বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১২

সরকারের সন্ত্রাসে এখন উল্টো ফলই ফলবে


সিরাজুর রহমান


সব মুসলমানই জানেন এবং বিশ্বাস করেন আল্লাহ যাকে ধ্বংস করতে চান, আগে তাকে পাগল করে দেন। আরো একবার কথাটার উল্লেখ করতে হচ্ছে এ কারণে যে, উন্মাদ আচরণ বাংলাদেশে সম্প্রতি ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। সারমেয়র মাথায় ঘা হলে সে উল্টোপাল্টা ঘুরপাক খায়, যাকেই দেখে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তাকেই কামড়াতে আসে। বর্তমান সময়ে শাসক গোষ্ঠীর হয়েছে সে অবস্থা।
বর্তমান সরকারে যারা মন্ত্রী হয়েছেন, সুস্থ চিন্তার জন্য তাদের কারো খ্যাতি নেই। ওপর থেকে শুরু করে সব বড়-ছোট নেতার উক্তি থেকে মনে হতে পারে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচার তাদের গদিতে টিকে থাকার একমাত্র যোগ্যতা। সে বিচার করার জন্য সরকার দুটো ‘আন্তর্জাতিক‘ ট্রাইব্যুনাল করেছে। দেশে কিংবা বিদেশে এই ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা তো বলছেন আন্তর্জাতিক আইন দূরের কথা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ীও এ ট্রাইব্যুনাল গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্টোপাল্টা অবিবেচনাপ্রসূত কথাবার্তা বলার দায়ে সে ট্রাইব্যুনালও দু’জন মন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, ভেবেচিন্তে কথাবার্তা বলতে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু মাথার ঘায়ে যারা বেদিশা হয়ে যায়, ভেবেচিন্তে কথা বলা কিংবা কাজ করা তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না।
সে দুই মন্ত্রীর একজন মতিয়া চৌধুরী গত রোববার সংসদেই সেই অস্থিরতা দেখিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে এক হাত নিয়েছেন মতিয়া। এবং ‘একা রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর’। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকাল তোফায়েল আহমেদের কথা শোনাই যায় না বলতে গেলে। কিন্তু ড্যান মজিনাকে আক্রমণে তোফায়েল এবং অন্যান্য আওয়ামী দলীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
ড্যান মজিনার কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে একটা খুঁত থেকে গিয়েছিল। এ কথা কেউ তাকে বলে দেয়নি যে লাল কাপড় দেখলে ষাঁড় যেমন ক্ষেপে যায় ‘সংলাপ’ কথাটা উচ্চারিত হলে বতর্মান আওয়ামী লীগেরও সে রকমই ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বেফাঁস বলে ফেলেছিলেন যে রোজ রোজ জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংঘর্ষে না নেমে তাদের সাথে সংলাপে বসেই বিবাদ-বিসংবাদ মিটিয়ে ফেলা যায়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অবগতির জন্য বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ইতিহাসের একটা সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। পঁচাত্তরের সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সময় শেখ হাসিনা স্বামীর সাথে পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সপরিবারে হাসিনা ও তার ছোট বোনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেন। সেখানে সুশীলসমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাদের বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের হেফাজতে রাখা হয়। ও দিকে বাংলাদেশে মুজিব হত্যার পর বিদ্রোহী সেনারা খোন্দকার মোশতাক আহমেদকে গদিতে বসায়। মোশতাক শেখ মুজিবের সহকর্মী ও মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, কিন্তু তিনি ভারতের প্রিয়পাত্র ছিলেন না। সে বছরেরই ৩ নভেম্বর ভারতপন্থী বলে বিবেচিত জেনারেল খালেদ মোশাররফ আরেকটা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী এবং মোশতাককে গদিচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু চার দিন পরেই সাধারণ সৈনিকেরা খালেদ মোশাররফকে হত্যা করে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসায়।
 ইতিহাসের ভুল সংস্করণ
জিয়াউর রহমান পুরোপুরি জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। আধিপত্যকামী দিল্লি সরকার তাকেও সুনজরে দেখেনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ১৭ মে দিল্লি থেকে হাসিনা ও রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। তার ১৩ দিন পর এক সামরিক ষড়যন্ত্রে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। সে ষড়যন্ত্র এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। ভগিনীদ্বয়ের ফিরে আসার সাথে জিয়ার হত্যা কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল কি না সে সম্বন্ধে তখনো অনেকের সন্দেহ ছিল।
র বাংলাদেশের ইতিহাসের কোন সংস্করণ এ সরকারকে শিখিয়েছে তারাই জানে, কিন্তু দেশে ফিরে শেখ হাসিনা তার পিতার হত্যার পরে যারা সে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র তরণীর হাল শক্ত হাতে চেপে ধরেছিলেন তাদের সবাইকে খুনি বলে অভিযুক্ত করেন। বিশেষ করে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিষোদ্গার কখনো বন্ধ হয়নি। তার পরেও বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিরোধী দলের নেতা এবং সব পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয় নির্বাচন হলে আবারো তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন।
কিন্তু খালেদা জিয়ার সাথে সংলাপে বসার প্রস্তাব শেখ হাসিনা কখনো বিবেচনা করতে রাজি হননি। ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক প্রমুখ বহু বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি সংলাপের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনার জাতক্রোধ সৃষ্টি করেছেন। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী অনেক কিছু ঘটে গেছে। সোভিয়েত কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে, স্নায়ু যুদ্ধের দুই প্রধান বৈরী যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার মধ্যেও সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ বলা যায়। অন্তত নিয়মিত লেনদেন হচ্ছে তাদের মধ্যে। কিন্তু হাসিনা এখনো খালেদা জিয়ার সাথে মুখোমুখি বসতে রাজি হননি।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শত্রুতা অত পুরাতন নয়। বস্তুত ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার। শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন যে সংবিধান সংশোধন করে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা হলে তার জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলনের ভরসা আওয়ামী লীগের ছিল না। জামায়াতে ইসলামীর সাথে ভাব করে শেখ হাসিনা যৌথ আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের কলাকৌশল নির্ধারণে তিনি নিয়মিত জামায়াত নেতা মাওলানা নিজামীর সাথে বৈঠক করতেন। এই দুই দলের সহিংস আন্দোলনে দেশে নৈরাজ্য দেখা দেয়ার উপক্রম হলে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া খুবই দ্রুত সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি চালু করেন।
সে পদ্ধতির প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালের জুন মাসে। কথিত আছে যে, রাতের অন্ধকারে ইন্দিরা রোডের এক বাড়িতে গিয়ে শেখ হাসিনা জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের দোয়া নিয়ে নির্বাচন করেন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৃহত্তম দল হলেও একক গরিষ্ঠতা পায়নি। জামায়াতের মুষ্টিমেয় সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়েই হাসিনা সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন। ধর্মীয় রাজনীতির ওপর আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরাগ তখন এত প্রবল ছিল না। সরকার গঠনের পর সংরক্ষিত নারী আসনগুলো আওয়ামী লীগের দলে আসে। জামায়াতে ইসলামীকে তখন আর তাদের প্রয়োজন ছিল না, তখন আবার ধর্মীয় রাজনীতির ব্যাপারে তাদের গা-বমি ভাব ফিরে আসে।
 জামায়াতের সমর্থনের রহস্য
সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশের রাজনীতি আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশে বরাবরই প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। কিন্তু জনসমাগম দিয়ে বাংলাদেশে কোনো দলের ভোটের আয়তন অনুমান করা যাবে না। জনসভায় কিংবা সমাবেশে যাওয়া এ দেশের মানুষের বিনোদনের একটা সহজ উপায়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় থেকে পণ্ডিতেরা এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, জামায়াতে ইসলামী বোধ করি ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু এ দল কখনোই মুষ্টিমেয় সংখ্যার বেশি আসন জয় করতে পারেনি।
বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে না হলেও সমান্তরালভাবে জামায়াতের সাথে আন্দোলন করতে চায় সুস্পষ্ট কারণে। ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’Ñ এ বিবেচনা অবশ্যই আছে। তা ছাড়া জামায়াতও বিএনপির মতো বিশ্বাস করে যে, আওয়ামী লীগ বিদেশী সমর্থন এবং স্বদেশে পেশিশক্তি দিয়ে বরাবরের মতো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়, একটা বাকশালী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই তার উদ্দেশ্য। তা ছাড়া এই দুই দল বিশ্বাস করে যে, শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক এলাকা ও সম্পদের ব্যাপারে ভারতের সাথে আপস করছে। এ সবের ওপরেও বিগত চার বছরে বিএনপিও জামায়াতের মতো সরকারের দলীয়কৃত পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের পেশিশক্তির অবর্ণনীয় নির্যাতন সয়েছে।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাথে গলায় গলায় ভাব করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। বর্তমানে সর্বশক্তি দিয়ে জামায়াতকে ধ্বংস করার চেষ্টার পেছনেও আছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ২০০৮ সালের মাস্টারপ্ল্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অবাধ করিডোর ও ট্র্যানজিট সুবিধা চায়। বাংলাদেশে তার প্রবল বিরোধিতা আছে। ভারত বিশেষ করে জামায়াতের কর্মী বাহিনীকে ভয় করে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গত বছরের জুলাই মাসে খুলেই বলেছিলেন সে কথা। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক এবং জামায়াত উগ্র ভারতবিরোধী। জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করে এ সরকার ভারতের প্রতি ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ করতে চায়Ñ এই আশায় যে ভারত আবারো যেকোনো উপায়ে তাকে গদিতে বসাবে।
 এক ঢিলে দুই পাখি এবং হিসাবে ভুল
এখানে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আল কায়েদা সন্ত্রাসের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রবল ইসলামবিরোধী হয়ে পড়ে। ‘ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ তারই ফলশ্রুতি। সরকার জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে ওয়াশিংটনকে বোঝাতে চায় যে, এ সরকার ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ চালাচ্ছে।
সরকার হিসাবে ভুল করেছিল, সে ভুল এখনো শোধরানোর চেষ্টা করছে না। বাংলাদেশ রাজনীতির আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত এখন বদলে গেছে। মুসলিম বিশ্ব এখন সরকারকে বিরক্তির চোখেই দেখে। সুতরাং ইসলামী জোটের সমবেত শক্তি এখন আর সরকারের সহায় হবে না।  দিল্লির সরকারের মনেও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই সরকারকে দিয়ে তাদের স্বার্থ আদৌ উদ্ধার হবে কি না, সে সম্বন্ধে দিল্লি আর নিশ্চিত নয়। ইসলাম শব্দটা উচ্চারিত হলেই ওয়াশিংটন এখন আর কামানের ট্রিগারে হাত দিচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্ত তাদের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুড দুই বছর আগেও ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসী তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরা এখন তিউনিসিয়া, মিসর আর লিবিয়ায় রাজত্ব করছে। ওয়াশিংটন তাদের সাথেও লেনদেন করতে বাধ্য হচ্ছে। বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনা আর মার্কিন সরকারের মনোরঞ্জন করতে পারবেন না।
দুই হাজার নয় সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার গঠনের প্রায় সাথে সাথেই আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে একটা অঘোষিত গৃহযুদ্ধ শুরু করে। দেশব্যাপী জনসমর্থন নিঃশেষ হয়ে গেছে বলেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘মাথার ঘা’ দুঃসহনীয় হয়ে উঠেছে। জামায়াত কিংবা ছাত্রশিবির সভা-সমাবেশ করলে, মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারেরা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশও যোগ দেয় এদের সাথে। দু’একটা ঘটনা আমি বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা করেছি। মনে হয়েছে, জামায়াত কিংবা শিবির মিছিল বের করবে খবর পেলে পুলিশ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। এটা হিটলারের জার্মানি ও মুসোলিনির ইতালিতেই স্বাভাবিক ছিল। কোনো সুসভ্য সমাজে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
 নির্যাতনের উল্টো ফল
দেখা যাচ্ছে, সরকার ও আওয়ামী লীগের এই নির্যাতন-নিপীড়নের উল্টো ফল ফলতে শুরু করেছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও এখন জামায়াত ও শিবিরের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হয়ে উঠছেন। লক্ষণ দেখে মনে হয় সাধারণ মানুষ এবং নিরীহ পথচারীরাও জামায়াত কিংবা শিবিরের ওপর পুলিশ ও সরকারি দলের লোকদের হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন।
একটু ভেবে দেখলেই কারণটা বোঝা যাবে। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তারা ধর্মভীরু। মাওলানা-মৌলভী ও আলেমদের এরা শ্রদ্ধা করেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নাম করে নামকরা ও সম্মানিত আলেমদের তো বটেই, সাধারণ টুপি-দাড়িওয়ালা এবং মসজিদে যাওয়া মানুষকে যেমন পাইকারিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাদের সহানুভূতি এখন চলে গেছে নির্যাতিতদের দিকে।
এমনিতেই চার বছর ধরে মানুষ দেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার সব দিক দিয়ে দেশটাকে দুর্নীতির সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে গেছে। এ দেশ স্বাধীন করেছে এদেশের সব স্তরের মানুষ, শুধু আওয়ামী লীগ নয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা রণক্ষেত্রে ছিলেন না। তারা ভারতে গিয়ে সে দেশের সরকারের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন।
এ দিকে স্বদেশে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষত্যাগী অফিসার ও জওয়ান, বিডিআর আর আনসারেরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ করেছে। ছাত্র-তরুণেরা যোগ দিয়েছে তাদের সাথে। সাধারণ মানুষ যথাসাধ্য সাহায্য দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের, সে জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছে। বাংলাদেশের নারী স্বাধীনতার জন্য ইজ্জত দিয়েছেন। স্বাধীনতা রক্ষার তাগিদ এখন আবার তারা তীব্রভাবে অনুভব করছেন। জামায়াত-শিবির কেন, যারাই এখন এ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরই সমর্থন দেবে।
লন্ডন, ২১.১১.১২
serajurrahman34@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads