শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১২

কী ঘটেছে সুখরঞ্জন বালীর নসিবে?


সেই সুখরঞ্জন বালীর কথা বলছি, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যাকে প্রভাবশালী মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছে, অর্থের লোভ দেখানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হয়ে এ ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। সত্য সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নির্ভীক ভূমিকা পালন করেছেন। এত কিছু করেও মিথ্যা বলতে রাজি করানো যায়নি তাকে। তিনি সত্য প্রকাশের জন্য সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু সত্য প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি গণতান্ত্রিক এ দেশে। গুম করা হলো প্রকাশ্যে, আদালতের সামনে থেকেই। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা আমরা জানতে পারিনি। আদালতের সামনে ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি’ সরকার পক্ষের এমন বক্তব্য দ্বারা বিরাট বিপদের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কেন গুম করা হলো সুখরঞ্জনকে? দোষ কী তার? তার ‘দোষ’ তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। তার ওপর আসামির পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। যে সময়ে গুম, খুন নিত্যদিনের ঘটনা; সেই সময় সরকার পক্ষের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়া তো বিষম ‘ঔদ্ধত্য’! সুতরাং শায়েস্তা করতেই হবে। তাই তিনি নিখোঁজ। তাকে তুলে নেয়া হলো রাজধানীতে দিবালোকে সবার সামনে থেকে। এর ছবি আদালতে দেয়া হয়েছে, কিন্তু সরকারপক্ষ তা অস্বীকার করেছে। এটা জনগণকে শঙ্কিত করে তুলেছে। হয়তো গুম করার পর তাকে চাপ দেয়া হয়েছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এবং ‘আসামিপক্ষ তাকে মৃত্যুর ভয় অথবা টাকার লোভ দেখিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে’Ñ এমন জবানবন্দী আদালতে দেয়ার জন্য। কিন্তু সত্য প্রকাশে আপসহীন সুখরঞ্জন হয়তো রাজি হননি। কিন্তু তার মাথার ওপর মহা বিপদ অপেক্ষা করছে। তিনি কখন ফিরবেন পরিজনের কাছে? আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন বালীকে জীবিত অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। এই মিথ্যাকবলিত সমাজে সুখরঞ্জনের মতো লোকদের খুবই প্রয়োজন। এরাই আমাদের সুপ্ত মনুষ্যত্বকে মাঝে মধ্যে জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু তাদের জন্য কথা বলবে কে? তারা তো গরিব, প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন। তারা কোনো দলের নেতা বা ক্যাডার নন। তাই তাদের পক্ষে বলার ও আন্দোলন করার কেউ নেই। সুখরঞ্জন গুম হওয়ার পর পত্রিকাগুলোও নীরব। বাঘ হত্যা করা হলে পত্রিকাতে বড় বড় প্রতিবেদন আসে। সম্পাদকীয়তে প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু সুখরঞ্জন একজন মানুষ। তাকে নজিরবিহীনভাবে অপহরণ করা হলো। অথচ মিডিয়ায় তাকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। তাকে হারিয়ে তার পরিবারের লোকেরা কী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন, সে খবরটাও জানতে পারলাম না। কিন্তু অর্থ আর প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে তিনি সাধারণ হলেও সততার দিক থেকে অসাধারণ। সৎ লোকই জাতির বড় সম্পদ। এ সম্পদ সংরক্ষণ ও সদ্ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্ষমতাসীনরা এসব লোককেই নির্যাতনের টার্গেট বানিয়েছে। এটা দেশের বিরাট দুর্ভাগ্য!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads