চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। এর এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকঢোল পিটিয়ে এটিসহ পাঁচটি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। সিডিএ’র মাস্টার প্ল্যানে এ ধরনের ফ্লাইওভারের দিকনির্দেশনা না থাকলেও সরকারের বিশেষ উদ্যোগে নেয়া এই প্রকল্পের কাজ কোনো নিয়মনীতি মানা ছাড়াই যথারীতি দেয়া হয় দলীয় ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানকে। ফলে শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও কেউ গা করেনি। ধীরগতিতে চলা নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়নি। কাঁচাবাজারও বসেছে প্রতিদিন। সরকারদলীয় সংশ্লিষ্টতার কারণে এমন সব গুরুতর অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস দেখায়নি কেউ। নির্মাণ কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কর্মরত এক প্রকৌশলীকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২১ নভেম্বর এই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের লোহার পাত পড়ে গিয়ে প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার আগে ২৯ জুন একটি গার্ডার ভেঙে পড়ে এক রিকশাচালক আহত হন। দুটি ঘটনাই সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়। লোকদেখানো তদন্ত কমিটি করেই দায় সারে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার বিষয় নিয়ে সরকারের কেউ কেউ আপত্তি তুললেও শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। এমনকি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও শাসক দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রকাশ্য সমালোচনাও কারও কাছে গুরুত্ব পেতে দেখা যায়নি। ফলে এবারের ঘটনায় মানুষ কারও ওপর ভরসা রাখতে না পেরে বাস্তবসম্মত কারণেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। জনতার এমন উগ্রমূর্তিকে কোনোভাবেই অন্যায় বলা যাবে না। জননিরাপত্তা ও জনস্বার্থ উপেক্ষা করে দুর্নীতি ও দলবাজি প্রশ্রয় দিতে সরকার কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে, চট্টগ্রামের ঘটনা থেকে সেটা আবারও প্রমাণ হলো। প্রায় একই সিদ্ধান্ত টানা যায় আশুলিয়ার মর্মান্তিক ঘটনা থেকেও। নিশ্চিন্তপুরের গার্মেন্ট কারখানাটিতে কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিকের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা যে ছিল না সেটা পরিষ্কার। নয়তলা কারখানা ভবনে তিনটি সিঁড়ি থাকলেও গেট ছিল একটি। গভীর রাতে অন্যদিনের মতো সিঁড়ি ছিল তালাবদ্ধ। নিচতলার আগুন আর বন্ধ গেটের কারণে প্রাণ বাঁচাতে সবাই উপরের দিকে ছুটতে গিয়ে পদদলিত হয়। আতঙ্কিত অনেকেই জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্ধকারে। তাই প্রথমদিকের হতাহতদের কেউই অগ্নিদগ্ধ ছিল না। দেরি করে ফায়ার ব্রিগেডের দল এলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আশপাশে কোনো জলাশয়ও ছিল না। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় দেড় শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এই লেখার সময়ে দক্ষিণখানের মোল্লার হাটে তিনটি গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লাগার কথা শোনা গেল।
এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কতই না হইচই, মহড়া হতে দেখা যায়। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েও উচ্চ পর্যায় থেকে নানা কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে যে সবই ফাঁকা, একান্তই লোকদেখানো—সেটা কি অস্বীকার করা যায়? বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কারখানা ও শ্রম আইন অগ্রাহ্য করে চলার কারণে এভাবে শ্রমিকদের মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো প্রভাবশালী বিজিএমইএ বা সরকার কারও কাছে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব পেলে বার বার একই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে হতো না। লেখায়, কথায়, ভাষণে প্রশংসা করা হলেও এদের কেউই যে শ্রমিকদের গুরুত্ব দেয় না; অবহেলা-বঞ্চনার পাশাপাশি ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকেই সেটা বোঝা যায়। যে সরকার মানুষের জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তাটুকুও নিশ্চিত করতে পারে না, তার ক্ষমতায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তবে শুধু প্রশ্ন তুললেই যে ফল হবে না, সেটা আজকের বাংলাদেশে সবার কাছেই পরিষ্কার।
এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কতই না হইচই, মহড়া হতে দেখা যায়। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েও উচ্চ পর্যায় থেকে নানা কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে যে সবই ফাঁকা, একান্তই লোকদেখানো—সেটা কি অস্বীকার করা যায়? বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কারখানা ও শ্রম আইন অগ্রাহ্য করে চলার কারণে এভাবে শ্রমিকদের মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো প্রভাবশালী বিজিএমইএ বা সরকার কারও কাছে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব পেলে বার বার একই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে হতো না। লেখায়, কথায়, ভাষণে প্রশংসা করা হলেও এদের কেউই যে শ্রমিকদের গুরুত্ব দেয় না; অবহেলা-বঞ্চনার পাশাপাশি ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকেই সেটা বোঝা যায়। যে সরকার মানুষের জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তাটুকুও নিশ্চিত করতে পারে না, তার ক্ষমতায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তবে শুধু প্রশ্ন তুললেই যে ফল হবে না, সেটা আজকের বাংলাদেশে সবার কাছেই পরিষ্কার।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন