মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১২

জেগে ওঠো জিয়া : আবার বলো ‘আমি জিয়া বলছি’


মনিরুজ্জামান মনির
‘জন্ম তোমার যুদ্ধে যাওয়ার, নেতা হওয়ার সিপাহি-জনতার’—জিয়াউর রহমান তোমাকে নিয়ে আমার লেখা এই গানের কলিগুলো যথেষ্ট নয় তোমার প্রশংসা জ্ঞাপনের জন্য। তোমার উদ্দেশে যতবার কিছু বলা হয়, লেখা হয়—মনে হয় আরও কিছু শব্দ, আরও কিছু বাক্য, আরও কিছু উপমা বাকি রয়ে যায়। তুমি জনগণের সামনে দু’বার আবিষ্কৃত হয়েছিলে। প্রথম বার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে। সেদিন তোমার ভারী কণ্ঠের আওয়াজ আহ্বান করেছিল, প্রেরণা জুগিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশের মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়তে। দ্বিতীয় বার—স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশ যখন অভ্যন্তরীণ সামরিক সঙ্কটে পড়েছিল, তুমিও ছিলে নিজ গৃহে বন্দি। তখন সিপাহি-জনতার যৌথ প্রয়াসে তোমাকে করা হয় মুক্ত। শুধু তা-ই নয়, তোমাকে নির্বাচিত করা হয় দেশ ও জনগণের ত্রাণকর্তা হিসেবে। সে দিন ছিল ৭ নভেম্বর। আজ বছর ঘুরে যখন সেই ৭ নভেম্বর আসে, তখন নতুন করে আবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের অস্তিত্বের সঙ্কট উত্তরণের কাহিনী। আর সেই কাহিনীর নির্লোভ দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ছিলে তুমি। তুমি বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গন্তব্যে। তুমি তোমার দেশ-মাটির প্রতি অঙ্গীকার উচ্চারণ করেছিলে এইভাবে—‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ।’ তোমার সুগভীর দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি অনন্ত ভালোবাসাই তোমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার অন্যতম প্রধান কারণ বলা যায়। তুমি যেন নজরুলের উদ্দাম কবিতা। সবাইকে জাগরণী সঙ্গীত শুনিয়ে তুমি নিজে ঘুমিয়ে পড়লে চিরনিদ্রায়। তুমি জানতে না এই দেশ এই মাটির জন্য তোমার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ছিল। তুমি অতি অল্পসময়ের কর্মজীবনে নিজের গা থেকে সামরিক পোশাক পরিত্যাগ করে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে গণতন্ত্রের পোশাক পরলে, দেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক চর্চায় দিলে অবাধ অধিকার। প্রমাণ করলে তুমি, যারা নিয়মিত রাজনীতি করেন, তাদের চেয়ে তোমার রাজনৈতিক দর্শন আরও বেশি গ্রহণযোগ্য। সেই দর্শনের নাম ছিল দেশ ও জনসেবা। তুমি কি জান এই পারে তুমি ঘুমিয়ে আর অন্য পারে যেখানে পার্লামেন্ট ভবন এবং তার বিস্তর সবুজ ঘাসের আঙিনা আর মধ্যখানে স্থির আবহমান যেন জনতার অশ্রুতে গড়া লেক, সেখানে কৃত্রিম কারাগার গঠন করে সামরিক প্লাস বেসামরিক মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাজতবাসে রেখেছিল বেগম জিয়াকে অনেকদিন। বর্তমান আওয়ামী সরকার, জনগণ যাকে বিগত মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের ধারাবাহিক প্রতিনিধি বলে মনে করে, ওরাও রেহাই দিচ্ছে না তোমার পরিবারকে। নতুন নতুন মামলা দিয়ে ব্যতিব্যস্ত রাখছে বেগম জিয়া এবং তোমার দুই সন্তানকে। সেনাজীবনে রাষ্ট্রপতিজীবনে দেশের সার্বভৌম-স্বাধীনতা রক্ষা করা তোমার আমৃত্যু শপথ ছিল। সেই সার্বভৌমত্ব-স্বাধীনতা এখন স্বেচ্ছায় বিপন্ন করছে বর্তমান সরকার। প্রতিবেশী দেশকে স্থলপথে, জলপথে ট্রানজিটের নামে দিচ্ছে করিডোর, বিনা শুল্কে ইজারা দিচ্ছে বন্দর, যদিও তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যা আমরা পাচ্ছি না। উপরন্তু সিলেট বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর উজান থেকে পানি প্রত্যাহারের লক্ষ্যে টিপাইমুখ বাঁধ দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশ। এটা কি বন্ধুত্বের বিনিময় অনুদান। এবারও আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যেখানে-সেখানে যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু’ বা ‘শেখ হাসিনা’ শিরোনাম জুড়ে দেয়া হয়েছে, আর অধিকাংশ তোমাদের অবদান থেকে তোমার ও বেগম জিয়ার নাম মুছে বা তুলে ফেলা হয়েছে।
সর্বশেষ অপকর্মটি ওরা করেছে তোমার সৌজন্যে জাপান সরকারের অনুদানের অর্থায়নে নির্মিত জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে ওরা এত নির্লজ্জ ও বেপরোয়া যে সারা দেশের মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ উপেক্ষা করেছে। এতে নাকি বাংলাদেশ সরকারের ১২ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। এই অহেতুক বিফলে যাওয়া নিজস্ব অর্থ দিয়ে হয়তো বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেত। তোমার দীর্ঘ সময়ের স্মৃতিঘেরা ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বেগম জিয়াকে উত্খাত করে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। একবার ওরা ভাবল না মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তুমি বীর উত্তম খেতাব পেয়েছিলে। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি ছিলে। বেগম জিয়া এদেশের দু’বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ওরা সবই পারে ক্ষমতায় থাকার জন্য বা ক্ষমতায় বসার জন্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রথম বার স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতীয় সামরিক সঙ্কটে, দ্বিতীয় বার যেভাবে তুমি আবিষ্কৃত হয়েছিলে, ঠিক তুমি সেভাবে তৃতীয় বার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটে আবিষ্কৃত হও; জেগে ওঠো জিয়া, আবার বলো—‘আমি জিয়া বলছি।’
monirlyric@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads