শাহীন রেজা
লিখতে বসে একটা গল্পের কথা মনে পড়ল। নাহ্ এটাকে ঠিক গল্প বলা চলে না। গল্পের ছলে বলা একটি সত্য ঘটনা। দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় তখন জিয়াউর রহমান। কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক দেখা করতে গেছেন তার সঙ্গে। তিনি তাদের সঙ্গে আলাপচারিতার একপর্যায়ে একজন ভারতীয় লেখকের ওই সময়ে বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গ টেনে এনে বললেন, শুনতে পাচ্ছি এবং পত্রিকায় দেখছি প্রতিদিনই আপনারা তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন, দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন। আচ্ছা কলকাতায় গেলে সেখানকার কবি-সাহিত্যিকরাও আপনাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন? উত্তরে উপস্থিত কবি-লেখকরা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাতে শহীদ জিয়া মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘ওহ্ ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক’।
গল্পের ছলে এ সত্য ঘটনাটি আমাদের শুনিয়েছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি ফজল শাহাবুদ্দীন। আড্ডাবাজ হিসেবে খ্যাত এ কবি শুধু একজন কবিই নন, একজন প্রখ্যাত সম্পাদক এবং বিচিত্রা, নান্দনিক, চিত্রিতা’র মতো ঐতিহাসিক সব পত্রিকা বের হয়েছে তার হাত ধরে। আজ বেগম জিয়ার ভারত সফর এবং তা নিয়ে কতিপয় আওয়ামী মন্ত্রীর অযাচিত অকূটনৈতিক এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্যে গল্পটির কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ দলটি চিরকালই ‘ভারত-বান্ধব দল’ হিসেবে পরিচিত। ভারত আমাদের প্রেম-ভালোবাসা দিক বা না দিক, সীমান্তে যতই কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করুক, তালপট্টি-দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার সমস্যা যতই জিইয়ে রাখুক, সীমান্তে তাদের প্রহরীরা যতই এদেশের নিরীহ নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে মারুক—তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। ফারাক্কার মরণ বাঁধে বাংলাদেশ মরুভূমি হলে কিংবা ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলের আগ্রাসনে বর্তমান প্রজন্ম উচ্ছন্নে গেলেও তাদের মুখে ‘রা’ নেই। এ যেন সেই ‘ভেঙেছ কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না’র মতো অবস্থা। ভারত বন্ধুত্বের বদলে আমাদের যতই শোষণ করুক যতই আমাদের উপর প্রভুত্ব ফলাতে চাক তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। সবকিছু ছাড়িয়ে ওই দল এবং তাদের তল্পিবাহকদের মুখে শুধু একাত্তরের স্লোগান। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা করে কীভাবে আজন্ম কৃতজ্ঞ করে রেখেছে সেই গালগল্প। এক জনমের সহায়তার বিনিময়ে শত জনমের প্রভুত্ব—বাহ্ কী আশ্চর্য প্রতিদান!
আওয়ামী লীগ এবং তাদের পালিত বুদ্ধিজীবীদের কথা ও কর্ম দেখে শহীদ জিয়ার সেই ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের কথাটিই বারবার মনে পড়ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শহীদ জিয়ার পররাষ্ট্র নীতির প্রথম সবকটিই ছিল—‘আমরা প্রভু নয়, বন্ধু চাই’। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ’৬৫-এর প্রতিশোধ কিংবা নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি যে কারণেই হোক ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে মহান দায়িত্বটি পালন করেছিল তা আমরা যেমন ভুলে যেতে চাই না—তেমনি একাত্তর পরবর্তী সময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মগুলোকেও আমরা এড়িয়ে যেতে চাই না।
বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করে যদি প্রভুত্ব-বঞ্চনা এবং ক্রমাগত নিপীড়নের বিপরীতে ‘প্রকৃত বন্ধুত্ব’কে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে তো আওয়ামী লীগের খুশি হওয়ারই কথা। এতে করে অন্তত ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের গ্লানি থেকে এ দেশের মানুষগুলো বাঁচবে। কিন্তু তারা তা না করে যে ভাষায় কথা বলা শুরু করেছেন তাতে করে তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে এ জাতির একজন সন্তান হিসেবে আমাদের লজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে মনে হচ্ছে না। ‘প্রভুত্বের বদলে বন্ধুত্ব’—এই রীতিতে যদি ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে একাত্ম করা যায় তাহলে এ অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতার যে প্রাণবর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে তা এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর এর সুফল উন্নত দেশ ভারতের চেয়েও বেশি লাভ করবে উন্নয়নশীল দেশগুলো—যেমন বাংলাদেশ।
এ দেশের মানুষ ভারতকে ‘প্রভু’ নয়—একাত্তরের মতো ‘বন্ধু’ হিসেবে পাশে দেখতে চায়। আর এ মহান কর্মটি সাধন করতে পারে একমাত্র ‘ভারত’-ই। বেগম জিয়া যদি ভারতীয় নেতৃত্বের মধ্যে সেই বোধোদয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেন—তাহলে লাভ তো দু’দেশেরই। এতে আগবাড়িয়ে বাগড়া দেয়ার প্রয়োজনটা কী?
লেখক : কবি ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কবিতা সংসদ
shaheenrezapoet@yahoo.com
গল্পের ছলে এ সত্য ঘটনাটি আমাদের শুনিয়েছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি ফজল শাহাবুদ্দীন। আড্ডাবাজ হিসেবে খ্যাত এ কবি শুধু একজন কবিই নন, একজন প্রখ্যাত সম্পাদক এবং বিচিত্রা, নান্দনিক, চিত্রিতা’র মতো ঐতিহাসিক সব পত্রিকা বের হয়েছে তার হাত ধরে। আজ বেগম জিয়ার ভারত সফর এবং তা নিয়ে কতিপয় আওয়ামী মন্ত্রীর অযাচিত অকূটনৈতিক এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্যে গল্পটির কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ দলটি চিরকালই ‘ভারত-বান্ধব দল’ হিসেবে পরিচিত। ভারত আমাদের প্রেম-ভালোবাসা দিক বা না দিক, সীমান্তে যতই কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করুক, তালপট্টি-দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার সমস্যা যতই জিইয়ে রাখুক, সীমান্তে তাদের প্রহরীরা যতই এদেশের নিরীহ নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে মারুক—তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। ফারাক্কার মরণ বাঁধে বাংলাদেশ মরুভূমি হলে কিংবা ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলের আগ্রাসনে বর্তমান প্রজন্ম উচ্ছন্নে গেলেও তাদের মুখে ‘রা’ নেই। এ যেন সেই ‘ভেঙেছ কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না’র মতো অবস্থা। ভারত বন্ধুত্বের বদলে আমাদের যতই শোষণ করুক যতই আমাদের উপর প্রভুত্ব ফলাতে চাক তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। সবকিছু ছাড়িয়ে ওই দল এবং তাদের তল্পিবাহকদের মুখে শুধু একাত্তরের স্লোগান। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা করে কীভাবে আজন্ম কৃতজ্ঞ করে রেখেছে সেই গালগল্প। এক জনমের সহায়তার বিনিময়ে শত জনমের প্রভুত্ব—বাহ্ কী আশ্চর্য প্রতিদান!
আওয়ামী লীগ এবং তাদের পালিত বুদ্ধিজীবীদের কথা ও কর্ম দেখে শহীদ জিয়ার সেই ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের কথাটিই বারবার মনে পড়ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শহীদ জিয়ার পররাষ্ট্র নীতির প্রথম সবকটিই ছিল—‘আমরা প্রভু নয়, বন্ধু চাই’। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ’৬৫-এর প্রতিশোধ কিংবা নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি যে কারণেই হোক ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে মহান দায়িত্বটি পালন করেছিল তা আমরা যেমন ভুলে যেতে চাই না—তেমনি একাত্তর পরবর্তী সময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মগুলোকেও আমরা এড়িয়ে যেতে চাই না।
বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করে যদি প্রভুত্ব-বঞ্চনা এবং ক্রমাগত নিপীড়নের বিপরীতে ‘প্রকৃত বন্ধুত্ব’কে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে তো আওয়ামী লীগের খুশি হওয়ারই কথা। এতে করে অন্তত ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের গ্লানি থেকে এ দেশের মানুষগুলো বাঁচবে। কিন্তু তারা তা না করে যে ভাষায় কথা বলা শুরু করেছেন তাতে করে তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে এ জাতির একজন সন্তান হিসেবে আমাদের লজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে মনে হচ্ছে না। ‘প্রভুত্বের বদলে বন্ধুত্ব’—এই রীতিতে যদি ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে একাত্ম করা যায় তাহলে এ অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতার যে প্রাণবর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে তা এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর এর সুফল উন্নত দেশ ভারতের চেয়েও বেশি লাভ করবে উন্নয়নশীল দেশগুলো—যেমন বাংলাদেশ।
এ দেশের মানুষ ভারতকে ‘প্রভু’ নয়—একাত্তরের মতো ‘বন্ধু’ হিসেবে পাশে দেখতে চায়। আর এ মহান কর্মটি সাধন করতে পারে একমাত্র ‘ভারত’-ই। বেগম জিয়া যদি ভারতীয় নেতৃত্বের মধ্যে সেই বোধোদয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেন—তাহলে লাভ তো দু’দেশেরই। এতে আগবাড়িয়ে বাগড়া দেয়ার প্রয়োজনটা কী?
লেখক : কবি ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কবিতা সংসদ
shaheenrezapoet@yahoo.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন