সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১২

ঘাটাইল উপনির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি : চূড়ান্ত পতনের পূর্বলক্ষ্মণ



আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. মতিউর রহমানের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের রোববার অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে নৌকার ভরাডুবিতে অবাক হওয়ার মতো মানুষ খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করায় ভোটের উত্তাপ ছিল না বললেই চলে। তিনজন প্রার্থীর মধ্যে দু’জন আওয়ামী লীগের, একজন দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত, অপরজন বিদ্রোহী। তৃতীয় প্রার্থী ছিলেন এরশাদের জাতীয় পার্টির। এক কথায় এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মহাজোটের বলয়ের মধ্যে। সেখানেও নৌকা ডুবে যাওয়া যে রোধ করা গেল না তাতে বোঝা যায় আওয়ামী লীগের জনসমর্থনহীনতার ফাটলটা কত চওড়া হয়ে উঠছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা আনারস প্রতীক নিয়ে ৯৭,৮০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শহীদুল ইসলাম লেবু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪,৫৩১ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১১,৬৮৪ ভোট। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭১ হাজার ৩২৯ জন। ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩২টি। মিডিয়ার খবর হলো প্রায় সব ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা। ভোট দেয়ার জন্য ধরতে গেলে কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। দু’-একটি ভোটকেন্দ্রে কয়েকজন ভোটারের জটলা দেখা গেলেও সংখ্যায় তারা ১৫/২০ জনের বেশি ছিলেন না। এ বাস্তবতায় লক্ষাধিক ভোট পড়ার তথ্য হজম করা কঠিন। তবে আওয়ামী শাসনামলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে একেবারে অবিশ্বাস্য ব্যাপারও সহ্য করা ছাড়া উপায় থাকে না। তবে সুযোগ এলে যে সাধারণ মানুষ জবাব দিতে ছাড়ে না, ঘাটাইলে যারা ভোট দিয়েছেন তারা নৌকার তলা ফুটো করে তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী হেরেছেন এবং যে বিদ্রোহী প্রার্থী জিতেছেন, নেতিবাচক ভাবমূর্তির পরিচিতিতে এলাকায় অবস্থানগতভাবে কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। তারপরও ভোটাররা তাদের বিবেচনায় কম মন্দ প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন বলে মনে হয়। বিশেষ করে মহাজোট সরকারের গত চার বছরের কীর্তিকলাপে নৌকা যেভাবে দুঃশাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে তাতে ভোটাররা যে এ প্রতীককে প্রত্যাখ্যান করেছেন সেটা অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়। বরং আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করায় অনেকের হাসি চাপা দায় হবে। দিনের পর দিন আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতের নানা খবর মিডিয়ায় আসছিল। তারপরও শেষ রক্ষা না হওয়ার কারণ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষেও পেশিশক্তি একেবারে দুর্বল ছিল না। আওয়ামী প্রার্থীর নির্বাচনে কারচুপি সংক্রান্ত অভিযোগ সত্য হলে বিরোধী দলের এ দাবিই প্রতিষ্ঠা লাভ করে যে, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ভোটাভুটির ফল লক্ষ্য করলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলে তাদের ভরাডুবি অনিবার্য জেনেই ক্ষমতাসীন সরকার দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা শুনলেই অস্থির হয়ে উঠছে। কিন্তু জনসমর্থনের ভিত সরে গেলে গদি যে শূন্যে ভাসমান থাকতে পারে না, ঘাটাইল আবার তা দেখিয়ে ছিল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads