শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১২

খালেদা জিয়ার ভারত সফরের তাৎপর্য



আবু এন এম ওয়াহিদ
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কয়েকটি মজার মজার গভীর অর্থবহ ইংরেজি বাক্য আছে যেগুলো খুবই মশহুর। যেমনÑ ‘ফ্রেন্ডশিপ টু অল, ম্যালিস টু নান’, অর্থাৎ সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি শত্র“তা নয়, ‘এনিমিজ এনিমি ইজ মাই ফ্রেন্ড’, অর্থাৎ শত্র“র শত্র“ আমার বন্ধু, ‘দেয়ার ইজ নাথিং কল্ড পার্মানেন্ট ফ্রেন্ডশিপ, অল দ্যাট এগজিস্টস ইজ পার্মানেন্ট মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট’, অর্থাৎ স্থায়ী বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই, আছে শুধু স্থায়ী পারস্পরিক স্বার্থ। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কে মাত্রা যোগ করে আরেকটি বাড়তি বাস্তবতা। সেটা হলোÑ ‘ওয়ান ক্যান চুজ অ্যা ফ্রেন্ড, বাট নট অ্যা নেইবার’, অর্থাৎ বন্ধু বেছে নেয়া যায়, কিন্তু প্রতিবেশীর বেলায় বাছবিচার চলে না।
এ সবের মূলকথা হলো একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ভর করে দু’টি দেশের জাতীয় মূল্যবোধ এবং আদর্শ ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং স্বার্থের ওপর। প্রতিবেশী হলে উভয় দেশই নীতি-আদর্শ এবং স্বার্থে একটু ছাড় দিয়ে পরস্পরের প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল হতে চায়, কিন্তু বড় ধরনের জটিল ও কঠিন সমস্যা থাকলে কোনোভাবেই স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হয় না। উদাহরণস্বরূপ ভারত-পাকিস্তান এবং ভারত-চীনের সম্পর্ক বিবেচনা করা যায়। ভারত-বাংলাদেশের কথায় আসব আরেকটু পরে। যেহেতু রাষ্ট্রীয় নীতি-আদর্শ এবং জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো বড় ধরনের মতপার্থক্য থাকে না, তাই কোনো দেশে সরকার বদল হলেও সে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা ঝাঁকুনি লাগে না। বেশির ভাগ দেশের বেলায় এ কথা প্রযোজ্য।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি আজব দেশ বানিয়ে ফেলেছি। এখানে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশের নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, সংবিধান, জাতীয় স্বার্থ, তাদের সংজ্ঞা ইত্যাদি সব পাল্টে যায়, আর তাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো ধরনের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। আওয়ামী লীগ যখন মতায়, তখন দেশ চলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেতার চেতনায় এবং বিএনপি যখন সরকার চালায় তখন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি মূল্যবোধের চাদরে ঢাকা পড়ে আমাদের জাতীয় জীবন। আওয়ামী লীগের আমলে কূটনীতি ঘুরপাক খায় প্রধানত ভারতের চার দিক ঘিরে। বিএনপির সময় সে নীতি চলে চীন-সৌদি-পাকিস্তান বলয়কে কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগের পেছনে যেমন আছে জনসমর্থন, তেমনি আছে বিএনপির সাথেও। জাতি এখানে সমানভাবে দ্বিধাবিভক্ত। এই বিভাজন বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির আকাশের ঘন কালো মেঘ। এই দোটানা নীতির ফলে দেশ ও জাতি কাক্সিত ল্েয এগোতে পারছে না। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এইখানে। দীর্ঘ ৪০ বছরেও তারা জাতিকে একীভূত করতে পরেনি। প্রধান দু’টি দল যত দিন এই বাস্তবতা উপলব্ধি না করবে এবং তাদের দূরদর্শী নেতৃত্বের জোরে এটা কাটিয়ে উঠতে না পারবে তত দিন আমরা কোনো বড় কাজই সঠিকভাবে করতে পারব না।
বাংলাদেশ সব ব্যাপারে যেমন দ্বিধাবিভক্ত, ভারতের সাথে সম্পর্কের বেলায়ও তাই। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ যতটা ভারতবান্ধব, বিএনপি ততটাই ভারতবিমুখ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হলো আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পরিকল্পনায় এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ ভারতের সাথে মোয়ামেলাত করেছে।  যুদ্ধে ভারত সর্বাত্মক সাহায্য জুগিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের গড়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক মেলবন্ধন। এ সম্বন্ধ আরো ঘনীভূত হয়েছে ১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক ঘটনার পর, যখন আওয়ামী লীগ নেত্রী দীর্ঘমেয়াদে সপরিবারে ভারতের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন তার মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগের ভারতবান্ধব হওয়ার আরেকটি স্থূল কারণ থাকতে পারে। সেটা হলো যেহেতু বিএনপি সৌদি-পাকিস্তান বলয়ে, তাই আওয়ামী লীগ ভারত-ঘেঁষা।
এবার দেখা যাক বিএনপি কেন ভারতবিমুখ। যেহেতু বিএনপির জন্ম হয়েছে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর, তাই ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি ঐতিহাসিক সম্পর্ক গড়ার সুযোগ পায়নি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেও তিনি যখন নতুন দল করেন তখন সহযোগিতা নিয়েছেন তৎকালীন মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপিসহ ডানপন্থী ছোট ছোট কয়েকটি দলের এবং অন্যদের মধ্যে তার সাথে ছিলেন চীনপন্থী ভাসানী ন্যাপের নেতাকর্মীরা। এরা কেউই ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন না। এ ছাড়া তাদের মাঝে কাজ করেছে আরো দু’টি কারণ। প্রথমত, যেহেতু তাদের রাজনৈতিক প্রতিপ আওয়ামী লীগ ভারতবান্ধব, তাই তারা ভারতবিমুখ। দ্বিতীয় কারণ তার চেয়ে গভীর ও অনেক বেশি তাৎপর্যময়। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাস স্বাধীনতার পরপরই শুরু হয়ে যায়। চাওয়া মাত্র ভারতকে বেরুবাড়ী হস্তান্তর করার পরও ভারত যখন প্রতিশ্র“তিমতো তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশকে দিলো না, তখনই মানুষ ভারতের ওপর মারাত্মকভাবে আশাহত ও নাখোশ হলো। তারপর অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহে অনেক অনুনয়-বিনয় করেও বাংলাদেশ যখন ভারতের কাছ থেকে তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারল না, তখন মানুষজন খেল আরেক ধাক্কা। এ ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ যখন দেখল ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দিনে দিনে বাড়ছে। এটা কমিয়ে আনার ব্যাপারে ভারত কোনোভাবেই বাংলাদেশকে আন্তরিক সহযোগিতা দিচ্ছে না, তখন বাংলাদেশীরা যা বোঝার তা বুঝে নিল। অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশকে কোনো সুবিধাই দেবে না। এভাবে এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে যে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠার ঐতিহাসিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, শুরুতেই তা মাঠে মারা গেল। জনমতের এ বাস্তবতার পরিপ্রেেিত বিএনপি ভারতবিমুখ অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সহজ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পথই বেছে নিল।
অভিযোগ যদি সত্যি হয়, এর প্রতি উত্তরে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীকে প্রশিণ ও অস্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করতে লাগল। পান্তরে অনুযোগ আছে, বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকানি দিতে শুরু করল। এ পর্যন্ত সমস্যা খুব একটা গভীরে যায়নি। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঘটে গেল একটি বড় ঘটনা। সম্ভবত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফাদের জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র কক্সবাজার থেকে ভারত যাওয়ার পথে ধরা পড়ল এবং খবরটি সাথে সাথে রাষ্ট্র হয়ে গেল। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সাথে ভারত সরকারের সম্পর্ক সর্বনিম্নপর্যায়ে চলে গেল। হয়তো বা তখনই ভারত সিদ্ধান্ত নিলো, বাংলাদেশের রাষ্ট্রমতায় বিএনপিকে সরিয়ে আওয়ামী লীগকে বসাতে হবে। ১/১১-পরবর্তী সময়ে নানা ঢঙ-তামাশার পর ২০০৮ সালে হলোও তাই। মতার এই পালাবদলে আসলে ভারতের হাত কতখানি ছিল সেটা নির্ণয় করা না গেলেও এটা কারো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, ওই পরিবর্তনে ভারত খুশি হয়েছিল। পরিকল্পনামতো অল্প দিনের মধ্যেই হাসিনা সরকারের কাছ থেকে ভারত তার প্রত্যাশিত ফল পেতে শুরু করল। লীগ সরকার বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আটক করে ভারতের হাতে তুলে দিলো, ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তিতে নীতিগতভাবে রাজি হলো, নৌ প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় মালামাল পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় যাতায়াত শুরু করল, বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিতেও রাজি হলো ইত্যাদি ইতাদি। মজার ব্যাপার হলো, এত সব প্রাপ্তির বিনিময়ে ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি তেমন কিছুই ছাড় দিতে হয়নি। কাগজে-কলমে যে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল, সেটাও নানান শর্ত ও আমলাতন্ত্রের ফাঁদে হাঁসফাঁস করতে লাগল। এর পুরো বাস্তবায়ন কবে হবে তা কেউ জানে না, আদৌ হবে কি না তাও প্রশ্নবিদ্ধ।
লীগ সরকার থেকে বলতে গেলে একতরফাভাবে এত কিছু পাওয়ার পর হঠাৎ দেখা যায় ভারত-বিএনপির সম্পর্কে বরফ গলতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলেই খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফরের পটভূমি ও তাৎপর্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। এসব কথায় পরে আসছি। তার আগে জানা দরকার উদ্যোগটি প্রথমে কে নিয়েছে? ভারত না বিএনপি? আওয়ামী লীগ বলছে, ‘বিএনপি মতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। মান-সম্মানের মাথা খেয়ে তারা বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে, নাকে খত দিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।’ বিএনপি অবশ্যই এবার মতায় যেতে চায়। এটা তার রাজনৈতিক অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। বিএনপি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কও উন্নত করতে চায়। তবে উদ্যোগটা প্রথমে বিএনপি নিয়েছে কি না এ ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। আমার ধারণা, প্রথম ডাক এসেছে ভারতের কাছ থেকে। কারণ খালেদা জিয়ার ভারত সফর চলাকালীন সময়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদ রিপোর্ট, সম্পাদকীয় এবং উপসম্পাদকীয় পড়লে স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিএনপির প্রতি ভারতই তার নীতি প্রথম পরিবর্তন করেছে। আনন্দবাজার বলছে, ‘বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিদেশনীতিতে এক নিঃশব্দ রণকৌশলগত পরিবর্তন করল ভারত।’ (কলকাতা : অক্টোবর ২৮, ২০১২)। আওয়ামী লীগের সন্তুষ্টি এবং বিষয়টিকে ডাইলিউট করার জন্য ভারত সরকার তার আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দিল্লি ডেকে নিয়ে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে। সঙ্গত ও বোধগম্য কারণেই খালেদা জিয়া এ সময় ভারতের এই দাওয়াত কবুল করেছেন। তিনি তার এত দিনের ভারতবিমুখতাকে ডাউনপ্লে করার জন্য তার আগে চীন সফর করে এসেছেন। এসবই কূটনৈতিক কসরত। খালেদা জিয়ার প্রতি ভারতের হাত বাড়ানোয় আওয়ামী লীগ সরকার যে নাখোশ তা জেনেও ভারতের কিছু করার নেই। কারণ তারা যা করছে তা ঠাণ্ডা মাথায় তাদের জাতীয় স্বার্থেই করছে।
এবার দেখা যাক ভারতীয় জাতীয় স্বার্থটা কী এবং কোথায়? অনেকে ভাবতে পারেন যে আওয়ামী লীগ থেকে ভারত এত কিছু পেল সেই আওয়ামী লীগকে খুশি রাখলে তো আগামীতে এই পাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকত। না ব্যাপারটি এত সহজ নয়। ভারত হয়তো প্রথম দিকে তাই মনে করেছিল, কিন্তু এখন দুই কারণে পিছটান দিচ্ছে। প্রথমত, লীগ সরকার যদি রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ও দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে আরেক টার্ম মতায় আসে, তাহলে এ পর্যন্ত ভারতকে যা দিয়েছে চড়া দামে তার প্রতিদান চাইবে। না পেলে আর বেশি কিছু দেবে না, বরং যা দিতে রাজি হয়েছে তা নিয়েও গাঁইগুঁই করবে। দ্বিতীয়ত, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি তার সরকারের কাছে রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। গেলেও রাজনৈতিক অবস্থা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে যে লীগ সরকার বেশি দিন মতায় টিকতে পারবে না। এ অবস্থায় ভারত যদি একতরফাভাবে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন জারি রাখে তাহলে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে তারা যা অর্জন করেছে বিএনপি মতায় এসে তার সবটুকু না হলে অনেক কিছু ভণ্ডুল করে দিতে পারে। ভারত এই ঝুঁকি নেয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত মনে করে না। তাই নিরাপদ কৌশল হিসেবে বিএনপির প্রতি তারা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে তাকে নিউট্রেলাইজ করে রাখতে চাইছে। অর্থাৎ বিএনপি মতায় এলে নতুন কিছু পাওয়া না গেলেও যাতে অলরেডি যা অর্জন হয়েছে তা যেন স্থিতিশীল থাকে। বিএনপিও এই সুযোগে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে রাজি হলেও দেয়ানেয়ার ব্যাপারে মুখে যা-ই বলুক না কেন আওয়ামী লীগের মতো এতটা উদার ও নমনীয় হবে বলে আমার মনে হয় না। বিএনপির দেশীয় সমর্থক ও রাজনৈতিক মিত্ররাই বিএনপিকে আম-ছালাসহ সব ভারতকে দিতে দেবে না।
সব কথার শেষ কথা, সব বিশ্লেষণ ও বাস্তবতার বিচারে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক। উদাহরণস্বরূপ আমেরিকা-কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো। কিন্তু এটা বাংলাদেশের হাতে নয়, বরং এই দুই দেশের সুসম্পর্কের সোনার চাবিটি মূলত ভারতের হাতে। বাংলাদেশের ন্যায্য দেনা-পাওনার ব্যাপারে ভারত যদি নমনীয় না হয়ে আগের মতো দাদাগিরি চালিয়ে যায়, তা হলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। সম্পর্ক যে তিমিরে আছে সেই তিমিরেই থাকবে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা থেকে একটি কথা বলে এখানেই আজকের নিবন্ধের ইতি টানব। ভারতীয় সরকার এবং তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের প্রতি যতই সহানুভূতিশীল ও নমনীয় হোক না কেন, সম্পর্কোন্নয়নের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে যত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি এক শ্রেণীর ভারতীয় জনগণ ও ভারতীয় আমলাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ১৮০ ডিগ্রি পরিবর্তন না আসে।
লেখক : অধ্যাপক, টেনেশি স্টেইট ইউনিভার্সিটি,  যুক্তরাষ্ট্র; এডিটর, জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ
Awahid2569@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads