছিল প্রবলভাবে সক্রিয়। অদম্য সাহস, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার ওপর ভর করে জিয়াউর রহমান এসব কঠিন বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র, মানুষের চিন্তা করার ও কথা বলার স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যখন মারাত্মকভাবে বিপন্ন, জাতীয় ঐক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন ধ্বংসের মুখোমুখি, তখন ৭ নভেম্বরে জিয়ার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে দেশবাসী মুক্তি লাভ করেছিল। দেশবাসী আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। কৃষি ও শিল্পোত্পাদন বেড়েছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল, দুর্নীতি ও অনাচার কমেছিল এবং মানুষ তার মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ ও সাফল্যের বিচারে ৭ নভেম্বরে জিয়ার আবির্ভাব একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির প্রধান অবদান ও অর্জন। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ‘বাকশাল’ নামে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল রেখে সব দলকে নিষিদ্ধ করেছিল এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বাকশালের চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মুজিব। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অসামরিক একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরশাসন। জাতি হয়ে পড়েছিল অবরুদ্ধ ও জিম্মি। পরবর্তীকালে স্বল্পকালের শাসকরাও স্বৈরশাসনের পথই পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এবং ঘটনাক্রমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে অবতীর্ণ জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের উদার দরোজা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। জিম্মিদশা থেকে জাতিকে কাঙ্ক্ষিত মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ প্রদান করেছিলেন। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করাটাও ছিল জিয়াউর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কার্যত এসবই ছিল ৭ নভেম্বরের সাফল্যের ফলাফল।
১৯৭৫-এর উত্তাল নভেম্বরে বিপ্লবের বার্তা প্রচারিত হয়েছিল সৈনিকদের মধ্য থেকে। পরে তা জনতার কাছে পৌঁছে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলে। এর লক্ষ্য ছিল স্বপ্ন-স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। পঁচাত্তরের অব্যবহিত পূর্বে এবং অনতি-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সামাজিক জীবন মিথ্যার মাটিতে চাপা পড়েছিল। তখনকার তরুণ প্রজন্মের জন্য সময়টা ছিল একটা ভয়াবহ অনিশ্চয়তার কাল। ফ্যাসিবাদ ও অসুস্থ রাজনীতির তোড়ে ভেসে যাচ্ছিল তাদের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টার সব আয়োজন। এই সত্য ও ইতিহাসটুকু যেন বর্তমান প্রজন্ম ভুলে না যায়।
লেখক : সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
১৯৭১ সালের মার্চে শ্রুত তত্কালীন মেজর জিয়ার কণ্ঠ যেমন এদেশবাসী আজও ভোলেনি, তেমনি ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের উত্তাল প্রহরে জাতির সঙ্কটকালের নেতা জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব স্মরণ করা হয় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। তার অবস্থান ও ভূমিকা সেদিন বাংলাদেশের মানুষের মনে ও জীবনে আস্থা, স্বস্তি এবং সাহস জুগিয়েছে। তখন দেশে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল, অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক ছিল এবং সর্বোপরি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা ছিল প্রবলভাবে সক্রিয়। অদম্য সাহস, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার ওপর ভর করে জিয়াউর রহমান এসব কঠিন বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র, মানুষের চিন্তা করার ও কথা বলার স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যখন মারাত্মকভাবে বিপন্ন, জাতীয় ঐক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন ধ্বংসের মুখোমুখি, তখন ৭ নভেম্বরে জিয়ার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে দেশবাসী মুক্তি লাভ করেছিল। দেশবাসী আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। কৃষি ও শিল্পোত্পাদন বেড়েছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল, দুর্নীতি ও অনাচার কমেছিল এবং মানুষ তার মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ ও সাফল্যের বিচারে ৭ নভেম্বরে জিয়ার আবির্ভাব একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির প্রধান অবদান ও অর্জন। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ‘বাকশাল’ নামে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল রেখে সব দলকে নিষিদ্ধ করেছিল এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বাকশালের চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মুজিব। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অসামরিক একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরশাসন। জাতি হয়ে পড়েছিল অবরুদ্ধ ও জিম্মি। পরবর্তীকালে স্বল্পকালের শাসকরাও স্বৈরশাসনের পথই পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এবং ঘটনাক্রমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে অবতীর্ণ জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের উদার দরোজা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। জিম্মিদশা থেকে জাতিকে কাঙ্ক্ষিত মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ প্রদান করেছিলেন। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করাটাও ছিল জিয়াউর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কার্যত এসবই ছিল ৭ নভেম্বরের সাফল্যের ফলাফল।
১৯৭৫-এর উত্তাল নভেম্বরে বিপ্লবের বার্তা প্রচারিত হয়েছিল সৈনিকদের মধ্য থেকে। পরে তা জনতার কাছে পৌঁছে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলে। এর লক্ষ্য ছিল স্বপ্ন-স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। পঁচাত্তরের অব্যবহিত পূর্বে এবং অনতি-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সামাজিক জীবন মিথ্যার মাটিতে চাপা পড়েছিল। তখনকার তরুণ প্রজন্মের জন্য সময়টা ছিল একটা ভয়াবহ অনিশ্চয়তার কাল। ফ্যাসিবাদ ও অসুস্থ রাজনীতির তোড়ে ভেসে যাচ্ছিল তাদের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টার সব আয়োজন। এই সত্য ও ইতিহাসটুকু যেন বর্তমান প্রজন্ম ভুলে না যায়।
লেখক : সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন