যেন ‘তর’ সইছিল না, যেন কাজ ছেড়ে থাকতে আর পারছিলেনই না—এমন দ্রুততার সঙ্গেই ফিরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। ছুটি শেষ হওয়ারও দু’দিন আগেই তিনি তার অফিসে গিয়ে হাজির হয়েছেন। সেখানে কাটিয়েছেনও দীর্ঘ সময়। এরপর গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে অফিসে গেছেন নভেম্বরের এক তারিখে। ছুটি শেষে সেদিনই তার কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল। চাকরির বিধিবিধানের দিক থেকে সঠিক হলেও উপদেষ্টা মসিউর রহমানের বিষয়টি কিন্তু মোটেও স্বাভাবিক নয়। কারণ, তার বহুল আলোচিত ‘ছুটি’ কোনো সাধারণ ব্যাপার ছিল না। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও এই ‘ছুটি’ তাকে নিতে হয়েছিল। কারণ, শর্তটি এসেছিল বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে। দুর্নীতির জন্য যে ‘উচ্চ পর্যায়ের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল সে ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতিতে উপদেষ্টা মসিউর রহমানেরও ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এজন্যই বিশ্বব্যাংক বলেছিল, অর্থ উপদেষ্টাসহ অভিযুক্তদের যার যার পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সরকার প্রথমে তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এতেও সন্তুষ্ট হয়নি বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি নাম ধরেই মসিউর রহমানের কথা বলেছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক’ আবুল হোসেন যেখানে মানে মানে কেটে পড়েছিলেন, অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান সেখানে ঘাড় বাঁকিয়ে বসেছিলেন। তিনি এমনকি তথ্য-প্রমাণ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত ছুঁড়ে দিয়েছেন। এভাবে দাপাদাপিতে অবশ্য কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিদায় না নিলেও তাকে ‘ছুটিতে’ যেতে হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ্য ছিল পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতির বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা। মসিউর রহমানের মতো মহাদাপটের একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি তার পদে বহাল থাকলে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা যাবে না বলেই তাকে বিদায় করার শর্ত জুড়ে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। পরে কোনোভাবে ‘ছুটি’ দেয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে সম্মত করানো হয়েছিল। সংস্থাটি আবার পদ্মাসেতু প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। একযোগে শুরু হয়েছিল নানামুখী তদন্তের কাজ। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের তদন্তকারী দল ঢাকা সফর করে গেছেন। দুদকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। দুদককেও বেশ তত্পর দেখা যাচ্ছিল। দুদক এমনকি মসিউর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু তার আগেই মসিউর রহমান তার পদে ফিরে এসেছেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত ও প্রভাবিত হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও একই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কথা আরও আছে। সংশ্লিষ্টদের উদ্ধৃত করে দৈনিক আমার দেশ-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত উপদেষ্টা মসিউর রহমান তার পদে ফিরে আসায় বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তে ও কর্মপন্থায় পরিবর্তন ঘটতে পারে। তথ্যাভিজ্ঞরা এমনকি এ আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন যে, পদ্মাসেতুর গোটা প্রকল্পই আবার ঝুলে পড়তে পারে।
আমরা মনে করি, একজন মাত্র ব্যক্তির জন্য পদ্মাসেতুর সম্ভাবনাকে নস্যাত্ করার পদক্ষেপ কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। কারণ বিশ্বব্যাংক প্রথম থেকে যে ক’জনের দিকে আঙুল তুলে এসেছে ড. মসিউর রহমান তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় একজন। তার ব্যাপারে সরকারের মনোভাব ‘সন্তোষজনক’ ছিল না বলেই বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ‘চোখ বুজে থাকা’ সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি পদ্মাসেতুর ঋণচুক্তিই বাতিল করেছিল। খুবই তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হলো, চুক্তি বাতিল করার পরমুহূর্ত থেকে বিশ্বব্যাংককে তুলাধোনো করার অভিযানে নেমে পড়লেও ক্ষমতাসীনরা কিন্তু অভিযোগের জবাবে যুত্সই কোনো বক্তব্যই হাজির করতে পারেননি। তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তারা বরং প্রত্যক্ষভাবেই স্বীকার করে নিয়েছেন, দুর্নীতি আসলেও হচ্ছিল। নাহলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া কেন? ঠিক এ পর্যন্ত এসেই ফাঁদে আটকে গিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনরা। কারণ, বিশ্বব্যাংক শুধু ওই ক’জনের কথাই বলেনি, বলেছিল আরও অনেকের কথাও—যারা ‘উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিমূলক ষড়যন্ত্র’ করেছিল। প্রশ্নও উঠেছিল তাদের সম্পর্কেই। তাদের মধ্যে ‘উচ্চ পর্যায়ের’ কারও কারও স্বজনও রয়েছেন কিনা সে প্রশ্ন যেমন উঠেছিল তেমনি আঙুল সরাসরি উঠেছিল মসিউর রহমানের দিকেও। তাকে ‘ছুটিতে’ পাঠানোর মাধ্যমে সরকার আসলে অভিযোগের সত্যতাই স্বীকার করে নিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটেই এত তাড়াতাড়ি তার ফিরে আসাটা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নতুন করে আবারও ঝামেলা পাকানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত, অভিযুক্ত এই উপদেষ্টাকে বিদায় করা—একেবারে সম্ভব না হলে অন্তত আরও কিছুদিনের জন্য তাকে ‘ছুটিতে’ পাঠানো।
আমরা মনে করি, একজন মাত্র ব্যক্তির জন্য পদ্মাসেতুর সম্ভাবনাকে নস্যাত্ করার পদক্ষেপ কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। কারণ বিশ্বব্যাংক প্রথম থেকে যে ক’জনের দিকে আঙুল তুলে এসেছে ড. মসিউর রহমান তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় একজন। তার ব্যাপারে সরকারের মনোভাব ‘সন্তোষজনক’ ছিল না বলেই বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ‘চোখ বুজে থাকা’ সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি পদ্মাসেতুর ঋণচুক্তিই বাতিল করেছিল। খুবই তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হলো, চুক্তি বাতিল করার পরমুহূর্ত থেকে বিশ্বব্যাংককে তুলাধোনো করার অভিযানে নেমে পড়লেও ক্ষমতাসীনরা কিন্তু অভিযোগের জবাবে যুত্সই কোনো বক্তব্যই হাজির করতে পারেননি। তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তারা বরং প্রত্যক্ষভাবেই স্বীকার করে নিয়েছেন, দুর্নীতি আসলেও হচ্ছিল। নাহলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া কেন? ঠিক এ পর্যন্ত এসেই ফাঁদে আটকে গিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনরা। কারণ, বিশ্বব্যাংক শুধু ওই ক’জনের কথাই বলেনি, বলেছিল আরও অনেকের কথাও—যারা ‘উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিমূলক ষড়যন্ত্র’ করেছিল। প্রশ্নও উঠেছিল তাদের সম্পর্কেই। তাদের মধ্যে ‘উচ্চ পর্যায়ের’ কারও কারও স্বজনও রয়েছেন কিনা সে প্রশ্ন যেমন উঠেছিল তেমনি আঙুল সরাসরি উঠেছিল মসিউর রহমানের দিকেও। তাকে ‘ছুটিতে’ পাঠানোর মাধ্যমে সরকার আসলে অভিযোগের সত্যতাই স্বীকার করে নিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটেই এত তাড়াতাড়ি তার ফিরে আসাটা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নতুন করে আবারও ঝামেলা পাকানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত, অভিযুক্ত এই উপদেষ্টাকে বিদায় করা—একেবারে সম্ভব না হলে অন্তত আরও কিছুদিনের জন্য তাকে ‘ছুটিতে’ পাঠানো।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন