তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান এখনও বিপরীত মেরুতে। এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করেই নির্ধারিত হবে কোন দিকে মোড় নেবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কাজেই বিষয়টির আশু নিষ্পত্তি জরুরি। বিরোধী দল পূর্বাপর বলে আসছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনো সুরাহা তারা মেনে নেবে না। এ ব্যাপারে তাদের আন্দোলনও অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার বিহিত করে তাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। এই দ্বিমুখী অবস্থানের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে দেশের বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ উদ্ভূত সঙ্কট সমাধানের জন্য অর্থাত্ আন্দোলনের মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিচ্ছেন। অনেকে আবার সমস্যাটির সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছেন। এ নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে, কিন্তু মীমাংসার কোনো স্থির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না এখনও।
সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের উদ্যোগে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বক্তারা যে মতামত দিয়েছেন তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে—যে নামেই ডাকা হোক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার পরিবেশ দেশে নেই। এই মতামতের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে—১৯৯৬ সালে যে প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল, এখনও সেই অবস্থাই বিরাজমান। যেহেতু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, সেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। সোজা কথায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তাছাড়া আজ যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে মত দিচ্ছেন, ’৯৬ সালে তারাই এ ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। সেকথা আমলে না এনে সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার নির্বাচন করবে না, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সে তো সবারই জানা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কার অধীনে থাকবে? যদি সরকারের ফর্মুলা অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কমিশন কাজ করে তাহলেও সঙ্কট কাটবে না। কেননা নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। তাহলে কোন্ অর্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্দলীয় বলা যাবে? একথার সদুত্তর হচ্ছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকারই হোক কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারই হোক, তা কোনোক্রমেই ক্ষমতাসীন সরকারের আওতায় থাকবে না। সরকার থাকবে, সংসদও থাকবে—এটা সম্ভব নয়।
আলোচ্য সেমিনারে বক্তাদের আলোচনায় আরও একটি গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে। তা হলো, সরকার একতরফাভাবে কোনো রাজনৈতিক সমাধান না করেই আদালতের কাঁধে ভর করে সংবিধান সংশোধন করেছে। কিন্তু সমস্যার মেঘ কাটেনি বরং আরও ঘনীভূত আকার ধারণ করেছে। এ থেকে প্রমাণ হয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সব সময় সংবিধান অনুসরণ করে অগ্রসর হয় না। সবাই জানেন, সংবিধান মেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্ভব ঘটেনি। এটি ছিল একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক চুক্তি। এর সঙ্গে সংবিধানকে জড়িয়ে ফেলা যে ঠিক হবে না— তা তো ’৯৬ সালেই প্রমাণ হয়েছে। তখন বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের বাইরে একচুলও নড়া যাবে না; কিন্তু শেষ পর্যন্ত নড়তে হয়েছিল। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে তিন-তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। তাহলে এখন প্রধানমন্ত্রী সংবিধান অনুযায়ী সব হবে—এ সিদ্ধান্তে অনড় থেকে স্ববিরোধিতার আশ্রয় নিচ্ছেন কেন?
আসলে বিষয়টিকে খণ্ডিতভাবে দেখা ঠিক নয়। সার্বিক বিবেচনায় সর্বসম্মতিক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে তাকে অনির্বাচিত সরকার বলা যেতে পারে, কিন্তু অগণতান্ত্রিক বলার কোনোই হেতু নেই। আমরা দেখেছি, মানুষ এ পদ্ধতিকে সমর্থন করে, এখনও করছে। কাজেই মানুষের আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ পেলে সংবিধান কোনো বাধা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নির্বাচনের ব্যাপারে তিনটি বিশ্বজনীন গণতান্ত্রিক শর্ত রয়েছে—অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। এই তিন শর্ত পূরণে সন্দেহ-সংশয় বিদ্যমান থাকলে নির্বাচনই প্রহসনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার মুখে পড়ে। বাংলাদেশে সেই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। সরকার খাড়া রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সিদ্ধান্ত সাংবিধানিকভাবে নিয়েছে সরকার, তাতে আলোচ্য তিন শর্ত পূরণ হবে না— এমনই মনে করছে বিরোধী দল। সব কথার শেষ কথা হলো, নাম কোনো সমস্যা নয়, তত্ত্বাবধায়কের বদলে তা অন্তর্বর্তীকালীন হতেই পারে, এর কাঠামোগত অদল-বদল হতে পারে, কিন্তু নির্দলীয় হতে হবে। সে সুযোগ সুপ্রিমকোর্টের রায়েও রয়েছে। বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ অবস্থায় সরকার আইন বা সংবিধানের দোহাই পেড়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করছে বলেই মনে হয়। তার সব লক্ষণই এখন বিদ্যমান। এ অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সরকার কি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের হিসেব কষে এগোচ্ছে? এদিকে বিরোধী দল আন্দোলনের পথ ছাড়েনি। এই আন্দোলনের পথকে সঠিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। তারা বলছেন, সংবিধান মেনে সব সময় সবকিছু চলে না। সংবিধান মেনে দেশ স্বাধীন হয়নি। আওয়ামী লীগ সংবিধানের দাবি অগ্রাহ্য করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অদায় করেছিল। অর্থাত্ সংবিধান সময়ের প্রয়োজনে, গণদাবির সপক্ষে থেকে পরিবর্তন হতে পারে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে তার ঢের নজির রয়েছে।
আমরা মনে করি, সরকার চাইলে রাজপথের আন্দোলন আলোচনার টেবিলে গুছিয়ে আনতে পারে। তবে আলোচনার নামে কালক্ষেপণের কোনো অবকাশ নেই। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার সময় এখনই। নইলে জাতি বিভ্রান্ত হতে পারে, হুমকির মুখে পড়তে পারে গণতন্ত্র।
সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের উদ্যোগে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বক্তারা যে মতামত দিয়েছেন তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে—যে নামেই ডাকা হোক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার পরিবেশ দেশে নেই। এই মতামতের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে—১৯৯৬ সালে যে প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল, এখনও সেই অবস্থাই বিরাজমান। যেহেতু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, সেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। সোজা কথায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তাছাড়া আজ যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে মত দিচ্ছেন, ’৯৬ সালে তারাই এ ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। সেকথা আমলে না এনে সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার নির্বাচন করবে না, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সে তো সবারই জানা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কার অধীনে থাকবে? যদি সরকারের ফর্মুলা অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কমিশন কাজ করে তাহলেও সঙ্কট কাটবে না। কেননা নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। তাহলে কোন্ অর্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্দলীয় বলা যাবে? একথার সদুত্তর হচ্ছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকারই হোক কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারই হোক, তা কোনোক্রমেই ক্ষমতাসীন সরকারের আওতায় থাকবে না। সরকার থাকবে, সংসদও থাকবে—এটা সম্ভব নয়।
আলোচ্য সেমিনারে বক্তাদের আলোচনায় আরও একটি গুরুতর প্রশ্ন উঠে এসেছে। তা হলো, সরকার একতরফাভাবে কোনো রাজনৈতিক সমাধান না করেই আদালতের কাঁধে ভর করে সংবিধান সংশোধন করেছে। কিন্তু সমস্যার মেঘ কাটেনি বরং আরও ঘনীভূত আকার ধারণ করেছে। এ থেকে প্রমাণ হয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সব সময় সংবিধান অনুসরণ করে অগ্রসর হয় না। সবাই জানেন, সংবিধান মেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্ভব ঘটেনি। এটি ছিল একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক চুক্তি। এর সঙ্গে সংবিধানকে জড়িয়ে ফেলা যে ঠিক হবে না— তা তো ’৯৬ সালেই প্রমাণ হয়েছে। তখন বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের বাইরে একচুলও নড়া যাবে না; কিন্তু শেষ পর্যন্ত নড়তে হয়েছিল। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে তিন-তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। তাহলে এখন প্রধানমন্ত্রী সংবিধান অনুযায়ী সব হবে—এ সিদ্ধান্তে অনড় থেকে স্ববিরোধিতার আশ্রয় নিচ্ছেন কেন?
আসলে বিষয়টিকে খণ্ডিতভাবে দেখা ঠিক নয়। সার্বিক বিবেচনায় সর্বসম্মতিক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে তাকে অনির্বাচিত সরকার বলা যেতে পারে, কিন্তু অগণতান্ত্রিক বলার কোনোই হেতু নেই। আমরা দেখেছি, মানুষ এ পদ্ধতিকে সমর্থন করে, এখনও করছে। কাজেই মানুষের আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ পেলে সংবিধান কোনো বাধা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নির্বাচনের ব্যাপারে তিনটি বিশ্বজনীন গণতান্ত্রিক শর্ত রয়েছে—অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। এই তিন শর্ত পূরণে সন্দেহ-সংশয় বিদ্যমান থাকলে নির্বাচনই প্রহসনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার মুখে পড়ে। বাংলাদেশে সেই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। সরকার খাড়া রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সিদ্ধান্ত সাংবিধানিকভাবে নিয়েছে সরকার, তাতে আলোচ্য তিন শর্ত পূরণ হবে না— এমনই মনে করছে বিরোধী দল। সব কথার শেষ কথা হলো, নাম কোনো সমস্যা নয়, তত্ত্বাবধায়কের বদলে তা অন্তর্বর্তীকালীন হতেই পারে, এর কাঠামোগত অদল-বদল হতে পারে, কিন্তু নির্দলীয় হতে হবে। সে সুযোগ সুপ্রিমকোর্টের রায়েও রয়েছে। বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ অবস্থায় সরকার আইন বা সংবিধানের দোহাই পেড়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করছে বলেই মনে হয়। তার সব লক্ষণই এখন বিদ্যমান। এ অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সরকার কি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের হিসেব কষে এগোচ্ছে? এদিকে বিরোধী দল আন্দোলনের পথ ছাড়েনি। এই আন্দোলনের পথকে সঠিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। তারা বলছেন, সংবিধান মেনে সব সময় সবকিছু চলে না। সংবিধান মেনে দেশ স্বাধীন হয়নি। আওয়ামী লীগ সংবিধানের দাবি অগ্রাহ্য করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অদায় করেছিল। অর্থাত্ সংবিধান সময়ের প্রয়োজনে, গণদাবির সপক্ষে থেকে পরিবর্তন হতে পারে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে তার ঢের নজির রয়েছে।
আমরা মনে করি, সরকার চাইলে রাজপথের আন্দোলন আলোচনার টেবিলে গুছিয়ে আনতে পারে। তবে আলোচনার নামে কালক্ষেপণের কোনো অবকাশ নেই। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার সময় এখনই। নইলে জাতি বিভ্রান্ত হতে পারে, হুমকির মুখে পড়তে পারে গণতন্ত্র।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন