আজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে প্রায় ৯৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন এই জাতীয় নেতা। ১৯২০-এর দশকে অবিভক্ত বাংলা ও আসাম প্রদেশে জমিদার-মহারাজা বিরোধী কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল। আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর চেষ্টাতেই বৃহত্তর সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের তথা বর্তমান বাংলাদেশের অংশ হয়েছে। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দলটির সভাপতি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সাফল্যের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও পূর্ব পাকিস্তানে সরকার গঠন করেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পর শীর্ষ কয়েকজন নেতা প্রদেশের স্বার্থবিরোধী অবস্থানে চলে গেলে ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানানোর মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতামুখী স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে গঠন করেছেন নতুন দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। ১৯৬৯-এর যে গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তান সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন স্বীকার করতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে বাধ্য করেছিল, সে গণঅভ্যুত্থানে প্রধান নেতার ভূমিকা ছিল মওলানা ভাসানীর। এদেশেরই কোনো কোনো নেতার প্রশ্নসাপেক্ষ ভূমিকায় স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়লেও মওলানা ভাসানী সমগ্র প্রদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিলেন। স্বাধীনতামুখী সে অবস্থান থেকে জনগণকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর পর পাকিস্তান সরকার চরম উপেক্ষা দেখানো সত্ত্বেও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল যখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ নেতা মওলানা ভাসানী তখন সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় তিনি সরাসরি স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানের নির্বাচন বর্জন করে জোরদার করেছিলেন স্বাধীনতামুখী তত্পরতাকে। ১৯৭১ সালের মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে স্বাধীনতার আহ্বানমুখে সোচ্চার ভাসানী প্রদেশের নির্বাচিত প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করার পরিবর্তে তার উচিত বাংলার সংগ্রামী নেতার ভূমিকা পালন করা। এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেছিলেন, ২৩ মার্চ থেকে পূর্ব বাংলা স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। গণহত্যার অভিযান শুরু করার পর ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তিনি ভারতে চলে গিয়েছিলেন। ভারত বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিতি থাকায় ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকার তাকে নজরবন্দী অবস্থায় রেখেছিল। কিন্তু নিজের স্বাধীনতা খুইয়েও মওলানা ভাসানী স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের একাংশের স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্র নস্যাত্ করে দেয়া ছিল তাঁর বিশেষ অবদান। মুজিবনগর সরকার গঠিত সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হিসেবেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।
স্বাধীনতার পরও তার সে দেশপ্রেমিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের শোষণ, লুণ্ঠন ও ভারতমুখী নীতি ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তিনিই সবার আগে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ভারতের সম্প্রসারণবাদী কর্মকাণ্ড ও পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার থেকেছেন এবং মৃত্যুর মাত্র ছয় মাস আগে, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মূলত তার এ আন্দোলনের চাপেই ভারতকে প্রথমবারের মতো ফারাক্কা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কৃতজ্ঞতা জানানো দূরে থাকুক, অমন একজন সংগ্রামী জাতীয় নেতার নামও আজকাল যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হয় না। এমনকি সে দলগুলোও তার প্রতি সুবিচার করে না, মওলানা ভাসানী ছাড়া যাদের জন্ম ও বিকাশই সম্ভব হতো না। কোনো কোনো দলকে তো ১৯৭৫-পূর্ব ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে হোঁচটও খেতে হয়। সরকারের ‘সঠিক’ ইতিহাসেও স্থান দেয়া হচ্ছে না মওলানা ভাসানীকে। সরকার তার প্রতি বরং চরম অসম্মানই দেখিয়ে চলেছে। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হলো, মওলানা ভাসানী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমানেরও নেতা ছিলেন। দু’জনের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের মতো।
আমরা মনে করি, মজলুম জননেতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে তাকে প্রধান জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া দরকার। ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মওলানা ভাসানীর উদ্দেশে আমরা সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর পর পাকিস্তান সরকার চরম উপেক্ষা দেখানো সত্ত্বেও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল যখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ নেতা মওলানা ভাসানী তখন সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় তিনি সরাসরি স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানের নির্বাচন বর্জন করে জোরদার করেছিলেন স্বাধীনতামুখী তত্পরতাকে। ১৯৭১ সালের মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে স্বাধীনতার আহ্বানমুখে সোচ্চার ভাসানী প্রদেশের নির্বাচিত প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করার পরিবর্তে তার উচিত বাংলার সংগ্রামী নেতার ভূমিকা পালন করা। এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেছিলেন, ২৩ মার্চ থেকে পূর্ব বাংলা স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। গণহত্যার অভিযান শুরু করার পর ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তিনি ভারতে চলে গিয়েছিলেন। ভারত বিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিতি থাকায় ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকার তাকে নজরবন্দী অবস্থায় রেখেছিল। কিন্তু নিজের স্বাধীনতা খুইয়েও মওলানা ভাসানী স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের একাংশের স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্র নস্যাত্ করে দেয়া ছিল তাঁর বিশেষ অবদান। মুজিবনগর সরকার গঠিত সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হিসেবেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।
স্বাধীনতার পরও তার সে দেশপ্রেমিক ভূমিকা অব্যাহত ছিল। প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের শোষণ, লুণ্ঠন ও ভারতমুখী নীতি ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তিনিই সবার আগে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ভারতের সম্প্রসারণবাদী কর্মকাণ্ড ও পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার থেকেছেন এবং মৃত্যুর মাত্র ছয় মাস আগে, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মূলত তার এ আন্দোলনের চাপেই ভারতকে প্রথমবারের মতো ফারাক্কা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কৃতজ্ঞতা জানানো দূরে থাকুক, অমন একজন সংগ্রামী জাতীয় নেতার নামও আজকাল যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হয় না। এমনকি সে দলগুলোও তার প্রতি সুবিচার করে না, মওলানা ভাসানী ছাড়া যাদের জন্ম ও বিকাশই সম্ভব হতো না। কোনো কোনো দলকে তো ১৯৭৫-পূর্ব ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে হোঁচটও খেতে হয়। সরকারের ‘সঠিক’ ইতিহাসেও স্থান দেয়া হচ্ছে না মওলানা ভাসানীকে। সরকার তার প্রতি বরং চরম অসম্মানই দেখিয়ে চলেছে। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হলো, মওলানা ভাসানী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমানেরও নেতা ছিলেন। দু’জনের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের মতো।
আমরা মনে করি, মজলুম জননেতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে তাকে প্রধান জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া দরকার। ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মওলানা ভাসানীর উদ্দেশে আমরা সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন