বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১২

ভারত এবার বিদ্যুত্ করিডোর চাচ্ছে : ভালো চাইলে এখনই পিছিয়ে আসুন



জনগণকে অন্ধকারে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক আগেই ভারতকে স্থল ও নৌপথে করিডোর দিয়ে ফেলেছে। সরকারের ঘাড়ে পা দিয়ে ভারত এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুত্ করিডোর পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর রিপোর্টে জানা গেছে, অরুণাচল ও ত্রিপুরার আগরতলাসহ পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভারত এই বিদ্যুত্ পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্য কয়েকটি রাজ্যে নিয়ে যেতে চায়। এজন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে দেশটির সঞ্চালন লাইন দরকার। টোপও ভারত মন্দ দেয়নি। বলেছে, করিডোরের বিনিময়ে বাংলাদেশকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ দেয়া হবে। অবশ্যই বিনামূল্যে নয়, ওই বিদ্যুত্ বাংলাদেশকে কিনে নিতে হবে। দামও ভারতই নির্ধারণ করবে। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য হাইভোল্টেজ পাওয়ার ট্রান্সমিশন করিডোর নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দু’দেশের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি এরই মধ্যে নয়াদিল্লিতে কয়েকটি বৈঠক করেছে। পরবর্তী বৈঠক ঢাকায় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা বৈঠকের পরই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
শুনতে সাদামাটা মনে হলেও ভারতকে বিদ্যুত্ করিডোর দেয়ার বিষয়টিকে আমরা গুরুতর এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণও মনে করি। কারণ, এই বিদ্যুত্ হাওয়ায় ভেসে যাবে না, নেয়া হবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। এজন্য ব্যবহারও করা হবে বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইন তথা জাতীয় গ্রিডকেই। এখানে জাতীয় গ্রিডের বহন ক্ষমতা একটি প্রধান বিবেচ্য। কারণ, ভারত দু-চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ নেবে না। খবরে জানা গেছে, শুধু অরুণাচল প্রদেশের একটি কেন্দ্র থেকেই ৪৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ নেয়া হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্য রাজ্যগুলোতেও একের পর এক বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে ভারত। এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ নেয়া শুরু হলে স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিমাণ দুই-আড়াই লাখ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। এত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত্ সঞ্চালনের ভার বাংলাদেশের বিদ্যমান জাতীয় গ্রিড বহন করতে পারবে না। তখন সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রশ্ন উঠবে। বাংলাদেশের ওপর চাপবে বিশাল ব্যয়ের বোঝা। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের পাহারা দেয়াসহ সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণও বাংলাদেশকে করতে হবে। দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় ঘটলে তার দায়দায়িত্বও বাংলাদেশের ওপরই বর্তাবে। তাছাড়া ভারত নিজেও যদি ব্যয়ভার বহন করে তাহলেও বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, চুক্তি হচ্ছে মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের। অন্যদিকে ভারতের লাভ হচ্ছে সবদিক থেকে। অরুণাচল কিংবা ত্রিপুরাসহ যে রাজ্য থেকেই নেয়া হোক না কেন কলকাতা পর্যন্ত দূরত্ব কমে যাবে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। পাহাড়-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে লাইন বসানোর ঝক্কিও ভারতকে পোহাতে হবে না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এতকিছুর পরও ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ কিন্তু সামান্য ছাড়ও দিচ্ছে না বাংলাদেশকে। ভারত যে পরিমাণ বিদ্যুত্ নিয়ে যাবে তার তুলনায় এক হাজার মেগাওয়াটকে ‘মাত্তর’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তারও দাম আবার ভারতের নির্ধারণ করে দেয়া দরেই দিতে হবে। এখানে বাংলাদেশের জন্য এমনকি দর কষাকষি করার সুযোগও রাখা হচ্ছে না।
সব মিলিয়েই ভারতকে বিদ্যুতের করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠবে বলেই আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। প্রসঙ্গক্রমে সড়ক ও নৌপথে করিডোর দেয়ার অভিজ্ঞতা স্মরণ করা দরকার। ট্রানজিটের আড়ালে করিডোর দেয়ার আগে ক্ষমতাসীনরা অনেক গালগল্পই শুনিয়েছিলেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বলেছিলেন, ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হলে বাংলাদেশে নাকি ‘টাকার পাহাড়’ তৈরি হবে এবং কর্মসংস্থানের তথা চাকরির নাকি ‘বন্যা’ বইতে শুরু করবে! ক্ষমতাসীনরা কখনও বলেছেন, বাংলাদেশ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আয় করবে। কখনও এমনকি ২০ হাজার কোটি টাকা আয়ের প্রলোভনও দেখিয়েছেন তারা। এদিকে করিডোর দেয়ার পর কিন্তু বাংলাদেশ কোনোভাবেই লাভের মুখ দেখতে পারেনি। ‘টাকার পাহাড়’ তৈরি হওয়ার কিংবা কর্মসংস্থানের ‘বন্যা’ বয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এতদিন পর এসে একই ক্ষমতাসীনরা শোনাচ্ছেন, প্রতিবেশীর কাছ থেকে ভাড়া চাইতেও তাদের নাকি শরম লাগছে! এই তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলার অপেক্ষা রাখে না, ‘মাত্তর’ই এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ভারতকে বিদ্যুতের করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনোক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, কেবলই ভারতের স্বার্থ হাসিল করে দেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত এখনই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা। গওহর রিজভী ও মশিউর রহমানদের কারণে গোপন কোনো দায় থেকে থাকলেও সরকারের উচিত বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখা। যত প্রলোভনই দেখানো হোক না কেন ভারতকে বিদ্যুতের করিডোর দেয়া চলবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads