দেশে বলা যায় এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক, হাসপাতাল, কোচিং সেন্টার ইত্যাদির মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও আক্রান্ত হচ্ছে এবং এটা করা হচ্ছে একটা রাজনৈতিক শ্লোগানের অধীনে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক আছে সে ধরনের প্রতিষ্ঠানেই এ রকম আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের জন্য সুস্থ নয়, গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য তো নয়ই।
এ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বক্তব্য থেকে। যে বক্তব্যে তিনি জামায়াত-শিবিরের লোকদের যেখানেই দেখা যাবে সেখানেই প্রতিহিত করবার ডাক দিয়েছিলেন। আর এই বক্তব্য তিনি দিয়েছিলেন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হবার পর। জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশের বাধাদান থেকেই এ সংঘর্ষের উদ্ভব ঘটে। উল্লেখ্য, গত ৪ বছর আগে এ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই কার্যত জামায়াতের মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়া হচ্ছে। সময় যতই গেছে বাধা দেবার কাজ আরও কঠোরতর হয়েছে। সাম্প্রতিককালে জামায়াত-শিবিরকে বলা যায় মিছিলই করতে দেয়া হচ্ছিল না। এই বাধা সত্ত্বেও মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কখনও কখনও কোথাও কোথাও এ সংঘর্ষকালে পুলিশ আক্রান্ত ও আহতও হয়েছে। এই ঘটনার সংখ্যা এমন নয় যে, একে ব্যাপক আখ্যা দেয়া যায়। বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতোই এগুলো সংঘটিত হয়েছে। মিছিলের ঘটনার বাইরে পুলিশের ওপর আক্রমণের কোনও ঘটনাই ঘটতে দেখা যায়নি। সুতরাং বলা যায়, পুলিশের ওপর আক্রমণের মিছিলের সময়কার আকস্মিক কোনও ঘটনা। জামায়াতের দলীয় কোনও সিদ্ধান্ত এটা নয়। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ স্বাভাবিক দিকটা বিবেচনা না করে জামায়াত-শিবিরকে দলীয়ভাবে প্রতিহতের ডাক দিয়েছেন। মিছিলে পুলিশের বাধাদানকালে পুলিশকে বাধাদানকারী অথবা পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া ব্যক্তিকে যদি ক্রিমিনাল হিসেবে মনে করা হয় তাহলে তাকে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করার অধিকার ও সুযোগ দুটোই পুলিশের আছে। কিন্তু তা নয় করে বিচ্ছিন্ন এ অপরাধকে জামায়াত ও শিবিরের দলীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং গণগ্রেফতারসহ কোথাও কোথাও ডজন নয়, শত নয়, হাজার হাজার লোকের ওপর মামলা চাপানো হচ্ছে। শুধু জামায়াত-শিবির নয়, অন্যান্য বিরোধীদলের সঙ্গেও এ একই আচরণ চলছে।
আমরা মনে করি, সরকার ও পুলিশের আচরণ গণতান্ত্রিক এবং নাগরিকদের প্রতি দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক এবং সরকারও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত। আমাদের সংবিধান নাগরিকদের কতগুলো মৌলিক অধিকার দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংস্থা-সংগঠনের মিটিং-মিছিল করবার অধিকার, প্রতিটি নাগরিকেরই বাকস্বাধীনতার অধিকার। বিএনপি, জামায়াত, শিবির এবং অন্যান্য বিরোধীপক্ষীয় সংগঠন সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের বাইরে কিছু ভোগ করতে চায়নি। দাবিও করেননি। আমরা মনে করি, এই সাংবিধানিক অধিকার না দেয়াই সকল অনর্থের কারণ। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তাদের মিটিং-মিছিলে বাধা না দেয়া হলে পুলিশের প্রতি একটা ঢিল ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটবে না। আর জামায়াতের এ ধরনের বক্তব্য যে, কথার কথা নয় তার প্রমাণ পুলিশের সঙ্গে তাদের অতীত আচরণ। এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, সাম্প্রতিক সময়ের আগে জামায়াতের পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক হবার কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি। সব দলের চাইতে জামায়াতের মিছিলের সঙ্গে থাকাকে পুলিশ বেশি নিরাপদ মনে করতো। সুতরাং আমরা মনে করি, জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দলকে অবাধে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার দেয়া উচিত। আর এটা সংবিধান ও গণতন্ত্রেরই দেয়া অধিকার।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন