বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১২

পরাগ অপহরণে যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ।

আশ্রিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করুন
খুন, অপহরণ ও গুমের মতো অপরাধের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া অপরাধীদের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু দিন থেকেই। রাজধানীর কেরানীগঞ্জে শিশু পরাগ অপহরণের ঘটনায় তা আবারো প্রমাণিত হলো। অপহরণের এই ঘটনা ঘটেছিল অত্যন্ত নৃশংসভাবে। শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। ছিনিয়ে নেয়ার পর মায়ের বুকে গুলি করা হয় এবং পাশে থাকা শিশুটির বোনের পায়েও গুলি করা হয়। ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য স্থানীয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং এ ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন। টাকার বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এই অপহরণ ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের অপরাধের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতেন কারা শিশুটিকে অপহরণ করেছে। কিন্তু শিশুটিকে উদ্ধারে এরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন, সন্ত্রাসীদের শর্ত মেনে নেয়ার কারণে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাবও স্বীকার করেছে টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে; যদিও শিশুটির বাবা বলেছেন তিনি কোনো টাকা দেননি। সম্ভবত চাপের মুখে তিনি এমন কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি যখন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন, সে সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানে ছিলেন।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো, শিশুটির বাবা যদি ৫০ লাখ টাকা দিতে অসমর্থ হতেন তাহলে হয়তো তাকে ফিরে পাওয়া যেত না। আরো অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, অপহরণের পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে কারা শিশুটিকে অপহরণ করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, যারা শিশুটিকে অপহরণ করেছে তারা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত এবং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামিনে মুক্ত। এ ঘটনায় স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তা সন্ত্রাসী ও পুলিশের মধ্যকার আঁতাতেই বোঝা যায় । আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যে কোনো সমন্বয় নেই, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাবের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্য থেকে পাওয়া যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন শুধু অসহায়ই নয়, সহযোগীর ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছে। জেনেশুনেও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এখন রাজনৈতিক কারণেই হয়তো অপহরণ পরিকল্পনার মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবেন। এর ফলে পরাগের মতো আরো অনেক শিশু অপহরণ হবে। যারা মুক্তিপণ দিতে পারবেন না, তাদের শিশুদের লাশ পাওয়া যাবে।
আমরা মনে করি, এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে হলে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের আগে গ্রেফতার করতে হবে। মূল অপরাধীদের আড়াল করে কিছু নিরীহ লোককে ধরে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা হতে পারে। আমরা আশা করব, ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে থাকা অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নইলে এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতেই থাকবে। সন্ত্রাসীদের হাতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা আরো বিপন্ন হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads