দফতরি নিয়োগে ঘুষ-বাণিজ্য
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন একধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্য ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। শুধু তদবির নয়, নিয়োগের বিধিমালা এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে বাণিজ্যের মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া যায়।
সম্প্রতি দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৩৬ হাজার ৯৮৮ জন দফতরি কাম প্রহরী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এ নিয়োগ দেবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত।
অর্থাৎ সংসদ সদস্য যাদের নিয়োগ দিতে চাইবেন তারা নিয়োগ পাবেন। কারণ তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। ফলে দলীয় সমর্থকেরাই এ পদে নিয়োগ পাবেন। একইভাবে এসব নিয়োগে বিপুলভাবে আর্থিক লেনদেনও হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাত হাজার টাকা বেতনের এই চাকরির জন্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা শিা কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক নিয়ে তিন সদস্যের নিয়োগ কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হবে। যদিও নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হবে।
একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম প্রহরীর চাকরির জন্য এই বিপুল টাকা ঘুষ দেয়ার খবর থেকে প্রমাণ হয়, দেশের সর্বত্র নিয়োগ-বাণিজ্যের নামে দুর্নীতির চরম বিস্তার ঘটছে। এই চাকরি সমাজের মধ্যবিত্ত বা ধনী শ্রেণীর কোনো বেকার যুবক করবেন না। দরিদ্র যুবকেরাই এ ধরনের চাকরির জন্য দরখাস্ত করবেন। দফতরির চাকরির জন্য তাকে হয়তো জমিজিরেত বা শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দিতে হবে। এই টাকা নিয়োগ কমিটি এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যের পকেটে চলে যাবে।
এ খবরে আমাদের সমাজের অবক্ষয়ের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে এত টাকা ঘুষ দিয়ে দফতরি বা নৈশপ্রহরী সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারবেন? শুধু এই পদে নয়, এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এ ধরনের দলবাজি ও বাণিজ্যের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি চাকরিতে এ ধরনের নিয়োগপ্রক্রিয়া দুর্নীতির বিস্তার শুধু ঘটাচ্ছে না, সমাজকে কলুষিতও করছে। আমরা মনে করি, ছোট বা বড় যে চাকরিই হোক যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। না হলে সমাজে বৈষম্য ও অসন্তোষ বাড়বে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। আমরা আশা করব, এ ধরনের নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ করে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দেয়া হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন