সৈয়দ আবদাল আহমদ
|
নিশ্চিন্তপুর এখন এক মৃত্যুপুরীর নাম। ঢাকার উপকণ্ঠ আশুলিয়ার এই নিশ্চিন্তপুরেই তোবা গ্রুপের গার্মেন্ট কারখানা তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের অবস্থান। আশুরার আগের দিন ২৪ নভেম্বর শনিবার রাতে এই কারখানায় ঘটে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, নির্মম এবং হৃদয়বিদারক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া আগুন জ্বলেছে রাতভর। এই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে শত প্রাণ। চোখের সামনে প্রিয়জনের করুণ পরিণতি দেখে সারারাত বিলাপ করেছেন কারখানার বাইরে থাকা স্বজনরা। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর আগুন নিভেছে সত্য, তবে অপেক্ষমাণ উদ্বিগ্ন স্বজনদের কান্না থামেনি। তারা পেয়েছেন আগুনে দগ্ধ ১০১ জন মানুষের পুড়ে যাওয়া মাংসপিণ্ড। সেখানে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন আরও ১০ জন। আগুনের পরদিন রোববার সকালে পুড়ে যাওয়া লাশগুলো এনে সারি সারি রাখা হয় স্কুলের বারান্দায়। এগুলোকে লাশ বললে ভুলই হবে। কারণ এগুলো কালো কুচকুচে কতগুলো মাংসপিণ্ড ছাড়া কিছুই ছিল না। সরকারের হিসাবে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১১ পোশাক শ্রমিক। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১২৪। লাশগুলোর মধ্যে ৫৮টি এমনভাবে পুড়েছে যে, সেগুলো শনাক্ত করারও কোনো উপায় ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়। আঞ্জুমান ৫২টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করেছে। যেসব লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে, সেগুলো দেয়া হয়েছে স্বজনদের।
ঘটনাস্থল তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানা সরেজমিন দেখে এসে একজন রিপোর্টারের বর্ণনা : ‘চারদিকে পোড়া মেশিন। কর্মঠ শ্রমিকের হাতের স্পর্শে নির্জীব যে মেশিন প্রাণের স্পন্দনে ছুটে চলত, সেগুলো কঙ্কালের মতো পড়ে আছে। দেয়ালে দেয়ালে কালো ধোঁয়ার স্তর। টাইলসের মেঝে ফেটে চৌচির। তিনতলার দেয়ালের পাশে পোড়া হাতের একটি বিচ্ছিন্ন আঙুল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মানবদেহের পোড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খণ্ড খণ্ড টুকরো। কী বীভত্স! কী মর্মান্তিক!’
আরেকজন রিপোর্টারের বর্ণনা : ‘২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় বিয়েবাড়ির আগুনই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সে ঘটনায় জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল ১২৪ জন। ট্র্যাজেডির সেই করুণ অধ্যায়ে যোগ হলো আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের আগুন। নিমতলীর ঘটনায় মৃতদের পুরো দেহ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় পুড়ে অঙ্গার হওয়া শ্রমিকদের ৫৮ জনের চেহারাটুকুও চেনা যায়নি। কারখানার দোতলায় শিশুকেন্দ্রে ছিল ২০টির মতো শিশু। তারাও হয়তো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।’
তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন, দায় কার
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র মতে, তাজরীন ফ্যাশনস একটি ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’। অর্থাত্ শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উপযোগী কারখানা এটি। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর জানা গেল, এ কথা মোটেও ঠিক নয়। ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’র কোনো বৈশিষ্ট্যই এ কারখানায় ছিল না। শ্রমিকদের জন্য কারখানাটিই ছিল একটি মৃত্যুকূপ। এ কারখানার পদে পদেই ছিল ঝুঁকি। কারখানার ভবন তৈরিতে নির্মাণবিধি একেবারেই মানা হয়নি। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আগুন লাগার পর কারখানার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কোনো কাজে আসেনি। কারখানাটি একেবারেই গ্রামে অবস্থিত। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস কীভাবে পৌঁছবে, তার পরিবহন বা পানি কোথা থেকে আসবে—তার ব্যবস্থা নেই। কারখানার চারদিকের তিন দিকই বন্ধ। তাছাড়া কারখানার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল লোকদের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রশিক্ষণও ছিল না। ঘটনার দিন তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় আগুন লাগার পর অ্যালার্ম বা সতর্ক সঙ্কেত বেজে ওঠে। শ্রমিকরা ঠিকই আগুন লেগেছে ভেবে নামতে থাকেন। কিন্তু দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাদের কিছুই হয়নি বলে বের হতে দেয়নি। প্রোডাকশন ম্যানেজারের নির্দেশে তারা কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে আটকে দেয়। ওপরে-নিচে সবদিকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরই ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কর্মকর্তারা বের হয়ে গেলেও বের হতে পারেননি শ্রমিকরা। কারখানায় তিনটি সিঁড়ি থাকলেও এগুলো বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। আগুনের পর সাংবাদিকরা সরেজমিন কারখানাটিতে গিয়ে দেখতে পান তিনটি সিঁড়ি ছাদে গিয়ে মিলিত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সিঁড়ির নিচের দিকটা এসে মিশেছে নিচতলায়। আর এই নিচতলার পুরোটাই ছিল গুদাম বা ওয়্যার হাউস। এখানেই লাগে আগুন। পেট্রোলিয়াম বায়ো বা সিনথেটিক জাতীয় সুতা ও কাপড়ে পরিপূর্ণ ছিল সেখানটায়। ফলে আগুন লাগার পর অতিদাহ্য এই মালামাল দ্রুত প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া তৈরি করে। কারখানার সিঁড়ি তিনটি আগুন ও ধোঁয়ায় হয়ে পড়ে ইটভাটার চিমনি। ফলে শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য সিঁড়িগুলো কোনো কাজেই আসেনি।
ক’বছর আগে বাংলাদেশের হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল যে, সব পোশাক কারখানায় থাকতে হবে দুটি পৃথক সিঁড়ি, দুটি প্রশস্ত ফটক। রাখতে হবে জরুরি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। সেই আদেশ থোড়াই কেয়ার করেছেন তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক। এ কারখানায় সিঁড়ি ছিল বটে; কিন্তু এই সিঁড়ি শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্যে ছিল না। সব সিঁড়ি নিচে এসে মিশে গেছে গুদামঘরের দরজায়, যেখানে আগুন লাগে। আটতলা ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত উঠেছে আগুন। বাকি যে তিনটি তলায় নিরাপদ আশ্রয় নেবে, তারও সুযোগ পাননি আটকেপড়া শ্রমিকরা। ওপরে ওঠার সিঁড়ির মুখেও কলাপসিবল গেটে ছিল বড় তালা। বিদেশি ক্রেতারা বিজিএমইএ’র সঙ্গে ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’র চুক্তি করেছিল। বিদেশি বায়ারদের কাছে তা মানতে রাজি হলেও বাস্তবে পোশাক মালিকরা ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরির’ শর্তগুলো মানেননি এবং সেভাবে কারখানা তৈরি করেননি।
মালিকপক্ষের অবহেলা এবং গাফিলতিই তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও শতাধিক শ্রমিকের করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ী। কর্তৃপক্ষ কারখানার অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়মিত তদারকি করেনি, তেমনি কারখানার তিনটি সিঁড়ি থাকলেও এগুলো দিয়ে শ্রমিক বের হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের জানানো হয়নি। কারখানার কর্মী সৈয়দ আশরাফুল জামান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি পাঁচতলায় কাজ করছিলেন। ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়ার পর উত্পাদন ব্যবস্থাপককে জানালে তিনি গালিগালাজ করে বসে কাজ করতে বলেন। দু’তিন মিনিট পর ধোঁয়ায় সারা ঘর ভরে যায়। সতর্ক সঙ্কেত বেজেছে। অথচ শ্রমিকদের বের হতে দেয়া হয়নি। কারখানার সিঁড়িগুলো বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। এমনকি জানালাগুলোও গ্রিল দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। ধোঁয়ার কারণে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দ্রুত নির্গমন পথ ছিল না এবং সব গেট ছিল তালাবদ্ধ। ফলে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। অর্থাত্ কারখানাটিতে ন্যূনতম কমপ্লায়েন্সও মানা হয়নি।
তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটির এত বড় দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষের চরম গাফিলতি যেমন দায়ী, তেমনি বিজিএমইএ এবং সরকারও দায় এড়াতে পারে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কারখানায় কোনো পরিদর্শন বা তদারকি করা হয়নি। কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স মেনে চলছে কিনা, অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা আছে কিনা, বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা, শ্রমিকরা কেমন করে কাজ করছেন—তা দেখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন বা তদারকি করলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। এত শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য তাই কারখানার মালিক, বিজিএমইএ এবং সরকার সমানভাবেই দায়ী।
সবকিছুর জন্যই দায়ী ‘নাশকতা’ আর ‘ষড়যন্ত্র’!
দেশে কি কোনো সরকার আছে? একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু সরকারের যেন কোনো দায়িত্ব নেই! আগুনে পুড়ে মানুষ অঙ্গার হচ্ছে, গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, নদীতে ঘটছে অগণিত মানুষের সলিল সমাধি। একইভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে সড়কে-মহাসড়কে। সরকার নির্বিকার। অসহায় মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি সে রকমই একটি ঘটনা। আগুনে পুড়ে শত প্রাণ অঙ্গার হয়ে গেলেও সেদিকে সরকারের ভ্রূক্ষেপ নেই। সরকার ব্যস্ত ‘নাশকতা’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ খোঁজার পেছনে। আগের ঘটনাগুলোর মতো নিশ্চিন্তপুরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনেও সরকার নাশকতা খুঁজছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের বয়স চার বছর হয় হয়। এ সময়ে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই সরকার ঘটনাটি কেন ঘটল এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে না গিয়ে দুটি কাজ করছে। একটি হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠন এবং অন্যটি ‘নাশকতা’ বা ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্বের’ প্রচার। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহ দমনে তাত্ক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার এ ঘটনার জন্য জঙ্গি ষড়যন্ত্রকে দায়ী করে। আজ পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি এর প্রকৃত কারণ। তেমনি জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কেও কেউ কিছু জানতে পারেনি। অথচ তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্রোহ দমন করলে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যু হতো না। একইভাবে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ মুন্সীগঞ্জে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ১১২ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। বরং বলা হয়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে। ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর নরসিংদীতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় ২০ জন যাত্রী। তেমনি ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ট্রাক উল্টে ৫৩ স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এসব ঘটনাও নাকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে।
এ সরকারের আমলে ঢাকার নিমতলীতে এক অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়ে মারা যায় ২১ জন শ্রমিক। একই বছর ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার হা-মীম গ্রুপের কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যায় ৩০ জন শ্রমিক। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। উল্টো সব ঘটনার ক্ষেত্রেই সরকার নাশকতার অভিযোগ তুলেছে। সেই নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কারা করেছে তার প্রমাণ আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার আগুনের ঘটনা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, এই ঘটনা নাশকতামূলক। সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিজিএমইএও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে নাশকতার কথা। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পেছনে কাদের অবহেলা ছিল, গাফিলতি ছিল—সে সম্পর্কে সরকার কিছুই বলছে না। সরকারেরও কি এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব ছিল না? আজ পর্যন্ত সরকারের কোনো লোক কি তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন? সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় কি অনুসন্ধান করে দেখেছে, কারখানাটি কমপ্লায়েন্স মেনে চলছিল কিনা? বিজিএমইএ’র হিসাব মতে গত ২১ বছরে পোশাক শিল্পে আগুনের ঘটনায় ৩৮৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭শ’। কিন্তু এসব ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল, গাফিলতি ছিল। একটি ঘটনার বিচার হলে পরেরটি আর ঘটত না। কারখানার মালিকদের টনক নড়ত। কিন্তু সেদিকে কে তাকাবে? দেখা যায় কোনো বড় ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তা নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে। সরকার একটি তদন্ত কমিটি করছে। কিছুদিন পর কমিটি দায়সারা একটি প্রতিবেদন দেয়। এরপর ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়। এসবই হচ্ছে বাংলাদেশে। এই বাংলাদেশ যেন গরিব অসহায় মানুষের এক মৃত্যু উপত্যকা। তাদের নিয়তিই যেন এই মৃত্যু। দুর্ঘটনার পর প্রিয়জন হারিয়ে অসহায় মানুষ বুকফাটা আর্তনাদ করে, নীরবে ফেলে চোখের পানি। এতটুকুই!
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
ঘটনাস্থল তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানা সরেজমিন দেখে এসে একজন রিপোর্টারের বর্ণনা : ‘চারদিকে পোড়া মেশিন। কর্মঠ শ্রমিকের হাতের স্পর্শে নির্জীব যে মেশিন প্রাণের স্পন্দনে ছুটে চলত, সেগুলো কঙ্কালের মতো পড়ে আছে। দেয়ালে দেয়ালে কালো ধোঁয়ার স্তর। টাইলসের মেঝে ফেটে চৌচির। তিনতলার দেয়ালের পাশে পোড়া হাতের একটি বিচ্ছিন্ন আঙুল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মানবদেহের পোড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খণ্ড খণ্ড টুকরো। কী বীভত্স! কী মর্মান্তিক!’
আরেকজন রিপোর্টারের বর্ণনা : ‘২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় বিয়েবাড়ির আগুনই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সে ঘটনায় জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল ১২৪ জন। ট্র্যাজেডির সেই করুণ অধ্যায়ে যোগ হলো আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের আগুন। নিমতলীর ঘটনায় মৃতদের পুরো দেহ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় পুড়ে অঙ্গার হওয়া শ্রমিকদের ৫৮ জনের চেহারাটুকুও চেনা যায়নি। কারখানার দোতলায় শিশুকেন্দ্রে ছিল ২০টির মতো শিশু। তারাও হয়তো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।’
তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন, দায় কার
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র মতে, তাজরীন ফ্যাশনস একটি ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’। অর্থাত্ শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উপযোগী কারখানা এটি। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর জানা গেল, এ কথা মোটেও ঠিক নয়। ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’র কোনো বৈশিষ্ট্যই এ কারখানায় ছিল না। শ্রমিকদের জন্য কারখানাটিই ছিল একটি মৃত্যুকূপ। এ কারখানার পদে পদেই ছিল ঝুঁকি। কারখানার ভবন তৈরিতে নির্মাণবিধি একেবারেই মানা হয়নি। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আগুন লাগার পর কারখানার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কোনো কাজে আসেনি। কারখানাটি একেবারেই গ্রামে অবস্থিত। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস কীভাবে পৌঁছবে, তার পরিবহন বা পানি কোথা থেকে আসবে—তার ব্যবস্থা নেই। কারখানার চারদিকের তিন দিকই বন্ধ। তাছাড়া কারখানার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল লোকদের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রশিক্ষণও ছিল না। ঘটনার দিন তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় আগুন লাগার পর অ্যালার্ম বা সতর্ক সঙ্কেত বেজে ওঠে। শ্রমিকরা ঠিকই আগুন লেগেছে ভেবে নামতে থাকেন। কিন্তু দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাদের কিছুই হয়নি বলে বের হতে দেয়নি। প্রোডাকশন ম্যানেজারের নির্দেশে তারা কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে আটকে দেয়। ওপরে-নিচে সবদিকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরই ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কর্মকর্তারা বের হয়ে গেলেও বের হতে পারেননি শ্রমিকরা। কারখানায় তিনটি সিঁড়ি থাকলেও এগুলো বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। আগুনের পর সাংবাদিকরা সরেজমিন কারখানাটিতে গিয়ে দেখতে পান তিনটি সিঁড়ি ছাদে গিয়ে মিলিত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সিঁড়ির নিচের দিকটা এসে মিশেছে নিচতলায়। আর এই নিচতলার পুরোটাই ছিল গুদাম বা ওয়্যার হাউস। এখানেই লাগে আগুন। পেট্রোলিয়াম বায়ো বা সিনথেটিক জাতীয় সুতা ও কাপড়ে পরিপূর্ণ ছিল সেখানটায়। ফলে আগুন লাগার পর অতিদাহ্য এই মালামাল দ্রুত প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া তৈরি করে। কারখানার সিঁড়ি তিনটি আগুন ও ধোঁয়ায় হয়ে পড়ে ইটভাটার চিমনি। ফলে শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য সিঁড়িগুলো কোনো কাজেই আসেনি।
ক’বছর আগে বাংলাদেশের হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল যে, সব পোশাক কারখানায় থাকতে হবে দুটি পৃথক সিঁড়ি, দুটি প্রশস্ত ফটক। রাখতে হবে জরুরি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। সেই আদেশ থোড়াই কেয়ার করেছেন তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক। এ কারখানায় সিঁড়ি ছিল বটে; কিন্তু এই সিঁড়ি শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্যে ছিল না। সব সিঁড়ি নিচে এসে মিশে গেছে গুদামঘরের দরজায়, যেখানে আগুন লাগে। আটতলা ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত উঠেছে আগুন। বাকি যে তিনটি তলায় নিরাপদ আশ্রয় নেবে, তারও সুযোগ পাননি আটকেপড়া শ্রমিকরা। ওপরে ওঠার সিঁড়ির মুখেও কলাপসিবল গেটে ছিল বড় তালা। বিদেশি ক্রেতারা বিজিএমইএ’র সঙ্গে ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’র চুক্তি করেছিল। বিদেশি বায়ারদের কাছে তা মানতে রাজি হলেও বাস্তবে পোশাক মালিকরা ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরির’ শর্তগুলো মানেননি এবং সেভাবে কারখানা তৈরি করেননি।
মালিকপক্ষের অবহেলা এবং গাফিলতিই তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও শতাধিক শ্রমিকের করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ী। কর্তৃপক্ষ কারখানার অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়মিত তদারকি করেনি, তেমনি কারখানার তিনটি সিঁড়ি থাকলেও এগুলো দিয়ে শ্রমিক বের হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের জানানো হয়নি। কারখানার কর্মী সৈয়দ আশরাফুল জামান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি পাঁচতলায় কাজ করছিলেন। ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়ার পর উত্পাদন ব্যবস্থাপককে জানালে তিনি গালিগালাজ করে বসে কাজ করতে বলেন। দু’তিন মিনিট পর ধোঁয়ায় সারা ঘর ভরে যায়। সতর্ক সঙ্কেত বেজেছে। অথচ শ্রমিকদের বের হতে দেয়া হয়নি। কারখানার সিঁড়িগুলো বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। এমনকি জানালাগুলোও গ্রিল দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। ধোঁয়ার কারণে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দ্রুত নির্গমন পথ ছিল না এবং সব গেট ছিল তালাবদ্ধ। ফলে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। অর্থাত্ কারখানাটিতে ন্যূনতম কমপ্লায়েন্সও মানা হয়নি।
তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটির এত বড় দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষের চরম গাফিলতি যেমন দায়ী, তেমনি বিজিএমইএ এবং সরকারও দায় এড়াতে পারে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কারখানায় কোনো পরিদর্শন বা তদারকি করা হয়নি। কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স মেনে চলছে কিনা, অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা আছে কিনা, বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা, শ্রমিকরা কেমন করে কাজ করছেন—তা দেখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন বা তদারকি করলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। এত শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য তাই কারখানার মালিক, বিজিএমইএ এবং সরকার সমানভাবেই দায়ী।
সবকিছুর জন্যই দায়ী ‘নাশকতা’ আর ‘ষড়যন্ত্র’!
দেশে কি কোনো সরকার আছে? একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু সরকারের যেন কোনো দায়িত্ব নেই! আগুনে পুড়ে মানুষ অঙ্গার হচ্ছে, গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, নদীতে ঘটছে অগণিত মানুষের সলিল সমাধি। একইভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে সড়কে-মহাসড়কে। সরকার নির্বিকার। অসহায় মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি সে রকমই একটি ঘটনা। আগুনে পুড়ে শত প্রাণ অঙ্গার হয়ে গেলেও সেদিকে সরকারের ভ্রূক্ষেপ নেই। সরকার ব্যস্ত ‘নাশকতা’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ খোঁজার পেছনে। আগের ঘটনাগুলোর মতো নিশ্চিন্তপুরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনেও সরকার নাশকতা খুঁজছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের বয়স চার বছর হয় হয়। এ সময়ে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই সরকার ঘটনাটি কেন ঘটল এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে না গিয়ে দুটি কাজ করছে। একটি হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠন এবং অন্যটি ‘নাশকতা’ বা ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্বের’ প্রচার। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহ দমনে তাত্ক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার এ ঘটনার জন্য জঙ্গি ষড়যন্ত্রকে দায়ী করে। আজ পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি এর প্রকৃত কারণ। তেমনি জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কেও কেউ কিছু জানতে পারেনি। অথচ তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্রোহ দমন করলে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যু হতো না। একইভাবে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ মুন্সীগঞ্জে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ১১২ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। বরং বলা হয়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে। ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর নরসিংদীতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় ২০ জন যাত্রী। তেমনি ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ট্রাক উল্টে ৫৩ স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এসব ঘটনাও নাকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে।
এ সরকারের আমলে ঢাকার নিমতলীতে এক অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়ে মারা যায় ২১ জন শ্রমিক। একই বছর ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার হা-মীম গ্রুপের কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যায় ৩০ জন শ্রমিক। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। উল্টো সব ঘটনার ক্ষেত্রেই সরকার নাশকতার অভিযোগ তুলেছে। সেই নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কারা করেছে তার প্রমাণ আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার আগুনের ঘটনা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, এই ঘটনা নাশকতামূলক। সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিজিএমইএও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে নাশকতার কথা। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পেছনে কাদের অবহেলা ছিল, গাফিলতি ছিল—সে সম্পর্কে সরকার কিছুই বলছে না। সরকারেরও কি এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব ছিল না? আজ পর্যন্ত সরকারের কোনো লোক কি তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন? সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় কি অনুসন্ধান করে দেখেছে, কারখানাটি কমপ্লায়েন্স মেনে চলছিল কিনা? বিজিএমইএ’র হিসাব মতে গত ২১ বছরে পোশাক শিল্পে আগুনের ঘটনায় ৩৮৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭শ’। কিন্তু এসব ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল, গাফিলতি ছিল। একটি ঘটনার বিচার হলে পরেরটি আর ঘটত না। কারখানার মালিকদের টনক নড়ত। কিন্তু সেদিকে কে তাকাবে? দেখা যায় কোনো বড় ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তা নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে। সরকার একটি তদন্ত কমিটি করছে। কিছুদিন পর কমিটি দায়সারা একটি প্রতিবেদন দেয়। এরপর ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়। এসবই হচ্ছে বাংলাদেশে। এই বাংলাদেশ যেন গরিব অসহায় মানুষের এক মৃত্যু উপত্যকা। তাদের নিয়তিই যেন এই মৃত্যু। দুর্ঘটনার পর প্রিয়জন হারিয়ে অসহায় মানুষ বুকফাটা আর্তনাদ করে, নীরবে ফেলে চোখের পানি। এতটুকুই!
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন